পার্থজিৎ চন্দর পাঁচটি কবিতা
হাসি
আমি তো তেমন পথিক নই, শুধু বনের ভিতর বিস্ময়
বাঁচিয়ে রেখেছি
এ বনের মধ্যে কেউ সারাদিন
স্তন খুলে গান গেয়ে নেচে নেচে ঘুরে বেড়িয়েছে
গাছটি জড়িয়ে শুনি তার পায়ের শব্দ
কালো পাথরের গায়ে কান পেতে শুনি
পায়ের পাতায় ফুটে যাওয়া কাঁটা
জলের ভেতর টুপ করে ডুবে গেল তার নূপুরের ধ্বনি
একটি হলুদ প্রজাপতি উড়তে উড়তে কাঁটাবনে
প্রবেশ করেছে। সে আসলে মায়াবী-মারিচ
মুঠো খুলে দেখি নরমুণ্ডের মৃদু হাসিমুখ
অস্ফুটে কী যেন বলে পাতার চাঁদোয়া ভেদ করে
উড়ে চলে গেল
দেখা
ছাইয়ের ভেতর কূটস্থ আগুন, অথবা নির্বাপণ
দুটি পাখি গোল হয়ে ঘোরে
আজ তুমি তাদের রমণ তাদের ডানায় ডোবানো মুখ দেখেছিলে
এই সৌভাগ্যের পর টিলার ওপর উঠে যেতে হয়। গন্ধক-খনি
ক্ষত-বিক্ষত রাবার-গাছেরা
শ্বাস চেপে তাদের ক্ষরণ গোপন করেছে।
এমন অন্ধকারে
দূর পাহাড়ের এক বিপদজনক টং-ঘরে ছোট্ট আলোর বিন্দু
ধকধক করে
কালো এক অঝোর ঝোরায়, তারপর
ঢলে পড়ে সেই টং-ঘর
ক্ষত আর জিভ কে কার আশ্রয় চায়
তুমি আজও বোঝোনি। শুধু একদিন
পাখির রমণ দেখেছিলে
দেখেছিলে বিন্দুবৎ আলো ভেসে যাচ্ছে কালো অন্ধকার জলে
প্রজাপতি
পাকা আতার ভেতর জাফরি লুকানো ছিল
আর একবিন্দু জল মুখে তোলো দরবেশ
কষের দু’পাশ বেয়ে জল নেমে যায় আজ। মাটির ভেতর
কাচ-ঘেরা মোমবাতি ক্ষীণ
আলো-অশ্রু জ্বলে
আতার জাফরি খুলে দেখ
বনে বনে আহত-অধীর মৃতডানা প্রজাপতি ওড়ে সারাদিন
হলুদ
রাবারগাছের ছায়া ঘেরা সানফ্লাওয়ার নার্সিং-হোমের
চাকা-ভাঙা ট্রলি গড়িয়ে চলেছে সারাদিন। অবিরাম ঘর্ষণ। দুপুরের গায়ে
একফোঁটা ঝরে পড়েছিল। স্বয়ংক্রিয়, পাথরের জাঁতাকল
হলুদের পাত্র হাতে আমি এইমাত্র আসি আর যাই
সমস্ত ক্যানভাসে পাত্র উপুড় করেছি
সূর্যমুখী তার রং আয়ত্ব করেছে। আমাকে ফেরাবে জানি
তবু আমি ছাড়া দেখ অন্ধকারে আলো নিভে যায়
উপসংহার
স্ফিংসের হাসিমুখ থেকে সোনায় বাঁধানো একখানা ট্র্যাক
চলে গেছে; ওলটানো পিরামিড – চারদিকে ঝকঝকে হাওয়ার্ড কার্টারের হাসি
অস্বচ্ছ ক্রিস্টাল-প্যালেসের টেবিলে টেবিলে অজস্র কার্টার
যে কোনও একটি চুক্তিপত্র তুলে আমাকে বসানো হয় ওকের টেবিলে
তারপর শুরু হয় নিয়মমাফিক কথা, যেহেতু রিভার্স-পিরামিড
তাই আমি আবিষ্কার করি ওলটানো জলাশয় আর পিপাসাক্লান্ত ষাঁড় জিভ বুলিয়ে চলেছে
পাতালের দিকে। ঝরিয়ার পরিত্যক্ত খনি যেন, শেষ বৃক্ষশর্করার ঢেলা… কালো
উঠে আসছে মাফিয়ার হাতে, এবার আমাকে অসম্ভব মৃদু স্বরে
জানানো হয়েছে উপসংহার
তারপর কাহিনির ধারা ধাপে ধাপে নেমে গেছে নিজের নিয়মে
সব শেষে একটা মমির হাত দরজা খুলেছে, বলেছে
বালির ভিতর বালি-রঙা সাপ হয়ে থাকা তোমার ভূমিকা
নির্ধারিত হল। আমিও পায়ের ঘাম কপলে ঝরিয়ে
বেরিয়ে দেখেছি ঝকঝকে তারা। শান্ত চরাচর শান্ত বধ্যভূমি
ক্লান্ত স্ফিংসের কানে শুধু একবার নীরবে বলেছি
উপসংহার জানবার পর আর কাহিনির গুরুত্ব থাকে না
আমি চললাম। ইউরিন্যাল কোন্ দিকে?