পাঁচটি কবিতা – প্রীতম বসাক

শেয়ার করুন

একটি কাব্য ও তাহার খোসা

১.

হে আলোচ্য জীবন! সঠিক শব্দটি আমি খুঁজিতেছি শূন্য পূরণের নিমিত্তে। এত নগণ্য শস্যের সূচি। এত আলোর অভাব। দূরত্ব হেতু আমি পৌঁছাইতে অপারগ তোমার ঔষধি অবধি। অথচ একটি দুটি গান পাইলে মাঠের ঘুম ভাঙিত। সহজ হইত মাটি। দেখো কী আবেগ করিয়া আসিতেছে দিগ্বলয় জুড়িয়া। কত করুণ ওই সজল। হে অপঠিত জীবন! আমি বারংবার ভুলিয়া যাইতেছি স্থাপত্য। বজ্র বিষয়ক রচনা। পিছল উপমা সদৃশ তুমি। আমাকে বৃষ্টির বাইরে বাহির করিয়া লাগাইয়া দিতেছ বৃক্ষের কপাট।

২.

তাহা হইলে আমাকে শুরু করিতে হইবে চর্যাপদের মেঘ হইতে। টিলায় স্থাপন করিতে হইবে জলভার। তাহা হইলে কালিনী নঈ কূলে আমি বসিয়া বসিয়া ভাবিব শব্দের কৃষ্ণরূপ! যাও বড়ায়ি খুঁজিয়া আনো ক্ষুধা নিবারক আলো। ওগো কাব্য, ওগো শরীর, তোমার পিপাসা মেটে না। খাইয়া যাও একপেট অনন্ত। কবির যৌনদ্বার। সকল মঙ্গলগানের ভিতর বসিয়া থাকো হে সর্প। হে দংশন। নীল পুষ্পের অভ্যন্তরীণ কীট। আমাকে হরিণ করিলে কেন! বক্ষে দিলে কাব্যের ব্যবহার। তদুপরি ফুটো বাণিজ্য জাহাজ।

৩.

অথচ আমি চাহিয়াছিলাম এযাবৎ অগ্রন্থিত নদী। দুই মলাটের মধ্যে যাবতীয় বর্ষাকাল ঘনীভূত করিতে। এক যে আছিল ছেলেবেলা। তাহার অপ্রকাশিত মুখ আমি রাখিয়াছিলাম তোমারই ডানায়। অতঃপর অশ্রু দিয়া সাজাইলাম ক্ষুধার সাদা পৃষ্ঠা। তবু ধান হইল না মাগো! সকল বিদ্যা ভাসিয়া গেল কান্নার ফাটল দিয়া! শুষ্ক বাক্য দিয়া ভরিয়া গেল দূর্বাদল। শ্যামল আসিল না। আসিল না তাহার গানের আহার!

৪.

অপুষ্পক এই পুথি। নিঃসীম দ্বারা গৃহীত। জলের বহুমুখী ব্যবহার তুমি জানো নাই। ফলত অপক্ব সকল শব্দ। কষা। সুতরাং বিভ্রম আসিয়া বসিল শাখায়। তুমি দেখিলে ফসলের পয়োধরে মুখ রাখিয়া শিশুটি কাঁদিতেছে। বাক্যে রস নাই। দুগ্ধে নাই গুণ। দেশ কী উপায়ে বাঁচে তাহা হইলে। কী প্রকারে কাব্যে প্রসাদ আসে। মানুষের মুখে মুখে রটিয়া যায় প্রভাত বর্ণনা। শব্দের নকুলদানা না চুষিলে কীরূপে কবি পায় বলো স্তনের সোয়াদ! কবিতার সচরাচর!

৫.

ইহা দেহ দিয়া রচিত পাণ্ডুলিপি। দেখো কী অমোঘ তাহার রূপ। আইসো রসিকবর। টান মারিয়া খুলিয়া দাও আয়ু। শব্দের ব্রহ্ম। আমি তো স্বভাব লিখিতে চাহিয়াছি। শিশুসুলভ উপকূল। অবিদ্যা দিয়া রচনা করিতে চাহিয়াছি সারাৎসার। দেখো ওই হস্তলিপি।মৃদুস্বরের বাক্য। যেন তোমার যৌনে অনন্ত জাগিয়া আছে। মাতৃভাষা ফুটিয়া আছে। তবুও জ্বরে পুড়িয়া গেল কলমের পিঠ। ওলাওঠা মাগো। এক্ষণে জীবন রাখিব নাকি কবিতার বিনম্র মুখখানি!

