ভোজ কয় যাহারে (ষোড়শ পর্ব) : Lets পেঁপে – সত্যম ভট্টাচার্য

ভোজ কয় যাহারে (ষোড়শ পর্ব) : Lets পেঁপে – সত্যম ভট্টাচার্য

শেয়ার করুন

এমনি এমনি কথায় বলে না যে দাঁত থাকতে লোকে দাঁতের মর্ম বোঝে না। মফস্বলে যখন বাড়ি ছিল কত কিছু জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আশেপাশে। গাছেই পাকছে ফল, কখনও আবার সে সব পেকে গাছ থেকে পড়ে যাচ্ছে। মা হয়তো দেখে-শুনে গাছ থেকে পেড়ে কেটে নিয়ে ডাকছে খাবার জন্য, পাত্তাই দিচ্ছি না। কখনও ভাবিইনি যে এমন দিনও আসবে যখন বাজার থেকে দস্তুরমতো সেসব জিনিস কিনে খেতে হবে।

এর আগের পর্বেই এমন একটি কিছু নিয়ে আলোচনা করেছিলাম যা কাঁচায় সবজি, আবার পাকলে ফল। আজও তেমনই আরেকটি সবজি নিয়ে কথা বলব যা একেবারে আমাদের গ্রাম বাংলার। কথা বলব পেঁপে নিয়ে। 

পড়াশোনা করতে তখন কলকাতায় মেসে থাকি। টাকাপয়সার টানাটানি এমনই যে সন্ধেবেলায় মিষ্টির দোকানের পাশ দিয়ে যাই না, কারণ সেখানে অমৃতি, কচুরি ইত্যাদি ভাজা হচ্ছে, অন্য রাস্তা ধরে যাতায়াত করি। তো সেসব দিনে মেসের রান্নার মাসি না এলে আমরা স্টেশনের পাশে একটি হোটেলে খেতে যেতাম যেখানকার রুটি বানানোর লোকটি রাত নটা নাগাদ আটার গুড়োতে প্রায় সাদা হয়ে যেত। হোটেলটির নাম ছিল চার নম্বর। কারণ পরে জেনেছি যে চার নম্বর লাইনের পাশে হওয়াতেই হোটেলটির নাম হয়ে গিয়েছিল চার নম্বর। তো সেই চার নম্বরে আমরা যে রুটি খেতে যেতাম সাথে যে সবজিটি দিত তা ছিল আলু, পেঁপে আর বড়ি দিয়ে বানানো। সাথে বিলিতি ধনেপাতার গন্ধ এই পদটিকে কী যে সুস্বাদু বানিয়েছিল যে আজও রুটি বা পেঁপের তরকারি খেতে বসলেই সেই তরকারিটির কথা মনে পড়ে যায়। 

আর সেই যে মফস্বলের বাড়ির পেঁপে গাছগুলোর কথা বলছিলাম তারা কখনও ফলের ভারে একদিকে ঝুঁকে যেত। আবার ঝড় হলে আর গাছে প্রচুর ফল থাকলে সে পেঁপে গাছের মাথা যেত ভেঙে। তখন আশেপাশের বাড়িতে পেঁপে বিলিয়ে দেওয়া হত। আর মিষ্টি পেঁপের কী যে স্বাদ! আহা! মুখে দেওয়া মাত্রই সে গলে মিলিয়ে যেত মুহূর্তে। আর এমন দিনকাল পড়ল যে এবছর পাকা পেঁপে কিনে খেলাম আশি টাকা কিলো আর কাঁচা পেপে এই তো গতকাল বাজার থেকে আনলুম তিরিশ টাকা কিলো। 

যাক গে, এসব পুরাকালের কথা। যা গিয়েছে একবার জীবন থেকে তা গিয়েছে। কী হবে ভেবে? তার থেকে বরং একবার দেখে নেওয়া যাক যে কীসে কীসে কাঁচা পেঁপে পড়লে স্বাদ খোলে সেসব সবজির। এই দলে প্রথমেই মনে পড়ে যায় শুক্তোর কথা। পেঁপে ছাড়া শুক্তোর মজাই আসবে না। সে সাথে যতই সজনেডাঁটা, আলু, বেগুন, গাজর থাকুক না কেন। 

এছাড়াও গরম ভাতে ডালে দেওয়া নরম তুলতুলে পেঁপে। একটু কাঁচা তেল ছড়িয়ে তা খেতে কি যে স্বাদ, যে খায়নি সে কল্পনাও করতে পারবে না। ভাতে সেদ্ধ দিলে অবশ্য পেঁপে একটু শক্ত বা কচকচে থেকে যায়।         

এরপরেই স্বচ্ছন্দে চলে আসা যায় সেই সব পেটখারাপের দিনের কথায়। যখন পাতলা জলের মতো মাগুর বা শিং মাছের অল্প হলুদের ঝোলে দেওয়া থাকত লম্বা ফালি ফালি করে কাটা পেঁপে আর কাঁচকলা। একদিন দুদিন বিনা খাওয়াদাওয়ার পর সে পথ্য তখন যেন অমৃত।

এছাড়া আছে পেঁপের ডালনা। তাকে আলু বড়ি দিয়ে সেই যে বললাম চার নম্বরের মতো করেও খাওয়া যায় আবার বেশ একটু বেশি করে ঘি গরম-মশলা দিয়েও খাওয়া যায়। এছাড়াও আছে পেঁপে ঘণ্ট। 

আবার বাড়ির আর ছোটোবেলার কথায় ফিরে যাই। বাড়ির কুয়োরপাড়ের সেই পেঁপে গাছগুলোতে প্রায়শই এসে বসত হলুদ পাখি। তখন জানতাম না যে তার নাম বেনেবৌ। পরে যখন ক্যাকটাসের হলুদ পাখি গানটা শুনেছিলাম, কী ভালোই যে না লেগেছিল। মনে হয়েছিল এই সব তো আমারই কথা। এছাড়াও সেই পেঁপে গাছে ক্যামোফ্লেজ করে এসে বসত বসন্তবৌরি পাখি। নিজেদেরকে প্রায় অদৃশ্য রেখে তারা একে একে সাবাড় করে চলত পাকা পেঁপেদের।   

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২