বাঙালের জেলখানা – সাম্যজিৎ গাঙ্গুলি

শেয়ার করুন

শীতের রাত্রি। তখনও সূর্য আড়মোড়া ভাঙেনি। পাশের শিশিরভেজা খেতে শোনা গেল পায়ের শব্দ। একটা না, অনেকগুলো। দরমার ঘরে কুঁকড়ে থাকা ওরা কিছুক্ষণ চুপচাপ শুনল। তারপর হঠাৎই, বুক ভরে দম নিয়ে বেরিয়ে এল।

বাইরে কপি খেতে লোক জমেছে। বেশ কটা সোয়েটার-জ্যাকেট, স্যুট-কোট পরা বাবুসাহেব তাদের মধ্যে। তার থেকেও বেশি তাপ্পি দেওয়া ফুলশার্টের সাথে ফাটা হাফপ্যান্ট পরা শাবল-গাঁইতিওয়ালারা। কুঁড়েঘরের কর্তা খানিকক্ষণ এদিক-ওদিক দেখল। তারপর সবচেয়ে দুবলা মজুরকে মধু-ঢালা কণ্ঠে শুধাল, “ভাইটি, এখানে হবেটা কী?” মজুর বেশ কয়েকজনকে শুনিয়ে হাঁক ছাড়ল, “জেল হবে গো, জেল। বাঙালের জেল”।

ক’দিন ধরে বেশ মাপামাপির পর কোমর বেঁধে সব কাজে নেমে পড়ল। গাঁয়ের লোক আছে কিছু। ভিন গাঁয়ের লোকও তো কম নয়। আর ওদেরও তো দু’বেলা পেট ভরে খেতে লাগে! অতএব, দরমার ঘরের সামনে আরেকটা উনুনে আরও রান্না চাপল। তৈরি হল গ্রামের প্রথম রেস্তোরাঁ।

দিন মন্দ কাটে না। গরমাগরম খাবারের টানে শুধু কুলি-মজুররাই নয়, ইঞ্জিনিয়ার-অফিসাররাও ভিড় জমান। রাতের শেষে ক্যাশবাক্স হাতড়াতে গিয়ে মনে হয়, আর কটা দিন জেলখানায় খাবার দিতে পারলে এই দরমার ঘরে আর থাকতে হবে না। তারপর… আগস্টের ৩১শে খবর আসে, সত্যিই ওদের দরমার ঘরে থাকতে হবে না। কারণ, বাড়ি পাকা হচ্ছে। জেলখানাতেও আর খাবার দিতে হবে না। কারণ, এখন ওদেরই তো জেলখানার খাবার খাওয়ার সময়!

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *