পারমিতা ও একটি চিঠি – প্রতিমা সেনগুপ্ত

কল্যাণীয়াসু পারমিতা,   আজ প্রায় তের বছর পর তোমাকে দেখলাম। অনেক দিন বাদে একটা কাজে কৃষ্ণনগর যেতে হল। তোমার বিয়ের খবরটা পেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার শ্বশুরবাড়ি কৃষ্ণনগর – তা জানা ছিলনা। স্টেশনে টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে আসতেই, তোমাকে চোখে পড়ল। লেডিজ কম্পার্টমেন্ট যেখানে পড়ে, সেখানে সিটে বসে ছিলে। দূর থেকে দেখে মনে হল, আগের থেকে খানিক মোটা…

মা – সৈকতা দাস

মা, এবার কি আপনার খাবার নিয়ে আসব? চমকে উঠলেন বাসন্তী দেবী। একমনে চশমার কাঁচটা মুছছিলেন তিনি। আজকাল বড্ড ঝাপসা লাগে সবকিছু। যাও, আমি যাচ্ছি। বলেই উঠে পড়লেন তিনি। আশ্রমের সবাই হয়ত অপেক্ষা করছে তার জন্য। এই মৌ মেয়েটি খুব ভালো। সবসময় তাঁর খেয়াল রাখে। না! আজ আর দেরী করা যাবেনা। কাল সকালে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক…

দেবমহিমা – দেবাশিস মুখার্জী
|

দেবমহিমা – দেবাশিস মুখার্জী

বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হতে চললো, গাছের ছায়াগুলো কেমন লম্বা লম্বা হয়ে মন্দিরের গায়ে দুলছে…আকাশে মেঘ জমছে, দূরে হয়তো কোথাও বৃষ্টিও নেমেছে…হাওয়ায় কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভিজে ভাব। দিনের এই সময়টা এই বুড়ো শিবের মন্দির খালিই থাকে, গ্রামের এক প্রান্তে এই মন্দির, পাশের রাস্তা সোজা গেছে নদীর ঘাটে, ঘাটে নৌকো ভিড়লে কিছু লোক চলাচল করে এই…

শূণ্য সময়ের প্রফেট – পিয়াল রায়
|

শূণ্য সময়ের প্রফেট – পিয়াল রায়

দিবান যদি বলতেন পশ্চিমে যাও, তাহলে হয়তো পশ্চিমেই যেতাম। যদি পূর্ব, দক্ষিণ বা উত্তরের কথা বলতেন যেকোনো দিকেই বসতি হতে পারতো আমার৷ কোনো সূর্যোদয়ের দিনে জন্ম হয়নি দিবানের৷ কোনো মধ্য সূর্যের দিনে তাকে দেখা যায়নি শিশুদের নিয়ে হাঁটতে। দিবান তো আসলে একা একটা মানুষ। ঠিক পরিত্যক্ত প্রাচীন শহরের মতো। যার কোনো দেশ নেই; মাটি নেই;…

কৃষ্ণকলি – সন্দীপা সরকার
|

কৃষ্ণকলি – সন্দীপা সরকার

সময়টা ১৯৫৭ আমি  তখন সদ্য ইংল্যান্ড থেকে গ্রামে ফিরেছি৷পেশায় ডাক্তার৷ ডাক্তারি ডিগ্রি আনতে পারি দেওয়া ইংল্যান্ড৷দাদুর আদেশ মতন অনিচ্ছা সত্বেও ফিরে আসতে হলোদেশের বাড়ি কাটোয়া…… কাটোয়ার জমিদার বংশ আমাদের৷দাদুর বলাই ছিল পাশ করেই গ্রামের লোকের সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে হবে৷দাদুর বানানো দাতব্যচিকিৎসালয় তে গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দিলাম৷৷   সেই সঙ্গে শুরু হলো…

অপরাজিত অপু – নূর নাজমুল

গ্রামের নাম গৌরীপুর। গৌরী কন্যার মতই তার রূপ। প্রকৃতি তার রূপের সমস্ত উপচার দিয়ে রূপসী করে তুলেছে গৌরীপুরকে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ,ছুটে চলা নদী,সবুজের ছায়াবীথি তার রূপে যোগ করেছে অনন্য মাত্রা। জেলা শহরের অদূরের মেঠোপথ ধরে নদী পেরুলেই দু চার  গাঁ পরে গৌরীপুর। গৌরীপুরে একসময় হিন্দু মুসলমান সুখে শান্তিতে বাস করত। কিন্তু দেশ বিভাগের সময়এগাঁয়ের অনেকেই…

মিছিল – অমৃতা রায়

-“সবাই রেডি? গুছিয়ে নিয়েছিস সব? প্ল্যাকার্ড রেডি?” -“সব গোছানো আচ্ছে শুভদা! কালকেই গুছিয়ে রেখেছি তো!” -“তবু আরেকবার দেখে নে ভাই! একবার বেরিয়ে পড়লে তখন কিন্তু আর ফিরে আসার সুযোগ নেই! তখন এটা নেই, ওটা পাওয়া যাচ্ছে না, করলে চলবে না!” -“কোনো চাপ নেই দাদা! সবকিছু গোছানো আছে!” -“ওকে! স্নিগ্ধাদি! তোমরা সবাই রেডি তো?” -“একদম!” -“একটা…

অযাচিত – নাগরিক
|

অযাচিত – নাগরিক

আজ বড় মেঘলা আকাশ, বোধহয় সূর্যের মন খারাপ, তাই অ্যালার্ম বাজল না। সকাল এখানে মাটির অনেক ওপরে, এই কার্নিশে হাতছানি দেয় আলো, তবু রাত্রির মরচে লেগে থাকে বাহারি আস্তিনে কপাটে।  সোহিনী এই জনালায় সকাল দেখেছে চিরকাল, সেই সকালে টিকটিকি মুখে করে আনত মাছরাঙ্গা পাখী, তারপর বৃষ্টিতে ধুয়ে তার ডানায় গজাত ঘুমভাঙ্গা ঘাস। ঘাসের ডগায় পরাগরেনু…

|

পৃথিবী গল্পময় – শুভজিৎ বসাক

কৌশিকী- কি গো? শ্রীময়- কি হয়েছে? কৌশিকী- কথা আছে একটু ঘোরো না! (শ্রীময় তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল।রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে।একটু আগে নৈশভোজ করে এসে ল্যাপটপটা নিয়ে বিছানার ওপরে হেলান দিয়ে বসেছে শ্রীময় আর তখনই ওর স্ত্রী কৌশিকী এসে তার পাশে বসে ডাকছে।) শ্রীময়- (ল্যাপটপেই চোখ রেখে) কি বলার বলো না।শুনছি তো! কৌশিকী- (বিরক্তির সুরে) কেন…

|

মাঙ্গলিক – অমল দাস

পুত্রের বিয়ে উপলক্ষ্যে বিনয় সেন নিজে পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পাত্রী দেখে ছিলেন। পাত্রী পছন্দ হতেই সেইমত কন্যার পিতার নির্মল ঘোষের সঙ্গে আলাপ সম্পূর্ণ করে মহা আরম্ভরে বিয়ের আয়োজন করলেন। বিয়ের দিন সব কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হলেও ফুলশয্যার সন্ধ্যাকালে প্রচণ্ড বৃষ্টি  নেমে বসে। সে বৃষ্টি যেন থামবার নয়। কেউ কেউ  প্রকৃতির এই বিদ্রোহকে অশনি সঙ্কেত…