|

দেশ ভোলে না – পিউ দাশ

শেয়ার করুন

মুখ ফিরিয়ে নিও না–
একবার মুখ ফিরিয়েছিলাম
আমি–আর দেশ হারিয়েছি–
আর ভাষা হারিয়েছি
যা হারিয়েছি তাদের নামও
হারিয়েছি, আকার হারিয়েছি
রয়ে গেছে কেবল কাগুজে
মানচিত্রের উপর ফাঁকা কিছু
স্থান–
নিঃশব্দ, শুনশান;
এখন রুখু হাওয়ায় কেবল ধুলো
ওড়ে সেখানে
রয়ে গেছে অর্থহীন কয়েকটা
শব্দ; গোঙানির মত,
সেই ভৌতিকতা–শিহরণ আনে
মুখ ফিরিয়েছিলাম, তাই
অপেক্ষায় আছি
একদিন কেউ আসবে সেই মৃতের
প্রান্তর থেকে
ক্ষমা নিয়ে, আর শান্তি নিয়ে
অপেক্ষায় আছি–কিন্তু
নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছি সকলের
চোখ থেকে
মৃত কেউ যদি চিনে ফেলে, আমিই
সেই?
যখন ভাঙন ধরেছিল তখন লুকিয়ে
পড়েছিল আর
অবরূদ্ধ চিৎকার করেছিল যে,
‘ভাঙ ভাঙ’? সেই আমি?
আমার জন্য এ যুদ্ধের শেষ নেই,
শেষ হবে না
প্রেম ফুরোয়, ছিঁড়ে পিষে
টুকরো হয়ে, পচে গলে গিয়ে।
যুদ্ধ ফুরোয় না
জানি আমি, সীমান্ত শুধু লোভী
হাতে তৈরী
দাও দাও বলে তারা
আরো দাও আরো দাও
আমার ‘আমি’টাকে তাদের
দিয়েছিলাম
তারপর দিয়েছিলাম আরেকটা
‘আমি’কে
তারপর আরেকটা, তারপর
আরেকটা–তারপর–
আর আজ যদি তোমার চোখের দিকে
আমি চোখ তুলে তাকাতে না পারি
জেনো তার কারণ–
যে আমিগুলোকে ছেড়ে এসেছি
আগুনের মধ্যে
উদ্যত বন্দুকের উদ্ধত নলের
সামনে
বোমাবর্ষণের মাঝখানে
তাদের একেকজনকে দেখতে পাই
তোমার চোখের মণিতে
তোমার দৃষ্টিতে জীবন্ত হয়ে
উঠতে চায় তারা
সেই বহুশতাব্দীর চেনা,
বহুদিনের অপরিচিত ‘আমি’রা?
তাদের ভয় পাই আমি, তাদের ঘৃণা
করি, তাদের ভালবাসি
আর আমি জানি, জমি ভুলে যায়
সব।
দেশ ভোলে না
যে দেশকে আমরা ভুলি, সেই দেশ
ভোলে না
আপেল বাগান মনে রাখে,
লন্ডভন্ড হয়ে গিয়ে–
জুঁই ফুলের সুবাস মনে রাখে,
পিষে যেতে যেতে–
মাঠের শিশুদের থেমে যাওয়া
কলরব রক্তাক্ত হতে হতে মনে
রাখে
মাছের বাজারের বিরক্তিকর
হৈচৈ বোবা হয়ে গিয়ে মনে রাখে
সেই মনে রাখাকে ভয় পাই আমি
সেই মনে রাখা নিয়ে বেঁচে
থাকতে থাকতে–
আমি মরতে চাই
তাই, বলি, মুখ ফিরিয়ে নিও না
আমি একটা দেশ হারিয়েছিলাম
তুমি দেশ হারিও না
তুমি
ভাষা হারিও না।

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • দুটি কবিতা – সৌগত দত্ত

    কর্দমাক্ত বর্ষাকে বৈশাখের চিঠি চিঠিগুলো ছড়িয়ে আছে দক্ষিণের চিলেকোঠায়, তাতে ঠিকানা লেখা হয়নি এখনও। কি নামে ইতিহাস উৎসর্গ হয়? বন্ধু, নাকি প্রিয়তম! তোমার প্রতিবেশী জানালাটায় আজও আমার কবিতা লেগে আছে; তুমি ছেড়ে গেছো না পাওয়ার অভিমান আর লাঞ্চনার বিজয়ে। তবু, কাঁটাতার আর কাটাকুটি খেলায় সিঁদুর মুছে যায়, প্রেম নেমে আসে, কোনো এক নাম না জানা…

  • জাগরণ – দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    সৃষ্টি-সেরা নারী-রে তুই, তবুও অনাহূত, বোঝা ভেবে আজন্ম অপমান, আজও অব্যাহত। মাটির প্রতিমা পুজিতা হন, জ্যান্ত প্রতিমা লাশ, বিকৃত পুরুষ, বিকৃত বাসনা, ঘটায় সর্বনাশ। পুরুষ-জাতির ভোগ্যা হয়ে, হারাস নিজ শরীর, মৌন পৃথিবী দেখে শুনে, স্বার্থ মগ্নেই বধির। তিন কিংবা তিরাশি হোক, কেউই পেলনা ছাড়, মানবরূপী দস্যু পশুর, অবাধ অত্যাচার। ‘ধর্ষিতা’ তকমা নিয়ে-রে তুই, সম্মান খুঁজিস…

  • অজিত ভড়ের পাঁচটি কবিতা

    ব্যক্তিগত ভেবেছিলুম যাব মঞ্জুমালা এসে জানলা খুলে দিল।যেন মৃত্যু বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তারপর সন্তুর বিয়েনানারকম রান্নার গন্ধখেয়ে উঠে বেরোতেই সায়ন্তনীর সঙ্গে দেখা: সায়ন্তনী শব্দহীন :যেন ভিনরাজ্যের ঝিলম নদীর বাঁক,আর শিল্পিতা?অনেকদিন আগের ট্রেন ছেড়ে যাওয়া প্ল্যাটফর্ম এখানে এক পা– ওখানে এক পাঘরে ঢুকিজানলা খোলাদেখি– আবার মৃত্যু ঢুকেছে ঘরে… এই বয়সে আর মশারি খাটাতে ভাল্লাগে না!…

  • |

    একজন বারীন ঘোষাল – সব্যসাচী সান্যাল

    ‘ফিফটি থাউজ্যান্ড, ম্যানেজেরিয়াল জব, কাম হাল্কা হ্যায়, কভি ভি আ জাইয়ে মিঃ ঘোষাল’ – চুলে কলপ করা, সাফারি স্যুট, ফোলিও ব্যাগের পান্ডেজী বলছিলেন। বারীনদার মুখে মুচকি হাসি – ‘আরে যো ছোড় দিয়া বো ছোড় দিয়া, আভি দোস্ত কো ঘর লে জানা হ্যায়’। ২০০৫, পঞ্চাশ হাজার টাকা, টাটানগর স্টেশনে দাঁড়িয়ে অফার  ও রিজেক্ট। আমাকে নিতে এসেছিল…

  • অরিত্র শীলের পাঁচটি কবিতা

     শিথিল পেশির মেধাস্বত্ব এইমাত্র মৃত শ্রমিকের পিঠে, নামুক বৃষ্টি মাঠ নিঃশ্বাসে নেই অনুতপ্ত ক্রেন নিঃশ্বাসে নেই তলপেটের ঘ্রাণ বৃষ্টির জল ছুঁয়েছে কীর্তিহাট পেশিতে পেশিতে ইঁটের তাগাড় নুনমাখা ক্যাম্পখাট ডানাছিঁড়ে মরা মাসে একা একা পাখিদের চেয়েও উঁচু দিয়ে উড়ে বাতাসে দিয়েছে ছ্যাঁকা শূন্যের সব দুঃখকীর্তি ভরে বটের শিকড় এলেবেলে গেছে মরে চাতকের ঠোঁট, ঠোঁটের খিঁচুনি, উনুনের গায়ে স্যাঁকা নরম ঘাসের যেতে বসেছিল স্তম্ভবিন্দু…

  • শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়ের পাঁচটি কবিতা

    বসন্ত পূর্ণিমা রোজ সকালকে বলছি আকাশের নামান্তরআমার তোমার মাঝের এই এক তীব্র প্রত্যয়এভাবে আমি ও তুমির সাংসারিক মিঠাতানবলি মাতৃত্ব বুঝিয়ে দাওবলে যাই দাম্পত্য কেন-নাবলা যায় না নীরবতাহাক্লান্ত বসন্ত!পূর্ণিমা খাচ্ছি এখন মাঝরাতক্ষুধা, অশ্রুর অস্তরাগএ বিচলন সময়ের হতদ্যমমাংস রান্নার রংটা তিতকুটেমাংস রান্নার স্বাদটা এমারল্ডবদ্ধ উঠানে মঞ্চ আবির, দোলের যাত্রাএত সোচ্চার! যেন নাভির উচ্চারণহাঁটু ভাঁজ করে ক্ষমা চাইছি…

6 Comments

  1. “জানি আমি, সীমান্ত শুধু লোভী
    হাতে তৈরী… ” This line takes the cake.. onobodyo hyeche lekhati…

    1. ধন্যবাদ! ওই লাইনটা আমারও মনের খুব কাছাকাছি। ওটা ঠিকঠাক resonate করেছে জেনে ভাল লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *