জয়ীতা ব্যানার্জির পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

সমস্ত সূর্যাস্ত গেল প্রার্থনাবিহীন

তুমি সে অভাববোধ। আত্মরতি অথবা সঙ্গমকালে
চোখের অবাক দৃষ্টি–সজলতার বিবিধ কারণ
অধিক সচেতনতা, ততোধিক নিরুদ্বেগে ফিরে যাওয়া
পোশাকের কাছে। অনুশোচনার মতো দ্বিধাগ্রস্ত এই
প্রায়ান্ধ আলোর নীচে স্বচ্ছ পর্দা টানা আনন্দ মুকুর
মেয়াদোত্তীর্ণ ফুলের কাছে আমরা তবু স্মৃতিচারণ
শিখি। অনাবিষ্কৃতের মোহে শিখি ব্যয়, ভ্রম ও ভণিতা
তোমার করুণা আজও সমান অসহনীয় মনে হয়
তবু যে কোনো ক্ষতেই আমাদের প্রথাসিদ্ধ লাল-ওষুধ
প্রয়োগ ক্ষমতা শুধু বর্ণেরই ঔজ্জ্বল্যে পুলকিত করে

নিজের ভিতরে জাগি। আপাত স্থির যেরকম প্রবাহ
জলের এবং স্পর্শকামনার এই দোষ বাতাসকে
প্রকাশ করি না। প্রিয় গান সুকৌশলে আরো বহুদিন
এড়িয়ে যাবার ঝোঁকে এই জেগে থাকা। প্রতিধ্বনি তার
জীর্ণ ঋতুটি। স্মৃতির অর্ধেকে কেনা মাছের হত্যাদৃশ্য
থেকে সন্তর্পণে আঁশ ও অজুহাত ধুয়ে রাখে। ব্যথাদীর্ণ
কাঁটার সমীহ তবু উচ্চারিত প্রতিটি স্বরেই। সে তো
অনুপ্রবেশের দায় স্বীকার করে না। আমিও কি এর
কিছু একটা বিহিত না করেই ঘুমিয়ে পড়তে পারি
দৃশ্যত কখনো জল কেঁপে ওঠে তারই প্রমাণস্বরূপ

তোমাকে কল্পনা করি পুনর্বার, আমার সে সরলতা
নেই। ঘুমন্ত তোমার পাশে এ কবিতা লিখে ফেলা সে-ও
কল্পনাধিক। বরং নির্ভার এই প্রত্যাবর্তনকামী
উত্তরের হাওয়া, রোদ, অনিশ্চিত তবু বর্ণময় ফুল
পতঙ্গের ধীরতর গতি ও মাটি অভিমুখী লালার
কৌতুক প্রত্যক্ষ করি। এসব বাস্তবতা―মাকড়শার
শিল্পবোধ, অভিসন্ধি। মৃত্যুকে শৌখিন দেখার প্রতিভা
প্রিয় সুখ স্মরণে না রাখতে পারার অসহায়তায়
কিছুটা প্রলেপ মাখি, কিছুটা প্রলাপ। এবং তোমাকে
দূরে যেতে দিই। পরিহার প্রেমাধিক মার্জনীয় বলে

ব্যর্থতা দৃশ্যত যেন শেষ-বিকেলের পাঠ, গতিহীন
সিঁড়িটি। অথচ জল অজুহাত নামার এবং স্থির
কতিপয় ডিঙি, মৃত স্বজনের নামে ভাসা মোমবাতি
তার নিভন্ত আলোর সমান এই মাঘ। সন্তানহীন
কারও চিতার সমুখে বসে স্থানীয় কুকুর যেরকম
নির্লিপ্ত, আগুন পোহায়। ব্যর্থতা চামচিকিদের অন্ধত্ব
ক্লান্তিহীন সানাইয়ে দূরে আলোর পোকারা ওড়ে—তাও
আপাত সাফল্য শুধু নববধূদের নতভঙ্গি এবং
নিমন্ত্রণরক্ষা শেষে সুগন্ধি ঢেঁকুরে ওঠা নিন্দাশৈলী
পাখিদের বাসা বাঁধবার স্বচ্ছলতা নেই কোনোখানে

চাঁদের কলঙ্ক নিয়ে কথা বলা আমাদের পুরোনো অভ্যেস
হাড়ের সততা তার ঔজ্জ্বল্যে খুঁজে চলা এরূপ অজ্ঞতা
প্রতিহিংসার মতো। তোমাকে, হে ঋতুপরিবর্তনকালীন
হতাশা, অনেক কাল এখনো চাঁদের কথা বলে যেতে হবে
এখনো অনেক কাল সমুদ্রবাতাস এলে মনে হবে যেন
এই ভেসে যাওয়া ছাড়া এযাবৎ কিছু শেখা হল না। অথচ
স্কুল শেষ হয়ে এল স্বগত ঘণ্টাধ্বনিতে। উল্লাস ও কটু
ভাষ্যে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে আসা শিশুদের সবজি খেতের প্রতি
নমনীয়তাবোধ―এ বিশেষপাঠ রঙের। এবং অনন্ত
ঢেউ, নারী পুরুষের ক্রিয়া, অশ্লীল স্নানদৃশ্য, মরণোত্তর
ঝিনুকের গৃহসজ্জা বিষয়ক আমাদের আলোচনা
হোটেলের বারান্দায় অপরিসর সমুদ্রমুখী আলোটির
নীচে। আপাত বিচারে এই কাঠগড়া। মুখোমুখি বিচারক
ভাবি সমস্ত সূর্যাস্ত গেল প্রার্থনাবিহীন নক্ষত্রপতনে

শেয়ার করুন

Similar Posts

One Comment

  1. যদিও এটি সিরিজের কবিতা, তবু বলি: পাঁচটি কবিতাই অনবদ্য হয়েছে । অসামান্য কাব্যভাবনা রয়েছে লেখাগুলোতে । অনেকদিন পর আপনার লেখা আবার পড়লাম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *