একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি – জিললুর রহমান ( পর্ব ৪ )
সব কটি পর্ব পড়তে উপরের একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি ট্যাগে ক্লিক করুন।
(চতুর্থ পর্ব)
স্বর্গলোকে
৫৫.
এটাই স্বর্গ কি? এখানে গাছপালা
এখানে ফুল ফল ভিন্ন রং জ্বালা
এখানে সূর্যের নেই সে রোদ তাপ
জোছনা এইখানে দেয় না প্রেম ভাব
পায়ের নীচে নেই মাটির সে মমতা
ময়না গাছে গাছে কয় না প্রিয় কথা
সকলই স্বর্গীয় বেবাক আলাভোলা
৫৬.
সাতটি স্বর্গ কি সপ্ত গ্রহে বাস
বোরাক উড়ে উড়ে দিচ্ছে সে আভাস
স্বর্গে ঘরে ঘরে আলোক জ্বলে রয়
সন্ধ্যা হলে হুর ইশারা ডেকে লয়
ভিঞ্চি তুলি হাতে হুরকে এঁকে যায়
সোনালি যৌবনে স্বর্গ থেমে রয়
আমোদ ফূর্তিতে পেয়ালা মদিরায়
৫৭.
এদন উদ্যানে দেখেছি মেরি মাতা
হাঁটছে দুলে দুলে গাইছে কোনো গাথা
হেলাচ্ছলে ডাকে আঙুল ইশারায়
সকলে কুপোকাত রূপের সে ছটায়
শুধাই ভয়ে ভয়ে কী করে কুমারীর
গর্ভ হয়েছিল, বলবে কে সে বীর?
ভ্রুভঙ্গি আর ঠোঁটে কত যে কহে কথা…
৫৮.
এদনে এককোণে পরম গম্ভীর
স্বয়ং মাতা ইভ হাঁটছে অতি ধীর
বলেছি ‘মা গো তোর আপেলে এত শখ’
ভ্রু তুলে তাকিয়ে সে খুঁটিয়ে গেল নখ
আস্তে নীচু স্বরে, ‘ওসব কিছু নয়
ঝড়ের তাণ্ডবে ছিটকে যেতে হয়’
এদনে ঝড় নেই বাতাস বড়ো থির!
৫৯.
আগামেমননের পাশেই বসেছিল
মুখটি পেরেশান পাইপে টান দিল
বলে কি বাংলায় এখনও ঘুষ খায়
আমার রক্তের স্রোত কি বয়ে যায়
মুখটি ম্লান করে বলেছি ‘চেতনায়
শানিত আছি তবে পকেট তড়পায়’
চোয়ালে রেখে হাত পিতাও কেঁদেছিল
৬০.
যখন ভাবা হল এবার ফিরে যাই
তখন বিষ্ণুকে শিবের সাথে ভাই
দেখেছি কলকিতে জোরসে দিল টান
অমনি লালে লাল হয়েছে আসমান
শিবের গঙ্গার মরণ কালীঘাটে
চলেছে মেরে টান সাজানো কলকিতে
ভাবছে ব্রহ্মার যদিচ দেখা পাই
৬১.
মনটা কালো করে প্রমিথিউস বসে
চিরস্থায়ী দাগ কোমরে দড়ি কষে
আস্তে কানে কানে গুরুকে বললাম
ধন্যবাদ আজ দিতে এসেছিলাম
‘আগুন সামলাতে পারেনি মনুষ্যে
অস্ত্র বানিয়েছে’ বলল আপশোশে
অলিম্পাসে ধ্যানে বন্দি আঁক কষে
৬২.
চৌবাচ্চার ধারে আরকিমিডিস কি!
পেয়েছি বলে বলে করছে হাঁকাহাঁকি
বাচ্চা শিশু যেন কেবল লাফ ঝাঁপে
ব্যস্ত দিন রাত জলটা কেন কাঁপে
বলল নিয়ে এসো একটা নিউটন
হঠাৎ হাঁটা দিল ত্রস্ত হনহন
আমি তো ভবঘুরে গণিত কিছু বুঝি?
৬৩.
ওদিকে নিউটন ঘোড়াতে মাতামাতি
ঘোড়ার শক্তিকে মাপবে রাতারাতি
বলকে ছুঁড়ে দিয়ে দৌড়ে মাপে পথ
কতটা আসমানে উড়তে পারে রথ
আপেল গাছ তলে হা করে বসে থাকে
সামনে সুকঠিন দেয়াল দেখে ছোটে
তৃতীয় সূত্রের জন্যে মারে লাথি
৬৪.
দেখি জুলেভার্ন সঙ্গী হল মোর
বেলুন সাথে সেই নটিলাসের ঘোর
মরার পরে যদি গল্প লেখা যেত
বিশ্বভ্রমণের হিসেব গুলে খেত
রাইট ভ্রাতাগণ বলে জুলেভার্ন
তোমার গল্পের প্রেরণা গায় গান
বিশ্ব উড়োযান দেখেই কী বিভোর
৬৫.
গোড়ালি চেপে ধরে সুবীর একিলিস
বসেছে উদ্যানে মাখছে কিসমিস
বলছে মাগো তুমি চুবালে নদীবুকে
গোড়ালি ধরেছিলে বলো তো কোন্ দুখে
মা বলে ‘বাছা মোর, না হলে ডুবে যেতি’
পুত্র বলে তাকে সে ছিল আয়ু নদী
ডুবলে ক্ষতি নেই জল তো শুভাশিস
৬৬.
দেখি কী পেনিলোপি নকশি কাঁথা তার
বুনছে চুপিচুপি মুখটা করে ভার
বলে, টেলেমেকাস, এলো কি বাবা তোর
এখনও কাটেনি কি ডাইনিদের ঘোর
বেচারা ছেলে তার বলবে কোন্ মুখে
বাবা ও অপ্সরী স্বর্গে মহাসুখে
আস্তে চলে যায় মুছতে চোখ তার
৬৭.
দেখি ইসরাফিল শিঙ্গা হাতে হায়
কোটি বছর ধরে দাঁড়িয়ে বেহুদাই
পাশেই সুরাপট পাশেই ফলাহার
বলছি এসো করি সুরার ব্যবহার
পায়ে তো ধরে খিল করছে ঝিনঝিন
সময় হলে পরে বাজাবে তবে বীণ
ইসরা উঁকি মেরে সুরাটা পিয়ে যায়
৬৮.
স্বর্গে যত ভাসি মেঘের শতদলে
দেখেছি সবখানে বাংলা ভাষা চলে
ওমর খৈয়ম পড়ে রুবাইয়াৎ
রুমির মসনবী করছে কুপোকাৎ
তবুও মোনায়েম উর্দু বাত মাতে
গজল গালিবের চলেছে ফারসিতে
স্বর্গে কিছু নেই নিজের ভাষা বলে
৬৯.
রাজা যুধিষ্ঠির, কুকুর সাথে করে
স্বর্গে হেঁটে এলে, সে কোন্ অধিকারে?
বউকে বাজি ধরো, গুরুকে ছলনায়
রেখেছো সারারাত সে শরশয্যায়
তোমাকে ডাকে নাকি ধর্মের পুত্র
তুমি তো অথর্ব যুদ্ধে অসমর্থ
‘সবাই শুনে যাবে’ বলল নতশিরে
৭০.
হে পার্থ সারথি, কর্ণ রথে চাকা
এভাবে ভেঙে দিলে, বলবে মাজেজাটা?
অশত্থামা গজে, কৃষ্ণ প্রভু মোর
ছলনা করে গেলে, বলো তো একী ঘোর?
তোমার বাঁশি সুরে সহস্র ললনা
রাত বিরেতে ছোটে প্রেমের দেওয়ানা
মুচকি হাসে কালা, বলে না কোনো কথা
৭১.
চাঁদ সওদাগর ভীষণ গেছে ক্ষেপে,
লখিন্দরটার বাসরে ফুটো আছে!
বেহুলা বলিহারি ছুটেছে ভেলা ভেসে
আত্মা ভিখ নেবে সর্পিনীর কাছে।
সে কবেকার কথা এখনও স্বর্গেতে
সওদাগর কেন রাগটা পুষে রাখে
মনসা দূর থেকে মিটমিটিয়ে হাসে
৭২.
লেখে ফেরদৌসী লড়েছে সোহরাব
ওদিকে রুস্তম চিনেছে বেটা বাপ
হাজার বছরে তো মামলা মিটে গেছে
তবুও শাহনামা রেখেছে কাছে কাছে
এখনও মাঝেমাঝে দু-চার শব্দের
করতে পারে কবি কিতাবে হেরফের
তাই তো মিল চায় বাপ ও সোহরাব
৭৩.
ষষ্ঠ সহস্র শব্দে শাহনামা
স্বর্ণ মুদ্রায় তাকে কি যায় মাপা
মামুদ গজনবি বুঝতে দেরি করে
শব্দ সাজিয়েছে যত্নে অভিসারে
কবির ক্ষোভ সেটা যাবে কি এত সোজা
যাকেই মনে ধরে কাব্যে মারে খোঁচা
ঘুমায় বুকে ধরে অমর শাহনামা
৭৪.
এদিকে বোররাক চেঁচিয়ে ডেকে ওঠে
সকাল হয়ে গেলে নামাবো কোন্ গোঠে
বলেছি রাত্রিকে লম্বা করে দাও
দেখার কত বাকি দেখিনি সেই নাও
করে যে নৌকাটা বৈতরণীর পার
তাকে তো একবার দেখাটা দরকার
নাখোশ বোররাক হারিয়ে দিশা, ছোটে…
৭৫.
গালিব দিশেহারা সুরার বাটি হাতে
কেউ কি দুটো পেগ ঢালবে তার পাতে
এখানে চাইলেই দু-ফোঁটা মিলে যায়
ব্রিটিশ মাসোহারা কতটা হত হায়
দু-ফোঁটা পেটে গেলে মাশুক খোঁজে সে তো
স্বর্গে কোথাও সে আছেই লুকায়িত
আশেক মাশুকের এ খেলা দিনে রাতে
৭৬.
স্বর্গ-সমুদ্রে ইকথিয়ান্ডার
কানকো ফোলা করে দেখল একবার
সেই যে পৃথিবীর এক সালভাতর
জীবন পালটালো হেথাও উভচর
দেখছি দুনিয়ার সবই থেকে যায়
স্বর্গে শুধু ওই বাতাস পালটায়
মুচকি হাসি ছোঁড়ে আলেকসান্দার
৭৭.
একটু নিরিবিলে শরৎচন্দ্রকে
লিখতে দেখি বসে রামের সুমতি’কে
স্বর্গে বসেও সে লিখছে পাড়া গাঁ’র
নষ্ট সমাজের ভ্রষ্ট অনাচার
বলি হে, ইন্দ্রকে দু-চার অভিযান
দিলে কি ক্ষতি হত? মরতো অভিধান?
শরৎ হেসে বলে ‘লিখি শ্রীকান্তকে’
৭৮.
গোরাকে দেখলাম খুঁজছে বিনয়কে
এখন সবকিছু খোলাসা হয়ে গেছে
ধর্মবন্ধন ছুটেছে ফুৎকারে
সে থেকে দায়ভার সবটা গেল উড়ে
বিনয় কোথা গেল পরম বন্ধুটা
গর্ব ভরে কত করেছি অহমিকা
সকল ধর্মই অর্থ হারিয়েছে!!
৭৯.
কে জানি লুভরকে স্বর্গে এনে রাখে
স্বর্গবাসীরাই দেখছে উৎসুকে
সারাটা ভুবনের সকল গরিমাই
লুভরে একসাথে কিছুটা বুঝা যায়
তুতেনখামেনের মমিও বসে নেই
নসটাডিমুসও শুয়েছে সেখানেই
তাদের আত্মারা দেখছে হতবাকে
৮০.
কোথায় ওফেলিয়া খুঁজছে হ্যামলেট
স্বর্গ নদীতীরে ঘাসের ভ্যালভেট
সেখানে ওফেলিয়া বুকটা চাপড়ায়
অভাগা হ্যামলেট একটু বুকে আয়
স্বর্গ মানে মায়া পৃথিবীটার ছায়া
এতটা যুগ গেল মেলেনি তার কায়া
শুনছো ওফেলিয়া শুনছো হ্যামলেট
৮১.
জুলেখা বিবি চেপে ধরেছে আঙুল
আপেল কাটতেই ইশকে করে ভুল
বাদশা দুহিতার এই কী দুর্মতি
স্বর্গেও পেল না ইউসুফের প্রীতি
প্রেমের নদীজল নিত্য বহমান
দুপাড়ে দুইজন বিকেলে হেঁটে যান
মেলে না প্রেম এই স্বর্গে একচুল
৮২.
