সমর রায়চৌধুরীর পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

ধ্বংস-ধ্বনি

রাগ ‘হংস-ধ্বনি’ আমি আর শুনতে চাই না
আমি শুনি নিজের ধ্বংস-ধ্বনি

কে কঁকিয়ে উঠল
কে আর্তনাদ করল
দুঃখে গুমরে উঠল কে
কার হাহাকার শোনা গেল
কার দীর্ঘশ্বাস
কার অশ্রু
কেবলই আমার গলার ভেতর দিয়ে নেমে যায়,
নেমে যায়, নেমে যায়, শিশ্নের দিকে, পায়ের দিকে
মিশে যেতে থাকে রক্তে আর
ভারী হয়ে ওঠে মাথা

নিজের ধ্বংস-ধ্বনিই কেবল শুনি, শুনতে পাই—
রাগ ‘হংস-ধ্বনি’র ভেতরেও

তৃতীয় নয়ন

আমার চোখ তোমার পিঠ চুলকে দেয়, তারও আছে করতল, আঙুল, যার সাহায্যে সে গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। ওই চোখেরও আছে মুখ যার মাধ্যমে সে কথা বলে, আছে জিভ যা দিয়ে সে চাটে ঠোঁট প্রলুব্ধকর কিছু দেখতে পেলেই; এমনকি চোখেরও আছে গোপন, স্বতন্ত্র এক অবাস্তব চোখ, যাকে বলে তৃতীয় নয়ন, যা দিয়ে সে দেখতে পায় সেই সব দৃশ্য, যা বস্তুত অদৃশ্য এবং অলীক।

চাঁদমারি ১

নদীতে চাঁদ
সাধ—জাল ফেলে তুলে আনি
পরক্ষণেই…
ভাবি, থাক না ভেসে—
পাখিদের আহার, আহা
সকালে পাখিই না হয় খাবে

শ্যামল

শ্যামলের যখন থুতুর প্রয়োজন, আর
আমার যখন দাঁতের…
আমাদের কাছে পর্যাপ্ত না থাকলেও
আমরা তা পরস্পরকে ধার দিতাম

ধারদেনার এই সম্পর্কই ছিল আসলে আমাদের বন্ধুত্ব

হাতি ও ইঁদুর

এই মফস্‌সল শহরে মাঝে মাঝে
বড়ো শহর থেকে যখন হাতি আসে
শোরগোল পড়ে যায়
পরিশীলিত সুন্দরী থেকে বিদগ্ধ অধ্যাপক থেকে
সৃজনশীল কাজকর্মে যুক্ত তরুণ প্রজন্মের অনেকেই
তাকে দেখতে যায় সভাতে
আমি যাই না

হাতির কাছে গেলে আমার নিজেকে ইঁদুর মনে হয়, আর
একজন মানুষ যখন নিজেকে ইঁদুর ভাবে
সেটা হয় মনুষ্যত্বের অপমান
মনুষ্যত্বের এমন অপমান আমি হতে দিতে পারি না

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • |

    দেশ ভোলে না – পিউ দাশ

    মুখ ফিরিয়ে নিও না– একবার মুখ ফিরিয়েছিলাম আমি–আর দেশ হারিয়েছি– আর ভাষা হারিয়েছি যা হারিয়েছি তাদের নামও হারিয়েছি, আকার হারিয়েছি রয়ে গেছে কেবল কাগুজে মানচিত্রের উপর ফাঁকা কিছু স্থান– নিঃশব্দ, শুনশান; এখন রুখু হাওয়ায় কেবল ধুলো ওড়ে সেখানে রয়ে গেছে অর্থহীন কয়েকটা শব্দ; গোঙানির মত, সেই ভৌতিকতা–শিহরণ আনে মুখ ফিরিয়েছিলাম, তাই অপেক্ষায় আছি একদিন কেউ…

