|

হকারের কেরোসিন তেল – নন্দেশ্বর দৈমারী অনুবাদ: তপন মহন্ত

শেয়ার করুন

আগে আমি একটি ডালডার কৌটো ছিলাম। সিমাং মাস্টারদের ঘর থেকে সাওখ্লী আমাকে নিয়ে এসেছিল। সাওখ্লীরা অবশ্য ডালডার স্বাদ পায়নি। মাস্টাররা ডালডাটুকু খেয়ে আমাকে লবণ রাখার পাত্র বানিয়েছিল। পরে মাস্টাদের কোনো এক পরিচারিকা আমাকে আগুনের পাশে রাখায় আমি আর লবণ রাখার পাত্র হয়ে থাকলাম না। আমার ঠাঁই হল গুদামঘরের এক কোণে।
পিঠের এক দিকে আগুনের তাপ লেগে ট্যাপ খাওয়া কুমড়োর মতো দেখতে আমাকে মাস্টারনি গুদাম থেকে বের করে এনে সাওখ্লীকে দিয়েছিল। সাওখ্লী ঘর লেপাপোঁছার কাজ আছে কিনা জিজ্ঞেস করার সময়, ‘একটা পুরনো কাঁচের বোতল থাকলে দিও বৌদি, কেরাসিন তেল রাখব’ বলায় খুঁজে পেতে আমাকে এনে সাওখ্লীর হাতে তুলে দেয়।

সেদিন থেকে আজ পাঁচ বছর হল সাওখ্লী আমাকে কেরোসিন রাখার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

আগুনের তাপে পেটটা ট্যাপ খেলেও সেই আমি এখনও ফেটে যাওয়া শিখিনি। ফাটবও না। জ্বালানি তেল থাকার সময় সাওখ্লী আমাকে বাঁশের মাচার খুঁটিতে ঝুলিয়ে রাখে। আর তেল না থাকলে আমাকে ভালো ভাবে ধুয়ে রোদে শুকোয়। একটা মাত্র ঘর হলেও সাওখ্লী তার অন্য জিনিসপত্রের মতোই আমাকেও যত্নে রাখতে ভুলে যায় না। এক দিনের জন্যও আমাকে সাওখ্লীর উঠোনে রাতের অন্ধকারে একা একা ভয়ে ভয়ে কাটাতে হয়নি। যেভাবে বিধবা সাওখ্লীর দিনগুলো পার হয়েছে সেভাবেই আমার দিনগুলো খুব ভালো ভাবে না হলেও অন্যের মতো লাথিঝাঁটা খেয়ে কখনও অতিবাহিত করতে হয়নি।

সাওখ্লীর দুই সন্তান। বড়োটা ছেলে, ছোটোটা মেয়ে। ছেলেটা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। মেয়েটা পড়াশোনা করছে। এবার ম্যট্রিক পরীক্ষা দেবে। নাম সৌমত্রি। পড়াশুনায় খুব একটা খারাপ নয়।
হিরিম্বাদের মতো টেবিল-চেয়ার ইলেকট্রিক লাইট টিউশন ইত্যাদির সুবিধা না পেলেও সৌমত্রি যদি একটু সময় করে পড়াশোনা করতে পারত তবে ম্যাট্রিকটা এতদিনে পার করতে পারত। সে আশা এখনও আছে। তেল থাকলে সৌমত্রি প্রদীপের আলোয় মোড়ায় বসে পড়াশোনার অভ্যাসটা এখনও ছাড়েনি। লেখার জন্য টেবিলের বদলে রাতের ঘুমোনোর মাঁচাটাকেই সে ব্যবহার করে।

সমস্যা হয়েছে কেরোসিন তেলের। তেল কখনও পায় কখনও পায় না। পায় না অর্থাৎ সাওখ্লীরা ব্ল্যাকে কিনতে পারে না। সে জন্য দু’সপ্তাহে একবার হকারের দেওয়া কেরোসিন তেলের ওপরেই নির্ভর করতে হয়।

হাকার আসে না, তা নয়। দু’সপ্তাহে একবার এসে উয়ারী উকিলের সদর দরজার সামনে দাঁড়ায়। হকারের আসবার কথা শুনতে পেলেই সাওখ্লী যে বাড়িতেই কাজ করুক না কেন, দৌড়ে এসে আমাকে নিয়ে ছোটে তেলের খোঁজে। কিন্তু কথা হল, পৌঁছাতে একটু দেরি হলেই খালি হাতে ফিরে যেতে হয় সাওখ্লীকে। আমাকে কেরোসিনের লাইনে বসিয়ে সাওখ্লী দাঁড়িয়ে থাকে। কখনও-বা তেলের ড্রামের কাছে পৌঁছানোর আগেই তেল শেষ হয়ে যায়। তখন গ্রামের মানুষদের গাল দিতে না পারলেও হকারকে দু-চার কথা শুনিয়ে আমাকে হাতে ঝুলিয়ে রাগে গজ গজ করতে করতে সাওখ্লী ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

‘তেল এসেছে গো, তেল’ বলে আজও থুমফে চিৎকার করার সাথে সাথে কিছু সময়ের জন্য কাজ বন্ধ করে দখনাটা (কাপড়) কোমরে জড়িয়ে আমাকে তুলে নিয়ে সাওখ্লী দৌড়ে এসে সার সার লাইন করে রাখা পাত্রগুলোর শেষে আমাকে বসিয়ে দেয়। সাওখ্লী রাখার মতো আমিও পেট মোটা, বেঁটেখাটো নানান কিসিমের জেরিকেনের পেছনে বসে থাকি।

লাইনটা বেশ দীর্ঘ। উকিলের লোহার গেটের কাছে রাখা কেরোসিনের ট্যাংক থেকে শুরু করে রাস্তার পাশে অজগর সাপের মতো পাক খেয়ে রামৌন্দের সদর দরজার সামনে শেষ হয়েছে। আমার পেছনে এখনও অনেকে লাইন দিয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের পাত্র। জেরিকেনগুলোর কয়েকটিতে হয়তো মোবিল অথবা ডিজেল রাখা হত। এখন আমার মতোই অবসর নিয়েছে। কতকগুলো প্লাস্টিকের গ্যালন। কিছু কাচের বড়ো বোতল। গ্যালনের অভাবে অনেকে তিন পোয়া তেল ধরার মতো বোতল দাঁড় করিয়ে রেখেছে। সামনের এক-একজন তেল পাওয়ার সাথে সাথে পেছনের পাত্রের মালিকরা নিজ নিজ পাত্রটি ঠেলে এগিয়ে রাখছে। ঠেলে দেওয়ার সময়ও খুনশুটির অন্ত নেই। বড়ো পাত্র যেমন বেশি জায়গা দখল করে তেমনি তেলও বেশি নিয়ে যায়। তাদের মালিকেরা সব গণ্যমান্য ব্যক্তি। কেউ-বা ডাক্তার কেউ বড়োবাবু আবার কেউ মাস্টার।

‘মাস্টারবাবুর ঘরে কারেন্ট থাকতেও এত তেল লাগে কেন? গ্যালনটা বেশ বড়োসড়ো’, অন্দা জিজ্ঞেস করে। আমি মনে মনে ভাবি, ‘হয়তো আরো চাই’।
‘কোথায় কারেন্ট থাকে! আসা-যাওয়া করা কারেন্টকে ভরসা করা যায় নাকি!’ হয়তো ঠিক কথাই বলেছেন মাস্টার। আমি ভাবি। অন্দার কথাটাও ঠিক মনে হয় আবার মাস্টারের উত্তরও সঠিক মনে হয়। অন্দা কি তবে ভেবেচিন্তে কথাটি বলেনি? অন্দা চুপ মেরে যায়।

অন্যদেরও ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ছেলেমেয়ে আছে। পড়াশোনা করতে হয়; পড়াশোনা একটু সময়ের জন্যও বাদ দেওয়া যায় না। তাঁরাই সত্যিকারের মানুষ। শুধু পড়তে দেওয়া নয়, সকালবেলা উঠেই স্কুটারে করে টিউশনেও রেখে এসেছে। পরে স্কুলেও দিয়ে এসেছে। দুপুরে কাজের লোকে টিফিন পৌঁছে দিয়ে সারাদিন বসে থাকে। স্কুল ছুটি হলে সাথে করে নিয়ে আসে। এভাবে টিউশনের ওপর টিউশন পাওয়া, যত্ন পাওয়া ছেলেমেয়েরা ভালো রেজাল্ট না করলে কারা করবে? আমি ভাবি।

আমাদের সৌমত্রি তো সাতসকাল থেকে রাঁধাবাড়া, শাকপাতা জোগাড় করা, কখনও-বা স্কুল ছুটির শেষে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করা, কারো ধান বোনা, ধান কাটার কাজ করে কিছু চাল নিয়ে আসার মতো অদরকারি কাজগুলোয় সময় নষ্ট করে। এভাবেই সে কাছের বোড়ো মাধ্যমের স্কুলে পড়াশুনা করে কোনোমতে এখন ম্যাট্রিক দিতে পারছে। অক্ষর অক্ষরই। অন্যের ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা একটি লাইন লিখে শেষ করলেও বোড়ো মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা একটা শব্দও লিখে উঠতে পারে না।

আমাদের সৌমত্রিকে আমি মাঝে মাঝে চুপচাপ দেখতে থাকি। একটি শব্দ লেখার শেষে কিছু বাদ পড়ে যেতে পারে ভেবে নিয়ে ওপরের দিকে গাছের ডালের মতো এক একটি দাগ টেনে টেনে রাখে।
‘ওই এগিয়ে যা, এগিয়ে যা’
কেউ চেঁচিয়ে উঠতেই আমি সচেতন হই। আমার এগিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু কীভাবে এগোব। সওখ্লী কাছে নেই।

একটু বাদেই সাওখ্লী আসে। আমাকে ঘটাং করে সামনে ঠেলে দেয়। আবার হুলুস্থুল। হুলুস্থুল হবেই। সবারই তেলের প্রয়োজন। হতে পারে সবাই বড়োদিনের জন্য তেল মজুদ করতে চাইছে। এদিকে বাৎসরিক পরীক্ষারও বেশি দিন নেই। ম্যাট্রিক রিপিটারদের তো এক সপ্তাহ সময়ও নেই।

আমাদের সৌমত্রি আবার পরীক্ষায় বসবে। গতবারের ফল খারাপ হলেও এবার আবার চেষ্টা করে দেখতে চাইছে সৌমত্রি। সৌমত্রির চেষ্টায় আমারও কিছু সাহায্য করার আছে। দু-রাত হল তেল নেই। আজ তেল পেতেই হবে। এই দু-রাত সৌমত্রি উনুনের আলোয় একটু-আধটু পড়াশুনা করতে পেরেছে।

‘আজ কিন্তু পেতেই হবে’, সাওখ্লী কড়া ভাষায় বলে। সাওখ্লীর কথায় সায় দিতে আমিও চেষ্টা করি। কিন্তু আওয়াজ বেরোয় না।

একটু ঝুঁকে সামনের দিকে তাকাই। এখনও এগিয়ে যেতে হবে অনেকটা দূর। এদিকে পেছনেররাও তাকিয়ে আছে। মনে হয় আমার পেছনেরটা কাচের বোতল। পিঠে লাগতেই শীতলতা অনুভব করি।

তেল নিয়ে আগের কেউ বেরিয়ে গেল মনে হয়। আমাদের মালিকরা আমাদের একটু একটু সামনের দিকে ঠেলে দেয়। এই এগোনোর সময় কেউ মাঝখানে নিজের পাত্রটা ঢুকিয়েছে বলে মনে হয়। অন্যরা এগিয়ে গেলেও আমি যেন এক জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছি।

মালিকদের মাঝে ধুন্ধুমার লেগেই গেল! সাওখ্লীও চুপ করে নেই। পারুক না পারুক দু-এক কথা শুনিয়ে দেয়। বেশি কড়া ভাষায় বলতে পারে না। মনের রাগ মনেই পুষে রাখে।

‘এভাবে কেন মাঝে ঢোকাতে হবে? এগুলো খারাপ অভ্যাস! শুধু তোমাদের তেলের প্রয়োজন? আমাদের লাগবে না? পরে যারা এসেছ, পেছনে যাও।’ কেউ এভাবে ধমক দিলেও সাওখ্লী ‘ঠিকই তো’ বলার বেশি কিছু বলতে পারে না। কারণ যাকে বলবে তার ঘরেই সাতসকালে কাজ করে দু’মুঠো জোগাড় করতে হয় সাওখ্লীকে। কারো কাছে খারাপ হতে পারে না সাওখ্লী। তাহলে না খেয়ে শুকিয়ে থাকতে হবে।

এদিকে খালা মহাজনদের অহংকার কী দেখবে! কোনোদিনও ওরা লাইনে দাঁড়ায় না। তেলের ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ‘পাঁচ লিটার আগে এখানে ঢাল’ বলে হুকুম করে। একটু লজ্জাও করে না! ওরা থাকলে হকারও তৎক্ষণাৎ গ্যালন ভরে দেয়। লাইন টাইনের ধার ধারে না। আমরা হলেই শুধু ‘লাইনে দাঁড়া, বেলাইনে তেল দেব না’ ইত্যাদি শুনিয়ে যায় হকার।

উঠতি এমএলএ সরগয়ারীদের কথা আর বোলো না! তাঁর পরিবারের লোকেরা বিশাল তেলের গ্যালনটি হকারের হাতে গছিয়ে দিয়ে চলে যায়। দাঁড়িয়ে থাকতেও হয় না। হকার তেল ভর্তি করে নিজে পৌঁছে দিয়ে আসে।

সরগয়ারী এমএলএ হওয়ার পরেই বোধহয় তেলের পারমিটটা পেয়েছে হকার।

উয়ারী উকিলের পরিবারও একই ধাঁচের। তাঁর সদর দরজার সামনে বসে বিলি করা তেল না নিয়ে কীভাবে ছাড়বে! লাইনে না দাঁড়িয়ে ওদের দরজার ভেতর থেকেই তেল নিয়ে যাওয়া আমি দেখেছি। কিছু বলতে পারিনি।

সেজন্যই সব সময় হুলুস্থুল হয়। আজও হয়েছে।
‘আমরা দেখেই যাচ্ছি, কে কীভাবে চলছে। সমবায়ের বস্তু এলেও একই দশা, তেল এলেও তেমনি। যাদের আছে তারাই পায়, যাদের নেই তারা হা-হুতাশ করে থাকে।’

কোনো একজন যুবকের হাঁকডাক শুনে আমার মনে পড়ে সমবায়ের কথা। সমবায়ের চাউল, চিনি সাওখ্লীর মতো গরিবদের পাওয়ার নজির নেই। সমবায়ের জিনিসপত্র কখন আসে কখন শেষ হয় বোঝাই যায় না।

সমবায়ের কথা ভেবে আমার হাসিই পাচ্ছে। সমবায় শব্দটি মনে মনে আউড়ে তার অর্থ তন্ন তন্ন করে খোঁজার চেষ্টা করি।

‘সম’ মানে অসমিয়া ভাষায় সমান। আর ‘বায়’ মানে ইংরেজিতে বিদায়। অর্থাৎ সমান বিদায়, নাকি সমতা বিদায়!

ধ্যাৎ, এমনটা হবে না! বিজ্ঞজনেরা কী ভেবে নামটি রেখেছে আমি কীভাবে জানব। আমার ভোঁতা মগজে এসব ঢুকবে নাকি! কিছু সময়ের জন্য এই ভাবনা থেকে বিরত থাকি।

এমন সময় গজেন মোটকা এসে আবোল-তাবোল বকুনি শুরু করে। হুলুস্থুলে কিছু বোঝা না গেলেও পরের কথাগুলো বেশ শুনতে পেলাম, ‘নিজেদের মাঝে ঝগড়াঝাটি করে কী লাভ! একটু ধৈর্য ধর। সবাইকে দিতে হবে। না হলে দেখে নেব। কিছুটা হলেও সবাইকে ভাগ করে দিতে হবে। আমি আছি। কে লাইন ভাঙে দেখে নেব।’

গজেনের কথা সবাই মেনে নিল। হুলুস্থুল বন্ধ হল।
গজেনকে আমিও চিনি। যুবকটি ভালো মানুষ। এমন হুলুস্থুল সে মাঝে মাঝেই সামলে থাকে। আগে ‘আবসু’ (All Bodo Students Union) করত। এখন কী করে জানি না। এসব খবর রাখার সময়ও নেই আমার। আমি সাওখ্লী ও সৌমত্রিকেই জানি শুধু। অন্য কাউকে জানি না। অনেক দেরিতে আমিও টেংকির পাশে পৌঁছাতে পারলাম। সাওখ্লী আমাকে একটু এগিয়ে দিয়ে হকারের মুখোমুখি হয়ে বলে, ‘এক লিটার দিও, ভাই।’

