তৃষাতুর পরমা : নীরবতার নীলকণ্ঠ পালক – ঐন্দ্রিলা মহিন্তা
যজ্ঞপথের প্রবাসী নাবিক চড়ে বসলেন বটমূলের প্রাচীন ঘূর্ণিতে । মধ্যরাতে আঙুল কেটে নতুনের আভাস — এশুধু অগরু নয় যেন আস্ত ব্রহ্মপুত্র…
একে একে পেরোতে থাকলো বৃদ্ধ স্ফটিক । যুবকের দ্রোণাচার্য আকাশের বুকে এঁকে দিল হাহাকারের বাণিজ্য । এলো কিশোর পাতার মাতাল আঁচল , যে আঁচলে শঙ্কা নয় ‘ মায়ার খেলা ‘ য় স্নেহ বোনা
” তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি “
মৌন বাউলের সন্ধ্যে জমা ধ্রুবচোখ অলিন্দের বৃন্তে মাতৃত্ব ফোটায় । গোলাভরা আবদারের চাবিটার বিধবাবেশ – লাবডুবে ছেঁকা দেয় ।
ক্রমশ অদৃশ্য হয় শ্যামলি বালুকণার শৈশব । ঘোর প্লাবন কুয়োতে শূন্য চড়ায় । চিবুকের দক্ষিণী ধুলোর নীলশিরা কঁকিয়ে ওঠে
” তোমার পরশ আসে কখন কে জানে… “
আবার ঘুরতে ঘুরতে মাঝদুপুরের ঝুলনে তুমি ক্লান্তির মরুভূমি খোঁজো । এতক্ষণে চেনা হয়েছে দুপুরের তানপুরা , ফেলে আসা কবিতার আসবাব — অতএব তুমিটা সহজাত । দূর থেকে ছোট্ট মেয়েটার ঠোঁটে নামতা ওঠে ।
ত্রিমুখী রাজদণ্ড আমি , তুমি নাকি আমরা…..
” তোমার আসন পাতব কোথায় হে অতিথি “
ধুলোয় উড়তে থাকে চিতার বিসর্জিত মেঘ ! তিলোত্তমা হেসে ওঠে….. তবু মৌনতার কপাটে একগুচ্ছ তুলো — এ ঠিক তুলো নয় , এক শৃঙ্গের অভিমানী নিবেদন
” কতদিন একসাথে ছিনু ঘুমঘোরে
তবু জানিতাম নাকো ভালোবাসি তোরে ! “
কড়িবরগার আলজিভে ভেসে ওঠে আলো । এবার নিজেকে দেখছো , তবে দক্ষিণ জমা ঘোলাটে চোখ ।
মৃত্যুপাখি মাথা নাড়ে
” তখন জানিনু , সখী কত ভালোবাসি “
দোলমঞ্চের শুভ্র চিবুকে শিশিরের ভ্রমর , তুমিটাকে টেনে এনেছিল অশ্বত্থের বিষবৃক্ষে ।ব্যাবিলনীয় সমাদর টিকে থাকেনি টিউলিপের জোছনায়।
জোব্বার চেতনা উজানের সায়াহ্নে বারবার আমাদের ভিজিয়েছে । উনিশের কিশমিশে শ্রাবণ আঁচড়ে খসে পড়ে বাহারী বিপাশা ভ্রম ।
ছায়াপথের কুসুমিতায় ব্যকুল হয়ে ওঠে চিরচঞ্চল সুদূরিকা
কোন্ খেপা শ্রাবণ ছুটে এল আশ্বিনেরই আঙিনায় ।
দুলিয়ে জটা ঘনঘটা পাগল হওয়ার গান সে গায় ॥
অলকানন্দার কেশে জমে ওঠে ধানের শাড়ি । উন্মুক্ত কিরণে বিরহিনী ‘ র দোলায় লুণ্ঠিতা রমনীর দ্বিজন্ম ভাসে : আসে – যায় পিলসুজের মল্লার
” আমি জাগি নাই জাগি নাই গো ,
তুমি মিলালে অন্ধকারে , হায় ॥ “
উলঙ্গ কাচে যৌবনের বাষ্প জমে ওঠে । অর্ধনারীশ্বরের কর্ণ বরাবর পুতুলকথার দ্বন্দ : আজ তোমার অনুভবে ।
” দাড়িওয়ালা বুড়ো লোকটা
কিসের নেশায় পাওয়া চোখটা ,
চারিদিকে তার জুটল অনেক ছেলে । “
হোমশিখার লবণাক্ততা নদী হয়ে ওঠে
” মোহিনী মায়া এল ,
এলো যৌবনকুঞ্জবনে “
পরাশ্রয়ী শুকতারা তরীর নিরলঙ্কার বেশ । কমলালেবুর কচিবসন্তে মালঞ্চের হাঁক — তুমিটাকে কবি না না বিদূষক করেছিল : এক অরক্ষিত কাচপ্রহরী;
” পাগলিনী , তোর লাগি কী আমি করিব বল্ ।
কোথায় রাখিব তোরে খুঁজে না পাই ভূমণ্ডল “
ঘড়ির কাঁটায় কাশফুলের মাথা , অহোরাত্র নতুনের বাতি জ্বালায় । দূর থেকে দেখি তোমার বৈশাখী মলাট । চিঠিকোষের আকুলতার উৎসব শবদেহে মৌমাছি পুঁতেছিল । উড়িয়ে এনেছে ‘ পঁচিশে ‘ র না এ তোমার নয় আমাদের রমণীয়তা
” চিরনূতনের দিল ডাক
পঁচিশে বৈশাখ “
কমণ্ডৌল ‘ র ধোঁয়ায় প্রকৃতি দূর থেকে ওম সেঁকে । নতূনের ধূপের রোদে পাখিও শিল্পী হয়ে ওঠে ।
দূর থেকে নির্বাক অক্ষরস্রোত ভেসে ওঠে
” শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে….. “