এবার যেতে হবে শুধুই আপশোশ
দেখিনি হ্যামলেট ওথেলো ইডিপাস
রবিঠাকুর বলে ওসব পাবে মনে
কবির মন ছাড়া পাবে না ত্রিভুবনে
তবুও ম্যাকবেথ কোথাও বসে থাকে
মনের কোণে কোণে ভাগ্যটাকে ডাকে
এসব না থাকুক রয়েছে সিসিফাস
৮৩.
দিদার নবিজির মিলেছে একবার
পড়ো তো, বললেন, নামাজ পাঁচবার?
বলেছি, মাঝেসাঝে, বাদ তো পড়ে যায়
ক্বাযাটা পড়ে নিও, হৃদয় তড়পায়
দেখিনু বুড়িটাকে হঠাৎ রাস্তায়
এখনও পথে কাঁটা ছড়িয়ে রেখে যায়
স্বর্গে দুনিয়ায় ভেদটি কোথা আর
৮৪.
বুড়ি তো নরকের হবার কথা কীট
তবু সে কেন এত কাছেই নবিজির
কর্তব্য কাজের নেই তো অবহেলা
পুঁতেই যায় কাঁটা দিনের দুইবেলা
নিষ্ঠা গুরু ভাই নিষ্ঠা পেল দাম
ধন্য সুবিচার ধন্য পর-ধাম
বুঝি না লীলা তার বুঝি না হার জিত
৮৫.
তাঁহার জন্যে তো সৃষ্টি জগতের
কেটেছে কতদিন তবুও অভাবের
বলেছি উম্মত রাতকে করে দিন
শুকর খায় নাকো ঘুষটা প্রতিদিন
সুদকে লাভ ভেবে নিয়ত খেয়ে যায়
হত্যা রাহাজানি রেপও বাদ নাই
পাবে কি সুপারিশ এরা হযরতের ?!
লওহে মহফুজে
৮৬.
লওহে মহফুজে দু-চার কথা বলি
ভাবছি সে মহান কোথায় গেল চলি
জোরসে হেঁকে ডাকি আমাকে দেখা দাও
‘আমাকে বিশ্বাসে মনটা ভরে চাও’
এতটা টেনে এনে এ কোন্ লীলা কও
তুমি কি সকলের একক প্রভু নও!
তখতে ভেসে থাকে মেঘের পদাবলি
৮৭.
জলদ গম্ভীর কণ্ঠে বাণী আসে
হৃদয় ভরে যায় স্বপ্ন আর ত্রাসে
‘তখতে বসে কেউ চালাতে পারে বুঝি
নিখিল বিশ্বটা চক্ষু দুটো বুজি’
কোথায় দেখা পাবো খুঁজতে কোথা যাই
বলল ‘সৃষ্টির ভেতরে খোঁজা চাই’
তখতে ঝিঁঝিঁ ওড়ে শুভ্র মেঘ ভাসে
৮৮.
পরোয়ারদিগার একটু তবে বলো
আপেল কামড়ালে কী তব এল গেল
লক্ষ মানুষেরা সারাটা দুনিয়ায়
রাত্রি দিন কাটে কত না বেদনায়
তোমার স্বর্গে তো জায়গা কম নয়
গ্রহের পরে গ্রহ ভাজছে চিড়ে খই
মানুষ জ্ঞান পেলে কী ক্ষতি বেড়েছিল!
৮৯.
গড়েছ মাহফুজ সপ্ত আসমানে
তোমার এত ঘর তবুও পথে ঘাটে
সে ঘরে ঠাঁই নেই বাস্তুহীনেদের
ঘরের পাহাড়ায় মোল্লা পুরুতের
আস্ফালনে সব হারায় সম্বল
ভিক্ষা করে যত এতিম শিশুদল
তোমার দুনিয়ায় কতটা ঘর লাগে?
৯০.
যে শিশু জন্মেই আকাশে উড়ে যায়
ধরেছে পেটে কেন নয়টি মাস মা’য়
যে শিশু বড়ো হয় পিতা ও মাতাহীন
কে তাকে মমতায় জড়াবে প্রতিদিন
যে ফুল ফুটলেও গন্ধ না বিলায়
এভাবে জীবনের গূঢ়তা বৃথা যায়
তুমি না রহমান সকলের সহায়
৯১.
যখন ভোররাতে লওহে মাহফুজে
চোখটা ঘুমে বুঝি আসছে খুব বুজে
তখন গম্ভীরা উচ্চ নিনাদে কে
বলল ‘এখানেই সৃষ্টি জমে থাকে’
বলেছি অস্ফুটে মালিক রব্বানা
তখনই গর্জালো ‘তোমার নেই জানা
স্রষ্টা সৃষ্টিরই ভেতরে থাকে গুঁজে’
৯২.
হঠাৎ আজানের হাল্কা সুর শুনে
হাবসি বেলালের কণ্ঠ গুনগুনে
বলল পেয়ালায় রসটা ভরে নাও
সৃষ্টি এত মজা বুঝলে না সেটাও
বেলাল কানে কানে বলল ‘পৃথিবীতে
হাবসি আজও কাঁদে মেলে না মুক্তি যে
আজান আজকাল বোঝে না কোনোখানে’
নরক গুলজার
৯৩.
মেরাজ প্রতিদিন হয় কি কারো ভাবো
তাই তো নরকেও একটু ঘুরে যাব
নরকে দরজায় ভয়াল দ্বারীগণ
আগুনে হলকায় করছে গনগন
আগুনে দেখেছি তো হাজার রাজাকার
দোজখে বসে করে নিত্য হাহাকার
‘নরকে এক ঋতু’ পুড়বে আগুনেও
৯৪.
নরকে বহে না কি শরতে বায়ু মৃদু
নরকে যত ঋতু শিল্পী জানে যাদু
লিওনার্দো বুড়ো এখনও তুলি হাতে
প্রিয় মোনালিসার বুকের ভাঁজ আঁকে
নরকে মোনালিসা মুচকি হাসি দিলে
আগুন থেমে থাকে মোচড় ওঠে দিলে
নরক মানে বুঝি আগুনে এক ঋতু!
৯৫.
হঠাৎ ঝলকায় ক্লিওপেটরা রূপ
দেখছি চারপাশ সকলে নিশ্চুপ
বলল কাছে ডেকে শোনাও কাহিনিটা
আরব্য রজনী কিংবা রাম সীতা
আমারও শিশ্নতে করেছে শিরশির
ঠোঁট কী কামনায় কেঁপেছে থিরথির
এ বুঝি অপসরী এ বুঝি কামরূপ
৯৬.
কামাখ্যা দেবী ও জুলেখা রূপবতী
বুঝিনি কী তাদের ছিল যে মতিগতি
কোথাও মেরিলিন করছে ছলাকলা
অড্রে হেপবান কথায় মধু ঢালা
নরকে সারাদিন প্রেমের মহড়ায়
দেখছি কত লোক এখনও ফেঁসে যায়
আফ্রোদিতি প্রেম, প্রেমেই ভানুমতি
৯৭.
ফাউস্ট কোন্দিকে বিগড়ে বসে আছে
মেফিস্টোফেলিস ছুটেছে তার কাছে
ভাবছি দুষ্টুটা না জানি কী যে করে
অমনি পড়ে যাই গ্যাটের খপ্পরে
বলল হাত ধরো ছোটো না অযথাই
ওরা এ উর্বর মাথার ধারণাই
ফাউস্ট পড়েই মাথাটা বিগড়েছে
৯৮.
ভেনিস শহরের দুষ্ট শাইলক
নরকে পুঁজ খায় করছে বকবক
সারা গা চুলকায় মাথাটা ঝুলে থাকে
কেন যে ঠকিয়েছে এন্টোনিওটাকে
শালার পোর্তিয়া উকিল সেজেছিল
না হলে রাজা বেশ মেনেই নিয়েছিল
সেদিন জিতে গেলে পেতাম না নরক
৯৯.
আগুন কোথা থেকে এমন গনগনে
খুঁজতে দেখি জন হেনরী গুনে গুনে
হাঁপর টেনে গেছে হাজার সাল ধরে
শিকাগো শহরের অনেকে এই করে
এমন বাংলায় এমন চীনে হয়
এসব পৃথিবীতে নতুন কিছু নয়
আগুন বুকে জ্বলে ভীষণ চনমনে
১০০.
মাতৃসম্ভোগ নতুন কিছু নয়
এখন পৃথিবীতে হরহামেশা হয়
তবুও ইডিপাস অভাগা ইডিপাস
দৈব ভাগ্যের চিরন্তন দাস
গেলেছে দুইচোখ মাতম হররোজ
পেলো না স্বর্গেও দৃষ্টিটার খোঁজ
হায় রে ইডিপাস মায়ের স্নেহ চায়
১০১.
ওথেলো, নরকের কীটেরা কামড়ায়
আগুনে পুড়ে কাঠ পুঁজেরও গামলায়
ডেসডিমোনা দেখো স্বর্গে একা বসে
কেমন হতাশায় অযথা কাঁদে হাসে
স্বর্গ যে চালায় সেও কি অসহায়
পারে না জুড়ে দিতে এদের দুজনায়
ও শেক্সপিয়র, তুমিও নিরুপায়!
১০২.
ফাউস্টের আত্মা এখন নরকেই
জানে না কতদিন এখানে পচবেই
আত্মা বেচেছিল মেফিস্টোফেলিসে
দুজনে নরকের পিপাসা মেটাচ্ছে
আগুনে হলকায় সাপের গামলাতে
ওঠে নাভিশ্বাস পারে না সামলাতে
শাপান্ত করে যায় জনক গ্যেটেকেই
১০৩.
নরকে কীটদল মানুষ খুঁটে খায়
নদীতে জল নয় গরল বহে যায়
মানুষ কেন করে এমন অপরাধ
শাস্তি পেতে হয় অযুত দিনরাত
মানুষ মরে গেল দেহ তো পচে যায়
তবে এ অবয়বে ও কারা কাতরায়?
কী করে আত্মারা অতটা ব্যথা পায়!
১০৪.
এটা ইনফারনো এখানে একদিন
সেজেছে ডিভাইন মঞ্চ কমেডির
এখানে বলা হয় দান্তে এসেছিল
নয়টা বেড়ি ঘুরে কত কী দেখেছিল
প্রতিটি বেড়ি ছিল নরক গুলজার
প্রতিটি ক্ষণ ছিল কী উৎকণ্ঠার
ও প্রিয় বোররাক ভিন্ন পথে নিন
১০৫.
দু’কাঁধে ফেরেশতা দোঁহাকে জিজ্ঞাসি
বলো তো দুই ভা’য়ে এসব কী দেখছি
যা চলে পৃথিবীতে এখানেও চলছে
দেখো সে হ্যামলেট বিদ্বেষে জ্বলছে
স্বর্গে বাসিন্দা কেরামান মোটে না
স্বর্গ যা ভাবি তেমন পাচ্ছি না
কাঁধেই থেকে থেকে জানে না কোনোকিছু
১০৬.
নরকে একপাশে বসেছে সমাবেশে
নিটশে বলে যান হাল্কা কেশে কেশে
মরেছে ঈশ্বর বিজ্ঞানের হাতে
আবারও মরবেন নরকে এক রাতে
বলছে মাথা নেড়ে শালার হিটলার
না বুঝে ইহুদিকে মেরেছে বেশুমার
নরক জেগে ওঠে হাঁপরে উল্লাসে
১০৭.
একটু ছবি আঁকা আর তো কিছু নয়
এটুকু দিতে কেন কুণ্ঠা পৃথিবীর
অনেক বার নিজে নিয়েছে তুলি হাতে
বাপ ও সমাজের বেজায় রাগ তাতে
কেড়েছে রং তুলি কেড়েছে স্বপ্নকে
পৃথিবী ক্যানভাসে ছড়িয়ে রক্তকে
হিটলারের ছবি তাবৎ দুনিয়ায়
১০৮.
গোপন সল্লায় বেনিটো মুসোলিনি
হিটলারের সাথে সারছে বিকিকিনি
কম তো যায় নাই আলেকজান্ডার
পাশেই সম্রাট জনাব আকবর
আটটি নরকের কোন্টি হবে কার
বানর পিঠা ভাগ করলে যা হবার
লিওপল্ড বলে কেড়েই নেবো আমি
১০৯.
মিলেছে দেখা সেই হাবিল কাবিলের
নারীর জন্যেই হত্যা হাবিলের
কাবিল হতে হলে রক্ত লাগে হাতে
অভাগা হাবিলের রক্তপাত বুকে
সেদিন জয়লাভ কাবিল করেছিল
এখনও যারা জিতে কাবিল তাকে বলো
বসুন্ধরা আজ দখলে কাবিলের
[ক্রুমশ]
[শীর্ষচিত্র: ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ]