একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি – জিললুর রহমান ( পর্ব ৩ )
সব কটি পর্ব পড়তে উপরের একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি ট্যাগে ক্লিক করুন।
পঞ্চম আসমানে
৪০.
পঞ্চ আসমানে ছাদের এক কোণে
লিখছে মসনবী ছন্দ গুনে গুনে
মাশুক দেখা দেবে ইশকে জারেজার
রুমির প্রেমে মজে দেখাবে মুখ তার
স্রষ্টা মনে মনে হাসছে ক্ষণে ক্ষণে
“কবেই করেছিনু দেখাটা তার সনে,
ছন্দে মশগুল, বোঝেনি আছি মনে।”
৪১.
পঞ্চম আকাশে চতুষ্পার্শ্বের
হর্ষে মেতে ওঠা জ্যোতির্বলয়ের
সেলিম আল দীন আর মজুমদার
তৃতীয় থিয়েটারে বাদল সরকার
নাটক হবে আজ ‘এখন সুসময়’
মামুন নিজে তাতে করবে অভিনয়
চেষ্টা পরকালে দুঃখ মোচনের
৪২.
আকাশ পঞ্চম যেন-বা চমচম
সোফিয়া লোরেনেরা করছে গমগম
নায়ক-নায়িকারা ত্রস্ত আসে যায়
বাঁকানো চোখে কেউ অপ্সরীকে চায়
কারও বা অভিমান দেখেনি উত্তম
গিরিশ করনাড ঝাড়ছে তত্ত্বম
জমজমাট আজ আকাশ পঞ্চম
৪৩.
দেখেছি শংকর পঞ্চ আসমানে
এখনও ভাবছেন ব্রহ্মা কোন্খানে
বললাম আজকে বলো তো শংকর
পৃথিবী মায়া নাকি, মায়াই ঈশ্বর?
মাথাটা চুলকালো মনটা পেরেশানে
বলল “ব্রহ্মাকে পাবে কি আসমানে?”
বিরাজ করছেন বিশ্বে সবখানে।
ষষ্ঠ আসমানে
৪৪.
ষষ্ঠ আসমানে আঁকছে সুলতান
পিকাসো দোস্ত-কে শোনায় গুলতান
হেনরি মাতিসের হাতে লা রে ভের্ত
পোলক জ্যাকসন বলে দুর্দান্ত
সকলে মশগুল নিজের নিজ কাজে
শুধুই মকবুল ফিদা হোসেন কাঁদে
মাধুরী বিচ্ছেদে বেজায় পেরেশান।
৪৫.
দেখেছি ঋত্বিকে ক্যামেরা এক কাঁধে
যুক্তি তক্কোতে বাঙালি মেতে থাকে
আমাকে শুধাল “কোনটা দেখে ওরা
কোমল গান্ধার, না মেঘে ঢাকা তারা?
রং-এর গোলাপ তো রইল হাফ ডান
সময় পেলে হত বঙ্গ দর্শন”
খালাসিটোলা যেন টলছে এক হাতে!
৪৬.
ষষ্ঠ ছাদ তলে ভরতনাট্যম
ঘুঙরু নাড়ে মন তবলা গমগম
কোথাও জয়পুরি লখনু কত্থক
বাইজি পাড়া কেউ কাশছে খকখক
রুদ্র রোষে শিব প্রলয় নাচ দিলে
গঙ্গা নেমে পড়ে জটার বাঁধ খুলে
বিষ্ণু ভুলে থাকে মোহিনীঅট্টম।
৪৭.
ষষ্ঠ আকাশের আঁধার এক কোণে
গাঢ় আরণ্যকে বিভূতি দিন গোনে
আদর্শ হিন্দুর হোটেল ব্যবসায়
আত্মা জগতের কতটা হবে আয়
কীভাবে চালিয়েছে বিপিন সংসার
কেদার রাজা আজ রাজন কোথাকার
অশনি সংকেত এখনও পথে পথে?
সপ্তম আসমান
৪৮.
যখন বোররাক আকাশ সপ্তমে
এটা কি বায়ুস্তর! নাকি সে গ্রহে নামে?
এখানে যত গান সুরেরা ভিড় করে
কোথাও তানসেন বৈজু বাওরারে
একই সঙ্গীতে দেখেছি সুর দিতে
তবলা তাল দেয় আল্লারাখা সাথে
আকাশ সপ্তম সুরেরও সপ্তমে।
৪৯.
সপ্ত আসমানে আরেক কোণে শুনি
রঘুবীরের হাতে এসরাজের ধ্বনি
সান্ধ্য আহ্নিক শেষেই খাঁ সাহেব
সানাই মুখে তোলে বাজান ভৈরব
শুনছি হ্যামিলন মুগ্ধ বাজে বাঁশি
সকল বৃদ্ধেরা ছুটছে গয়া কাশী
বসেছে বীণা কোলে স্বয়ং বীণাপাণি
৫০.
আয়ুর নদী বহে দখিনে মুখ করে
পাড়েতে মাঝিভাই বিষণ্ণ অধরে
গাইছে ভাটিয়ালি মনের পাঁচালিতে
মনকে যতদূর ধরতে পারে গীতে
কত যে হাড় কালা কার সে দেহ কালা
এখানে সব মনে রং-এর বাতি জ্বালা
শুনছি ভাটি গান নদীর আয়ু জুড়ে
৫১.
কাঙাল হরিনাথ ‘দিন তো গেল’ বলে
হাজার বছরের সত্তা ধরে রাখে
চিঠির বান্ডিল রোজ কি বিলি করে
এখানে কেবা কাকে প্রেমের চিঠি ছোঁড়ে
ডাকার মতো করে ক-জন ডাক পারে
এ নহে ভবনদী বৈতরণী পাড়ে
অরূপ রূপ ফাঁদে নিত্য প্রাণ কাঁদে
৫২.
এখানে কদবেল কুমড়ো লাউ নেই
এখানে একতারা কীভাবে বানাবেই
বাউল আবদারে বাংলা থেকে আনা
রয়েছে একতারা মাত্র হাতে গোনা
লালন হাতে নিলে বারামখানা তার
ভাবের লহরীতে হয়েছে জারেজার
আরশি সে নগর খুঁজছে বাউলেই
৫৩.
বোরাক উড়ে যায় হঠাৎ শুনি গান
‘ও গাড়িয়াল ভাই’ কে যেন গেয়ে যান
ডাকেন আব্বাস সুরের জলসায়
পাশেই ধুলোপথে গরুর গাড়ি ধায়
পথের পানে চেয়ে কে আজ থাকে বলো
স্বর্গে সব কিছু পানসে জলোজলো
কালিকাপ্রসাদের দোহারে মজে মন
৫৪.
সপ্ত আসমানে ওদিকে বিটোভেন
বলছে বাখ শুনে টোনটা বেশি দেন
শুনে মোৎজার্ট ডাকল চপিনকে
চাইকোভস্কির সুরটা দিও দেখে
এমত দিন যায় কোথাও মন নেই
এভাবে চলে যদি লাভ কী স্বর্গেই?
জানি তো ভাগনার সুরেই মাতবেন!
সব কটি পর্ব পড়তে উপরের একটি মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি ট্যাগে ক্লিক করুন।
[শীর্ষচিত্র: ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ]
আপনার লেখা শেষ ই হতে চায়না।।।যেন অনেক কিছু বাকি থেকে যায়।ধৈর্য সহকারে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায়।।।।।।।।।।।।।।।।
দাদা, আপনার ধৈর্যের প্রশংসা করছি। লেখাটি লম্বা হবার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করে আর লাভ নেই। তবে ৫ম পর্বেই শেষ হয়েছে। শেষ পর্ব পড়েছেন তো? পূর্ণাঙ্গ পাঠের উপর আপনার একটা মতামত / মন্তব্য / অভিমত আশা করছি। অসংখ্য ধন্যবাদ