ক্রিসমাস – চিরঞ্জীত সাহা
কুয়াশার বিদিশা ভেদ করে , বুলেট বেগে সাইকেল ছুটিয়ে রাজ এসে থামল স্টেশন সংলগ্ন গ্যারেজে । কুকুরতাড়িত ব্যক্তির মতো প্রাণপণ দৌড়ে টিকিট কাউন্টারে প্রবেশ করতেই শুনল , ট্রেন লেট । তিন বছর ধরে ভোর চারটের ট্রেনে হাওড়া পাড়ি দেওয়া , বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত উদ্যমী এই যুবকের কাছে পড়িমড়ি করে ভোরের ট্রেন ধরা আজ নতুন কিছু নয় ।
ট্রেন লেট শুনে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের চায়ের দোকানে বসে একটা সিগারেট ধরালো রাজ । পূর্বজন্মে চরমতম পাপ করে থাকলে এই হাঁড়কাঁপানো ঠান্ডায় ভোর তিনটেয় লেপঘুম ছাড়তে হয় — বিরক্তিতে কেটলির চায়ের পাতার চেয়েও বেশি উত্তাপে ফুটছে বছর ছাব্বিশের ছেলেটা ।
শার্টে হঠাৎ হ্যাঁচকা টান — ” এ বাবু ! একটা কেক কিনে দে না রে !” মলিন মুখে ছোট্ট এক ছেলের মিষ্টি আবদার। খিদে মেটার কথা মাথায় রেখে কেকের বদলে একটা সরটোস্ট কিনে রাজ তুলে দিল ওর হাতে । ” এ বাবু , ওই কেকটা দে না । ওই লালটা । “— টোস্ট হাতে আবারও বাচ্চাটার কাতর আর্তি ।
বাচ্চার মন তো ; চোখ যেদিকে যায় , সেটাই চাই — আবদার মতো লাল মোড়কের কেকটাও কিনে দিল রাজ। কেক হাতে পেতেই প্রাণপণ ছুটে রেললাইন পেরিয়ে ছেলেটা চলে গেল তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের ঝুপড়িতে । সেখানে একটা ছোট্ট মেয়ের ঘুমন্ত মাথার কাছে রাখা মোজায় ভরে দিল কেক । রাজের হঠাৎ মনে পড়ল — আজ ক্রিসমাস । মুঠোফোনের হাজার মিথ্যে শুভেচ্ছার যুগে রাজ চাক্ষুস করল , এক বোনের অজান্তেই তার ছোট্ট দাদার সান্তাক্লজ হয়ে ওঠার গল্প ।