রক্তিম সূর্য মণ্ডলের পাঁচটি কবিতা
১.
অভিমানী চূড়া থেকে পাদদেশে নেমে আসে সবজি-বাগান।
তার পর পরই আলোর কৌটোয় গুঁড়ো দুধ রাখতে শেখা।
নিয়মিত চা বানাই
সময়ে, অসময়ে;
খিদে মরে, ভাত ফেলা যায়।
মা দেখলে হাতে মেখে জোর করে খাওয়াতেন,
আমি গিলতে থাকতাম ভাত, থালা, হাঁড়ি, উনুন…
মা বলতেন, “আর একটু আনি?”
—আনবে? অল্প কিন্তু, এক্কেবারে একমুঠো,
তোমার তালুতে যা ধরে।
২.
আমরা শ্রাবণ মাসে ফুল তুলিনি একটাও
লুকিয়ে আছি,
আশ্বিন আসুক।
এই বিচ্ছিন্নতা জলে দ্রাব্য এক সূর্যাস্ত
কিংবা বন্ধুর কোনো রোগ লেগে আছে গালে,
তাই লাল।
৩.
কেমন আছো অশ্বত্থ গাছ?
কেমন আছো দৃশ্যধূসর স্বপ্নদেশের ডাকহরকরা?
ক্লান্ত অবসন্ন মাথার কবিতা হৃদয়বিরোধী,
বিদারক হলে
কুচিকুচি দেহখণ্ড থেকে গতরাতের চুনোমাছকে বলতাম, “যা”।
কড়ে আঙুলের সাইজের,
ঘাই মারতে পারে না বলে গভীরে ডুবে যাচ্ছিল।
কাঙ্খিত মৃত্যু, প্রার্থিত নয়,
অথচ জলে ওর মৃত্যুও নেই।
সূর্যের দিকে সোজা তাকিয়ে আমার কথা হয়,
অশ্বত্থগাছকে ডাকি, “বুড়ো ভাম”।
ঘাড় ব্যথা হলে ভালোবাসার কাছে মাথা নোয়ানো যায়।
৪.
গল্প বলা সহজ, ঘাসের মতো
ঝুঁকে থাকে
চড়তে সুবিধে।
কফি শপের দরজা ঠেলে নীল আলো
ঘুমের মধ্যে
টুং টাং টুং টাং
ঠান্ডা তালুতে মোম শক্ত হয়,
লক্ষণ পয়মন্ত
জড়ো হই
ঝগড়া পাতাই।
ঢালে ঢলে যায় নদী
বরফগলা,
পা রাখলে বৃদ্ধ বয়স
কুঁচকে উঠি
জল বিব্রত বোধ করে।
এক ধারে ঘোড়াদের মল
আকাশি রঙের লোক যাদের নিয়ে গেছে লোকালয়ে।
নামায় পরিশ্রম কম, ক্লান্তি দারুণ।
তবু ভালো,
সন্ধ্যার আগে এদিকে আলো থাকে বেশিক্ষণ।
৫.
আমাদের রীতি-নীতি কিছু আকাশের পাশে থাক।
মেষপালকের গান যা শুনিনি কখনও
একদিন স্বপ্নে যদি গাই;
ভেড়াদের পাল যেন বালিশ ফেটেছে
সামলাতে গেলে হাসি পায়।
মনে কোরো নেকড়ে বাঘ
অপেক্ষারত,
তোমায় দেব বলে স্বদন্ত ভেঙে গড়িয়ে এনেছি হার।
আর যদি ভেড়া হই,
আমায় গুনতে থেকো
ঘুম এসে যাবে।