শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়-এর দশটি কবিতা
সন্তান
প্রতিটি লেখার পর প্রজন্ম জন্মায়
প্রতিটা সন্তানপ্রবণ ভোরের তৃষ্ণা জল
তৃষ্ণার্ত হত্যার পারিপার্শ্বিক
গ্রন্থি পথ পায়ে হেঁটে জন্মান্তর
রোদের কুঁজ হতে লাফিয়ে নামা ঘুঘু
শোক গাথা শুনিয়ে শুনিয়ে হৃদয় বেশে
হাসির ঢেউ লুকিয়ে রাখে বালিশে
বিষণ্ণ আলোড়ন রহস্যের ওই পিঠে
একটা শহর দাও
একটা শহরের মুখে পাখির ওঠানামা
তামাটে কবিতা হয়ে যাক বাড়িঘর
নিঃশব্দ গমের বীজ হয়ে থাক সন্তান।
মিশ্ররাগ
চা ফুলের আঘ্রাণ ভেজা প্রতি রাত
জন্ম ভোরে গলে যাচ্ছে মরীচিকা
তন্দ্রাহীনা প্রতিনিয়ত শূন্যঘরের কান্নায়
আগুন পোহায় কোমলতার দীপশিখা
শিথিল কিছু রাগ এসে নিংড়ে রাখে পরিত্রাণ
উপহার জমতে জমতে ঘুমের পরবর্তী
খসখসে আলোছায়া নিয়ে আসে অরণ্য
বাগানের পাতাগুলো শুকনো ঠোঁটের শব্দে
মিশ্র রাগ, ত্বকের গভীরে ছায়াগাছ হয়ে যায়
হয়ে ওঠে ঘুমে ভেজা অভাবী আচ্ছাদন।
সংসার
ঈশান কোণের দিকে টহলদারি
রাস্তায় রাস্তায় মাতালের বাস্তবিক
যেন কোনো পাঠযোগ্য সংসার
আয়নার একাকিত্বে সহকর্মী সূর্যালোক
পলকে হয়ে যায় মুখামুখি স্বর্গ
চলন্ত ট্রেনের পাশে শান্ত স্থানুবৎ
রুদ্ধশ্বাস অশ্রু গ্রন্থির মধ্যে ডুবে থাকা
বলে যায় অমোঘ এক মা নিষাদ!
বিদায় বেলার পিপাসা জড়ানো
অনুপুঙ্খ,শীতলতার নগ্ন স্নান
শেষের যা কিছু সে সবই লিমেরিক
ছুটির গণ্ডি পেরিয়ে উপশিরা।
নিত্য
দুপুর যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও মহড়া
প্রাইম টাইম মোবারক
জানায় এমন আবদার নিত্য
নিত্যকার চালচিত্র উঠে এসেছে নির্মোহ
দৃষ্টিতে সহসা বাতাস বইছে বিস্তীর্ণ
যিয়ারত এভাবেই উড্ডীন
যেমন আবির প্রমুখ নিষিদ্ধ
দিনটা স্বচ্ছ আলো নিয়ে
কথারা অপেক্ষার পালা বুনছে
রং
সন্ধের মাধবীলতা
ছেঁড়া পালক শীর্ণকায়
হিংস্র নিভৃত পোয়াতি
রাতের জঠোরে পাপ পুণ্য
অপেক্ষার আত্মগোপন
পুরোনো ভাতের ভালোবাসা
শুভায়ুর শিকড়ে মেরুন
রংহীন কোনো আলাপচারিতা
সন্ধ্যা
পশলা বৃষ্টির শব্দ মোহময়
সুর ধ্বনিতে সাঁঝবেলা ছায়াছন্ন
আত্মজ এক চাঁদের আলোয় মেঘ
মেঘনাদ, ভ্রূয়ের নিমেষ ভাবলেশ
ধুয়ে যাক সমস্ত সত্য ও নির্জনতা
মিশেল হাওয়ায় পূরণ ভাসানী
তোমার কপালের রেখা উড্ডীন
পীতারূণ এক সন্ধ্যা রতির নাম
রাস্তার ফিরে দেখায় ছায়াপথ
মায়াবী বনাঞ্চল, খুনিয়া বস্তি
শ্রী
বাদী স্বর নিংড়ে কথার জোয়ার
বর্জিত স্বর অস্পষ্ট লক্ষ্য আশ্রয়
খুঁজে পাওয়া কবিতার শিস হতে
দরদিয়া চাঁদ, জঙ্গল গহীন কোণে
বিজন আরাধ্যা, শুনশান নীলাভ
ইত্যাদি এক ঝুঁকি নিতে চায় শুরু
টাইম জোনের ফাঁদে গীতিকার
তোমার মতো আমিও তন্দ্রা ইবাদত
শেষ বিকেলের আলো যেমতো শ্রী
নির্বাণ
রাতের আকাশের গায়ে হাত রাখা
সবুজ শার্সি বেয়ে সন্তর্পণে নেমে আসে
হাইওয়ে ব্লুজ, না ধরা কর্ড ও বহতা
বুদ্ধ নির্বাণ খোঁজে রোদেলা সকালে
শুনশান নীল সাদা মেঘের সফর নিত্য
মর্মকথা শুনিয়ে বিস্মিত হয় ইউটার্ন
আবেগী দোহাই তীব্র মধ্যম হতে নামে
ক্লীব হতে নারী হয়, নারী হয়ে জলে ভাসে
অপেক্ষার মাঝে একলা বুদ্ধ এক শালিক
প্লুত স্বর থেকে উঠে এসে ডানা মেলে
ঋজু
শরীরের বাঁক হতে তলিয়ে যায় ললাট
তটরেখা ধরে হাঁটার ইচ্ছে আহত
এক স্পন্দন আর স্পন্দিত মাঝে
আবহ স্নান চুপ করে এসে বসে
ভঙ্গিমা লিপ্ত সন্ত্রাস এ তব অগোচর
খুব বেশি বৃষ্টির গন্ধ ঝাপটা মারে নীরবে
মাটি মাখছে সমকালিক তাড়না প্রবাহ
আয়, আয়, এই দিকটায় আয় কক্ষ বিচ্যুত
দূরত্ব
যে কাছে নেই তার দূরের বিন্যাস প্রভূত
যে দূরে তাকে কাছে টানি প্রতিনিয়ত
নিয়ত এক টেরাকোটার মূর্তি এসে বসে
বলে আকার আর আদিম আর্য উপাস্য
এহেন চরাচর রণ ক্লান্ত উড়ন থমকে
কালো মেঘের দিগন্ত উন্মোচিত অদূরে
সাদা বকের সারিতে তীব্র আলোর সঙ্গত
শীতল আকাশ শয্যা বিশিষ্ট অনিশ্চয়তায়…