অযাচিত – নাগরিক
আজ বড় মেঘলা আকাশ, বোধহয় সূর্যের মন খারাপ, তাই অ্যালার্ম বাজল না। সকাল এখানে মাটির অনেক ওপরে, এই কার্নিশে হাতছানি দেয় আলো, তবু রাত্রির মরচে লেগে থাকে বাহারি আস্তিনে কপাটে। সোহিনী এই জনালায় সকাল দেখেছে চিরকাল, সেই সকালে টিকটিকি মুখে করে আনত মাছরাঙ্গা পাখী, তারপর বৃষ্টিতে ধুয়ে তার ডানায় গজাত ঘুমভাঙ্গা ঘাস। ঘাসের ডগায় পরাগরেনু খুঁজে বেড়াত তার নিভৃত সহচরী। বর্ষার জলধারা বুকে করে আনত দূর সাগরের নিষিদ্ধ উপকথা। শোনা যেত ডুবে যাওয়া জাহাজের জলজ মসৃণ পাটাতনে শুয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন করোটির স্মৃতিতর্পণ। নিজের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সব খবর পেতো সোহিনী। কখনো মোবাইল ফোনে ডুব অথবা কখনো হেলান চেয়ারে বসে চিন্তার ডানা মেলে দেয়া। নিজের সাথে পৃথিবীর লেনদেন সকলের থাকে, তাতে কেউ বুঝে নেয় পসরার লভ্যাংশ, কেউ বা নিজের বুকে হাত রেখে হৃৎস্পন্দন গোনে আজীবন। সোহিনীর চুল বড় হলে আশিস ভাল বলে, চুল ছোট থাকলে অংশুমান। সাহিল কখনো কিছুই বলে না। সোহিনী জানে সে বলবেও না কোনদিন। এই তিনজন ছাড়া আছে সাবিনা, সে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, মনের যে দাগ আর কাউকে দেখানোর নয় তা সাবিনার সামনে খুলে দেয়া যায়। ঝুলবারান্দায় চায়ের কাপ হাতে তারা ডুবে যায় অগভীর জলে, মুখে ফেনার বুদবুদে খুঁজে পায় হঠাৎ হেসে ফেলবার মানে।
কালরাতে কিন্ত হাসি পায়নি কারো, অনেককথা নাড়িভুঁড়িতে জড়িয়ে ছিল, একে একে পেট কেটে বেরিয়ে এলো তারা। কথাগুলো হাঁটতে থাকলো ঘরময়। কয়েকটা কথা খাটে উঠে চাদর মুড়ি দিয়ে শুল, দুটো কথা উঠলো জানালা বেয়ে, আর তিনটে কথা মাটিতে বসে তার দিকে একদৃষ্টে রইলো চেয়ে। সাবিনা ফোনের অপরপারে চুপ করে ছিল বেশীটা সময়। হাসির কথায় ঝলমলিয়ে ওঠে যে মেয়ে দুঃখের কথায় তার চোখের গ্রন্থি শুকিয়ে থাকে চিরকাল। ছোটবেলায় চোখের কোণে একমুঠো বালি রেখে গিয়েছিল তার আব্বু। বালির উপর নুন জমা হয়েছে শুধু, স্রোত আজো অধরা। সোহিনী একবার কথা শেষ করে পুনরায় ককিয়ে ওঠে, “কিন্তু আমি কি করবো বল? আমার দোষ? আমাকে টার্গেট করছে কেন বারবার?” সাবিনা আস্তে করে প্রবোধ দেয়,” দেখ তুইতো নিজের কানে কিছু শুনিস নি? আগে কনফার্ম কর কালকে, তারপর দেখা যাবে।“ সোহিনী রাগের চোটে খাটে শুয়ে থাকা একটা ঘুমন্ত কথাকে লাথি মারে। বেচারা কথা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে, তার আসল মানে পাল্টে গেছে এখন। টেলিফোনে মুখোমুখি দুটি মানুষ চোরাগলি ধরে হেঁটে চলে পাশাপাশি। এখানে আলো মরমে মরে যায়, মাটির নিচে শরীর ভাসায় সুন্দরী ভেনিস। সোহিনীর দাঁতে শব্দবন্ধ ছিঁড়ে যায় অবিরাম। সাবিনা মন দিয়ে শোনে তার আধকাঁপা স্বর,” আমি ম্যাথ্সে টপ করেছি, বেশ করেছি, ওনার তাতে কি? ওনার প্রবলেমটা কি জানিস, ওনার পেয়ারের চামচাগুলো ঝুলিয়েছে। তাতে আমার অসুবিধে নেই, ওনার দুঃখ উনি রাখুন। কিন্তু ওই জানোয়ার মিশুক নন্দী ক্লাসে সবার সামনে ফোড়ন কাটল আমাকে আর পীযূষ স্যারকে নিয়ে। বললো আমি নাকি ছুটির পর ফাকা ক্লাসে পীযূষ স্যারের কোলে বসে থাকি আর বি.সি. স্যার তাই শুনে হাসলো। ক্যান ইউ ইম্যাজিন? এটা কোন টিচার?” বি.সি. অর্থাৎ ভারত চন্দ্র স্যারকে নিয়ে সোহিনীর এই অনীহা নতুন নয়, ক্লাস ইলেভেনে ওঠার কিছুদিনের মধ্যে এই জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাদের স্কুলে ভারত আর পীযূষ স্যারের মধ্যে এই দ্বন্ধ ছাত্রমহলে সুপরিচিত এবং স্থানকালবিশেষে স্কুলের দেয়ালে রক্তাক্ত জ্যামিতি দেখতে পাওয়া যায়। জীবিকা আর জীবনগঠনে বিপ্রতীপ সুর ধ্বনিত হয়। সাবিনা জানে এই পরিমিতি, বন্ধু আর শত্রুর সাথে একই সুরে কথা বলার শিল্প তার করায়ত্ব। খুব কাছের মানুষ ছাড়া পায়না কেউ তার মনের পরিচয়, যারা পায় তারাও কি বোঝে তাকে? তার বুকের ভেতর নীল স্বপ্ন ভাঙ্গা ছন্দে ম্রিয়মান। কবিতার গায়ে জল দিয়ে দিতো সে। সেই কবিতার বুকে চারাগাছ জেগে উঠে অন্তর্বাস মেলে দিতো কার্নিশে ঝুলিয়ে রাখা খুঁটিতে। আদ্যপান্ত প্রেম তার সেই অন্তর্বাসের নাগাল পায়নি কোনদিন। সাবিনা অস্ফুটে বলে,” তুইতো জানিস লোকটাকে, সবাই জানে, স্টুডেন্টদের মধ্যে কথা হয়েছে এটা নিয়ে। কিন্তু তুই এখন ঝামেলা করবি না নিজের এক্সামের জন্য রেডি হবি? দেখ বাজে লোকে বাজে কথা বলবে আর তাতে সায় দেয়ার লোকও পাওয়া যাবে কিন্তু তুই নোংরা ঘাঁটবি না এগিয়ে যাবি সেটা তোকেই ঠিক করতে হবে। কালকে এই লোকটা থাকবে না কিন্তু তার যায়গায় অন্য কেউ থাকবে; অন্য কিছু ইঙ্গিত দেবে, আরও খারাপ কিছু। কি করবি তখন? সুইসাইড?” ফোনের অন্যদিকে চোখে ঘামের গন্ধ ফসফরাস মেখে ছড়িয়ে পড়ছে তখন। সোহিনী নিঃশ্বাস ধরে রাখে অনেকক্ষণ। ফোনটা ঠোঁটের থেকে দূরে রেখে বলে,” আজ রাখছি রে, কাল দেখা হবে তখন কথা বলবো।“ তখন আকাশে মেঘের গায়ে রাত গভীর হয়েছে। সোহিনী খাট থেকে নেমে জলের বোতল খুলে ঠোঁটে ঠেকায়। ঠোঁটের কষ বেয়ে গড়িয়ে নামে বুনো লতাগুল্মের রস। তার চোখের ঘুমের কাজল গাঢ় হয়, খাটে উঠে বালিশে মেলে দেয় মেহগনি কালো চুল। চোখ থাকে জানালার দিকে, জানালায় আকাশের ছবি। আকাশে আর এক পৃথিবী ফুটে ওঠে। এক পৃথিবী গিলে খায় আরেক পৃথিবীর গল্প। স্বপ্ন আসে না চোখে, রাতের নিঃশ্বাসে মায়ের গন্ধ। কালো আকাশ সেই গন্ধ চেটে খেয়ে নীলচে রুপ নিলো। অ্যালার্ম বাজল না আজ সকালে।
রায়বাবু সকালে উঠে চা বানিয়ে খান। বহুদিন ধরে তার এই নিয়ম। চা পান করার চেয়ে বোধহয় চায়ের উষ্ণ গন্ধ শুঁকতে বেশী ভাল লাগে। চায়ের কাপ হাতে সোফায় বসে নিউজ চ্যানেলে গতকালের বাসী খবর আরও একবার শোনার মধ্যে কিছু একটা আয়েসি মদিরতা পান তিনি। তার মেয়েটিও উঠে পড়ে তাড়াতাড়ি, চায়ের কাপ হাতে বাবার পাশে বসে। কখনো চুপচাপ আবার কখনো যুক্তি প্রতিযুক্তিতে আলোড়িত হয় লিকার চা। নিজের নিজের জীবনের অলিগলির ফোটোশ্যুট নিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চলে বিতৃষ্ণ আগামীর। সময় এগোয়, পিছোয়; থমকে বা কুঁচকেও যায় হয়তো। স্থান আর কালের বিভেদে তৈরি হয় প্রাচীন মরিচীকা। রায়বাবুর জীবনে নারীরা মুখবদল করে ফিরে আসে, বাধা দেয় তার স্বাবলম্বনে। মায়ের স্মৃতি হিমেল হাওয়ায় ভর করে ফিরে আসে দুপুরের রোদের পরিত্যক্ত খোসায়। স্ত্রীর সুবাস তাঁর দুপুরের আফিম। মেয়ে নিজের কক্ষপথে ঘুরে ফিরে আসে সন্ধেয়, রায়বাবু বসে থাকেন তার জন্য। মেয়ে এসে গল্পের ঝাঁপি খুলে দেবে। তিনি শুনবেন, পৌঁছে যাবেন পরবর্তী প্রজন্মের বুকের কাছে। তারপর বেরিয়ে পড়েন বিকালবন্ধুদের আসরে। মেয়ে বড় হয়ে গেছে চট করে, রান্না করে রেখে তারপর নিজের কাজ নিয়ে বসে। কালরাতে রান্না করেছিল ডাল, ঢ্যাঁড়সভাজা, ডিমের তরকারি। রাতে খাওয়ার শেষে রায়বাবু গুছিয়ে রাখেন রান্নাঘর, প্রলেপ পড়ে আরেকদিনের ক্ষতে। মেয়ের ঘরের দরজায় পরদা সরিয়ে দেখেন নিশাচর মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। শিশি ভেঙ্গে কাদামাটি লাগে দেয়ালে, চুইয়ে পড়ে সুগন্ধি পাঁচফোড়ন। রায়বাবু আলো নিভিয়ে নিজের ঘরে ঢোকেন, বিছানায় শুয়ে চোখ বোজেন আর তারপর গড়িয়ে পড়ে যান দেয়াল বেয়ে মলিন শহরের পথে। সে পথে হেঁটে গেলে আসে আরেক শহর এবং তার মৃত্যু হলে পথে জেগে ওঠে আরেক শববাহী জনপদ। সে রাস্তা ঠিকানায় ফেরে প্রতি ভোরে, জেগে ওঠে বসার ঘরে, চায়ের কাপে। বাবা মেয়ের আলোচনায় নিঃস্বারিত হয় উদ্ভিন্ন ইতিহাস।
X
সকাল সাড়ে ছটায় যখন প্রথমবার ফোন এলো সোহিনী তখন শাওয়ারের তলায়। চোখে সাবান দিয়ে ঘুম ধুয়ে ফেলতে ব্যস্ত সে। দ্বিতীয়বার ফোন আসার সময় স্কুল ইউনিফরমের ওপর পারফিউমের ছবি আঁকতে মনোযোগী। তবু ফোনের আওয়াজ কানে আসে। সাবিনার জলছবি ফুটে ওঠে টাচস্ক্রিনে। সোহিনী এগিয়ে এসে ফোন তোলে,” হ্যাঁ, বল, বেরোচ্ছি এখন।“ সাবিনার কণ্ঠ গুনগুন করে অন্যপ্রান্তে,” হ্যাঁ তুই আয়, আমি একটু পরেই বেরোচ্ছি। তোর সাথে কথা আছে, দরকারি।“
–“ঠিক আছে, পুলকারে জায়গা রাখছি তোর জন্য, তুই একটু তাড়াতাড়ি করিস, অলরেডি দেরী হয়ে গেছে।”
–“না, পুলকারে নয়, ক্লাসে গিয়ে বলবো। আরও দু’একজনকে লাগবে,”
–“কি ব্যাপার বল তো?”
–“তুই আয় না! একটা দারুন জিনিস মনে পড়েছে।”
–“টেনশন না দিয়ে বলবি কি ভাট বকতে চাইছিস?”
–“সবুর করো বস, এলে বলছি, ডিটেলসে। বাই।”
সাবিনা একটু তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দেয়। কেমন যেন এক অভিসারধর্মী কথাবার্তা। সোহিনী বুঝে ওঠে না পুরোপুরি। ব্যাগ কাঁধে রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। গাড়ি আসছে, তাদের পুলকার, চাকা পিছলে যাচ্ছে রাস্তায় খুব দ্রুত। পথের পাশে মিলিয়ে যাচ্ছে একাকার ঘরবাড়ি, দিগন্তে চকখরির গন্ধ। কুয়াশা পিথে করে এসে দাঁড়ায় গাড়ি। গারির দরজা খোলে সোহিনী,” কেমন আছো আঙ্কল?” গাড়ির স্টিয়ারিং, ক্লাচ, ব্রেক ঘাড় বেঁকিয়ে মুচকি হাসে। বুড়ো ড্রাইভারের দাঁতে রসিকতা,” ভালো, আর তুমি কেমন আনটি? ছুটি কাটল কেমন?” সোহিনী উঠে বসে একরাশ পেঁজা মেঘের ওপর। গাড়ি চলে, হাওয়া ছোটে, দমকা হাওয়ায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে যায় মেঘলা প্রত্যাশা।সামনে অনেকটা একলা পথ। পথ পেরিয়ে ওভারব্রিজ, তারো ওপারে সাবিনার বাড়ি। দুদিন ছুটি ছিল, আজ দেখা হবে। কি যেন সে বলবে বলছিলো। কালকে রাতের কথাপ্রসঙ্গে কিছু নাকি যে ছেলেটা ওকে চিঠি দিয়েছিলো তার ব্যাপারে কিছু? ছেলেটা নাছোড়বান্দা সেটা সে সাবিনাকে জানিয়েছে, সাবিনার সাথে এই হতচ্ছাড়াটাকে মানা যায় না। কিন্তু সে যতদূর জানে সাবিনা এব্যাপারে বরাবর উদাসীন, খানিকটা তাকে উন্নাসিকও বলা যায়। তাহলে কিসের এতো গোপন ব্যাপার? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে শিউরে ওঠে স। শেষ তিনদিন সাহিল আসছে না স্কুলে। ফোন করলেও ফোন ধরছে না; তার কি কিছু হোল? সোহিনী খেয়াল করে সাহিলের কথা ভাবতেই তার গলা শুকিয়ে আসে। এটা তো সে আগে ভেবে দেখে নি। সোহিনী উৎকণ্ঠায় ঠোঁট কামড়ে ধরে, সাবিনাকে ধরতে হবে গাড়িতে উঠলেই, দেরী করা যাবে না।
গাড়ি মেঘলা পথে ফুস্ফুস উজার করে এগিয়ে চলে। রাস্তা জানু পেতে বসে আমলকী মুখে নেয়। অঘ্রানের স্বাদ গলে পড়ে সমুদ্রের জলে। গাড়ির চাকায় শিশু পথচারীর চাঞ্চল্য। মেঘের বাষ্প সংক্রমণে সামনের কাঁচে ঝাপসা পাহাড় ফুটে ওঠে, ড্রাইভার সন্তোষ এই পাহাড় দেখে বড় হয়েছে, এর ঝরনা তার নিজস্ব। পাহাড়ের গায়ে খুঁজে পায় তার বহুদিন আগে হারানো বন্ধু সুরজ বাহাদুরকে। ঘুড়ি ওড়াতে পারদর্শী সুরজ ইন্দো-চীন যুদ্ধের পর ফিরে আসে নি, তাদের একসাথে হোটেল খোলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোল না কোনদিন। সন্তোষ চেয়ে থাকে, সন্তোষ চমকায়; কচি, চিকন কণ্ঠস্বরগুলি একত্রিত হয় অকস্মাৎ কোলাজে। “আঙ্কল…আঙ্কল…আঙ্কল…” সোহিনীর ডানা মেলার ইচ্ছে বহুদিনের, উড়ালপুলের পাঁচিল ভেঙ্গে যখন ছিটকে গেলো গাড়ি তার মনে হোল জীবনে অধরা ছিল এই পাখীর নির্বাসন। নিচের শিশিরের লাশ বিছানো রাজপথে সব কোলাহল তুবড়ে যখন শান্ত হোল বাচ্চাদের স্কুলগাড়ি। সে তার দিশা হারিয়েছে পাকাপাকি ভাবে।
সোহিনীর চোখদুটি খসে পড়েছে অক্ষিকোটর থেকে। সে এখন দেখতে পায় সব; ভাঙ্গা গাড়ি, রক্ত, মাথাকাটা ড্রাইভার, ভাঙাচোরা ছেলেমেয়ে এবং তার নিজের মুখ। চোখহীন তার মসৃণ মুখ, চামড়ার ভেতরে সাদা করোটী, বাঁকাচোরা চ্যাপ্তা হারে মেশানো পথের ধুলো আর সুগন্ধী পাউডার। সব ঝাপসা হয়ে ধরা দেয় একটা সাদা কাপ আর তাতে ধোঁয়া ওঠা লিকার চা। আর কিছু দেখে ওঠার আগে তার চোখদুটি তুলে নিয়ে যায় যাযাবর চিল।
X
আজ কদিন পরে স্কুলে বেরোয় সাবিনা। যুদ্ধশেষে শিবিরে ফিরে গিয়েছে সবাই। দুপুরের ছাদে গোল হয়ে সবাই পাহারা দেয় উপসী আমসত্ব। সাবিনার আব্বু তার হাত ধরে থাকে শক্ত করে। দূরে রাস্তার বাঁকে পর্দানশীন সন্ধ্যা জড়ত্বে উপনীত। কোন পুলকার আসবেনা আজ এই পথে। সাবিনার চোখে ইলশেগুঁড়ি, তার হাতে টান পড়ে ঈষৎ। ট্রামগাড়ির অযাচিত আলসেমি কানে আসে। রাস্তায় হাঁ করে দাঁড়িয়ে ট্রাম, লহার চোয়াল, ফোকলা দাঁতে আদিমতার গল্প। সাবিনা এগোয়, ট্রামের ধাতব নিঃশ্বাসে থামার গন্ধ ছাপিয়ে আসে আর এক ধাতব হুঙ্কার। তীব্রগতির কোন গাড়ির হঠাৎ থামার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। টায়ারে বারুদের গন্ধ আর তারে বসা কাক যথারীতি উদাসীন। সাবিনা এক ঝটকায় আব্বুর হাত ছাড়িয়ে এগোয়। চশমায় ঝাপসা পাহাড় ফুটে ওঠে। তার সম্বিৎ ফেরে না…ইলশেগুঁড়ি…ইলশেগুঁড়ি…
Good writing. The progress of the story riding the subtle stream of consciousness is well implemented. The reason could have been kept unexplained which would have opened the possibilities of interpretation. The style looks a bit Henry Millerian.
Thanks and definitely Miller is flowing unconsciously underneath….
Very Good work
Thanks, your encouragement is one of the few bright streaks available in the days of despair….