খিলান – সৌরদীপ গুপ্ত

খিলানে হেলান দিয়ে এলোচুল বসন্তকে বসিয়ে রেখেছি ওকে নিদারূণ শাস্তি দিও, জালের এপার থেকে ওর পৌরুষ ঢেকে দিয়েছে পেলব অমৃতগন্ধ তারুণ্যের অমোঘ প্রকাশ খিলানে হেলান দেওয়া বসন্তবিকেলগুলো, রাতভর জেগে থাকা জেনে নিক, নিয়মের বাইরে থাকা শাস্তিভোগ হয়ে যায় তোর দেশে বসন্তের হাতে থাক নির্বাক অসীম আকাশ।

অভিন্ন – অরিন্দম ভাদুড়ী

মেয়েদের শরীরে আলাদা আলাদা গন্ধ থাকে, মুখের আর বুকের গন্ধ একরকম না। প্রতিটা মেয়ের ঘামের গন্ধ আলাদা, ভিন্ন তাদের আবেদন, ইশারা। প্রতিটা মেয়ের স্বপ্নের একটাই গন্ধ- “মাটির হোক, আমাকে একটা ছাদ দিও”

একজন পৃথিবী বিক্রেতা – শুভ্র সরকার

এরপর, অনধীত সমগ্র বর্ষার পতনধ্বনি— একজন পৃথিবী বিক্রেতার ঘুমসংক্রান্ত দুঃস্বপ্ন বিচ্ছুরিত হ’য়ে পড়ে চতুর্দিক। দ্যাখো মানুষগুলো তলিয়ে যাচ্ছে ঘুমঘুম হিমে। মা’র ঘুম থেকে উঠে আসা হাঁসের পালকাবৃত পথের পাশে—তুমি একটা ‘স্নান’ রেখে গ্যাছো। একজন পৃথিবী বিক্রেতার জন্য রেখে গ্যাছো— শেকড়। দ্যাখো, রৌদ্রপ্রখর এক নির্জন জলাশয়ে শেকড় ছড়িয়ে আছে সূর্যাস্ত। আর তোমার বুকের বাঁ-পাশে সব আলো…

পারমিতা ও একটি চিঠি – প্রতিমা সেনগুপ্ত

কল্যাণীয়াসু পারমিতা,   আজ প্রায় তের বছর পর তোমাকে দেখলাম। অনেক দিন বাদে একটা কাজে কৃষ্ণনগর যেতে হল। তোমার বিয়ের খবরটা পেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার শ্বশুরবাড়ি কৃষ্ণনগর – তা জানা ছিলনা। স্টেশনে টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে আসতেই, তোমাকে চোখে পড়ল। লেডিজ কম্পার্টমেন্ট যেখানে পড়ে, সেখানে সিটে বসে ছিলে। দূর থেকে দেখে মনে হল, আগের থেকে খানিক মোটা…

মা – সৈকতা দাস

মা, এবার কি আপনার খাবার নিয়ে আসব? চমকে উঠলেন বাসন্তী দেবী। একমনে চশমার কাঁচটা মুছছিলেন তিনি। আজকাল বড্ড ঝাপসা লাগে সবকিছু। যাও, আমি যাচ্ছি। বলেই উঠে পড়লেন তিনি। আশ্রমের সবাই হয়ত অপেক্ষা করছে তার জন্য। এই মৌ মেয়েটি খুব ভালো। সবসময় তাঁর খেয়াল রাখে। না! আজ আর দেরী করা যাবেনা। কাল সকালে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক…

আয়না – শৈলেন রায়
|

আয়না – শৈলেন রায়

দেউতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমের আয়না। আশ্চর্য, আয়নাটা এখনও আছে! আধ মানুষ সমান সেই আয়নাটা। আমরা বলতাম হেড স্যারের আয়না। হেড স্যারের ঠিক পিছনে একটু উঁচু করে টাঙানো ছিল দেওয়ালে। চার ধার সেগুন কাঠে  বাঁধানো, ম্যাড়মেড়ে পালিশ। ওখানে আয়না কেন, কোথা থেকে এল জানি না। জানার ইচ্ছেও হয়নি কোনও দিন। স্যরের ঘরের চেয়ার-টেবিল-আলমারির মতো আয়নাটাও…

রোকেয়া বেগম – অভিজিৎ চৌধুরী

রোকেয়া বেগম -অভিজিৎ চৌধুরী ১ এতো গভীর কালো রং আমি খুব কম দেখেছি। ঠোঁট, চিবুক, হাতের নখগুলি, পায়ের পাতা সবটাই কালো।চুলও কালো, তবে অগভীর ও পাতলা। কোনদিন জবাকুসুম, কেয়োকার্পিনের গন্ধ পাইনি। নাকে নোলক নেই, কানে দুল অনেক দিনের রং ওঠা । হাতেও কখনও কোন কংকন দেখিনি। আমি বললাম, কি নাম যেন তোমার, ভুলেযাচ্ছি । নত…

চাঁদের চোখের জল – অপর্ণা গাঙ্গুলী

চাঁদের চোখের জল দেখলে আমি কষ্টে থাকি | কতবার দিদিমাকে বলতাম – ওই চাঁদের মধ্যে কালো কালো কী সব গো ? দিম্মা বলতেন ও সব নিয়ে ভেবো না | ওসব চাঁদের এলোমেলো মনখারাপি | ইস্কুলে বকুনি ঝকুনি খেলে তোমার যেমন মুখ কালো হয়ে থাকে আর কী ! আহা গো চাঁদ বকা খায়? কার কাছে, আকাশে…

ভজনলাল – জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

না, কোনওরকম অতিচালাকীর নিতিশিক্ষা দেওয়ার দায় নেই তার। সে পড়ে পড়ে ঘুমোয় না যেখানে সেখানে। কোনওদিনই এমন করেনি। সে আসেনি। খরগোশ আসে নি। এখানে শুধু একটা কচ্ছপ আর একটা শামুক আছে। তারা এগোচ্ছে। এগনোর জন্য মরিয়া, অন্য জনকে টেক্কা দেওয়ার জন্য প্রচণ্ড চেষ্টা। এরাও কেউ মাঝপথে ঘুমোবে না। কেউ শর্ট কাট নেবে না। প্রতিযোগিতার কারণ…

মুসাফির – স্বপ্ননীল রুদ্র

গুলাম আলির গজলের মুসাফিরের মতন একটি আত্মহনন অভীষ্ট শুঁকে শুঁকে আমাদের শহরমুখী হয়েছিল। পকেটে আংশিক উঁকি দেওয়া রুমালের মতো এক বৃক্ষবয়ন-প্রাণিত গলি নিরবচ্ছিন্ন ছায়ানির্ভর অবিবাহিত বাড়ির নামফলক রেখেছিল তার উপোষ-ভারের ঠোঁটে…   নেমপ্লেট খেতে খেতে উপাদেয় ঢেকুর তুলেই তাক থেকে পেড়ে নিয়েছিল ঘুম-উপন্যাস সমগ্র —   বরফলজ্জিত বিছানায় পাঠ-প্রতিক্রিয়া শুয়ে…   কার্ণিশে ছাদে উত্থিত আনন্দঘন…