মঙ্গল হাজরার পাঁচটি কবিতা
মৃত জ্যোৎস্নায়
১।
ঘুমের ভিতরে কোনো এক যুগের ঘোড়া-হরিণের ঘাস
ভরে ওঠে
কোনো এক ঘুমের ভিতরে; জ্বলন্ত আগুনে
আমরা হাঁটতে এসেছি
আঁকতে শিখেছি নক্ষত্রের ঘর;
যেখানে বাঘ আর বুনো মহিষের পরিভাষা আলাদা হয়
তবুও ঘুম ভেঙে গেলে—উঠে দেখি,
মৃত নক্ষত্রের মাটিতে আমাদের বিছানা ভরে গেছে।
২।
শব্দ শব্দের পাশে বসে রৌদ্র পোহায়
অক্ষরে লেগে থাকে তার দাগ
কালপুরুষের পাশে কোনো সূর্য—কেন জ্বলে উঠল না আজ,
সে তো কোনো নক্ষত্রের চেয়েও কম নয়!
ডুবে যায় জীবন; তবুও ডুবে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
সুজাতার হাত দুটি কাটা পড়ে নিয়মিত রাতে
মাটিতে লেগে আছে তার দাগ
অন্নের চাল পাশাপাশি বসে রৌদ্র পোহাতে দেখে
চেয়ারে জিভ ফুটে আছে সূর্যের বদলে।
৩।
গাছে গাছে শব্দ বিভ্রাট
গাছের গায়ে এখনও তোমার ভাষা বেঁচে আছে
আমাদের ভাষা সংযত হতে হতে, সম্ভ্রম ক্ষয়ে এসে
দাঁড়িয়েছে পলির পিঠে বিমর্ষ জাহাজে,
সেও কোনো এক নৌবহরের কথা মনে রাখে।
প্রাচীন গাছ, ভিতরে ঢের এলোমেলো স্বর
শব্দের বিভ্রাটে নুয়ে হেলে যায়
ছায়া গাছ, শিকড়ে এখনও নিওলিথ জল জোগায়
তোমার গায়ে যত ভাষা বেঁচে আছে, তারা এখনও কি জাহাজের কাছে যায়?
৪।
বাতাস যেখানে পাখির জন্ম দেয়
আমাদের রাত, সেইখানে জাগে—
টুপটাপ নক্ষত্রের মতো ঝরে,
পাথেয় জীবন, মাথার উপরে কৌম সন্তান
আকাশ ছুঁয়ে যায়।
তারপরে, ছায়া, শুধু ছায়া
ছায়ার সমান পথে—মানুষ কাজ খুঁজছে…
৫।
কোনো এক সম্ভ্রান্ত পাখির পালক ঝরে গেলে
অসহায়, অসুস্থ নাগরিক— ইতিহাস হয়ে যায়
জল হয়ে যায় ভারী, বাতাস হয়ে যায় উষ্ণ
মাঝে একটা দীর্ঘ জনপদ, মানুষ তবু একা
পায়ে তার খণ্ড খণ্ড আকাশ, বিবর্ণ ভালোবাসা
পৃথিবীর সব ফল খেয়ে এতদিন—ব্যক্তি, সমাজ
কী রেখে গেছে?
প্রেমিকার দুগ্ধহীন তৃতীয় স্তনে,
জননীর দু-পায়ে লাল চন্দনে নক্ষত্রের মৃত জ্যোৎস্নায়!