পৌষালী চক্রবর্তীর পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

চৌষট্টি যোগিনীর একজনকে

পুরোনো জমিদার বাড়ির পরিত্যক্ত আঘাটায়
জমে থাকা শ্যাওলার মতো
তোমাকে আহ্বান করি,
একবার এ সংসারে এসো
দু-এক দিন কাটিয়ে যাও আমাদের রোজনামচায়
দেখে যাও জলে ভেজা সলতে কতটা অগ্নিশলা ধারণ করতে পারে, আদৌ পারে কিনা?
এই মন্দ্র মেঘে বেজে ওঠা সহজিয়া বীণে,
রন্ধ্রপথে ঢুকে আসা নৈরামণি আলো
তার অজস্র পতঙ্গ-প্রলাপ নিয়ে
আমাদের পতন উত্থান
প্রতিদিন জ্বলে ওঠে
প্রতিদিন নিভে যায় অনন্ত ব্যোমে

ওহে পাহাড়পুর,
ওহে মন্দিরবাসিনী
তোমার কৃচ্ছ্রের চেয়ে খাঁটি
তোমার কৃচ্ছ্রের চেয়ে নিপাট

আমাদের নিম্নগা সাংসারিক আর্তনাদ

শতাব্দীর বটবৃক্ষ

একদিন অপলক চেয়ে থাকত সে
মানুষের প্রজ্ঞার দিকে,
জটিলতা ঘেঁষা কিছু নাবিকবিহীন নৌকা
তাকে ছুঁয়ে মনে করত ঘরে ফিরেছে
অন্ধকারে কে পোঁতে গুপ্তধন,
কে খোঁড়ে দ্রোহের সুরঙ্গ
সকালের গোশকট কত খড় বয়ে আনে
সে হিসাব ধরে রাখত সহজ তাকিয়ে থাকা তার

দীর্ঘায়ু বট মানে শতাব্দী ব্যাপী মানুষের ওঠাপড়া
মনে আসে সূর্য কেমন তার আকাশে ক্ষমাহীন জ্বলে
চাষী-মা’র কণ্ঠে ফসল তোলার গান দিনে দিনে আরও পুরাতন হয়…

কেঁপে ওঠে পাতা ও পাতার ছায়া
কান্ডরসে আমূল গাঁথা প্রলুব্ধ কুঠার
পাতাখসা গ্রন্থি থেকে চুঁইয়ে নামে বুকের দুধ
ভেসে যায় ধুলো
এখন সে শুয়ে আছে চেরাকাঠ, শতাব্দীব্যাপী প্রজ্ঞা নিয়ে

মনে তার তাকিয়ে থাকাটুকু তবু ফিরে ফিরে আসে…

পরিযায়ী

পরশ্রীকাতর মেঘে তবু বাজতে দাও পিত্তল, খঞ্জনী
মনে হয় সোনাঝুরি বনসৃজনের পথ ভুল ছিল
মাটির বুকের থেকে ক্ষয়ে যায় ভৌমজল
নভঃদ্বীপে দেখা হয় বনতিতির আর শীতকালীন হাঁসে
অসভ্যের ইশারা আজ মুগ্ধ করে খুব
হাঁস পাখি শূন্য সিঁথি
একাকী শ্রাবণ রোদে আমি তব পরিযায়ী মাধব

সীতা

না, নিষাদ! না, নিষাদ!
ফুটেছিল মৃত্যুমুখী বাণ
বীণাযন্ত্রে যুক্তকরে
সুর আবার কোমল নিষাদ

মর্মর চেয়েছিল কে?
পম্পা সরোবর তীর নিথর বিষাদ

স্কন্ধচ্যুত তৃণের মেখলা
রং ধুয়ে মিশে যাচ্ছে, তমসার আবর্ত জটিল
গর্ভপথে সূর্যালোক, আশ্রমের দেশজ ফিনিক
ফুটে উঠছে পুরুষের আদি অবয়ব

তবু তার কাতরতা, সে চায়নি জলের নির্জন

না, নিষাদ! না, নিষাদ!
তমসাতীরে মুঞ্জঘাস, রৌদ্ররসে অভিনীত বাল্মীকি প্রতিভা

দৈবী

সূর্যালোকে জন্ম নিয়েছিল সাতরঙা যুদ্ধাস্ত্র ও বিরোধী শিবির
পিতৃপরিচয় নিয়ে ছুটে গেছি অপ্রকৃত মানুষের মতো
ঘুমের আগে চোখে ভাসে অস্ত্রের সংঘর্ষে তৈরি আগুনের জয়িত্রীফল
দেশভাগের পর থেকেই তোমার বুকপকেটে থাকে দুর্গাদালানের মাটি
কারণ দেবতাও ভয় পান ভোগ না চড়লে
আর অক্লেশে চোখ মটকে বলেন—কী?
আমার ভয়ের কথা থাক বাছারা…
মারী-মড়ক-যুদ্ধ দেবতাকেও তো পথে বসায়

দন্ডি কাটার পর করতলে ফুটে ওঠে মাতৃহন্তারক রেখা
যে মকরমুখ বনের মধ্যে আজকাল তোমাদের গতায়ত, সেখানে কবুতর বলি চরে মাঘী নক্ষত্রযোগে

ভাতঘুম ভেঙে উঠে দেখি স্বর্ণগোধিকা দেখে বিনা আনাজে বাড়ি চলে এসেছেন কালকেতু…

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *