প্রিয়া সামন্ত-র পাঁচটি কবিতা
১
প্রেম ভেঙে গেলে মানুষ কী করে?
গান শোনে, বাজার যায়?
হুটহাট বেরিয়ে যায় ঠিকঠিকেনি সন্ধেবেলা?
হেঁটে যায় অগস্ত্যের পথে
ফেরে না আর নদীপাড় ঘেঁষা ইটভাটার চুল্লি থেকে!
মানুষ তবুও দেখি উৎসবে যায়
ফিঙের উৎসাহের মতো বালিকার ইচ্ছের পাশে
বসে থাকি অবিচল, তীর্থের স্থবির কাক
ভাঙা ভাঙা শব্দবন্ধ, অশ্রুত গোটাতিনেক বাক্য
ওঠে আর ঝরে যায়
হিরের কুচির মতো জল, বিন্দু বিন্দু জল
ঝরে আর মিহিন বালির মতো বাতাস ঝরে যায়
শহর পোড়ে, আগুন ছড়ায় বন্দরে বন্দরে
কৃষকের মুঠো করা হাত উঠে যায় আকাশের দিকে
ক্রুশকাঠের পায়ের কাছে উচ্চারিত ‘রক্ষমাং কুরু’
শীতের কুয়াশা ভেঙে শুভ্র শ্বেত বৃষ্টি এনে দেয়।
প্রেম ভেঙে গেলে মানুষ কী করে?
গান শোনে। বাজার যায়।
আরেকটা প্রেম না আসা অবধি বসে বসে শুধু
সময় পোড়ায়।
২
তোমাদের দেখব বলে
আমি চোখের চারপাশে ব্লেড সাজিয়ে রাখি।
পিঁপড়ের সারির পিছু পিছু আসে অলীক বিড়াল।
তার খেলার সাথী কেউ নেই বলে
দুধের বাটি উলটে নিয়ে খেলে
গড়ালেই মাখামাখি, মাফিয়া রোদের তবে ছুটি।
মা গো, বেলা যে পড়ে এল
ফটিকের বাঁও কি মিলল সবে, মা?
গরম ডালের বাটি, হাত ডুবিয়ে বসে আছে ভাই
মা গো, রান্নাশাল থেকে এসো।
ওকে কিছু খেতে দেবে না?
তোমাদের একসঙ্গে দেখব বলে
চোখের চারপাশে এখন ব্লেড সাজিয়ে রাখি।
জানো, মা, মানুষ ছাড়া আর কোনো জীব
অন্যের খিদে নিয়ে জুয়ো খেলে না।
৩
স্নেহ অতি বিষম বস্তু
মধ্যবিত্ত সংসারে
তেলের হিসেবি খরচের মতো
অতি সাবধানে সরে আসি
তোমার প্রসঙ্গ থেকে। দূরে
যেখানে কোনো পাঁকজল নেই
ঘূর্ণির বেপরোয়া গতি অপচয়ে স্থির
তবু ঘিরে থাকে অনুক্ষণ, যেন পুরনো ঘিয়ের বয়াম।
তোলা থাকে অনাগত অতিথি উদ্দেশ্যে
স্থির অপেক্ষায়।
তোমার ধারণা আজ ‘স্নেহজ’ শব্দের মতো বিমূর্ত।
৪
প্রলুব্ধ কাকের মতো দিন যায় ভাতের আশায়।
সামান্য সুপুরির খোল
নৌকা হয়ে ভেসে যায় ছেলেবেলা জুড়ে।
বটের পাতার ফাঁকে দুপুর পোয়াতি হয়
ঠায় আমি বসে থাকি
ডাকপুতুলের খেলা, ঘর টানা বউ বসার ঘরে।
পাঁজরের হাড় থেকে আঁজলা করে
শব্দ হাতে তুলি
বিনিময়ে থই নেই। পাই পয়সা দুবেলা ভাতের সন্ধান।
ডুবন্ত কিনার থেকে ছোঁ মেরে তুলে নেয় না
বন্ধু করতল! ভাবি আর সময় গড়ায়
আমার নামের হবিষ্যি রাঁধা হলে
দু পলা ঘি থাকবে তাতে!
৫
কুয়োতলা থেকে উঠে এল যেন
চোখ থেকে সরে যাওয়া আলো সরিয়ে
চলে গেল বাঁশবনের পথে
পিছন ফিরে চাইলে তখন চোখ নামাতে হয়!
ঝাঁপি থেকে আলো ধান পড়তে পড়তে জোনাকি
আর ফেলে যাওয়া পায়ের আলতা ধোয়া ছাপে
আমারই চেনা সব মৃত প্রেমিকদের শব
দু চারটে শব্দ ছুঁড়ে দিই মন্ত্রণাচ্যুত
হা হা অট্টহাসির মাঝে
উঠোন থেকে ঘরে উঠে আসে
কোজাগরী জোৎস্নার কঙ্কাল।
চৈতন্যের ওপারে শুনি শেয়াল ডেকে ওঠে।