তেলের ট্যাংকটি একটু কাত করে হকার আমতা আমতা করে বলে, ‘কী বিপদ, তেল দেখছি শেষ হয়ে গেল, দিদি!’
‘একফোঁটাও নেই?’
‘নেই। আগামী সপ্তাহে নিও।’
এইকথা শুনে আমার পেছনের পাত্রদের মালিকেরা হুলুস্থুল শুরু করে।
‘না থাকলে কীভাবে চলবে? কীভাবে তেলের ভাগবাটোয়ারা হল?’
‘একজনেই যদি পাঁচ লিটার পায় তবে কীভাবে তেল থাকবে?’, নিজের বোতলটা মাটি থেকে তুলে নিয়ে বিশ্রাম বুড়ো বলে। আমাদের সাওখ্লীও হকারকে বকাবকি করে ঠিক কি বলল বোঝা গেল না।

হকার মানুষটিও ট্যাংকটা কাত করে দেখালো তেল নেই।

তখন গজেন মোটকা ধারেকাছেও ছিল না। হয়তো কোথাও চলে গেছে।

কোনো উপায় না দেখে সাওখ্লীও আমার গলায় বাঁধা রশিটা হাতে ঝুলিয়ে আমাকে নিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সাওখ্লীর দুঃখ দেখে আমার শরীর কারও ওপর রাগে রি রি করে জ্বলে ওঠে। কাউকে আবোল-তাবোল বকুনি দেওয়ার ইচ্ছে করে। কিন্তু কী করব, আমার মুখ যে বন্ধ! তাই চুপচাপ থাকি।

[নব্বইয়ের দশকের বোড়ো ভাষার সফল গল্পকার নন্দেশ্বর দৈমারি। তাঁর লেখা গল্পগ্রন্থগুলি হল—‘থাংনাইনি দাউহা’ (বেঁচে থাকার সংগ্রাম), ‘বক্সিং’, ‘অবে নেনায় দলঙ্গা’ (সে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি), ‘বাইগ্রেবনাইসো’ (ভগ্নাবশেষ) ইত্যাদি। বক্সিং গল্পটিতে গল্পকার বোড়ো জীবনের অতি পরিচিত একটি ছবি, নগরায়নের ফলে শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর বোড়োদের নিজেদের বাসভূমি ত্যাগ করে অন্যত্র গ্রাম্য পরিবেশে নতুন করে বসতি স্থাপন করার মাইগ্রেশনের চিত্রটি, ফুটিয়ে তুলেছেন। নন্দেশ্বরের অনেক গল্পেই পরিচারিকার চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়। ‘রুয়াথি নালেবনি হাংমা’ গল্পের নালেবের শিক্ষিতা হবার স্বপ্ন ভেঙে যায় দারিদ্র‍্যতার জন্য। ফলে জীবনধারণের তাগিদে তাকে পরিচারিকা হতে হয়। ‘মান্দার বিবারনি দাহা’ ও ‘অবে নেনায় দলঙা’, ‘বাইগ্রেবনাইসো’, গল্পেও পরিচারিকাদের জীবনের আশা-নিরাশার কথা লেখকের শক্তিশালী কলমে ফুটে উঠেছে। নন্দেশ্বর দৈমারির গল্পে বোড়োদের গ্রামীণ জীবনের দুঃখ দুর্দশার কথা সুনিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছে। তাঁর ‘খাতিরাম মাস্টারনি ডায়েরি’ গল্পে ভেঞ্চার স্কুলের শিক্ষকদের সুদীর্ঘকাল বিনা বেতনে হাইস্কুলের চাকুরির দুঃখ-দারিদ্র‍্যপূর্ণ জীবনগাথা এই গল্পের প্রধান উপজীব্য। নন্দেশ্বরের “হ’কারনি খেরাসিন থাও” গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘The Bodo’-র ২৩ তম সংখ্যায়, ১৯৯৮ সালে। নির্মলা ব্রহ্ম দেউরী কৃত অসমিয়া অনুবাদ “হ’কারর কেরাচিন তেল” প্রকাশিত হয় “নতুন পদাতিক” পত্রিকায়, ২০০৪ সালে। অসমিয়া থেকে গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন তপন মহন্ত।]

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *