গাছ – জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী
|

গাছ – জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী

একটা গাছ। অনেকদিনের গাছ। গাছটা সুন্দর কি অসুন্দর কেউ প্রশ্ন তোলে নি। গাছের মনে গাছ দাঁড়িয়ে আছে। এর প্রয়োজন আছে কি নেই তা কেউ মাথা ঘামায় না। যেমন মানুষ মাথার ওপর আকাশ দেখে মেঘ দেখে, পায়ের নিচে ধুলো দেখে ঘাস দেখে, তেমনি তারা চোখের সামনে একটা গাছ দাঁড়িয়ে আছে দেখছে। সন্ধ্যায় দেখছে, দুপুরে দেখছে, সকালে…

ভ্‌লাদিমির ইলিচ লেনিন ও দুনিয়া বদলের শিক্ষা – রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
|

ভ্‌লাদিমির ইলিচ লেনিন ও দুনিয়া বদলের শিক্ষা – রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

আপনাদের কাজ সফল হয়েছে।… … … … … … … …আপনাদের কাহিনী চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেএ দুনিয়াকে বদলে দিতে গেলে কী কী লাগেক্রোধ, একাগ্রতা, তাল, বিদ্রোহী চিত্ত,দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষিপ্রতা, গভীর চিন্তার স্থৈর্য,নিরুত্তাপ সহ্যশক্তি, অসীম অধ্যবসায়,একক ও সমগ্র—বিশেষ ও সাধারণ—দুইই উপলব্ধির ক্ষমতা।বাস্তবকে সম্যক বুঝে, তবেই না পারবোবাস্তবকে আমূল বদলে দিতে। —বের্টোল্ট ব্রেখ্‌ট ভ্‌লাদিমির ইলিচ উলিআনভ…

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় -এর দশটি কবিতা
|

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় -এর দশটি কবিতা

নিরাপদ মাননীয় মানব সমাজ ‘I smell dark police in the trees’. দীর্ঘ দেবদারু বীথি আজ কোনো আকাশ দেখে নাএখন আকাশ জুড়ে নষ্ট চাঁদ, শুরু হবে পিশাচের নাচ; এখন বাতাস দগ্ধ দুধকলা দিয়ে পোষা সাপের নিঃশ্বাসে… ভাল আছে—নিরাপদ—আমাদের মাননীয় মানব সমাজ॥ [রাস্তায় যে হেঁটে যায় / প্রথম প্রকাশ: ১৩৭৯] কবিতা পরিষদের ‘বইমেলায়’ আমরা সবাই চাঁদের আলোয়…

পানকৌড়ির রক্ত – আল মাহমুদ (পুনর্পাঠ)
|

পানকৌড়ির রক্ত – আল মাহমুদ (পুনর্পাঠ)

প্রথমে কালো পাখিটাকে আমি দেখিনি। আমার লক্ষ্য ছিল একটা শাদা বগার ওপর। বগাটা ছিল বিশাল আর ধবধবে শাদা। নিশ্চিন্ত মনে ঘাড় বাঁক করে স্বচ্ছ পানির ভেতরে সে তার ধারালো চঞ্চ উঁচু করে ঠোকর মারার জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল। আমিও ধীরেসুস্থে পা ফেলেই যাচ্ছিলাম। বেশ একটু দূর থেকে গুলি করলেও যে বিশৃদশ পাখিটাকে ফেলা যাবে, এ ব্যাপারে…

সহোদর – শক্তি চট্টোপাধ্যায় (পুনর্পাঠ)
|

সহোদর – শক্তি চট্টোপাধ্যায় (পুনর্পাঠ)

হাঁড়িচাঁচা খাল সাঁড়াশির মতন গঞ্জটাকে কষে চেপে ধরেছে—তাই খালের গা বরাবর গঞ্জ। তা-ছাড়া কী বুধবার হাট আছে। পেট-ভর-বাজার। জয়নগর-মজিলপুর দুটো গাঁ খেয়ে কূল পায় না। আর খাবারই না কতরকম। শাকসবজির পাহাড়, মাছের আটচালা। গাঁ-ভরতি বাবু কছমের লোকজন। শ্রী-ই আলাদা। হঠাৎ কোত্থেকে যে কী হল। শিয়ালদা থেকে বরাবর ইস্পাত বিছানো হল মাইল বত্তিরিশ দক্ষিণমুখো, তামাম গাঁ…

ধর্মযুদ্ধ – অশোক মিত্র (পুনর্পাঠ)
|

ধর্মযুদ্ধ – অশোক মিত্র (পুনর্পাঠ)

যা বলার, অল্প কথাতেই বলা চলে।  আমি ভারতীয়, তথা বাঙালি, রবীন্দ্রনাথের দেশের মানুষ আমি। আমার চেতনায় রবীন্দ্রনাথ, আমি যে ভাষায় ভাবনা ব্যক্ত করি, তা রবীন্দ্রনাথের একান্ত সৃষ্টি, যে-গান আমাকে উদ্বেলিত অনুপ্রাণিত করে, তা-ও । এখান-ওখান থেকে যত প্রলেপই পড়ুক, ধুলোর আস্তরণ সরালে, আমার সত্তার গভীরে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা প্রোথিত। যত অহংকারই করি, রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে আমার…

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চরিত্র – আহমদ ছফা
|

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চরিত্র – আহমদ ছফা

বাংলা সাহিত্যে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসটির কোনো জুড়ি নেই। এই উপন্যাসের একটি চরিত্রে মানিকবাবু যে সুগভীর ইতিহাসবোধ, জীবন অভীপ্সা এবং মনীষার পরিচয় দিয়েছেন, বোধকরি চরিত্রসৃজনকুশলতায় তারো কোনো জুড়ি নেই। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসটির কথা উঠলেই কুবের, মালা, কপিলা, রাসু, গনেশ ইত্যাকার মানুষদের মুখগুলো আপনা-আপনিই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মানিকবাবু তেমন শিল্পী (বিশেষ করে ‘পদ্মা নদীর…

অপবিজ্ঞান – রাজশেখর বসু (পরশুরাম)
|

অপবিজ্ঞান – রাজশেখর বসু (পরশুরাম)

বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের ফলে প্রাচীন অন্ধসংস্কার ক্রমশ দূর হইতেছে। কিন্তু যাহা যাইতেছে তাহার স্থানে নূতন জঞ্জাল কিছু কিছু জমিতেছে। ধর্মের বুলি লইয়া যেমন অপধর্ম সৃষ্ট হয়, তেমনি বিজ্ঞানের বুলি লইয়া অপবিজ্ঞান গড়িয়া উঠে। সকল দেশেই বিজ্ঞানের নামে অনেক নূতন ভ্রান্তি সাধারণের মধ্যে প্রচলিত হইয়াছে। বৈজ্ঞানিক ছদ্মবেশে যেসকল ভ্রান্ত ধারণা এদেশে লোকপ্রিয় হইয়াছে, তাহারই কয়েকটির কথা বলিতেছি।…

শিক্ষার দর্শন – আহমদ ছফা
|

শিক্ষার দর্শন – আহমদ ছফা

ইউরোপীয় রেনেসাঁর পূর্বে শিক্ষার দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল অতীন্দ্রিয়বাদে প্রোথিত। মানুষ জানবে কেন? বুঝবে কেন? জ্ঞান লাভ করবে কেন? এই সবগুলো কেনর জবাব প্রাচীন জগৎ দিয়েছে–কোনো এক অলৌকিক সত্তায় তাকে বিশ্বাসী হতে হবে। যেহেতু মানুষের মন চঞ্চল, ইন্দ্রিয় অসংযত, তাই তাকে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে দৈনন্দিন শৃঙ্খলার মাধ্যমে এই বিশ্বাসকে চিত্তে চেতনায় স্থির করতে হবে,…

দাঙ্গা – সোমেন চন্দ
|

দাঙ্গা – সোমেন চন্দ

লোকটি খুব তাড়াতাড়ি পল্টনের মাঠ পার হচ্ছিল। বোধহয় ভেবেছিল লেভেল ক্রসিংয়ের কাছ দিয়ে রেলওয়ে ইয়ার্ডে পড়ে নিরাপদে নাজিয়াবাজার চলে যাবে। তাহার হাতের কাছে বা কিছু দূরে একটা লোকও দেখা যায় না—সব শূন্য, মরুভূমির মতো শূন্য। দূরে পিচঢালা পথের ওপর দিয়ে মাঝে মাঝে দুই একটি সুদৃশ্য মোটরকার হুস করে চলে যায় বটে, কিন্তু এত তীব্র বেগে…