প্রিয়, মার্গারেট
অনেক দিন ধরে তোমাকে চিঠি লিখবো ভাবছিলাম
কিছুতেই সময় হয়ে উঠছিলো না
আজ, ২০১৮ সাল
হঠাৎ তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম।
ছেলেবেলায় জেনেছিলাম আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যাননের নাম
আমার বাড়িতে তোমার ছবি
আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী মুখ আমাকে বারবার প্রেরণা দিত
বাবার কাছে শুনেছি- সমাজসেবার গল্প
মার কাছে শুনেছি- তোমার সেবা ধর্ম
জানতে জানতে শুনতে-শুনতে ক্রমে আমিও তোমার ভক্ত
বাবা বলতেন- এই দেশে একজন নিবেদিতা দরকার
মা বলতেন- ইংল্যান্ডের দেওয়া ভারতবর্ষের সেরা উপহার
দাদু গাইতেন- ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’
এসব কথা শুনতে শুনতে বড় হয়ে ওঠা
আর ভাবতাম, পারবে, এখনো পারবে
এদেশের নারীরা এখনো পারবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষিত করতে।
কেমন একটা ঘোরের মধ্যে সমস্ত সময় ভাবি
যদি আর একবার, একবার আমাদের মধ্যে তোমাকে পেতাম
আজও যখন একা থাকি
তখন ভাবতে, ভাবতে, বলে উঠি দেশপ্রেমের ও মানবপ্রমের বন্ধনের জন্য
একজন প্রকৃত মানুষ দরকার
তুমি হারিয়ে যাওয়ার পর দেশে আজ নারী নির্যাতন, লাঞ্ছনা,
গণধর্ষনের ছবি প্রথম পৃষ্ঠায়।
ভুল করছে সবাই, ভুল করেছে আজও ভুল করছে
তোমার মত মহীয়সীর আশায় সবাই আজও বুক বাঁধছে।
তুমি তো শুধু নারী সমাজের নাও
তুমি তো ভারতবর্ষের মণিকোঠায় হীরক
যার আচার-আচরণ, ভাষা, বেশভূষা এবং শিক্ষা
মানুষের মধ্যে দেয় মান এবং হুঁশ।
এই বিশ্বাসে ভর করে, সবাই ভেবেছিল তুমি আসবে- আসবেই
কিন্তু এলেনা-
কেটে গেলে অনেকগুলো বছর
তুমি এখন কোন প্রতিষ্ঠানে কিংবা কোন মেয়ের নামকরণে
জানো, তোমার জন্মদিনটা এখন সবাই ভুলে গেছে
তুমি এসেছিলে বিদেশ থেকে ভারতবর্ষে
আর, ভারতবর্ষের ছেলে ও মেয়েরা যায় বিদেশে
তুমি এসেছিলে নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার জন্য
আর, স্বদেশের ছেলেমেয়েরা যায় অর্থ উপার্জনের জন্য
আর কতদিন চুপ করে থাকবে?
আজ যখন চারিদিকে ধর্ষণ, হত্যা ও সাম্প্রদায়িকতার বাষ্প
তখন জগতকে আলো দেবে কে?
তোমার জ্বালাময়ী বাণী
“হে মহাপ্রাণ ওঠো, জাগো,
জগৎ দুঃখে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে
তোমাদের কী নিদ্রা সাজে?”
তোমার কন্ঠের আওয়াজ সবাই চেঁচিয়ে বলছে-
এসে গেছে, এসে গেছে,
আবার হয়তো এসে গেছে নিবেদিতা
তোমার হারিয়ে যাওয়া জন্মদিনের ভেতর থেকে উঠে আসুক
আর একটা নিবেদিতা
আজ স্বাধীন দেশের প্রতি মুহূর্তে দাঁড়িয়ে
তোমায় আমার এই চিঠি
প্রণাম নিও-
ভালো থেকো মার্গারেট
প্রণাম নিও।