  • জাগরণ – দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    সৃষ্টি-সেরা নারী-রে তুই, তবুও অনাহূত, বোঝা ভেবে আজন্ম অপমান, আজও অব্যাহত। মাটির প্রতিমা পুজিতা হন, জ্যান্ত প্রতিমা লাশ, বিকৃত পুরুষ, বিকৃত বাসনা, ঘটায় সর্বনাশ। পুরুষ-জাতির ভোগ্যা হয়ে, হারাস নিজ শরীর, মৌন পৃথিবী দেখে শুনে, স্বার্থ মগ্নেই বধির। তিন কিংবা তিরাশি হোক, কেউই পেলনা ছাড়, মানবরূপী দস্যু পশুর, অবাধ অত্যাচার। ‘ধর্ষিতা’ তকমা নিয়ে-রে তুই, সম্মান খুঁজিস…

  • রক্তিম সূর্য মণ্ডলের পাঁচটি কবিতা

    ১. অভিমানী চূড়া থেকে পাদদেশে নেমে আসে সবজি-বাগান।তার পর পরই আলোর কৌটোয় গুঁড়ো দুধ রাখতে শেখা।নিয়মিত চা বানাইসময়ে, অসময়ে;খিদে মরে, ভাত ফেলা যায়।মা দেখলে হাতে মেখে জোর করে খাওয়াতেন,আমি গিলতে থাকতাম ভাত, থালা, হাঁড়ি, উনুন…মা বলতেন, “আর একটু আনি?”—আনবে? অল্প কিন্তু, এক্কেবারে একমুঠো,তোমার তালুতে যা ধরে। ২. আমরা শ্রাবণ মাসে ফুল তুলিনি একটাওলুকিয়ে আছি,আশ্বিন আসুক।এই…

  • পক্ষপাঠ – শান্তা কর রায়

    আয়না যেন অনন্ত এক শব্দ আকর মুখ দেখে নেয় নীলবিবরে মৌসুমিরাত দৌড়ে তুমি ছুঁয়ে দেখো কবির বাড়ি দৃপ্ত মুখে পাটাতনে চলছে মিছিল । স্বপ্ন নিয়ে কবি জানি একাই মিছিল একাই তিনি জাগিয়ে রাখেন নদীর টানে রমণীয় শিশির যেন জমা হীরে ভিতর থেকে বাইরে ওড়ে পানসি ঘুড়ি । জেগে ওঠা রক্ত তখন কোঁচকানো মেঘ খরার সময়…

  • অরিত্র শীলের পাঁচটি কবিতা

     শিথিল পেশির মেধাস্বত্ব এইমাত্র মৃত শ্রমিকের পিঠে, নামুক বৃষ্টি মাঠ নিঃশ্বাসে নেই অনুতপ্ত ক্রেন নিঃশ্বাসে নেই তলপেটের ঘ্রাণ বৃষ্টির জল ছুঁয়েছে কীর্তিহাট পেশিতে পেশিতে ইঁটের তাগাড় নুনমাখা ক্যাম্পখাট ডানাছিঁড়ে মরা মাসে একা একা পাখিদের চেয়েও উঁচু দিয়ে উড়ে বাতাসে দিয়েছে ছ্যাঁকা শূন্যের সব দুঃখকীর্তি ভরে বটের শিকড় এলেবেলে গেছে মরে চাতকের ঠোঁট, ঠোঁটের খিঁচুনি, উনুনের গায়ে স্যাঁকা নরম ঘাসের যেতে বসেছিল স্তম্ভবিন্দু…

  • অনুসন্ধান – সৌম্যজিৎ রজক

    যারা অপমান করেছিল, তাদের ভুলে গেছিযারা ভালোবেসেছিল, তাদের ভুলে গেছি কে আমায় ঠেলে দিয়েছিল খাদের কিনারে?কে বলেছিল,                     যাও, ভোগ করো ন্যায়-অন্যায় ভুলে??সে আমি, আমারই ক্ষমতা! আজ এই নির্বাসন, আজ এই চামড়ার দাগ সারাটা দুপুর আর সারাটা রাত্রি শুধুঅলিগলি দৌড়ে বেড়ানো যাদের অপমান করেছি, তাদের কোথায় পাবো?ভালোবেসেছিল…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *