থাবা এবং থাবা – অজিত ভড়
এ এক অদ্ভুত সময় মঁসিয়ে। যখন কেউ কারো মুখ দেখতে চায় না, সমস্ত গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে ঢুকে পড়েছে এই অন্ধকার। এমনকি পারিবারিক গল্পেও ঢুকে পড়েছে এই ভাইরাস। হাঁসফাঁস করে উঠছে অর্থনীতি, সমাজনীতি। যদিও মাননীয় বিজ্ঞানীরা নিরলস চেষ্টা করছেন মুক্তির উপায় খুঁজতে।
আমি তাঁতি। নিম্নবিত্ত শ্রেণির জীব। এবার আসি আমাদের অস্তিত্ব-লড়াইয়ের কথায়। যদিও সমস্ত পরিশ্রমী মানুষেরই জীবন-জীবিকা মৃত্যুর কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলার তাঁতের কাপড়—কী আভিজাত্য—কী গৌরব! কিন্তু সমস্তটাই নির্ভর করে আছে পুঁজিবাদী অর্থনীতির উপর। ফলে তাঁত শ্রমিক এবং ছোটো মহাজনরা ভীষণ সংকটে। লকডাউন। কাপড় বিক্রি নাই, দীর্ঘদিন সুতোর যোগান ছিল না। ছোটো মহাজনদের পুঁজি কম থাকার ফলে শ্রমিক ছাঁটাই। এসব নিয়েই রাজবলহাট, ধনিয়াখালি, শান্তিপুর, টাঙ্গাইল। সংকট তীব্রতর।
যেখানে সরকারি মদতে সমস্ত জিনিসের মূল্য উর্দ্ধমুখী— সেখানে কাপড়ের মজুরি কম করা হচ্ছে। তাঁত-শ্রমিকরাও বাধ্য হচ্ছে মেনে নিতে—নইলে সুতো অর্থাৎ কাঁচামাল দেওয়া বন্ধ—পরিণামে–ছাঁটাই। রাজ্য কিংবা কেন্দ্র সরকার—কারোর মনেই পড়ে না এই সম্প্রদায়ের মৌলিক সমস্যার কথা। ভোটসর্বস্ব রাজনীতিতে ভোটটাই হচ্ছে মূল এবং মৌলিক লক্ষ্য—এবং তারপর? ‘চাবুক উঠছে আর নামছে…’
তাঁতের পরিশ্রম পারিবারিক পরিশ্রম, যেহেতু কুটিরশিল্প। সমস্ত দিন কমপক্ষে তিনজন পরিশ্রম করার পর মজুরি পাওয়া যায় গড়পড়তা দৈনিক, মাথাপিছু নয়, পরিবারপিছু, একশো থেকে দেড়শো টাকা। মাননীয় সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির দিকে কড়া নজর দিচ্ছেন—অথচ তিনি নিজেই গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছেন, পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছেন, নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের ভর্তুকি অটুট রেখে—জনগণের ব্যবহৃত জিনিসের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে নিচ্ছেন—আর ধাক্কা দিতে দিতে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষগুলোকে খাদের কিনারে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন—এ কোন্ ভারতবর্ষের ছবি?
তারওপর ভাইরাসজনিত লকডাউন। ট্রেন বন্ধ, বাস বন্ধ, কাপড় নিয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যাওয়া বন্ধ। অনেক ঘরেই করোনা-জনিত সমস্যা। আর মানবিকতার জানলা-দরজাও বন্ধ। মিডিয়া অনেক স্বপ্নের কথা বলে। বাস্তব সেই খাদের কিনারে। অর্থাৎ, ‘Dark, Dark and Dark. No Light Elsewhere.’