খুকু ভূঞ্যা-র পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

বৃষ্টি আঁকা নদী

অনেক ছায়া সামনে পেছনে

তবু ফুলে কত রং সুগন্ধি

রোদ যেভাবে প্রিয় প্রশ্বাসের মতো ছুঁয়ে যায় রোম শিরা নাভি বুক

তুমিও তো আছো তেমনি

বাতাসে সঙ্গমের গন্ধ

দুটি পায়রা ইভ আদমের মতো উড়ে গেল যেই

দেখে ফেললাম তোমার চোখ

বহু বছরের বৃষ্টি সঞ্চয়ে সমুদ্র লিখেছে তারায় তারায়

শূন্যতাই ওঁ, শূন্যতাই ভালোবাসা ধরে আনে দখিন বাতাসের মতো

তুমি যত পুড়বে আমার ভেতর, কিংবা আমি—

ভেঙে যাবে সূর্যের ঘুম

আমাকেও নদী করে দাও

অশ্রু রঙে আঁকা কেলেঘাই

ধুয়ে ফেলি যত রাধাদাগ, নীরব অন্তরাল

ভেজা চোখ দাঁড়াও

তোমার চোখে আগুন দেখতে দেখতে আন্দাজ করেছি কতটুকু পোড়াতে পারো হৃদয়ের দাহপর্ব

শূন্যতা থেকে উঠে যাওয়া ধূ ধূ ডাঙা, খাঁ খাঁ মাঠ

জমাট ক্ষতসারি

এসব কি আগুনে পোড়ে

ছাইয়ের আরোগ্য নিয়ে অন্তহীন পথ খুঁজে পায় ঠিকানা

আগুন পারে না প্রেমিক হতে, তাই তাকে বলি পাথর হও, শালগ্ৰাম

কোনোদিন যদি নড়ে ওঠে মীরা পরশে

যদি বুকে লাগে ঢেউ, সহস্র আঘাতে ভাঙে পাথরকাল

চোখ দুটো ভিজে যায় দরদে বেদনায়

তাই দেখে হাসিমুখে মৃত্যু আসুক

ভেজা চোখ দাঁড়াও, স্নান সেরে নিক পানকৌড়ি—

এক আঁজলা রোদ্দুর

আমার কি কোনো মন খারাপ থাকতে নেই

কিংবা শূন্যতা আঁচলের খুঁটে বেঁধে সারারাত যন্ত্রণা ফেরি করা

একটি বৃক্ষের মতো একা হব সবাই

নক্ষত্রের মতো নিথর নির্জন

তবু কি ফুল তুলব না ঈশ্বরের জন্য

ভাত রাঁধব না, অথবা খুঁটোটি ধরে দাঁড়িয়ে কৃষকের ফেরার অপেক্ষায়—

আমিও গেঁড়ির মতো মাটি কামড়ে পড়ে রই

কেননা বসুধা বিমুখ হলে আমার ভাসমান ছায়া কোনদিকে যাবে

কে আটকাবে, কে থামিয়ে বলবে রাত নেবে, না

এক আঁজলা রোদ্দুর—

কৃষ্ণ কাঁপন

তোমায় কী লিখতে পারি, বড়ো জোর জোনাকির নেভা জ্বলার দিকে তাকিয়ে নীরব অনুভব, আলো যা পারে আঁধার তা পারে না

তবু জেগে থাকা ছায়ারা যদি নড়ে ওঠে

কারুর চোখের জল কতখানি পাথেয় হতে পারে

কতখানি ভরিয়ে দেয় শূন্যতা ক্ষয় অথবা নিঃসঙ্গতার আঁচল

সেই তো দুপুর শালিখের মতো তীব্র খাঁ খাঁ নিয়ে ঠোঁটে তুলে নেওয়া খুঁটে খাওয়ার সুখ, যাপন

গান দেবে না কেউ

ফুলের কাছাকাছি এসে যেভাবে ছুঁয়েছি শরীরী ওম, অনেক ফুলের জন্ম অনিবার্য ছিল

কাঁটা সুন্দর কামনায় একটি ধুতুরা

তাকে কী দেব আমি বা তুমি

মন্দির না কুঞ্জ

ভাঙতে কি পারি পাথরকাল

আহ্লাদে গড়িয়ে পড়া অশ্রু ফোঁটায় তার ছায়া দুলুক, কৃষ্ণ কাঁপন—

একমুঠো ঘাসের কাছে থাকতে দাও

বেশি জেনে লাভ নেই

পৃথিবীতে কটা ধর্মগ্ৰন্থ, কত জ্ঞানীজন, কতগুলো মন্দির মসজিদ হিসেব দেখাতে এসো না

উত্তরে বলে দেব একতলা নটে শাকের গল্প, ভাত রাঁধার অথবা ধানচাষের

শুনে গালি পাড়ার আগে কেটে পড়ো দেখি

অত জেনে কী হবে

আলের গায়ে যে বেনাঘাস, যাকে তুমি ব্যবহার করেছ অবৈধ মিলনের মতো অনাদরে অবজ্ঞায় তার কাছে বোসো

জিজ্ঞেস করো সে কেমন আছে,

খানিক দাঁড়াও কাকতাড়ুয়ার কাছে, জিজ্ঞেস করো তার বারমাস্যা

যে গাছ একা পুকুরপাড়ে, যে লতা রুগ্ন, বসন্ত দেখেনি তার চোখ

যে শালিখ একা, যে ঝরা পাতা মৃত্যু ছুঁয়ে আছে যুগ যুগ

তাকে যদি ভালোবাসতে পারো জানব তোমার মন আছে

তুমি শুদ্ধ প্রেমময়, নিঃসীম মহাকাল

পুঁথি ঘেঁটে এসে যদি বলো, এটা কত, ওটা কী

এটা কোথায়, দূর হও

হিমের কান্না ছুঁয়ে একমুঠো ঘাসের কাছে থাকতে দাও—

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • রক্তিম সূর্য মণ্ডলের পাঁচটি কবিতা

    ১. অভিমানী চূড়া থেকে পাদদেশে নেমে আসে সবজি-বাগান।তার পর পরই আলোর কৌটোয় গুঁড়ো দুধ রাখতে শেখা।নিয়মিত চা বানাইসময়ে, অসময়ে;খিদে মরে, ভাত ফেলা যায়।মা দেখলে হাতে মেখে জোর করে খাওয়াতেন,আমি গিলতে থাকতাম ভাত, থালা, হাঁড়ি, উনুন…মা বলতেন, “আর একটু আনি?”—আনবে? অল্প কিন্তু, এক্কেবারে একমুঠো,তোমার তালুতে যা ধরে। ২. আমরা শ্রাবণ মাসে ফুল তুলিনি একটাওলুকিয়ে আছি,আশ্বিন আসুক।এই…

  • কলম কেন লিক করে – মলয় রায়চৌধুরী

    যুদ্ধ চলতেই থাকে, ছোটো হোক বা বড়ো আমরা ভাবি কবিতা লিখে যুদ্ধ থামিয়ে দেবো কবিদের কেউই পাত্তা দেয় না পাত্তা দেয় বিজ্ঞানীদের, যাঁরা নতুন নতুন অস্ত্র আবিষ্কার করে চলেছেন তা প্রয়োগ হয়ে চলেছে ছোটো যুদ্ধগুলোয় বাড়ি ঘর শহর মনে হয় পাঁপড়ের তৈরি যুদ্ধ কখনও ফুরোবে না, আমরা ফুরোবো দেশে-দেশে সৈন্যদল থাকবে, আমরা হাত কামড়াবো একদল…

  • দাবানলের আগে – পার্থপ্রতিম চৌধুরী

    বয়ঃবৃদ্ধ বৃক্ষের শুষ্ক শাখা, আকাশে আকাশ খোঁজে, শুধুই শূন্যতা । বসন্তের বাতাসেও, নেই ডালে সেই সজীবতা । ছায়া চায় — নীড়হীন নিরাশা, ছিন্ন ডানার প্রজাপতি , হায়! বটবৃক্ষ, তুমি বলো, সময় রয়েছে বাকি । সময় থমকে, মহীরুহর ঝুরির আড়ালে পাখিরা বাঁধেনা বাসা, ভাষা নেই কোকিলের চন্ডিমন্ডপের পাঠশালে । স্হবির পায়ের নীচে,জীর্ণ নকশিকাঁথা, লক্ষ্যহীন সময়ের —…

  • কাগজ সভ্যতা – সৌম্যজিৎ রজক

    ১ কাগজের মানচিত্রের ভেতর আমার কাগজের ঘর কাগজের শিশুগণ কাগজের স্কুলে যায় বড়োরাও কাগজের              কাগজেরই বসতি গড়েছে হাটে ও বাজারে পথে গিজগিজে ভিড় কেনাবেচা করে তারা, কাগজেরই বিনিময়ে করে জমিতে জমিতে কাগজের বেড়াও উঠেছে এমনকি কাগজের কাঁটাতারও সীমানা বরাবর উদ্বাস্তু কাগজেরা উদ্বাস্তু কলোনীতে থাকে মাতাল কাগজেরা মাতলামিই করে কাগজেরা…

  • বিকাশ – কৃষাণু নস্কর

    ধপধপে সাদা একটা বক বসে আছেছোটো ছোটো কচুরিপানার উপর,জলের মধ্যে ডুব দিচ্ছে ডাকপাখি,খেলা করছে ঝিঁঝিঁপোকা, ফড়িং।ঘাটের সিঁড়িতে সুরকি আর ভাঙা ইট বেরিয়েআসছে, পড়ে আছে বিসর্জনের কাঠামোভেসে আসছে ফুরফুরে বাতাস,হালকা আঁচড় কেটে, জলের গা বরাবর। এখানে আর কিছুদিনের ভিতরে,একটা আর্টিফিশিয়াল লেক হবেআর তার চারিদিকে থাকবে একটাজগিং ট্রাংযাক আর ঝলমলে বাতির সারি।খালের ধার বরাবর গজিয়ে উঠবে একাধিকহাইরাইজ,…

  • রঘু জাগুলীয়ার গুচ্ছ কবিতা

    দিগন্ত প্রার্থনালয় ১ বাতাস এসেছে কাছে কাঁপা কাঁপা গলায়কি অভিযোগ তার, বলে না কিছুই।তবু হৃদয়ে তলিয়ে যাচ্ছে সূর্যাস্তে লেগে থাকানদীর তটভূমি, সংলগ্ন কোমল রোদমেঘে মেঘে বেগুনিরঙা আচ্ছাদন— আমি তো ত্রিভুবনে প্রার্থনালয় চেয়েছি এমনি— ফুলের মালা হয়ে জোনাকিরাছুঁয়ে যাবে দেবীর চরণতল;আর রাত্রির কুঞ্জবন হতে পৃথিবীর দিকেশিশুর মতো নিরালা মুখে হাতছানি দেবে চাঁদ, অথচ যেদিকে করজোড়ে দাঁড়াইবাতাসে-ধুলোয়…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *