শালীনতা – চয়নিকা
ট্রেনে জানলার ধারে বসে একমনে বসে বই পড়ছিলেন সমরেশবাবু। গিন্নী আরতিদেবীকে নিয়ে যাচ্ছেন বারানসী। এখন সবে আটটা, খেয়ে দেয়ে বার্থে উঠতে ঢের দেরী, তাই ট্রেনে উঠেই বইয়ে মনোনিবেশ করেছেন। বই পড়তে পড়তে গিন্নির গজগজানিতে সমরেশবাবু ব্যাজার মুখে বললেন, ‘কী হল আবার!’ আরতিদেবীর রাগী মুখে গলাটা যতটা সম্ভব কম করে বললেন, ‘সামনের বার্থের মেয়েটাকে দেখো, কেমন অসভ্য। ছেলেরা ছাড়বে কেন!’ সমরেশবাবু মুখ বাড়িয়ে দেখলেন, সাইড লোয়ারে একটি মেয়ে শুয়ে, সম্ভবত কলেজ পড়ুয়া। হয়তো নামতে হবে ভোরে তাই ইতিমধ্যেই ঘুমিয়ে কাদা। পরনে জিন্স আর হলুদ টি-শার্ট। নিষ্পাপ মুখ, মায়া হয় দেখে। উনি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন দেখে, আরতিদেবী খেঁকিয়ে বললেন, ‘সব এক। নোলা দেখো!’ সমরেশবাবু গিন্নীর এই ব্যবহারে বিস্মিত, বিরক্তও, লজ্জায় মুখ নামিয়ে বললেন, ‘কী হচ্ছেটা কী! মেয়েটাকে নিয়ে কী সমস্যা তোমার! বাবুর বয়েসের একটা মেয়ে।’ আরতিদেবী ঝাঁঝিয়ে বললেন, ‘ন্যাকা, ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল, আর এখন নাকি বাবুর মতো। আর মেয়েও বলেহারি অসভ্য, জামা দিয়ে যদি সব দেখাই যায়, তবে জামা পরা কেন!’ এতক্ষণে সমরেশবাবু খেয়াল করলেন ঘুমন্ত মেয়েটির টি-শার্টটা কোমর থেকে কিছুটা উঠে, আর কাত হয়ে শোওয়ায় বুকের কাছটাও কিছুটা উদ্ধত। সমরেশবাবু আর কথা বাড়ালেন না, খাওয়া দাওয়া করে শুতে গেলেন চুপচাপ। আরতিদেবী ঘুমের মধ্যে তীব্র আলোর ঝলকানি দেখে উঠে বসে দেখেন সমরেশবাবু একেবারে মুখের কাছে দাঁড়িয়ে, হাতে মোবাইল। আচমকা ঘুম ভাঙার হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে বললেন, ‘কী হল এখানে দাঁড়িয়ে কেন!’ সমরেশবাবু কিচ্ছু না বলে মোবাইলটা এগিয়ে দিলেন। আরতিদেবী দেখলেন তারই ছবি, ঘুমন্ত, বুকের কাপড় সরে গেছে অজান্তেই, কোমর পেট সবই প্রায় উন্মুক্ত। গিন্নীর মুখের অবস্থা দেখতে ইচ্ছা হল না আর তাঁর, চুপচাপ শুতে গেলেন নিজের জায়গায়।