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • নারী – উজ্জ্বল সামন্ত

    আমি নারী আমিই আধার সৃষ্টি আমাতে দশমাস দশদিনে পৃথিবীর আলো দেখা ধূলার ধূলীতে কত কষ্ট সহ্য করে বুক ভরা স্নেহে কোনো বিশেষ দিন পালনে নয় শ্রদ্ধা ও সম্মানিত হতে চাই সমাজে প্রতিটি মানব হ্রদয়ে সস্নেহে শিক্ষা , প্রতিষ্ঠা,  সার্বক উন্নয়ণে পুরুষের সমকক্ষ হয়ে সমান তালে আমি স্বাধীন সেই দিন ই যেদিন থাকবে না মনে কোনো…

  • পেট – সেলিম মন্ডল

    এমনভাবে নখ খুঁটে খাচ্ছ মনে হচ্ছে, নেলকাটারের দোকানগুলো ধর্মঘট ডেকেছে তোমার ধর্মঘটে আপত্তি ছিল অথচ, আজ নখ চিবানো থামাচ্ছ না ডাক্তারবাবু বলেন, পেটের রোগের সঙ্গে নখের বিরাট সম্পর্ক তোমার কোনো ধরা ডাক্তার নেই কিন্তু পেটের জন্য চেরিনখ খোঁটো সরুগলির মাথায় গলিতে নীচুস্বরের মিছিল মিছিলে নখহীন নখমালিকদের অসামঞ্জস্য ভিড়

  • কবিতারা ভীষণ ক্ষতপ্রিয় – পিনাকী

    কিছু ব্যথা — ব্যথার চেয়ে অধিক কিছু ক্ষত সর্বদা স্বাগত কিছু হাঁটা– আপনভোলা পথিক কিছু আঁচড় হৃদয়ে শাশ্বত। কিছু বিকেল ছিল রাগাশ্রয়ী কিছু সময় নিবিড়তাই প্রিয় কিছু নজর গভীর মোহময়ী কিছু কথা নীরবতায় দিও। কিছু চাওয়া অপূর্ণতার দিকে যা যা পেলাম– অনির্বচনীয় ধরো আঙুল নিজস্ব আঙ্গিকে কবিতারা ভীষণ ক্ষতপ্রিয়। [চিত্র : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ]

  • ঈশ্বর ও মিডিল ক্লাস – সুদীপ ভট্টাচার্য্য

    আমার পাশে ঘুমিয়ে পড়ো আমার পাশে স্বস্তি আরাম তুলোর মতো তুলির মতো একটা আঁচড় অস্বাভাবিক শান্ত কিছু ছবি আঁকে মন-প্যালেটের রং ঢেলে দাও বং ফেলে দাও হারহাভাতে ইঙ্গ যত আপন বানাও তোমার ইচ্ছা আমার ইচ্ছা সংসারেতে ঠেক পায় না ভেক ধরেছি অল্প কিছু যোগান নিয়ে খুচরো মতো ময়লা নুড়ি এবং আছে চড়কা বুড়ি কুঁচকে যাওয়া…

  • ক্রিসমাস ইভ – পিনাকী

    নিয়নের আলো ফ্লুরোসেন্ট লাল গোলাপ আকাশের চেয়ে অনেক নীচে আকাশ তারাদের চেয়ে অনেক নীচে তারামণ্ডলী স্বপ্নের চেয়ে স্বপ্নালু সুখানুভূতি। সবটাই বেশ সাজানো সবটাই বেশ মাপজোক করা সুন্দর অতিরিক্ত আলোয় অন্ধকারকে আড়ালের প্রয়াস স্পষ্ট অতিরিক্ত আমোদে আক্ষেপ ভোলানোর ব্যর্থ চেষ্টা ঠিক কোনো রমনীর দুঃখ চাপা মেকি হাসির মতন। বড় বেশি সাজানো পার্কস্ট্রীটে একটা অগোছালো শিশুর বেমানান…

  • জাগরণ – দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    সৃষ্টি-সেরা নারী-রে তুই, তবুও অনাহূত, বোঝা ভেবে আজন্ম অপমান, আজও অব্যাহত। মাটির প্রতিমা পুজিতা হন, জ্যান্ত প্রতিমা লাশ, বিকৃত পুরুষ, বিকৃত বাসনা, ঘটায় সর্বনাশ। পুরুষ-জাতির ভোগ্যা হয়ে, হারাস নিজ শরীর, মৌন পৃথিবী দেখে শুনে, স্বার্থ মগ্নেই বধির। তিন কিংবা তিরাশি হোক, কেউই পেলনা ছাড়, মানবরূপী দস্যু পশুর, অবাধ অত্যাচার। ‘ধর্ষিতা’ তকমা নিয়ে-রে তুই, সম্মান খুঁজিস…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *