ভজনলাল – জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়
না, কোনওরকম অতিচালাকীর নিতিশিক্ষা দেওয়ার দায় নেই তার। সে পড়ে পড়ে ঘুমোয় না যেখানে সেখানে। কোনওদিনই এমন করেনি। সে আসেনি।
খরগোশ আসে নি। এখানে শুধু একটা কচ্ছপ আর একটা শামুক আছে। তারা এগোচ্ছে। এগনোর জন্য মরিয়া, অন্য জনকে টেক্কা দেওয়ার জন্য প্রচণ্ড চেষ্টা। এরাও কেউ মাঝপথে ঘুমোবে না। কেউ শর্ট কাট নেবে না।
প্রতিযোগিতার কারণ জানা নেই। তবে যে হারবে সে দুয়ো। তাকে তার ছেলে-মেয়েও বড় হয়ে খিস্তি করবে। কারণ, পরবর্তী এক প্রজন্ম জানবে ‘কচ্ছপ আর শামুকের গল্প’। যে হারবে, তার নামে আবার একটা নীতি শিক্ষার লাইন লেখা হবে!
কেন হারবে, আর কী হতে চলেছে আগামীর নীতি শিক্ষা? এইটুকু জানার জন্যেই অনেক ক্ষণ চুপ করে ডালে বসে আছি। নিচে, খানিকটা দূরে এক জায়গায় হোগলা বন শুরু হয়েছে, ওইখানেই রেস শেষ হবে। ওই দিকেই এগিয়ে চলেছে দুজন। ওইখানে হোগলা বনের শুরুতে ফিনিশিং লাইন দেখতে পাচ্ছি।
শামুকটা কেমন করে যে সিলিপ খেয়ে খেয়ে মাঝে এগিয়ে যাচ্ছে, আমি গেঁড়ি, গুগলী এসব খাই… শামুকও পেরে যাব, ছোটোখাটো হলে। কিন্তু, যে জিতে যায় তাকে খাই কী করে? বসে বসে ভাবছি। হঠাৎ হোগলা বন থেকে গামছা পরা একটা কে ঝপাং করে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলো। কচ্ছপকে ঝুড়িতে তুলে নিয়ে আবার ঝোপের মধ্যে সুরুৎ। কচ্ছপকে তুলে নিয়ে ফিনিশিং লাইন পার করিয়ে দিলো?! এ তো চোট্টামো হ’ল! এখন হার জিতের কী হবে? গল্পের কী হবে? নীতি শিক্ষার কী হবে?
ওই গামছা পরা হতচ্ছাড়ার নাম কেলো। না না না… আমাকে খিস্তি করে লাভ নেই। এই নাম আমি দিইনি। কেলোর বাপ দিয়েছে। এই যেমন আমার বাপ খুব ধার্মিক ছিলেন, সাধন-ভজন পছন্দ করতেন। তাই আমার নাম রেখেছিলেন ভজনলাল।
কেলো এইসব গপ্পের ধার ধারে না। নীতি শিক্ষা-টিক্ষা নিয়ে ওর কিছু আসে যায় না। ওর খালি খিদে পায়। কচ্ছপটা আজ গেল কেলোর পেটে!
আর ওই যে বললাম খরগোশ আসে নি; সেও এমনি এমনি নয়। সে এখন কেলোদের ঝুপরির সামনে, খাঁচার ভেতর শাঁকালুর টুকরো চিবোচ্চে। জানে না, কেলোর বাপ এককালে খরগোশের মাংস খেতে খুব ভালবাসত।
শামুকটা এখনও হোগলা বনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একেই কি স্পোর্টসম্যান’স স্পিরিট বলে? কচ্ছপটা নেই, আর নীতি শিক্ষার লাইন লেখা হবে না। আমি কখনও শামুক খাওয়ার চেষ্টা করিনি… পারব? ডানাটা বোধহয় এতক্ষণে শুকিয়ে গেছে।