অয়ত্রীক-এর পাঁচটি কবিতা
মায়া
বয়েস তো কমে এল, নীল নীল আলো
জ্বলে আছে যে জাহাজ ভাসিয়েছ তাতে
শুধু পরের প্রভাতে
মিশিও না জল আর, নোনাবালি, চরাঢেউ
রৌদ্র প্রতাপে
এ মায়ার বিষ নেই, বিষ নেই
নৈঋতে আর; সন্ধের মাঝখানে ট্রাফিকের মতো
কারা যেন মিশিয়েছে ভৈরবী রাগ
ভৈরবী রাগে গাই, এই রাতে চুরি গেছে
কোনো এক বৈষ্ণবী চাঁদ
তবুও অবুঝ প্রবাদ
কারা যেন রটিয়েছে মায়া নেই আশা নেই বলে
তাদেরকে বলে দিও, কারা যেন অসময়ে
রোদ রেখে গেছে আর সোনালি বেলুনগুলো
উড়ে গেছে বৃষ্টির পর; উড়ে গেছে শহরের ’পরে
ছাদেরা
বড়ো ছোটো বাক্সগুলো, তার উপরে জমাট আকাশ
ভোরে তার ঘুম ভেঙে যায়, অথবা, রাত্রি জাগে
এ শহর নিচ্ছে টেনে, মানুষ আর পলেস্তরা
তারাখসা রাত আমাদের, সস্তার আলোকমালা
যে মলিন জানলাগুলো জানাচ্ছে, এই যে আছি
এ থাকায় রোদ লাগে না, লাগলেও কার কী তাতে!
বাক্সের ভীষণ ভিড়ে মান আর হুঁশ হাতড়াতে
শহরের রৌদ্রছায়ায় দুইখান পদ্য লিখি
একটাতে সন্ধে রাখা, অপরটা ছাই গোধূলি
বাক্সের ভিতর থেকে জমা সেই পদ্যগুলো
একদিন ঠিক বেরোবেই, রংচঙে পত্রিকাতে
পুরোনো স্মৃতির পাতায় বাজারের হিসেব লেখা
তাও থাকে বাক্সগুলোয়, ধুলো পড়ে, বৃষ্টি পড়ে
এবং এক মেঘকিশোরীর মনে শুভদৃষ্টি পড়ে
কারা থাকে অপেক্ষাতে? গোপনীয় কৃষ্ণচূড়ায়
বিকেলের রং লেগে যায়
বিপ্রতীপে
সন্ধে হল, এখন তুমি আগুন জ্বালো
কোন প্রদীপে? নিথর আমি
দু’হাত বাড়াই
যখন তোমার বিপ্রতীপে। সন্ধে হল
নামলো না আর বটের ঝুরি
নামলো না আর প্রেতের মালা। নামলো শুধু
অন্ধকারে ফুরিয়ে যাওয়া ভাতের থালা
সন্ধে হল, যখন তুমি থামলে আমার
বিপ্রতীপে; ছাই হল সব আগুন আমার
ছাই হল সব। জ্বলল শুধু
তুষের আগুন, একলা কোনো নিষ্প্রদীপে
অন্ধকারে,
মেঘদূত
চুক্তি ভেঙে দাও, বিফলে মনোঃকায়
বর্ষা চলে এলে চকিতে নিরুপায়
যে গাছে ছায়া হয়, তাহারও পরাভব
যাবৎ পথিকের বর্ষাতি উপায়
আমিও নিরুপায় যেন অসম্ভব
করবীফুলতলে স্নেহের কলরব
শাড়িটি সরে যায়, সে খোলা কেশে, হায়!
কী যেন ভেঙে গেল! আকাশ? মেঘছায়?
যে বাধা ছিল আজ, চুক্তি ভেঙে দাও
অধরে বর্ষাতি, আড়ালে মেঘদূত
যতটা লাজ ছিল হারিয়ে গেছে তাও
জানি এমন ঘোরে স্বপ্ন থেমে যায়
অমনি উদ্যত ছন্দে নীর বায়
বাতাস থেমে গেছে তোমার আঙিনায়
সে শাড়ি সরে যায়, সংসারের দিন
শালিখি বিদ্রুপও অজেয়, অমলিন
তবুও জানা যায় যে শুধু মেঘ নয়
নিবিড় বাতায়নে সিক্ত মেঘদূত—
মিথ্যে মায়া তার, গোপন কালো কায়
তোমার দেহ জুরে টগর ফুটে যায়
মেঘদূত /২
বিরতি নেই আর, অদেখা কুয়াশায়—
আপনা মাংসে হরিণি বৈরি;
আমিও রয়ে গেছি স্মৃতিমলিন গাঁয়ে,
এখানে বিরহের স্পর্শ পাওয়া যায়।
হরিণী বৈরি, আমিও বোকা মন-
ত্বমেব হব বলে আগুনও তৈরি;
তৃষ্ণা আঁচড়ালে মেঘের ঘন চুল,
চকিতে অসময়ে বর্ষা নেমে যায়!
বিরতি ফুরিয়েছে, তদীয় গন্ধে
নেশাড়ু হেঁটে চলি বিরহী ছন্দে;
কানে নূপুর বাজে, বারোটা বেজে যায়—
আলতা রাঙা পথে ঝরেছে সাদা ফুল,
চকিতে অসময়ে বৃষ্টি নেমে যায়—
তোমাকে লিখে ফেলি ছন্দে, কবিতায়;
বৈরি হরিণীর স্পর্শ হলে ভুল
গোপনে ফিরে যাব স্মৃতিমেদুর গাঁয়।
যেখানে ভালোবাসা যেখানে মেঘদূত
গোপনে বিপ্লবী পত্র লিখে যায়;
বিরতি নেই আর, অশ্রু জমে থাকা—
সকল মেঘ থেকে বর্ষা নেমে যায়।।