|

যুদ্ধ নয় শান্তিই হোক মানুষের ভবিষ্যৎ – প্রদীপকুমার ভাদুড়ি

শেয়ার করুন

বাংলায় প্রবাদ আছে – রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। উলুখাগড়া কী? এখানে বলা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাধারন মানুষ কোনোদিনই যুদ্ধ চায়নি, এখনও চায়না। কিন্তু রাষ্ট্রশক্তি ক্ষমতার দর্প, সেইসঙ্গে সম্পদ লুট এবং পরাজিত গোষ্ঠীর মানুষকে বন্দী করে নিয়ে যেত শ্রমশক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনে। প্রাচীন কাল থেকেই  সম্পদ এবং শ্রম লুন্ঠন চলে আসছে। এই লুন্ঠনের জন্যেই যুদ্ধ।  আজকে বিশ্বজুড়ে লুন্ঠনের পদ্ধতি পালটেছে। বিশ্বায়নী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা লুন্ঠন প্রক্রিয়াকে সর্বজনীন চরিত্র দিয়েছে। যুদ্ধ ব্যতিরেকেও রাষ্ট্রশক্তিগুলোর মদতে আজকের কর্পোরেট পুঁজি সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাকে লুন্ঠনের নয়া উদারবাদী চেহারা দিয়েছে।
পুঁজিবাদের এই চরমতম লুন্ঠনের ব্যবস্থা লাগু করার আগে গত  কয়েক শতাব্দী ধরেই বহু যুদ্ধ এবং গত শতাব্দীর দুটি বিশ্বযুদ্ধ বলা যায় চরমতম লুন্ঠন এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠার  প্রক্রিয়া।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বায়নী ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সার্বিক লুন্ঠনের পরিস্থিতি এখন  কোনো কোনো শক্তিমান রাষ্ট্রের মনঃপুত হচ্ছে না। সুতরাং পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে যাতে আরও ছোট বড় যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতা লোলুপতার সাফল্য অর্জন করা যায় এবং সমগ্র পৃথিবীর সম্পদকে কুক্ষিগত করা যায় এবং উলুখাগড়া নামক সাধারণ মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সমস্ত ধরনের অধিকারগুলো ক্রমাগত সংকুচিত করা যায়।
দুটো বিশ্বযুদ্ধে আমরা দেখেছি এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধগুলোতে ক্রমাগত সাধারন নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের ক্রমবর্ধমান ধ্বংস, সার্বিক লুন্ঠন ও মৃত্যু।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমরা দেখেছি শতকরা পাঁচভাগ  মানুষ মারা গিয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় বিশযুদ্ধে সেটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ালো শতকরা ছেষট্টি ভাগ। আজকের দিনে যে কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধে শতকরা আশি থেকে নব্বই ভাগ নাগরিক জনসাধারনের সম্পদ ও জীবন বিনষ্ট হয়।
বাস্তবত দেখা গেছে কোনো যুদ্ধই, সে বিশ্বযুদ্ধ কিংবা আন্তরাষ্ট্র যুদ্ধ – সাধারন মানুষের স্বার্থ জড়িত নয়। কোনোদিনই নয়। ছোট্ট দেশ ভিয়েতনাম। সেখানকার মানুষের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেন? সেখানকার মানুষ ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ  থেকে মুক্তি চেয়েছিল। পরিবর্তে সেখানে প্রথমে ফ্রান্স, তারপরে আমেরিকা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে দেশটাকে ছাড়খাড় করে দিল। জানা গেছে প্রায় আটকোটি লিটার অরেঞ্জ গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের মোট জমির সাতভাগের একভাগ জমিতে। মেকং ডেল্টা, সেখানে বনজঙ্গলকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র ভিয়েতকং গেরিলাদের খুঁজে বার করার জন্যে। নাপাম বোমার কথা তো বিখ্যাত হয়ে গেছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে।  আমেরিকার মিলিটারি পরিকল্পনাই ছিল দেশটাকে ধ্বংস করে দেওয়া যাতে সেখানকার আধিপত্য কমিউনিস্টদের হাতে না যায়। জানা গেছে  ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা কুড়ি বছরে ছত্রিশ লক্ষের মতো। এই হত্যা ও মৃত্যু কী কী কারণে?একদিকে ঠান্ডা যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া, কোনোভাবেই সোবিয়েত রাশিয়া বা কমিউনিস্ট ব্লকের আধিপত্য মেনে নেওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত এশিয়ার এই অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যের প্রসার ঘটানো।
বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কন্টিন্যুয়েশন।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়নি। কারণ তারপরে জারি হয়েছিল কোল্ড ওয়ার, যেটা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোবিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখার যুদ্ধ।
এরিক হব্‌সবম তাঁর একটি লেখায় বলেছেন, ‘বিংশ শতাব্দী জুড়ে দেখা গেল এমন কোনো বিশ্ব কর্তৃত্ব গড়ে উঠল না যারা বিশ্বের বিভিন্ন কোনায় জমে ওঠা সশস্ত্র সংঘর্ষগুলোকে নিয়ন্ত্রণ বা মীমাংসা করতে পারে। অথচ অন্যান্য বিভিন্ন দিকে, সে আর্থিক, প্রাযুক্তিক, সাংস্কৃতিক, এমনক ভাষাকেন্দ্রীক বিশ্বায়ন গড়ে উঠলেও রাজনীতি এবং যুদ্ধ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সেই আঞ্চলিক দেশগুলোই ক্ষমতাশালী কর্তৃত্ব হিশেবেই রয়ে গেল। প্রায় দুশোটা রাস্ট্র আছে পৃথিবীতে, তার মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাস্ট্র, যাদের ওপর আমেরিকার প্রভাব আছে।’
সত্যিকথা বলতে গেলে, এমন কোনো রাস্ট্রই নেই পৃথিবীতে, যে এককভাবে পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত রাস্ট্রগুলোর ওপর আধিপত্য ফলাতে পারে, যেমনটা ভাবা গিয়েছিল এবং ফলাও করে বলা হয়েছিল সোবিয়েতের পতনের পর  মার্কিন যুক্তরাস্ট্রই হচ্ছে গিয়ে একমেরু বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু। যদিও আমেরিকার নিজের প্রভাব বাড়ানোর জন্যে অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে তার সর্বগ্রাসী অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।  আজকে  যে বিশ্বায়নের মূল কেন্দ্র ছিল আমেরিকা, সেই আমেরিকাই  বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে। ক্রমে ক্রমে যৌথ বিষয়গুলো থেকে আমেরিকা নিজেকে সরিয়ে নিয়ে রাস্ট্রপুঞ্জের ভূমিকাকে খর্ব করে দিচ্ছে।  ক্রমে ক্রমে দেখা যাচ্ছে ইউরোপিয়  ইউনিয়ন থেকে, বিশ্বায়নের শর্তগুলো থেকে ছিটকে পড়ছে ইউরোপের রাস্ট্রগুলো।
অথচ অনেক কায়দাই তো করল আমেরিকা সারা বিশ্বে তার আধিপত্য বিস্তারের জন্যে। সেই ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে আরম্ভ করে আফ্রিকা, এশিয়ার দেশগুলোতে একের পর এক যুদ্ধ নামিয়ে দিয়ে সেসব দেশগুলোকে তছ্‌নছ্‌ করে দিয়েছে। গত তিনদশকে ধ্বংস করেছে আফগানিস্তান, ইরাক, লেবাননকে। সেগুলো এখন  কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। এখন প্রতি মুহুর্তে যুদ্ধের আবহাওয়া তৈরি করে চলেছে সিরিয়া, ইরাণ, উত্তর কোরিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে। ২০২০ সালের মধ্যে আর্থিক দিক দিয়ে প্রথম হয়ে ওঠার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলা চিনের বিরুদ্ধে তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের উস্কানি দিয়ে চলেছে  যাতে সমগ্র এশিয়া জুড়ে যুদ্ধের রণদামামা বেজে ওঠে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুদ্ধ থামেনি। তবে ধ্বংস এবং মৃত্যু ব্যপকতা লাভ করেছে। কারন পরবর্তীকালের আন্তরাষ্ট্র যুদ্ধগুলো, যেখানে আধিপত্যকারী রাষ্ট্রশক্তির মদতে আধুনিক উচ্চশ্রেনীর প্রযুক্তি এবং বিষাক্ত গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। আগেই উল্লেখ করেছি ভিয়েতনামের যুদ্ধে অরেঞ্জ গ্যাস এবং নাপাম বোমার ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। পরবর্তীকালে আফগানিস্তান,  ইরাক এবং লিবিয়াতে অনেক বেশি রসায়নিক গ্যাস এবং বিদ্ধংসী বোমার ব্যবহার বেড়েছে। সমস্ত ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্রশস্ত্রের পরীক্ষাগার হয়ে উঠছে এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলোতে।  সেখানে নতুন নতুন উচ্চশ্রেনীর প্রযুক্তি ও রসায়নিক গ্যাসের ব্যবহার জনজীবনকে তছনছ করেছে এবং বলতে গেলে দেশগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করেছে।
যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠিত হয়েছিল পৃথিবীর সব দেশে উন্নয়ন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্যে ঐক্যমত তৈরি করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু দেখা গেল প্রতিপত্তিশালী দেশগুলোকে পররাস্ট্রলোলুপতা থেকে বিরত করতে পারল না। এ পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্ব বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বা বিভিন্ন রাস্ট্রের মধ্যেকার বিবাদকে মীমাংসা করার জন্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা রাস্ট্রপুঞ্জ  নিতে পারেনি। রাস্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ কখনই এমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি যাতে আধিপত্যকামী দেশগুলোকে পররাস্ট্র আক্রমণ থেকে নিরস্ত করতে পেরেছে। এখন এই আধিপত্যমূলক আক্রমণকে বলা হচ্ছে সেই দেশের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্যে হস্তক্ষেপ। আসল সত্য প্রকাশ হলেও দেখা গেছে রাস্ট্রপুঞ্জের ভূমিকা নির্বিকার।
আজকে এটা বলা যায় হয়তো অধিকাংশ রাস্ট্রের ধ্বংসকারী  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে নাও পারে, কিন্তু মহামারীর মতো প্রায়শই যুদ্ধ লেগেই থাকবে। কারণ পৃথিবী জুড়ে এখন চলছে গণতন্ত্র রক্ষা ও রাস্ট্রীয়  নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের  নামে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য এবং জনগনের স্বজাত অধিকারগুলোকে হরণ করা আর এর ফলে সশস্ত্র অভ্যুত্থান, তথাকথিত ধর্মীয় ও অন্যান্য ধরনের  সন্ত্রাসবাদ  এবং সীমানা বিরোধ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে বিশেষ করে আফ্রিকা এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে। ইউরোপের বিভিন্ন রাস্ট্রে এই বিবাদ বিরোধ বিদ্রোহ চলছে।  এগুলোকে যুদ্ধ থেকে আলাদা করা যায় না। সুতরাং পৃথিবীতে শান্তি দুরস্ত।
সারা বিশ্বেই দেশে দেশে, যেখানে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠছে,  সেসব জায়গায় সাধারণ মানুষের আর্থিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্যে যেসব ব্যাপারগুলোকে পরিকল্পিতভাবে আমদানি করা চলছে তা হচ্ছে সীমানা বিরোধ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা। ভারতীয় সংবিধানপ্রদত্ত দীর্ঘকালের যে অধিকার কাশ্মীরের জনগণ ভোগ করে আসছিলেন,  সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে সেখানকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নামিয়ে আনা হয়েছে। আজকে কাশ্মীরের জনগণ কোনোভাবেই মনে করতে পারেন না যে তাঁরা ভারতীয়।  কর্পোরেট পুঁজির হাতে খনিজ সম্পদকে তুলে দেবার জন্যে উগ্রপন্থা দমনের নামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার ফ্যাসিজমের চেহারা নিয়েছে।   কোথাও কোথাও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিজমের আমদানি করা চলছে। এই সবগুলোই ব্যবহার করা চলছে রাস্ট্রের মধ্যেকার বিভিন্ন ধরনের পুঁজিজাত বৈষম্য থেকে উত্থিত বিদ্রোহ বা বিক্ষোভকে দমন করার জন্যে একধরনের  যুদ্ধ। দেশের মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে বিদ্রোহ দমনের নামে। সমস্ত ধরনের প্রতিবাদকে স্তব্ধ করে দিয়ে দেশের সম্পদকে তুলে দেওয়া চলছে কর্পোরেট পুঁজিকে।
ভারতবর্ষে সত্তর বছরের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা  আজকে বিপন্ন। আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে গণতন্ত্র সুরক্ষার নামে আমেরিকা বিভিন্ন দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে, গণতন্ত্র রক্ষার নামে ধ্বংস করেছে দেশগুলোকে, সেই আমেরিকা ভারতের গণতন্ত্রের বিপন্নতা নিয়ে কোনো কথা তো বলছেই না, পরন্তু দেশের গণতন্ত্র বিপন্নকারী শাসকগোষ্টীদের সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্বের সম্পর্কে গড়ে তুলছে। এই বন্ধুত্ব ভারতীয় জনগণের অধিকার হরণে মদত দেওয়া এবং এশিয়ার এই অঞ্চলে আধিপত্যকারী শক্তি হিসেবে চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যে ভারতকে পাশে পাওয়া। শুধু তাই নয়, জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে বিদ্ধস্ব প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধকামী ইজরাইলের সঙ্গে ভারতের  সখ্যতা বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে এশিয়ার বিরাট অঞ্চল জুড়ে যুদ্ধকামী পরিস্থিতি গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রাক্তন মার্কিং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরিকল্পনা করেছিলেন এশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে  এই অঞ্চলের চিনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করতে। ২০১২ সালে  ওয়াশিংটনের সরকারপন্থী চিন্তাবিদদের সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ পরামর্শ দিয়েছিল আমেরিকা এবং তার বন্ধুদের স্বার্থে এই অঞ্চলে  ব্যবসা এবং গণতন্ত্রের বিকাশের জন্যে কাজ করবে।  এখন প্রেসিডেন্ট টাম্প সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করতে চাইছেন চিনের বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে যে প্রশান্ত মহাসাগর এবং এশিয়ার ওই অঞ্চলে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হস্তচ্যুত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, চিনা এবং উত্তর কোরিয়ার বর্তমান কার্যকলাপ আমেরিকার সুরক্ষার দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে এবং ওখানকার সামরিক কর্তৃত্ব চলে যাচ্ছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। সেই কারনে সিদ্ধান্ত হয়েছে চিনের পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে যুদ্ধের জিগির তোলার জন্যে অনুগত রাষ্ট্রগুলোকে মদত দেওয়া, পারমানবিক অস্ত্রের সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এজন্যে আর্থিক সরাবরাহ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এতো গেল একদিক। অন্যদিকে বিশ্বের আবহাওয়া কীভাবে যুদ্ধের ফলে দূষিত হচ্ছে, তা লক্ষ্য করলে আতঙ্কের সীমা থাকে না। ১৯৯২ সালে পরিবেশ দূষণ বিষয়ে রিও ঘোষণায় বলা হয়েছিল যে ধারাবাহিক বিশ্ব উন্নয়ন প্রক্রিয়া ক্রমাগত বিপন্ন হয়ে চলেছে  বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধের ফলে। সেই কারনে প্রতিটি দেশকে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছিল সশস্ত্র যুদ্ধ ও সংঘর্ষের থেকে বিশ্বকে সুরক্ষিত রাখার জন্যে যে আন্তর্জাতিক আইন তৈরি করা হয়েছিল, তা মেনে চলতে এবং বিশ্বের উন্নয়নের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে। কারন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার, ঘরবাড়ি কলকারখানা সেতু বা অন্যান্য নির্মানকে ধ্বংস করা, ফসিল তেলের খনিকে জ্বালিয়ে দেওয়া, মিলিটারি যাতায়াতের জন্যে পরিবেশকে বিনষ্ট করা এবং বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসকারী রসায়নিক যুদ্ধে ব্যবহারের ফলে পরিবেশের বিশাল ক্ষতি করা হচ্ছে। এর ফলে বাতাস, জল এবং মাটির দূষণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন পশুপাখির মৃত্যু ঘটছে, বহু মানুষ মারা যাচ্ছে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এগুলো সবই ঘটছে যুদ্ধের ফলে। বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ এবং অন্যান্য সচেতন বুদ্ধিজীবীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন যে যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে পরিবেশের ভয়ঙ্কর যে দূষণ ঘটছে, তা বিদ্ধংসী। এর ফলে পৃথিবী ক্রমাগত বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। এর ওপর  আগামী দিনে যদি কোনো কারণে বিশ্বে পারমানবিক যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাহলে এই নীল সবুজ প্রাণবন্ত গ্রহটিকে ধ্বংসের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
সুতরাং আজকে বিশ্ব জুড়ে যে আন্দোলন জনমনে সর্বাগ্রে  জাগরিত করা দরকার, তা হচ্ছে যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। বেঁচে থাকার জন্যে শান্তি, আগামী প্রজন্মের জন্যে এই পৃথিবীকে সুরক্ষিত রাখার জন্যে চাই শান্তি। শান্তির দরজা খুলে রাখার জন্যে বিশ্ব জুড়ে আন্দোলন হোক।

শেয়ার করুন

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *