সম্পাদকীয়

শেয়ার করুন

বাইবেলে কথিত আছে একসময় সারা পৃথিবী জুড়েই একটি মাত্র ভাষাই ছিল। মানুষ একে অপরের মনের ভাব বুঝতে পারতো সহজেই। ফলে তারা ঠিক করে বৃহত্তর মানব সমাজ তৈরী করবে। একটি নগরের পরিকল্পনা করে যেখানে একসাথে থাকতে পারবে তারা। এই ইচ্ছেতে ভিৎ গাঁথলো। ছড়িয়েছিটিয়ে না থেকে সমবেত বাসস্হানের জন্য নগর আর দূর্গ বানাতে শুরু করলো। কিন্তু ঈশ্বরের অভিপ্রায় ছিল ভিন্ন। তিনি তাদের বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভাষার মধ্যে বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করলেন। এতে পরস্পরের কথা ওদের নিজেদের কাছেই অচেনা ঠেকলো। সম্মিলিত নগর তৈরী আর হোলো না পরিবর্তে মানুষ নিজ নিজ ভাষা নিয়ে ছড়িয়ে পড়লো দূরদূরান্তে। মানুষ কিন্তু এখানেই থেমে গেল না। বরং ভাষাগত বাধা অতিক্রম করার দিকেই মন দিল। একের ভাষা অন্যের কাছে মাতৃতুল্যা সমাদর পেল। নিরন্তর চেষ্টায় মানুষ অন্য ভাষার মাধুর্য নির্যাস আপন ভাষাতেও গ্রহণ করলো অকুন্ঠ চিত্তে। গড়ে উঠলো মৈত্রী ভাবনার এক অপূর্ব সহাবস্হান। অনুবাদ সাহিত্যের জন্ম এবং প্রয়োজনীয়তা এভাবেই ভাবনাকে মুক্ত করে দিল ভাষাগত বন্ধনকে ছিন্ন করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ভাষাগত বিভিন্নতা সত্ত্বেও মানুষ তার ইচ্ছানগর গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যে নগরের নাম ‘ সাহিত্য’ এবং যার মজবুত ভিতটি হল ‘ভাষা’। ‘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এ ভাষার এই প্রবহমানতাকে সামনে রেখে আমরা আভূমি কুর্ণিশ জানাই পৃথিবীর সমস্ত মাতৃভাষার প্রতি, যাদের কথা আমরা জানতে পেরেছি অথবা যারা এখনো আমাদের অজানা।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *