অজিত ভড়ের পাঁচটি কবিতা

অজিত ভড়ের পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

বিধিনিষেধ ১৪

দৃশ্য শেষ। 
এইবার কান্না শুরু হবে
কে কেমন করে কাঁদবে—
তারই নির্দেশ দিচ্ছেন পরিচালক।

আমপাতা এসে গেছে, জামপাতা এসে গেছে, 
এমনকি বটপাতা–অশ্বত্থপাতাও এসে গেছে, 
যার ওপর যেমন নির্দেশ 
সে সেই পাতায় মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকুক।

জীবনের সব কান্নাই শিল্প।

মনে রাখবেন, 
সিগারেট খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর 
আগুন জ্বালানোও তেমন দেশের পক্ষে ক্ষতিকর—

অনুগ্রহ করে—কেউ আগুন জ্বালাবেন না।

কপাল

১৬ ঘণ্টা মরে থাকি, ৭ ঘণ্টা অচৈতন্য, 
১ ঘন্টা নড়াচড়া করি—
তখনই মেঘ ভেসে যায়,
নানারকম বৃষ্টি এসে লাগে

ঘর খুলে যায় 
আমি রামায়ণ পড়ি, মহাভারত পড়ি 
আর বন্যায় স্নান করি—

তারপরও ৫ মিনিট থাকে—
কেউ কেউ মিস্‌ড্ কল দেয় 
আমি পদ্মপাতায় ফুলকপি এঁকে 
— তাদের নিমন্ত্রণ করি।

রসকলি

অজস্র ভঙ্গি আছে তোমার 
এই ভঙ্গিতেই গোলাপ বেশি গন্ধ ছড়ায়,
এই ভঙ্গিতেই
চতুর্ভুজের থেকে ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল বেশি,
এই ভঙ্গিতেই 
পরিযায়ী পাখি এসে ভিড় করে লেকের ধারে, 
এই ভঙ্গিতেই রসে টই-টুম্বুর হয় গাছ 

এই ভঙ্গিতেই
ভোর থেকে আমরা তাকে রসকলি বলে ডাকি।

হাই – আমি ফাল্গুনী 

ঘর থেকে পালালেই কি আর রাস্তা থেকে পালানো যায়? 

ছড়ানো-ছেটানো পাথর কুচি দিয়ে
রাস্তা কিন্তু বড়ো হতে থাকে—
এক চেক পোস্ট থেকে আর এক চেক পোস্টে 
এগিয়ে যায় বডি।

ভেবেছিলুম
তোমাকে নিয়ে মানচিত্রটা ঘরেই রাখব; 
তুমি সেই পালাতে চাইলে, 
এই স্টেশন থেকে ওই স্টেশন
এই জানলা থেকে ওই জানলা—
এখানকার আম-কাঁঠাল, ওখানকার জাম-জামরুল 
একই মানচিত্রের এদিক-ওদিক!

পালালে—
আমাকে নিয়েই পালালে 
কিন্তু বক্তরেখার বাইরে যেতে পারলে না।

দিঘি এবং লতাপাতা

চরাচরে মাহাত্ম্য না ছড়ালে,
‌‌ বা‌‌ক্য এত বিন্যাস পেত না—!

কথাটা তো তাই, 
রাত্রি যদি ঘরেই থাকত 
এই নীল অন্ধকার, আবেগে সমুদ্র টেনে ধরা,
শূন্যের এত ঢেউ
কখনো গর্জন, কখনো শুধুই জল 
আর এই বাষ্পীয় মায়া 
যেন ধানক্ষেতে চু-কিৎ-কিৎ খেলা

রাত্রি যদি ঘরে থাকত 
যদি আটকে থাকত আসবাবপত্রে 
তাহলে ব্যালকনি কখনো শিল্প হত না।

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২