অজিত ভড়ের পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

ব্যক্তিগত

ভেবেছিলুম যাব

মঞ্জুমালা এসে জানলা খুলে দিল।
যেন মৃত্যু বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

তারপর সন্তুর বিয়ে
নানারকম রান্নার গন্ধ
খেয়ে উঠে বেরোতেই সায়ন্তনীর সঙ্গে দেখা:

সায়ন্তনী শব্দহীন :
যেন ভিনরাজ্যের ঝিলম নদীর বাঁক,
আর শিল্পিতা?
অনেকদিন আগের ট্রেন ছেড়ে যাওয়া প্ল্যাটফর্ম

এখানে এক পা– ওখানে এক পা
ঘরে ঢুকি
জানলা খোলা
দেখি– আবার মৃত্যু ঢুকেছে ঘরে…

এই বয়সে আর মশারি খাটাতে ভাল্লাগে না!


১১টা ৪৫ এ.এম –১১টা ৪৫ পি.এম

ফোন বাজল– বেজেই গেল
আপনি বোধহয় অন্য কোথাও ছিলেন..!

পাতা ধরতে কিছুটা সময় লাগে
পাতা মেলতেও কিছুটা সময় লাগে
আপনি তবে কেন ছুঁলেন না চাঁদ?
যদি কোনও অপরাধ প্রশ্ন করে এসে?

মেঘ তো রোজই ছোঁয় পাহাড়ের চুড়ো
বৃষ্টি তো ঘনঘনই আসে
হোটেলের ঘরে ঢোকে ভেজা ফুলের হাওয়া…

এলোমেলো উপন্যাসের পাতা
বাক্য আসে– বাক্য যায় –

টেরাকোটা কাজ নিয়ে আপনি কি অন্য গল্পে ছিলেন
নাকি ইতস্তত ছিলেন মসিয়েঁ…?


৫ই আগষ্ট ২০২০

কাল বিকেলে একবার মোড়ে গিয়েছিলুম
আজ সকালে না-হয় আর একবার মরব
বাড়ি তো নিলাম হয়ে গেছে কবে

দুদিকে দুটো পুকুর, দু-পাড়ে দুটো গাছ
ওই গাছটায় নীলিমা ঝুলে পড়েছিল
আমি না হয় পুকুরেই ভাসব
বাড়ি তো নিলাম হয়ে গেছে কবে

নদীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম
বিভিন্ন নীলিমার গল্প বলেছিল নদী
যতদিন গেল– কথারা চুপ করে গেল
সেই ফাঁকে ঝরতে লাগল বালি
বাড়িটা নিলাম হয়ে গেল…

আমি ঘড়ি বদলালাম, ক্যালেন্ডার বদলালাম
কিন্তু ঘটনা বদলাতে পারলাম না!


দেবদারুর ধুলো

কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ১৯ নং দরজায় এসে দাঁড়ালাম
দরজা ভেতর থেকে বন্ধ
টোকা দেব ভাবছি
৬টা ৪৫-এ এসে ৯টা ৪৫-এ টোকা দিলাম:
এতক্ষণ কি করছিলাম?
বোধহয় দেশের কথা ভাবছিলাম
আমার ১৮নং দেশের কথা, ওর ১৯ নং দেশের কথা:

১৭নং থেকে হারমোনিয়ামের সুর ভেসে এল
বাণীগুলো চেনা, কিন্তু মনে করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে

অবনীশবাবু হাই তুলে দরজা খুললেন
বললেন– ‘কাল রাতে ঘুমোতে একটু দেরি হয়েছিল
–তাই–’

আমি দেখলাম– ঘুমোতে নয়, জাগতেও নয়,
আমাদের বাঁচতেও দেরি হয়! আমাদের মরতেও দেরি হয়!


যেন কোভিড-১৯

সেই যবে লেবুফুলের গন্ধ ছড়াচ্ছে শরীর
তখন থেকেই আকাশ আমাকে ডাকত
জলের কাছে গেলে জল ছুঁড়ে দিত হাওয়া

তারপর একদিন নৌকা করে কবিতা এল
আমি পেন খাতা নিয়ে
দুটো ফুলের বানান– দুটো পাখির বানান
লিখতে থাকলাম
শচীন দেববর্মন ঝলসে উঠল গলায়
গাইতে যাব
এমন সময় স্যার অ্যালজেবরার খাতাটা দেখতে চাইলেন

দামোদর–দ্বারকেশ্বর–রূপনারায়ণ
সব এক হয়ে
ভাসিয়ে দিল ঘর!

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *