…এবং পাঁচটি কবিতা – রাজীব দত্ত, দয়াময় মাহান্তী, অনঞ্জন
রাজীব দত্তের দুটি কবিতা
এক্সিট পোল
আলাদিন ফোন করেছিল—
এ-বছর উৎসবে জেলার কবিরা সব
মূল মঞ্চে সমবেত হবে।
সামগান, দীপ প্রজ্বলন হলে
তাদেরই মিছিল মিশন রো, পার্কস্ট্রিট ঘুরে
ফিরে যাবে নিজ নিজ স্থানে।
অপচয় রোধে আগাম জানাতে হবে
শাকাহারী কিনা, তার সাথে নতুন কবিতা।
গিন্নিকে ডাল বাটতে বলে
বাজারের থলে হাতে রাস্তায় নামি।
সিলেটেরই বাতিক বোধহয়—
মিক্সিতে বাটা ডাল কখনোই তত মিহি নয়।
আচমকা ধাঁধা লাগে, নামটুকু ছাড়া
সিলেট আমার হল কবে?
এসব চিন্তা ছেড়ে
ক্লাবের দেওয়াল খাওয়া ঝুনো বটগাছ,
মগডালে শিকারি বেড়াল, আর দেখি
লেভেল ক্রসিং জোড়া ফলের দোকান—
ততোধিক মেধাবী দোকানি।
কোমরের ঠিক নীচে আলতো চিমটি মানে
কালিকা নির্ঘাত, সেই স্কুল থেকেই—
এখনও একটা কাঠিতে দুটো বিড়ি জ্বালে।
গোলাপি সুতোর বিড়ি হাতে দিয়ে বলে, এবার ভোটের পরে ব্যবসায়ী সমিতির
নতুন কমিটি হবে, ছাউনি ত্রিপল ফেলে
দোতলা বাজার হলে ওরা সব এক কামরা
কারবার পাবে— ছিমছাম।
চাপা স্বরে চকচকে সুখে আরও বলে,
মিড-ডে মিলের কাজে বনানীর চাকরিটা
বারো আনা পাকা হয়ে গেছে।
শুনে শুনে হিংসায় কান জ্বালা করে।
তেতো থুতু গিলে
আগুনের শেষটুকু ড্রেনে ছুঁড়ে বলি,
এসব ফেক নিউজে আমার অরুচি ধরে গেছে।
তোরা সব খালে ভেসে যাবি,
টিকে যাবে আমার কবিতা—
গণশুনানি
এত যে মহড়া দাও ট্রেনে, বাসে, ফোনের দেওয়ালে
স্বদেশ নির্মাণ করো, প্রতিদিন খুঁটে তোমার পুঁজ-রক্ত-ফেনা
ছেলেকে ভাতের সাথে আজগুবি গল্প মেখে দিয়ে
তাহলে বলোনি কেন এসব পূবালী বাতাস?
কখনও বলোনি কেন, তোমাদেরও ঈশপের কথামালা ছিল?
অনুবাদে রাদুগা ক্লাসিক?
জ্ঞান ফিরে শেষের কদিন ঠাকুমা দুবেলা বলত
সিরাজের কথা— রাজশাহী কলেজ ক্যান্টিনে
জার্মান মাউজার হাতে দিয়ে বলেছিল,
‘তাহলে স্বাধীন দেশেই কথা হবে কমরেড!’
তারপর তো কলকাতা, সুভাষ কলোনি—
বিস্মৃতিই মুছে দেয় আমাদের হন্তারক যোগ।
তাই বলে সবকিছু ভুলে মেরে দেবে?
ভুলে যাবে, ফোর্থ পিরিয়ডে পরোটা দুভাগ করে
অকারণ হাসি— ‘তেকোনা পরোটা
যেন ভাগ হওয়া বাংলার ম্যাপ!’
দয়াময় মাহান্তীর দুটি কবিতা
ক্ষমা
সুন্দরকে হারানোর ভয়ের ভিতর
হেঁটেছি কখনও…
এই ভুলের জন্য কার কাছে চাই মার্জনা?
আজ বুঝি হয়ে ওঠা যায়, হয়ে ওঠা যায়
তাকে পাওয়া বা হারানো যায় না।
কেন বৃথা আমাকে অনুসরণ করো আর?
তোমার বোধের বাইরে খেলা করে যে জ্যোৎস্না
তার জল হয়ে আমি ক্রীড়া করি,
আমার ভিতরে যে করে খেলা
তার ছায়া তোমার ভুবনে পড়বে না।
তবুও কি আরও কিছু দূর আসতে হবে
তোমাকে আমার পেছনে, যতটা হেঁটেছিলাম
একদিন ভুল করে?
যতটা কাছে এলে, বুঝতে পারবে—
একটি বৃত্তের অর্থ ও অনর্থের সমস্ত রহস্যগুলি…
এভাবেই একটি ভুল আরেকটি ভুলের পাবে ক্ষমা?
তোমার দৃশ্য থেকে
আমার নিকটে তুমি ভালো থাকবে না পাখি,
অথচ, আমি কাছ থেকে দেখতে চাই
তুমি ফসল তুলে নিচ্ছ ঠোঁটে
পালকের বিন্দুগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছ হাওয়ায়…
তোমার দৃশ্য থেকে দূরে
সরে যেতে কষ্ট হবে;
আমার হাতের তালুতে মুখ ঘষতে
ঘষতে তুমি তো কিছু বলছ না?
উড়ে যাবার কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই
যেন সুখে আছো,
যদিও টের পাচ্ছি তোমার ভেতরে
অসুখের শস্য ছড়িয়ে পড়েছে
চতুর্দিকে, যেন বিপন্নতাকে দানা দিতে চাইছে
সদ্য হাঁটতে শেখা কোনো শিশু…
আমার কাছে কেউ ভালো থাকে না
পুকুরের জল, হাঁস,
রাস্তার কুকুর, মাঠের নরম ঘাস;
আমার ছায়ার সংক্রমণে
মনখারাপের হাত আছে।
তুমিও আমার নিকটে ভালো থাকবে না পাখি,
কিন্তু আমি দেখতে চাই,
দূরে, দৃশ্যের ভিতরে উড়তে উড়তে
তোমার খুশি শাদা মেঘ হয়ে যাচ্ছে,
কাশ ফুল হয়ে যাচ্ছে।
অনঞ্জনের একটি কবিতা
ফেরা
ফেরার কোনো পথ নেই তা জানি ভুলকে তাই পেরিয়ে চলে যাই
ভুলের বুঝি চটকদারি রং কোন্টা যেন স্বপ্নেরা থইথই
কোন্টা আবার নেশায় নেশা মাখা নেশারও কত রকমফের আছে
ফেরার পথ বড়োই গোলমেলে ঘাতক তোমরা ছদ্মবেশে মিছে।
রত্নাকরও ফিরতে পারেনি পৌঁছেছিল অন্য কোনো বাঁকে,
উঠোন-জুড়ে খেলে ছেলের দল দূরের-চিঠি হাতছানিতে ডাকে,
সময় বুঝি বড়োই ভঙ্গুর আড্ডা দিতে আসে ছেলের দল
ক’টি মেয়েও সঙ্গে ছিল বটে আকাশকুসুম হয়নি কোলাহল।
যখন তুমি আকুল তাকে ডাকো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে যায়
মাধুরী-বিধুর আলো মাখা ঘাসে পাথরবাটি সোনার মনে হয়,
নেশার পথেও পথের নেশা ছায় অনেকটা পথ পেরিয়ে গিয়ে তাই
জলের স্পর্শ ধুলোয় ঢেকে গেলে নদীর দিকে আকুল চোখে চাই।
ভুলকে তুমি যোগ করছ নাকি ওরা তো আর জলবিন্দু নয়
ফিরে পাবার বিষম বাসনায় ওদের বুঝি বাঁধো কবিতায়,
আমি তখন প্রবল ফিরতে চাই তাইতো আর ফিরতে পারিনি
যে কবিতা লিখতে বসি রোজ সে কবিতা লেখাই হয়নি।
❤️