অরূপরতন হালদারের পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন


অবদমন বেড়ালের থাবার নীচে উদ্ভূত গানের
প্রতিটা নিঃশব্দ এঁকেছে আমার দেওয়ালে,
আয়নাটি স্বপ্নের শ্বাস মুছে নেয় প্রহরে প্রহরে,
তার মকররেখায় ক্লান্ত সূর্য, তবু ভেঙে যাওয়া
থেমে আছে লক্ষ্মণরেখায়। পর্দার বিভঙ্গ দেখে
তুমি উন্মত্ত হয়েছিলে, ক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো শিস
উড়ে গিয়েছিল তোমার গলাবন্ধ থেকে—সেসব
দিন আজ ক্লিশিত পানপাত্রে পড়ে আছে, তুমিও
নখের রং পাল্টে ফেলেছ কবেই। কমলা ঝরিয়ার
সন্ধ্যা ফিরে গেল, এবার শনির থানে যক্ষ এসে
মোমবাতি সাজাবে, রেডিওয় তিমিদের গান ও
জানলার খড়খড়ি বেয়ে স্রোতের মতো অন্ধকার
ফিরে যাবে সমুদ্রের দিকে। তোমার আগুন পাতাদের
পুনরায় জাগ্রত হতে দেখে অসাড় আকাশে 


জলের আগুন দেখে একদিন মৃত্যুর কথা ভেবেছি
যেমন পড়ন্ত দুপুর আমাদের যৌথ কামনায় ডোবে,
কেউ কথা শেখে আশ্চর্য কৌতুকে। এসব একটি
ফুলের বিষক্রিয়ায় চলে যায়। আত্মরতি বা জেহাদে
মেয়েটি এসে কৃষিকাজ শেখায়, গমনোদ্যত কুকুরের
দেহরেখা থেকে আলো আসে শরীরে। তুমিও চঞ্চল
হও, যদিও তেমন সহজ নয় করকমলের নীচে যে
শূন্য জগত থেকে যায় তার উদ্বেলিত ঘুমে তোমার
সঞ্চয় রেখে আসা। প্রতিভাত আলেয়াটি ঘোরে 
পশ্চিমের মাঠে। শস্য ও ঘুঘুদের শ্রম যে মদের কাছে
নিয়ে যায় তা রচিত হয় ধীরে একটি তমসায়, সেসব
নতুন গ্রামের ভেতর প্রবাহিত জীবন, আমাদের
জিভের কোরকে তার স্বাদ ক্রমে নিবিষ্ট হতে থাকে

শান্ত হও, তোমার অপেক্ষার পাশে বৃহন্নলা সাজ
ফেলে গেছে। সে কতদূর গেছে জানে না কেউ, তার
কোমরবন্ধে এখনও যে তারাটি রয়েছে সে জানে
অশ্রুর নিয়তি। যদিও এ মনস্তাপ ব্যাখ্যাতীত, জেনো
সে ভ্রূপল্লব, তার ওপারে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল রয়েছে,
এপারে বনের প্রস্তুতি। দূরসম্ভবা পথ, ধান ও মর্মর
ছুঁয়ে পাখিদের যুদ্ধ চলে গেছে বিষুবরেখায়, বাতাস পরাজিত হয় যে গানে সে এই জীবন প্রত্যাখ্যান
করেছে। অন্তঃস্থ তীরের ফলাগুলো সামান্য ভোঁতা
হয়ে এলে স্নায়ু শান্ত হয়। তোমার রূপের গহীনে
যে ঘুড়ি ওড়ে তাদের জন্মের নাড়ি হে তথাগত তুমি
জানো কীভাবে সয়েছে গাছ, সে ঊর্ধ্বগামীতা
আকাশের সমগ্র শূন্যতা, আজ সামান্য মনে হয়

প্রতিসরণের ভেতর জীবন যতটুকু বাঁকা সে বক্রতার
হাসি আছে, ইতিহাস আছে, যৌনক্ষতগুলি আছে।
পিশাচসিদ্ধের আঙুলের গতি থেমে গেলে বারোয়াঁর
আলো তার সব অগৌরব গায়ে মাখে। কাঁটার উদ্দেশ্য
ও বিধেয় পরবাসে মেতেছে গানে, শিকারের কাল
ঘড়ির একটি হাত থেকে অপর হাতের দিক লক্ষ্য করে।
ট্রিগারের কাছে নিমীলিত সকাল আসে, নখের রক্ত
উঠে আসে সৈকতে, ওইখানে কুয়াশায় হাঁসেদের দেহ।
তোমার বুকের কাছে ক্রসওয়ার্ড পাজলের ভেতর
অক্ষরেরা পড়ে আছে, নগ্ন; এক একটা কিউবিকল জুড়ে
পাতার ঝড়, অবিকল সেই সন্তাপ, ঘোড়ার বাদামি
কেশর থেকে ঘামের বিন্দু প্রলুব্ধ হয় পৃথিবীর অবকাশে।
আমার ধর্ম ভেঙে পড়ে মরুবালিকার মুখে, সে অতল
রুদ্ধ প্রদেশ, ইস্পাতের মতো সন্ধ্যা নামে ঘাসের বিন্দুতে 

পরিপক্ব ক্রোমোজোমে বেদনা রেখেছ, তবু নদী
কাঁদে, সংশয় রক্তের অংশমাত্র যেমন অপরাজিতায়
সূর্য ছায়া আঁকে। অনেক আগুন; যে পরিধি মরে
তার অবশেষ আমি যতদূর স্থির তার চারপাশে
অলৌকিক মাছের মতো ঘোরে। বনের ভেতর একটি আস্থায়ী রয়েছে, তার গায়ে দুরারোহ যাপনের ক্ষত;
উষ্ণ, অতিক্রমণশীল দিন ছড়িয়ে যায়, তোমার
ব্যস্ততা ভালো লাগে। বিছানায়, তৈজসে অলক্ষ্য একটি সময়; খাদ্যের সুষম বণ্টন তরবারি চেয়েছে অবিকল তোমার তৃতীয় চোখের মতো। অপরিবাহী রাতের
ভেতর একটি দীন আলো জ্বলে আর নেভে, হাইড্র্যান্ট ভরে যায় তূরীয় চুমোয়। আখতারী ভেসে আসে,
তুমি ফিরে আসো, পায়ের তলায় শূন্যতা, শূন্যের
ভেতর একটি শহর জল থেকে দূরে সরে যায় 

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • কোজাগরী – রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

    তোমার ফেরারি মন হয়তো বা কখনও এক বিন্দু শিশিরের মত মুহূর্তের বশ্যতায় স্হির হয়ে লেগে থাকে সম্পর্কের গায়ে৷ আমি মুহূর্তকে শাশ্বত বলে ভ্রম করি৷ গোধূলির গায়ে লিখে রাখি সমর্পণ৷ স্বপ্ন-সম্ভবা হয়ে সম্পর্কের ভেতর নদী হয়ে বয়ে চলি৷ যাপনের ঘ্রাণ নিয়ে অনুভূতিরা শুয়ে থাকে আমার নিমজ্জিত সত্তার ভ্রূণে৷ সময়ের সম্মোহন  ছিঁড়ে গেলে তুমি  আবার পলাতক৷ তবু…

  • অজিত ভড়ের পাঁচটি কবিতা

    বিধিনিষেধ ১৪৪ দৃশ্য শেষ। এইবার কান্না শুরু হবেকে কেমন করে কাঁদবে—তারই নির্দেশ দিচ্ছেন পরিচালক। আমপাতা এসে গেছে, জামপাতা এসে গেছে, এমনকি বটপাতা–অশ্বত্থপাতাও এসে গেছে, যার ওপর যেমন নির্দেশ সে সেই পাতায় মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকুক। জীবনের সব কান্নাই শিল্প। মনে রাখবেন, সিগারেট খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর আগুন জ্বালানোও তেমন দেশের পক্ষে ক্ষতিকর— অনুগ্রহ করে—কেউ আগুন জ্বালাবেন না। কপাল ১৬ ঘণ্টা…

  • মাদমোয়াজেল – অর্ণব সাহা

    আমরাই কবীর, আমরা সুমনের বৈধ সন্তানযেকোনো ধ্বংসের মুখে আমাদের সাবলীল গান টেলিগ্রাফ তারে বসে ডেকে ওঠে অলৌকিক পাখিআমরা তার ছেঁড়া ডানা যত্নে কুড়িয়ে তুলে রাখি ফুটপাথশিশুকে পিষে ছুটে যায় হিংস্র স্করপিওআমাদের গিটারের শরীরে বসেছে প্রজাপতি চে আঁকা টি-শার্ট পরে প্রজন্মের শান্ত শ্লোগানসদর দপ্তরের ঠুনকো কাচ ভেঙে দিতে পারে দেবর্ষি নবরূপার হাত ধরে ফুটপাথ পেরোয়নতজানু স্টেটবাস…

  • যত্ন – শুভ্র মৈত্র

    একটা শান্ত নিরিবিলিমুখ। আর সেটা নিয়েই কথা বলে মানুষটি। মুখের চামড়ায় যতগুলি ভাঁজ আছে, তার সংখ্যাও বাড়ে না। যেন বারের পুজোর পাঁচালি পড়ছে। ওই মুখেই বলে যায়, রাধানগরের যদুমাধবের ঘরে আর কিছু না থাকলেও যত্ন আছে। এই যেমন পুকুরে ডুব দিতে যাওয়ার আগে তেলচিটে গামছাটা হাতের কাছেই পায়, সদাই হাটে বোষ্টুমীর কাছ থেকে নিয়ে আসা…

  • |

    চন্দনের ঝিল্লিময়তা – ঐন্দ্রিলা মহিন্তা

    ( প্রবাসের যাঁতিখেলায় একমাত্র অন্তমিলে যে ত্রিমুণ্ড ফাগ-আলপনা রচিত হয় , তারই কৃপাণের একফালি তারজালিতে আদিত্যর তপস্যা ধীর পায়ে প্রণাম করে ) নবীন কেতকী বেছানো হাসি , ভাঁজ করা এসরাজের আঙিনায় বিছিয়ে রেখেই — মেঘ থেকে একমুঠো শৈশব হাতড়ায় । রচিত হয় গ্রীস্মের কলতানে কদমের ভস্ম । ঘোমটাজড়ানো জাহাজ-ডেকে অস্তমিত ভানু জানান দেয় : পশ্চিমপারের…

  • ডেসটিনেশন ফ্রিডম – ব্রতশুদ্ধ

    অটোরিক্সার গোলাপি প্রাণ এরপর আর ফিরে তাকায়নি । আমি হাঁটছিলাম পিছু পিছু আমার মলিন কাঁধে -একটা আফসোসের বোঁচকা নিয়ে । দমবন্ধ হয়ে পড়ে থাকা অক্সিজেন সেবিদের নার্কটিক ডিপার্টমেন্ট খুঁজছে আজ বেশ কিছুদিন । আটক হবার আগে আমিও হাঁটবো । কাঁধে উত্তাপ অথবা ধারালো কোন ছুরি গেঁথে । আমি হাঁটবো সে অব্দি যেখানে পায়রা হয়ে ধরা…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *