ক্ষত ঝরা স্বপ্ন – দেবনাথ সুকান্তের গুচ্ছ কবিতা
১।
আর কারো প্রয়োজন নেই শুধু এই নীরবতা এবং বিচ্ছেদ
বিপন্ন প্রদীপ হয়ে বসে আছে আত্মার সাক্ষী দেবে শব্দ থেকে ঝরে পড়ছে ব্রহ্ম শিরা উপশিরায় তার পুনর্বিন্যাস
ছেঁড়া খাম থেকে বেরিয়ে বলবে সে
প্রতিটি সিঁড়ির নীচে একটি অন্ধকার কোন বসে থাকে
তুমি এক অনাদি বয়স
২।
এখানে স্রোত ছিল অন্তরমুখি
আমি পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া চর থেকে হারানো কিছু অঙ্গীকার পেয়েছি
যে বছর দাঙ্গা হয়েছিল ঠাকুমাকে এখানেই সামান্য আগুন ঠেকিয়ে
আঃ বাবা বলেছিল আমি তখন তোরই বয়সি
নেমে গেছি এই মহাকাল থেকে আকাশের অর্থ সন্ধানে
ঝুরো স্বপ্নের কিছু স্মৃতিই সম্বল
৩।
ঝরা শ্রাবণের কাছে হেরে গিয়ে ঝরবে শীৎকার
ঝরে পড়বে কান্না পর্বের কথা
দূরে থাকেন গ্রাম দেবতা দূর থেকে দেখেন
দুটি অনিমেষ রাত্রি জাগে স্বপ্নগুলি রোপণ করে একে অন্যের চোখে
টিমটিমে মধ্যরাত তার গভীর বিশ্বাস
নেমে আসে জ্যোৎস্নায়
নেমে আসে ঋতুরক্তের কাছে আড়াল রেখে সমস্ত যৌনতা
আমাকে জড়িয়ে শুরু হয় তার ভিত্তিপ্রস্তর বোনা
৪।
আসন্ন জ্বর
এক অন্তর্লীন নক্ষত্র থেকে নেমে এসে আমাদের ঘরে
প্রতিটি কালো বিন্দুর অসংখ্য হা-মুখের ছবি আঁকে
স্মৃতি নেই
পর্ণমোচী ঝরে গেছে উদাস অক্ষরে অক্ষরে
পুড়ে গেছে বিন্দু বিন্দু প্রেম
পাখিদের কান্না আছে জমানো কোথাও
৫।
এসো আমাকে অবলম্বনে শুরু করো শব সাধনা
আশ্চর্য এক রূপ দেখে আমি ফিরে এসেছি
স্নেহ আর প্রেম একই ঘরে শিকলে আবদ্ধ
দেয়ালে একের পর এক রক্তের ছাপ বেড়ে চলেছে
তাহলে কার ঘড়া পূর্ণ হবে আগে
তুমি নাকি সেই অন্ধ ভিখারি
৬।
এতদিন অন্ধ হয়ে বসেছিলে আর গুনছিলে প্রহর
জানালার গরাদে হাত রেখে
যেখানে স্বপ্নগুলো মলিন হয়ে গেছে
আমি আর কোনোদিন দেখিনি সেই নিঃসঙ্গ রাস্তা
দু’পারের অশরীরী বুকে করে শুয়ে আছে নিশিদিন
একা সেই সন্ধের প্রাগ মুহূর্তে হেঁটে গিয়েছিল কেউ
চোরকাঁটা লেগে ছিল পায়ে
এতদিন প্রহরে দ্বিধাময়
বসেছিলে ভাগশেষে ।
৭।
তাহলে মেলে দাও এ পর্ণমোচী
যেখানে প্রেম নিজেকে করুণা করে
কৃষ্ণ কালো বিন্দুর ভিতর
পুড়ে যায় সর্বনাশ
প্রেম দিলে বাড়ে না না-দিলে বাড়ন্ত
অভিমানের জল বলেছে কানের কাছে
আমাকে বিষণ্ণ কেউ চাবুক মারে
তারপর ছলকে ওঠা আত্মায় রাখে সঞ্চিত কান্না
আজীবন মূঢ় প্রেমে মন আর
শরীরে শরীর
৮।
কে বলে নিঃসঙ্গ কেউ
দেহী আছে দেহের ভিতরে
আমাকে সঙ্গ দেয় যেখানে খেলার শেষ
যেখানে এক জন্ম অনন্যোপায়ে সহস্র মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে
স্নেহ পরবশ তুমি দেখো
আমাদের সেই পরিমিত উঠোনের মাঝে
অনন্ত সে খেলা
৯।
এ শহরে প্রেম, নির্মম
এ শহর আমাকে দিয়েছে শীত
অজস্র ছোঁয়ার মাঝে সামান্য স্পর্শের খোঁজে আমি
মাইলের পর মেইল হেঁটে গেছি
দিন অথবা রাত, কালো অথবা আলো
স্থিতি অথবা পরাজয়
এ অস্তিত্বহীনতায় হয়তো সম্পৃক্ত
‘না’, তুমি আমাকে সহ্য করো
তোমাতে প্রবিষ্ট হব আর জন্ম হবে ঢেউ, অন্তর্মুখী
১০।
ছিলে পল্লবী চোখে ছিলে
অযুত নাগপাশে নিজেকে জড়িয়ে
শরীরে শরীর দহ
নিজস্ব একফালি ঘর নিকানো উঠোন
দেয়ালে ঝুলন্ত আয়নায় আমাদের সারাৎসার নিশ্চুপ
কত করে চাই তাও আঁচলে জড়ানো পয়সায় অজস্র গিঁট ফুটে ওঠে
প্রতিটি পরতে উঠে আসে আপোষ হীন চাহিদা কঙ্কাল
বে-হিশেব খুন করে গেছে শেষ রাতে
ছড়ানো গ্লানির মতো দু’প্রান্তে দু’জন
মাঝে সেই বহমান আহত সময়