প্রেমিকাদের বলছি না – সেলিম মণ্ডল
১
প্রেমিকা ছাড়া অনস্তিত্বের স্বর্গে কেটে যাচ্ছে ভালোই। তবুও যখন উঁকি মেরে দেখি প্রেমিকার মতো বান্ধবীরা একে একে শীতবস্ত্র জড়িয়ে নিচ্ছে। মনে হয়, এ জীবনে আমার আর ভ্রমণ হবে না।
২
যে শহরে শীতকাল নেই, সেই শহরে ছড়িয়ে আছে আমার প্রেমিকারা। নকশি-কাঁথার ভিতর উষ্ণতা বাড়াতে বাড়াতে ভুলেই গেছি মায়ের ছুঁচে ফোটা আঙুলের কথা। যে আঙুলে মা প্রেমিকার মতো আদর করত। মা এখন শীতের দেশে। আর প্রেমিকারা বরফ গিলতে গিলতে লীনতাপ খুঁজে নিচ্ছে পরিবেশের। আর আমি? হতভাগার মতো পদার্থবিদ্যায় মুখ থুবড়ে মুখস্থ করছি সেই সংজ্ঞা!
৩
আঁচলের গিঁট খুলে যতটা উদার হতে পেরেছিল ভালোবাসা, সেখান থেকে অনেকটা দূরে প্রেমিকাদের বাড়ি। প্রেমিকাদের বাড়িগুলো একলাগোয়া। সব বাড়ির বাইরে সাদা চুনকাম করা। অথচ, ভিতরটা সিঁথির মতো লাল। প্রবেশ করতে পারি না। সামনে থেকেই ঘুরে আসি। এই ঘুরপথেই একসময় অনেক গলি ছিল। আমি ফিরতে পারতাম না। ঘুরে যেতাম প্রেমিকাদের বাড়ি। ফেরা নিয়ে সংশয়ে থাকতাম। সংকটে নয়।
৪
প্রেমিকাদের লাল ফিতের সৌন্দর্য নেই। প্রেমিকাদের সরু আলপথ ধরে হেঁটে যাওয়া নেই। প্রেমিকারা ওড়নার সেফটিপিনে, আঙুলে ফুটিয়ে লিখে দিচ্ছে নাম। যে নাম ধরে ডাকলে প্রিয় ঘুঘু ডাকে, সেই নাম। কিন্তু নামের ভিতর এত ঐতিহ্যরহস্য, এত কারুকার্য ফুল ফোটে না। চটকানো পাপড়ির দলা পাকানো ফল তাকিয়ে থাকে অদূর ভবিষ্যতে। ভবিষ্যত একটা কালো পর্দার সামনে মাথা নোওয়ায়। প্রকাশ করে ‘শেষ ইচ্ছে’। প্রেমিক হেরে যায়, প্রেমিকারা মাতৃত্ব পায় না।
৫
কোনো একরাতে সিগন্যালসহ বোরোলিনের ট্রেন আসবে। জেগে থাকি। জাগতে জাগতে যখন রাত্রির মেরুদণ্ড ভেঙে বেরিয়ে পড়ি, কোনো প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পাই না। দেখি প্ল্যাটফর্মের জায়গায় টেলার্স। সেখানে রাতজাগা মোটা চশমার এক দর্জি। সেলাই করে চলেছে বর্তমান ও অতীত। তাকে চিনি না। এই রাতে উচ্চস্বরে সে আমায় ডাকছে। আমার কি যাওয়া উচিত? ভাবছি, ভাবছি আর ভাবছি…
দু’পা এগিয়ে যেতে দেখি- ছেঁড়াফাটা, রঙচটা, দোমড়ানো নানা প্রকার হৃৎপিন্ড মেঝেতে পড়ে। প্রত্যেকে আমাকে পেয়ে মহাখুশি। আমি চাইছি! আমি চাইছি না রিফ্যু করাতে। মোটা সূঁচের মুখে প্রক্সি দেওয়া সুন্দরী বান্ধবীদের মুখ- আমি যাদের প্রেমিকা ভেবেছি অথবা যারা আমায় প্রেমিক ভাবেনি।