সেই খেলা যেভাবে শেষ হয়েছিল – আবদালহাদি আলিজলা অনুবাদ–রাজীব কুমার ঘোষ
[লেখক পরিচিতি: আবদালহাদি আলিজলা লেবাননের একজন ‘সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্টিস্ট’ এবং ‘সায়েন্স অ্যাডভোকেট’ অর্থাৎ যার কাজ রাষ্ট্রনেতাদের ও রাজনীতিবিদদের কাছে বিজ্ঞানের নানা দিক উপস্থাপিত করা। ২০২১ সালে তিনি ‘ইনটারন্যাশনাল পলিটিকাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন—গ্লোবাল সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। ‘গ্লোবাল মাইগ্রেশন অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাট গ্লোবাল ইয়ং অ্যাকাডেমি’-র তিনি একজন প্রধান সদস্য। মধ্যপ্রাচ্যের আরও বহু সামাজিক সংগঠনের এবং এনজিও-র সঙ্গে তিনি জড়িত। ২০১৬ সালে তিনি ইংল্যান্ডের রয়াল সোসাইটির আর্ট আর সায়েন্সের ফেলো হিসাবে নির্বাচিত হন। বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন, পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি। মধ্যপ্রাচ্যের তিনি একজন সুপরিচিত লেখক ও প্রাবন্ধিক।]
এই দুনিয়ায় আমি চোখ মেলেছিলাম এমন এক শহরে, যে শহরে শৈশব ছিল প্রাণহীন। আমি চোখ মেলেছিলাম এক যুদ্ধক্ষেত্রে। কেউ আমাকে বলে দেয়নি সৈন্যরা আসলে কারা আর ওদের কাজটাই বা কী।
যা কিছু স্বাভাবিক সেগুলোকে অস্বাভাবিক ভাবতে শিখেই আমি বড়ো হয়েছিলাম। সেই লোকগুলো, যারা যখনতখন আসত সাক্ষাৎ বিভীষিকার মতন—আবার চলেও যেত; জানতাম তারা আমাদের কেউ নয়।
এই দুনিয়ায় যখন আমি চোখ মেলেছিলাম, তখন আমি ভাবতাম ছেলেছোকরা আর যুবকদের সৈন্য দেখে ছুট মারাটা আসলে এক ধরনের লুকোচুরি খেলা অথবা ওরা হয়তো ধরাধরি খেলার অভ্যেসটা ঝালিয়ে নিচ্ছে।
আমি ভুল ছিলাম।
দিনগুলো যত চলে যেতে থাকল, সপ্তাহ চলে যেতে থাকল এমনকি বছরগুলোও, তত আমি বুঝতে পারছিলাম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই লোকগুলো আসলে আমাদের শত্রু আর হত্যা করাটাই ওদের একমাত্র কাজ।
প্রথম যেদিন আমি তাদের খুব কাছাকাছি গিয়ে পড়েছিলাম, সেদিন আমি মায়ের সঙ্গেই ছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে মূল রাস্তা ধরে আমরা বাজার যাচ্ছিলাম। তখন আমার বয়স মাত্র তিন।
দূর থেকে গাড়িটা আসতে দেখেই লোকজন ছুটে পালাতে শুরু করেছিল।
মা হঠাৎ আমাকে তুলে নিয়ে বুকে জোরে চেপে ধরেছিল। যতক্ষণ না জিপগুলো চলে গেল ততক্ষণ মায়ের নজর ওই তিনটে মিলিটারি জিপের ওপর থেকে সরেনি।
আমি মায়ের বুকের ধুকধুকানি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। মা হাতের বাঁধন আলগা করার পর আমি জমে যাওয়া হাত-পা নাড়াতে পেরে স্বস্তি পেয়েছিলাম, কিন্তু পরক্ষণেই একটা বিভ্রান্তি আমায় গ্রাস করেছিল।
সেই মুহূর্তে আমি বুঝতে পেরেছিলাম কোথাও কিছু একটা গোলমাল আছে। এরপর আর কখনও না মা আমাকে নিয়ে বাজারে যায়নি।
আমাদের পাড়ায়, পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে আমি প্রথম যে খেলাটা খেলেছিলাম তার নাম ছিল, ‘ইহুদি আর আরব’। আমাকে বারবার ইহুদির ভূমিকায় খেলতে হত। প্রথম দিকে আমার কিছু মনে হয়নি। কারণ এখানের ভাষায় ইহুদি অর্থাৎ ‘জিউস’ উচ্চারণ শুনতে লাগে জইশ, ‘আল জইশ’ সেনাবাহিনী।
একদিন আমরা পাড়ায় জড়ো হয়েছিলাম সেই একই খেলা খেলতে যা আমি চার বছর বয়স থেকে খেলে আসছি। আমি সবার ছোটো ছিলাম তাই ওরা ঠিক করল আমাকে ‘জিউস’ হতে হবে উচ্চারণে যা শোনাল ‘জইশ’।
আমি বলেছিলাম, “না–আমি ‘আরব’ হতে চাই।”
ওরা বলেছিল, “না, আমরা হলাম ‘আরব’, তুই হলি ‘ইহুদি’, তুই ওদের সঙ্গে।” এই বলে দলের পান্ডা, সবচেয়ে বড়ো ছেলেটা জটলাটার বাইরের দিকে আঙুল তুলে দেখাল।
আমি মোটেই খুশি হলাম না। বলেছিলাম, “আমি খারাপ লোক সাজতে চাই না, আমি সৈন্য হব।”
আমি রেগে ঝটকা মেরে ওদের জটলা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। কাছেই একটা সিমেন্টের চাঙড়ের ওপর বসে দেখেছিলাম ওদের খেলা। আরবরা ইহুদিদের দিকে পাথর ছুঁড়ছিল, গালি দিচ্ছিল আর যে ছেলেগুলো সৈন্য সেজেছিল তারা তাদের দিকে বন্দুক উঁচানোর ভঙ্গি করে গুলি ছুঁড়ছিল। গুলির আওয়াজটা করছিল মুখ দিয়ে। খেলা শেষ হয়ে গেলে আমরা সাধারণত রাস্তায় পাথর আর গাছের ডাল বিছিয়ে একটা চেকপোস্ট ধরনের কিছু বানাতাম। গাড়িগুলো এখানে আস্তে হয়ে যেত আর আমরা গাছের ডালকে বন্দুক বানিয়ে উঁচিয়ে থাকতাম।
বিভিন্ন গাড়ি চালক আমাদের সঙ্গে বিভিন্নরকম আচরণ করত। কেউ আমাদের ‘হিরো’ সম্বোধন করে মজা করে নিজেদের পরিচয়পত্র তুলে দেখাত আমাদের। কখনও কখনও খুব বদমেজাজি কোনো গাড়িওয়ালা দূর থেকেই চিৎকার করে আমাদের শাপ-শাপান্ত শুরু করে দিত। সেদিনকার মতো আমাদের খেলার পালা সাঙ্গ হত।
একদিন আমার চোখ একটা খবরের কাগজের ওপর গিয়ে পড়ল। ওটা কেউ রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। কাগজে ছাপা ছবিগুলো দেখতে আমার বরাবর ভালো লাগত, একটা ঝোঁকও ছিল। রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করে তখন আমার খালি পা ধূলি ধূসরিত। আমি খুব ধীর পায়ে কাগজটার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম। কাগজটা তুলে আমাদের বাড়ির সামনেই, রাস্তার ধারে বসে পড়েছিলাম। আমি একটা একটা করে খবরের কাগজের পাতা উলটিয়ে চলেছিলাম। আসলে আমি আমার বাবার কাগজ পড়াটাকে নকল করছিলাম, কিছু পড়ছিলাম না, শুধু ছবিগুলো দেখছিলাম। সহসা রঙিন ছবিতে ভর্তি একটা পাতা আমার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল। ছবিগুলো ছিল কান্নায় ভেঙে পড়া মহিলাদের, অজস্র দেহের, রক্তের, মৃত শিশুদের আর বন্দুক হাতে সৈন্যদের।
আমি হাঁটুর ওপর ভর করে ক্রমশ ঝুঁকে, আরও ঝুঁকে শিশুদের দেহগুলো দেখার চেষ্টা করেছিলাম। আমার চোখগুলো ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছিল।
আমার মনে ওঠা একটা প্রশ্নই আমার কানে বেজে চলেছিল অনবরত, “ওরা চিৎকার করল না কেন!” বহুবছর পরে আমি বুঝে গিয়েছিলাম বড়োসড়ো গণহত্যার সময় শিশুদের আওয়াজ বন্দুকের আওয়াজের নীচে চাপা পড়ে যায়।
আমি আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই ছবিগুলো দেখেই চলেছিলাম। একটার পর একটা। একটা প্রচণ্ড রাগ আমার ভেতরে পাক খেয়ে উঠছিল। আমি কাগজটা নিয়ে আমার দিদির কাছে ছুটে গিয়েছিলাম।
পেছন থেকে মায়ের চেঁচানি ভেসে এসেছিল, “জঞ্জালটা ফেলে দে।” মা কাগজটার কথাই বলেছিল।
মা বলেছিল, “তোর বাবা তোর জন্য কালকের কাগজ এনে দেবে।”
আমি মায়ের কথায় কান না দিয়ে ছবির পাতাটা খুলে দিদিকে প্রশ্ন করেছিলাম, “ওদের কারা মেরেছে?”
দিদি একবার আমার দিকে তাকিয়েছিল তারপর কাগজের দিকে। একটু পড়ে বলেছিল, “সৈন্যরা—আল জইশ।”
আমি বলেছিলাম, “কেন ওদের মেরেছে?”
দিদি একটু থমকে গিয়েছিল, তারপর বলেছিল, “কারণ ওরা আমাদের মতো, প্যালেস্তানি।”
আমি প্রশ্ন করেছিলাম, “তাহলে ওরা কি আমাদেরও মারবে?”
“না, এটা লেবাননে হয়েছিল, সাবরা আর শাতিলাতে, অনেক আগের ঘটনা।” বলার সঙ্গে সঙ্গে দিদি তার হাতটা মুখের উচ্চতায় তুলে তারপর পেছনে আন্দোলিত করেছিল। উচ্চারণ করেছিল, “জাম্মান, জাম্মান”, অর্থাৎ বহুকাল আগের ঘটনা। মনে হয় আমার মন থেকে ভয় তাড়িয়ে শান্ত করার জন্যই।
দিদি হয়তো আমার প্রশ্নের মধ্যে থাকা ভয়টাকে দেখতে পেয়েছিল।
সেই সময় থেকেই সাবরা আর শাতিলা এই নাম দুটো আমার মনের মধ্যে চিরকালের জন্য গেঁথে যায়, আমি তারপর কোনোদিন ওই গণহত্যার দৃশ্য ভুলতে পারিনি। যেমন একটা বাচ্চা কখনও ভুলতে পারে না তার প্রথম জাহাজে ওঠা, ঠিক তেমনি আমি ভুলতে পারিনি যে, যেদিন আমি প্রথম একটা খবরের কাগজ তুলে নিয়েছিলাম, সেদিন সেই কাগজটা কী ভয়ংকরভাবে আমায় স্বাগত জানিয়েছিল।
সেই দিন থেকে আমি খবরের কাগজ সম্পর্কে খুব আগ্রহী হয়ে পড়লাম। একদিন আমার বাবা দেখে ফেললেন যে আমি রাস্তায় খবরের কাগজ কুড়োতে এবং সেই কাগজগুলোর ছবি দেখতে ব্যস্ত।
বাবা চেঁচিয়ে বলেছিলেন, “কাগজগুলো ফেলে দাও, ওগুলো নোংরা।”
আমি বলেছিলাম, “আমি যে ছবিগুলো দেখব।”
বাবা বলেছিলেন, “ঠিক আছে, কাল আমি তোমাকে নতুন কাগজ এনে দেব।” তারপর আমায় বাড়ির ভেতরে যেতে হুকুম দিয়েছিলেন।
পরে সেই সপ্তাহেই, আমি গুপ্তধনের ভাণ্ডার আবিষ্কার করেছিলাম। আমার দাদার ঘরে বিছানায় তোশকের তলায়, যে তোশকটা আমাদের বাড়ির সবচেয়ে বড়ো তোশক ছিল।
সেখানে খান দশেক রঙিন পত্রিকা ছিল। ম্যগাজিনগুলোর নাম ছিল, ‘আবির’, ওটা জাতীয়তাবাদী পত্রিকা ছিল আর ‘ফিদায়ে’ আর ‘মউতারাদ্দিন’ অর্থাৎ প্রতিরোধী যোদ্ধা আর আত্মোৎসর্গের জন্য তৈরি বাহিনীর অনেক রঙিন ছবি ছিল। এরপর বহুদিন ধরে আমি উঠতাম, ওখান থেকে একটা পত্রিকা নিতাম আর ছবিগুলো দেখতেই থাকতাম, এক বর্ণ যদিও পড়তে পারতাম না।
সেই সপ্তাহ থেকেই বাবা ‘আল-কুদস্’ খবরের কাগজটা আমার জন্য রোজ আনা শুরু করেছিলেন। কাজের জায়গা থেকে ফিরে কাগজটা আমায় দিতেন। অবসর নেবার দিন অবধি এর কোনো হেরফের হয়নি। কাজ থেকে ফেরার সময় হলেই, আমি বাবার জন্য রোজ অপেক্ষা করতাম। যেই রাস্তায় তার চেহারাটা ভেসে উঠত আমি সোজা তার দিকে ছুট লাগাতাম। তার হাতে ফলমূল, তরিতরকারির বোঝার সঙ্গেই থাকত খবরের কাগজটা।
আমার এক দিদি রোজ কাগজটা আমার কাছ থেকে নিয়ে পড়ত। আমি ওর পড়া অবধি অপেক্ষা করতাম। তারপর দিদি সাংস্কৃতিক নানা কর্মকাণ্ডের খবর আর খেলার খবরগুলো আমায় সংক্ষেপে বলে দিত। এই পাতাগুলোয় অনেক বেশি ছবি থাকত, তাই আমার খুব ভালো লাগত। প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন, প্যালেস্তাইনে ফিরে যাবার পর আরও দু’টো কাগজ আসতে থাকল, ‘আল-হায়া’ আর ‘আল-আয়াম’। আমি আর আমার তিন দিদির মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যেত কে আগে সেগুলো পড়বে।
বড়ো হবার পর আমি কল্পনা করতে চেষ্টা করতাম খবরের কাগজ, পত্রিকা, ওই ছবিগুলো ছাড়া, ছাপার অক্ষরগুলো ছাড়া, কাগজের সেই গন্ধ ছাড়া আমার শৈশব, কৈশোরটা ঠিক কেমন হত! ওগুলো ছাড়া বোধহয় আমার জগৎটা ধ্বসে পড়ত। অথবা আরও বিশৃঙ্খল, ভয়ানক কিছু একটা হত। খবরের কাগজ আর ছবিগুলো আমাকে সেই দুনিয়া গড়ে দিয়েছিল যা আমাকে ‘ইহুদি-আরব’ খেলাটা থেকে মুক্তি দিয়েছিল। ওই কাগজগুলোর সঙ্গে আমি ধ্বস্তাধ্বস্তি করতাম। এভাবেই আমার গড়ে তোলা জগৎটা প্রত্যেকদিন নতুন তথ্যে আরও নতুন হয়ে উঠত। আমার মনের মধ্যে ধীরে ধীরে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, তিরিশ বছর পরেও যার উত্তর আমি খুঁজে চলেছি।
টীকা
★ সাবরা আর শাতিলার গণহত্যা
১৯৮২ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় (১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল অবধি যা চলেছিল) এক ভয়ংকর গণহত্যা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। বেইরুটের একটি প্যালেস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ঢুকে খ্রিস্টান মিলিশিয়ারা (ফ্যালাঞ্জ) হত্যা করেছিল শয়ে শয়ে প্যালেস্তিনিকে। কারো মতে সংখ্যাটা চারশো ষাট আবার কারো মতে সাড়ে তিন হাজার। লাশ গোনা হয়েছিল বহুদিন ধরে। গণহত্যার সময় বেইরুটের ওই অংশটি নিয়ন্ত্রণ করছিল ইজরায়েলি সেনারা। কেন তারা লেবাননের খ্রিস্টান মিলিশিয়াদের ঢুকতে দিয়েছিল সেই প্রশ্ন উঠেছিল। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইজরায়েলে যে তদন্ত হয়েছিল তাতে পরোক্ষভাবে ইজরায়েলি বাহিনী ও সেইসময়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এরিয়েল শ্যারনকে দায়ী করা হয়েছিল। মজার কথা ইউরোপে এমনকি ইজরায়েলেও প্রবল বিক্ষোভ হলেও এই গণহত্যার জন্য কারো কোনো শাস্তি হয়নি।
★ আল-কুদস সংবাদপত্র
আল-কুদস একটি প্যালেস্তাইনের সংবাদপত্র যা আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংবাদপত্রটি ওই অঞ্চলে সর্বাধিক প্রচারিত কাগজ।
★ “প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন, প্যালেস্তাইনে ফিরে যাবার পর”
ষাটের দশক থেকে ১৯৮২ সাল অবধি প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পি এল ও) লেবাননে ঘাঁটি গেড়েছিল। ইজরায়েলের সৈন্যবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে প্রবেশ করার পর পি এল ও বাধ্য হয় লেবানন ছেড়ে চলে যেতে। তারা তিউনেশিয়ায় তাদের ঘাঁটি গেড়ে বসে। লেবাননে পি এল ও মিডিয়াকে তাদের প্রচারে কাজে লাগিয়েছিল এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত। লেবাননের সাংবাদিকদের হুমকি ও চাপ দেবার বহু অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠেছিল।
★আল-আয়াম সংবাদপত্র
আল-আয়াম প্যালেস্তাইন থেকে প্রকাশিত আরবি ভাষার একটি সংবাদপত্র। ১৯৯৫ সাল থেকে সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হতে থাকে। প্যালেস্তাইনে প্রচারের দিক থেকে এটি দ্বিতীয় সংবাদপত্র।
★আল হায়া বা আল হায়াত সংবাদপত্র
গল্পে সংবাদপত্রটি ‘আল হায়া’ লেখা হলেও মনে হয় এখানে ‘আল হায়াত’ সংবাদপত্রের কথাই বলা হয়েছে। এই সংবাদপত্রটি ১৯৪৬ সালে প্রথমে লেবাননের দৈনিক সংবাদপত্র হিসাবে যাত্রা শুরু করে। এর প্রতিষ্ঠাতাকে অফিসে গুলি করে মারা হয়েছিল। লেবাননের গৃহযুদ্ধের কারণে ১৯৭৬ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হবার আগে এই সংবাদপত্রের ওপর ১৩টি বোমার হামলা হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে এটি আবার প্রকাশিত হতে থাকে নতুন রূপে। নয়ের দশকে নিউ ইয়র্ক টাইমস এই কাগজের সাংস্কৃতিক পাতাকে আরব দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী বলে অভিহিত করেছিল। উল্লেখযোগ্য যে এর বেশিরভাগ সাংবাদিক লেবানন থেকেই এসেছেন। ১৯৯৭ সালে এই সংবাদপত্রের লন্ডন অফিসে, নিউইয়র্ক অফিসে, ওয়াশিংটন এবং রিয়াদে কম করেও ১৪টি পত্র-বোমা পাঠানো হয়েছিল।
খুব সুন্দর একটি অনুবাদ। পড়ে খুব ভালো লাগল।