মিছিল – অমৃতা রায়

শেয়ার করুন

-“সবাই রেডি? গুছিয়ে নিয়েছিস সব? প্ল্যাকার্ড রেডি?”
-“সব গোছানো আচ্ছে শুভদা! কালকেই গুছিয়ে রেখেছি তো!”
-“তবু আরেকবার দেখে নে ভাই! একবার বেরিয়ে পড়লে তখন কিন্তু আর ফিরে আসার সুযোগ নেই! তখন এটা নেই, ওটা পাওয়া যাচ্ছে না, করলে চলবে না!”
-“কোনো চাপ নেই দাদা! সবকিছু গোছানো আছে!”
-“ওকে! স্নিগ্ধাদি! তোমরা সবাই রেডি তো?”
-“একদম!”
-“একটা লাস্ট রিহার্সাল দিয়ে নেবে কি?”
-“আমরা ইতিমধ্যে দু’বার দেখে নিয়েছি!”
-“বাঃ! ভেরি গুড! তাহলে এদিকে সবাই তৈরী! তাই তো? শুধু ওদের মাইকগুলো বাঁধা হলেই…… আমি ওদিকটা দেখে আসি!”
-“দাদা!”
-“আবার কী হল?”
-“না মানে! বলছিলাম যে…”
-“বল!”
-“না! ওই রাস্তাটা…… মানে সেদিন ওরা কিন্তু বলেছিল যে আমাদের দেখে নেবে…”
-“উফফ! আবার সেই এক কথা! আরে রাগের মাথায় লোকে ওরকম কত কিছু বলে! ওসব নিয়ে বসে থাকলে চলবে?”
-“কী হয়েছে রে শুভ?”
-“আর বোলো না স্নিগ্ধাদি! সেদিন কাউন্সিলরের কাছে গেছিলাম আমাদের এই পদযাত্রার কথা জানাতে! সাথে বোনকে নিয়ে গেছিলাম! তো ওই মোড়ের মাথার বস্তির ছেলেগুলো খুব আজেবাজে টোন-টিটকিরি করছিল! আমার তো জানো ভয়ডর নেই! আর ওরা সব ভীতুর ডিম! তেড়ে যেতেই তিনটে দৌড় দিল আর যে দুটো ছিল টানতে টানতে কাউন্সিলরের সামনে নিয়ে গিয়ে ফেললাম! তারপর যা হয়! ক্ষমা-টমা চেয়ে একাকার! এবার তাদের মধ্যে একটা নাকি বাবিকে বলেছে যে আমরা কী করে অনুষ্ঠান করি তা নাকি ওরা দেখে নেবে! দেখে নেওয়া যেন অতই সোজা! যাকগে……”
-“দা্দা! বাইরে সব রেডি!”
-“রেডি? বাঃ! আচ্ছা সব্বাই একবার ভালো করে শুনে নাও! আমরা এখান থেকে শুরু করে লেবুতলা হয়ে বাজারের মধ্যে ঢুকব। তারপর বাজারে একটা জায়গা বেছে নিয়ে আমাদের সমবেত সঙ্গীত এবং পথনাটক হবে! তবে অবশ্যই সেটা বাজারের বেচাকেনাটাকে বন্ধ করে দিয়ে নয়! নাটক হয়ে গেলে, স্নিগ্ধাদির ছাত্রছাত্রী যারা আছ তারা ওখান থেকেই এই ক্লাবঘরে ফিরে আসবে। আমরা মিনিট পনেরো বাদে ফিরে তোমাদের টিফিন দেব এবং তারপর তোমরা যে যার বাড়ি চলে যাবে। সবাই বুঝতে পেরেছ আশাকরি! কেউ কোনো প্রশ্ন করতে চাও? না! ওকে! তাহলে চলো আমরা শুরু করি আমাদের পদযাত্রা!”
“আজ যত যুদ্ধবাজ দেয় হানা হামলাবাজ
আমাদের শান্তিসুখ করতে চায় লুঠতরাজ
জোট বাঁধো তৈরী হও যুদ্ধ নয় তোলো আওয়াজ
তোলো আওয়াজ তোলো আওয়াজ
যুদ্ধ নয় যুদ্ধ নয় তোলো আওয়াজ।।”
-“বিবেক সংঘের পক্ষ থেকে আমাদের শান্তিকামী পদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আমাদের পদযাত্রা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে লেবুতলার মধ্য দিয়ে! এই অঞ্চলের সকল শান্তিকামী মানুষের কাছে আমাদের আবেদন – এলাকায় শান্তি বজায় রাখুন! সম্প্রীতি বজায় রাখুন!” –
“সাঁঝঘরের নীল আলো আজকে হোক বিপ্রতীপ
উদ্ধত শ্বাস ফেলে হিংস্রতার সরীসৃপ
এই যে বিংশ শতাব্দী গুলিতে ছিন্নভিন্ন আজ
তোলো আওয়াজ তোলো আওয়াজ
যুদ্ধ নয় যুদ্ধ নয় তোলো আওয়াজ।।”
-“আমাদের মিছিল নিয়ে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি বাজারের দিকে! এলাকার সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আমরা এই মিছিলে আমাদের পাশে চাইছি! আপনারা এগিয়ে এসে যোগদান করুন আমাদের সাথে!”
“যুদ্ধবাজ জাত যত আজ দেখায় রক্তচোখ
প্রেম প্রীতি আর স্নেহের ভাঙতে চায় শিল্পলোক।”
-“আমাদের মিছিল পৌঁছে গেছে বাজারে! এখানে আমরা আমাদের আঃ……”
-“স্নিগ্ধাদি! বাচ্চাদের সরিয়ে নি…………”
-“একটাকেও ছাড়বি না! সবকটার পেটে দানা ভরে দে! বাপনের সঙ্গে বাওয়াল করার হিম্মত যেন এই এরিয়ায় আর কারো না হয়! পালা, শূয়োরের বাচ্চাগুলো পালা! গান! নাটক! সমস্কিতি! যা! এবার ওপরে গিয়ে সমস্কিতি মারা গে যা! বিশু, কেলো! দুটো পেটো ঝেরে পাতলা হয়ে যা! কদিন এরিয়ায় ঢুকবি না! যা পালা!”
“সব শিশুর বাসভূমি এই সবুজ মৃত্তিকায়
নিঃশ্বাসের বায়ুতে বারুদের বিষ ছড়ায়
হিংসা নয় যুদ্ধ নয় ফুল ফোটাও গন্ধরাজ
তোলো আওয়াজ তোলো আওয়াজ
যুদ্ধ নয় যুদ্ধ নয় তোলো আওয়াজ।।”

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২