রামদাস – অশোক দেব
বিন্দুনাশ করে ফেললে পাঁঠা আর পাঁঠা থাকে না। মাটি হয়ে যায়। বক্তা রামদাস। এটা করবুক। আজ বাজারবার। দূরদূর থেকে পাঁঠা, ছাগল, মোরগ, পায়রা এমনকি গরু নিয়ে লোকে আসে। বিক্রি করে। ক্রেতা আসে উদয়পুর আগরতলা থেকে। হাটে আসার আগেই বিক্রেতার হাত থেকে প্রাণীটি কেড়ে নেয় এরা। তারপর শুরু হয় দামদস্তুর। এ হাটে সবাই বাটপাড়। কেবল ওই পশুপাখি ছাড়া। চা দোকানে বসে আছে ইদন। ইদন মিয়া। মাংসের ব্যবসা তার। উদয়পুর মাংস বাজারে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন, সবার চেয়ে গম্ভীর আর একাকী মানুষ। এখানে এসেছে পাঁঠা কিনতে। এখন চায়ের দোকানে বসেছে। আর ওই পথের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখছে পোষ্য নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি। এমন সময়ে রামদাস তার বাণীবিতরণ করতে লেগেছে…
পাঁঠার পাছায় আগুন থাকে। জন্মেই সে মায়ের পেছনে নড়েচড়ে। কিন্তু একবার বিন্দুনাশ করে ফেললে সে কীসের পাঁঠা? তার মাংস মাটি হয়ে যায়। ইদন দূর থেকে দেখে কারা পাঁঠা নিয়ে আসছে। চঞ্চল, আপন আনন্দে যারা মালিকের আগে আগে চলে আসে, সেইসব পাঁঠায় তার চোখ। এদের কী বিশ্বাস! মালিকের প্রতি কী সুগভীর আস্থা! ভাগ্যিস ওরা মানুষ নয়। হলে ইদনের ব্যবসাই থাকত না। ইদন এরকম চকচকে পাঁঠার কাছে যায়। কোনো টানাটানি নয়। প্রথমেই এমন দাম বলে দেয় যে গেরস্ত সোজা তার হাতে তুলে দেয় দড়ি। কী করে বোঝে ইদন এ পাঁঠা এখনও বিন্দুনাশ করেনি? সে বোঝে না, রামদাস ঠেলে পাঠায়। রামদাস এমনি জ্ঞানী।
নারী। ঘোমটা মাথার পেছন দিকে হেলে পড়েছে। পুরাতন সিঁথিটি মেটেসিঁদুরে গৈরিক। যৌবন ছিল, এখন তার অবশেষ আছে। হাতে পাটের একটু সামান্য দড়ি। পাঁঠাটি কচি। ইদন এগিয়ে আসে, ‘হাজার’? হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে নারী। যেন তার কলজে কিনতে চাইল কেউ। ইদন সরে আসতে চায়, নাকি আরও বেশি দাম বলবে? এরকম কান্না কেবল মেয়েরাই কাঁদতে পারে। সরে আসাই ঠিক হল। রামদাস মানা করে। যেতে দেয় না, ঠেলে দাঁড় করিয়ে রাখে ইদনকে। এ পাঁঠা তার পছন্দ। একটা হাজার টাকার নোট থাকে ইদনের পকেটে। সেটা এখন অচল। সব হাজার টাকা বাতিল করেছে সরকার। ইদন একটা রেখে দিয়েছে। সেটা দিয়ে অন্য টাকার বাঁকানো গোছাকে পেঁচিয়ে রাখে। দুটি পাঁচশ টাকার নোট দিল। মহিলার দিকে এগিয়ে দিতে সে নিল। টাকা দুটো তার হাতে বাঁশের পাতার মতন কেঁপে স্থির হলে দড়িটি ইদনের হাতে ধরিয়ে দেয় ওই নারী।
আজ এই নিয়ে চারটে পাঁঠা কেনা হল। এই হপ্তা চলে যাবে। এখন ফাল্গুন মাসের শেষদিক। চৈত্রে বিয়েশাদি নেই। তাই বেশি কিনে লাভ কিছু হবে না। একটা পিকআপ ভ্যানের পেছনে সে চারটি পাঁঠাকে তুলে দেয় ইদন। হুকে বেঁধে দেয় দড়ি। তারপর খেতে দেয়। পুষ্প কচি ঘাস, ঝোলাগুড় আর চানা মিশিয়ে খাবার বানিয়ে দেয়। একটা জলের পাত্রও দেয়। ইদন সবাইকে খেতে দেয়, জলের পাত্রটি দেয় মাঝখানে। পাঁঠাগুলো কেবল জল খায়। ওদের খিদে থাকে না। ওজন বাড়ানোর জন্য গৃহস্থ বেশ করে খাইয়ে আনে। ইদন জানে এখন খাচ্ছে না, খাবে ঠিকই।
‘আমি কাঙাল হব মেঙে খাব…
আজ আমায় কৌপিন দে গো ভারতী গোঁসাই
কাঙাল হব মেঙে খাব রাজরাজ্যের আর কার্য নাই’
বাজার থেকে ফেরার পথে এ গান মনে পড়বেই পড়বে। একটু গেয়েও নেয় ইদন। আজ সোমবার। উপবাস। আসলে তার কিছু নয়। পুষ্পর উপবাস। শিবের।
দুই.
তখন জুনমাস। তখন আগুন। দাঙ্গা। পাহাড় থেকে নেমে আসছে দলেদলে লোক। হাতে বন্দুক, দা-টাক্কল, তিরধনুক। তিরের মাথায় কেরোসিনে চোবানো কাপড়। তাতে আগুন লাগিয়ে ছুঁড়ে মারছে শনের ঘরের চালে। দাউদাউ। এ পাড়ায় একটাই হিন্দুবাড়ি। পুষ্প সেখানে ফুটেছে। ইদন জানে মুসলমান বাড়িতে ঢুকবে না ওরা। একটা তির পুষ্পদের পুবের ঘরে পড়ল। আগুনের উস্কানিতে দাউ দাউ করে উঠল সে ঘর। এটা বারবাড়ি। পুষ্প আছে অন্দরে? আছে? সকাল থেকেই লোক গাঁ ছেড়ে পালাচ্ছে। সবাই। হিন্দু-মুসলমান সবাই। পাহাড়ের মানুষগুলোর মনে কে যেন এমন আগুন লাগাল! বাঙালি আর রাখবে না ওরা। একটা রামদা ছিল ইদনের। যখন পাহাড়ি-বাঙালি ভাইভাই স্লোগান দিতে লাগল সমতলের রাজনীতি তখনই তলেতলে সকলে জেনেছে আর নেই ভাইভাই। তখুনি ঘরে ঘরে অস্ত্র মজুত করা শুরু হল। ইদন বানাল এই দা।
ওরা এল
হুঙ্কার
ইদন তরুণ, সে সারাদিন রক্ত ঘাঁটে
হাতে রামদা
ওদিকে গাদাবন্দুক
ইদন সটান
পেছনে পুষ্পের বাবা মূর্ছিত, পুষ্পের মা নেই… সে বাবার বুকের ওপর পড়ে কাঁদছে
ইদন এগিয়ে যায়
একটার ঘাড়ে নীরবে রাখে রামদার শাণ
কেন তারা চলে গেল তারপর? চলে গেল পুষ্পর বাবাও, ‘চল’
—কই?
—শাদি করুম তোরে
ইদন হাঁপাচ্ছিল। কী ভীষণ আর্তচিৎকার চারদিকে। ইদন আর পুষ্প সেসব পেছনে ফেলে চলে আসে গুরুর থানে। অত যে হল্লা, অত যে আগুন, গুরুর কোনো হেলদোল নেই। কাপড়ের চেয়ারে আধশোয়া হয়ে কী যেন একটা ছোটো বই পড়ছেন। প্রণাম করে পুষ্প, ইদনও, ‘শাদি করুম, করাইয়া দেন’
—শাদি তো হইয়াই গেছে
—ক্যামনে?
—হ্যামনে, ফিক করে হাসে গুরু, ফিচেল হাসি
—তামশা কইরেন না, শাদি করুম
—মাইঞনি, রাজি আছনি তুমি? তে তো পাডা কাইট্যা ভাত খায়… আবার শেখ…
—রাজি আছি, কান্না গিলে নিয়ে বলে পুষ্প
—যাও হইয়া গেছে শাদি। যিডা উপর থিকা হয়, তারে আর হওয়ান লাগে না…
এক অগ্নিদগ্ধ গ্রামে সদ্য পিতাহারা কনের সঙ্গে এক বুক চেতানো কসাইয়ের বিবাহ হল। শালবনে, ছরার ধারে, এখানে-ওখানে অনেক মৃতদেহ পেরিয়ে এরা চলে আসে উদয়পুর। গুরুর আদেশ।
অজান্তেই কপালে হাত তুলে গুরুকে প্রণাম করে ইদন। তারপর প্রতি সন্ধ্যায় দুজনে মিলে গুরুর থানে যায়। কত লোক আসে, যায়। গুরু পাত্তা দেয় না। লোকে টাকা দেয়, কাপড় দেয়, তিনি এর থেকে নিয়ে ওকে দিয়ে দেন। কী খান, কখন ঘুমান কেউ জানে না। গুরুর বিদ্যা কেবল ইদন আর পুষ্প জেনেছে। আর জেনেছে রামদাস।
ইদন বিন্দুরক্ষা করতে জানে। পুষ্পের তাই সন্তান আসেনি। কী পুষ্প কী হইয়া গেল…
পাঁঠাগুলোর দিকে তাকায় ইদন। বাঁদিকেরটা যেদিন কাটবে, সমুদাকে ডাকতে হবে। সমুদা তেল পছন্দ করে… শুরু হয়ে গেল রামদাসের বাণীবিতরণ :
তেল না তেল না, মেদ। তুমিও তো সেই মেদের সঙ্গে ঘর করছ। নারীর মেদ সাপের বাসা। আসল সাপ তার জন্য শ্বাস ফেলতে পারে না। মূলের সাপ মূলেই মরে যায়। খেলতে পারে না। যে শরীরে সাপ নিজের মতন খেলতে পারে না, সে শরীর তো মাটির তাল।
উদাস হয়ে যায় ইদন। রামদাস ঠিক বলে। কী এক লতাকে শাদি করেছিল সে। নিজেকে শাল ভাবত সে আর পুষ্প এক সুগন্ধলতিকা। কী আনন্দ কী আনন্দ। নিজেদের ক্রিয়ার কারণে সন্তান আসেনি। আর ওই জন্মস্থলে যায়ওনি সে খুব বেশিদিন। একবার পাকে বাঁধা পড়লে আর মুক্তি নেই। সেই পুষ্প এখন মেদের পাহাড় হয়েছে। চলতে পারে না। তার নিজের হাঁটু নিজের ওজন নিতে পারে না…
কী করে পারবে? তড়াক করে বলে ওঠে রামদাস
—কী করা?
—সংস্কার করো। অত বড়ো ওস্তাদ তুমি এটা বোঝো না?
ওস্তাদ বটে ইদন। পাঁঠা কিনে এনে ভালোমন্দ খাইয়ে নাদুস করে তবে বাজারে তোলে। জীবন দেন ওপরঅলা, জীবন নেন ওপরঅলা। ইদন বিসমিল্লা বলে না পাঁঠা কাটার সময়। কী বলে কেউ জানে না। কেবল রামদাস জানে। পাঁঠার কণ্ঠনালী তার পায়ের নীচে। ওই মন্ত্র বললে, পাঁঠা আপনি রাজি হয়ে যায়। কোনো চিৎকার নেই, কাঁপুনি নেই। হালকা করে পোঁচ দেয় ইদন। এমনভাবে যে রক্ত আসে হাসতে হাসতে, যেন ওই পাঁঠার শরীরে আটকে থেকে দমবন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছিল। চামড়া ছড়াতে গুনেগুনে তিন মিনিট লাগে তার। এধারে একটা পোঁচ, ওখানে একটা টান। তারপর চামড়া ধরে টান দিলে হেসে ওঠে মাংসল শরীর। পাঁঠার তেল তেলই, মেদ নয়। তবুও যতটা চর্বি এখানে-ওখানে তাদের আলগোছে খুলে আনে ইদন। সে ভালোবাসে। এই লালগোলাপি মাংস সে ভালোবাসে। জীবনে খায়নি। তবু সে পাঁঠার মাংসের স্বাদ পায়। গ্রাহক ঠকায় না। মাংস, হাড়, কলজে সব মিলিয়ে দেয়। সে জানে কোন কাস্টোমার কেমন। রবিবারে আর শুক্রবারে বিক্রি বেশি। রবিবার আসে হিন্দু চাকুরে লোকজন, শুক্রবার মুসলমানেরা। ইদন জানে কারা ছোটো টুকরো পছন্দ করে, কারা মাঝারি। কাদের বাড়িতে বাচ্চা আছে জানে সে। হাড়ের ভাগ কম দেয়। কাঠের গুঁড়িটার ওপর মাংস রেখে সে অন্যদের মতন কুপিয়ে কাটে না। ধীরেসুস্থে কাটে। মানুষ খাবে। কারো বাড়িতে অতিথি এসেছে, কারো আজ ছুটির দিন। কেউ কেবল আনন্দের জন্যই খাবে মাংস। একে কাঠ কাটার মতন করে কাটা সাজে?
—সাজে না, বলে রামদাস।
—হুম
—আজকের আসল কাজে মন দাও। আসল কাজ
—জানি
সারাদিন ধরেই এটা ভাবছে আসলে ইদন। আজ সোমবার। সারাদিন কিছু খাবে না পুষ্প। একটা কুঁজো আছে, তাতে পাহাড়ি কুয়োর জল। তাতেই সে ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে এসেছে ইদন। বলেছে, একটু একটু করে খেতে। আজ কাজ আছে। খেতে হবে। এমনিতে উপোসের দিনে জলও খায় না পুষ্প। ইদন জানে আজ খাবে। সমর ডাক্তার ঘুমের বড়ি দিয়েছে পুষ্পকে। ঘুম এলেই ওর আশির দাঙ্গা মনে পড়ে। মনে পড়ে বাবার সৎকার করা হল না। কী থেকে কী হল, মড়া মাড়িয়ে বিয়ে। আর ওইসব আগুন। পুষ্প কাঁপে, কাঁদে এই করে কেটে যায় রাত। একদিনও কি আসবে না, যেদিন সে ঘুমাবে? ইদন কত ডাক্তার করল, ওঝা ধরল, সেই সুদূর চারমনাই পর্যন্ত গিয়েছে। কাজ হল না। কাজ হল এই সমর ডাক্তারের ওষুধে। সারারাত ঘুম, সারাদিন ঝিমুনি।
—আর এই গা-ভর্তি মেদ? রামদাস ফিসফিস করে
—হবে, আজকেই হবে
তিন.
বাড়ি। বিরাট। এই একটিমাত্র পাপ করেছে ইদন। সুবল চক্রবর্তী বিরাট মাস্টার। তার মাথা নাকি বিজ্ঞানী। আসলে পাগল। নিজে পাগল। বউ পাগল। ছেলে দুইটা পাগল। সুবল মাস্টার মরল একদিন। বিরাট বাড়িতে একটা ঘর। একটাই ঘর। সেখানে এক ছেলে ছবি আঁকে আর হাসে। আরেকটা কবেই রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে, হাত পেতে পেতে খায়। কত টাকা সুবল মাস্টারের সে টাকা নাকি ব্যাঙ্ক নিজেই নিয়ে নিয়েছে। মাস্টারের বউ দুহাত তুলে হাসতে হাসতে গিয়ে ট্রাকের নীচে পড়ল। আর ওই চিত্রী ছেলেও গেল অমর সাগরে স্নান করতে গিয়ে। সবাই বলে কৃষ্ণ দাস খুন করেছে। ইদন সেসব দেখেনি। জোর করে দখল করেছে এই বাড়ি। সাজিয়েছে। পেছনে পাঁঠা রাখার জন্য ঘের দিয়েছে। সেখানে সরকার থেকে দেওয়া ঘাসের বীজ লাগিয়ে সবুজ করেছে। মাস্টারের ঘর ভেঙে হাফওয়াল উপরে টাটার টিন দিয়ে ঘর করেছে। প্রথমে পাড়ার ক্লাব খুব পেছনে লেগেছিল। সেক্রেটারি সহ হোমরাচোমরাকে এক দুপুরে নেমন্তন্ন করেছিল ইদন। ফ্রেশ খাওয়ামু, আইও। সবার সামনে সে পাঁঠা কেটেছিল, চোখেমুখে মেখে নিয়েছিল একটা রক্তাভা। ক্লাবের ছেলেরা সেই হত্যাকাণ্ড দেখে নীরব। নীরবে রান্না হল, নীরবে খাওয়া হল, নীরবে সুবল মাস্টারের বাড়ি ইদনের দখলে চলে এল। পাঁঠাগুলোকে খোঁয়াড়ে ছেড়ে একবারে স্নান সেরে ঘরে আসে ইদন। আজ তারও উপবাস।
এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গিয়েছে। আজ পাপচর্বি খুলে ফেলার দিন। রামদাস তাই বলল, আজই নাকি করতে হবে সেটা। তাই সেই ঘুমপারানি ওষুধ জলের কুঁজোয় মিশিয়ে দিয়েছিল ইদন। এখন ঘুমাচ্ছে পুষ্প। সকল মেদ আজ চেঁছে দেবে সে। মেয়েমানুষের মেদ হলে সাধনসর্প মরে যায়। শ্বাস ফেলতে পারে না।
—পারে না-ই তো, বলে রামদাস
—জানি রে ভাই, এবার একটু চুপ যা।
একটা শীতল পাটি পাতা হল কাঁঠাল গাছের নীচে। কুঁজোটা খালি। সবটা জল বিশ্বাস করে খেয়ে নিয়েছে পুষ্প। এখন সে ঘুমিয়ে আছে। শ্বাসের সঙ্গে মেদ উঠছে, মেদ নামছে। শ্বাস নেবার সময় কেমন হাহাকারের মতন শব্দ হচ্ছে। এই যদি শরীরের বাইরে হয়, তাহলে অন্দরে কী কষ্ট হচ্ছে সে ইদন বুঝতে পারে। রামদাস ঠিক বলে। এখনও শরীরের বিপুল বল ইদনের। অত ভারি পুষ্পকে সে সহজে নিয়ে এল বাইরে। কাঁঠাল গাছের নীচে শীতল পাটিতে শোয়ায়। একটু গুরুনাম জপ করে। বারবার তাগাদা দিচ্ছে রামদাস। এবার কাজ শুরু করতে হবে।
ইদন
পুষ্পের শরীরে দাগ কাটে
একটা দাগ কাটার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হাল্কা হলুদ রস পরে সরু রক্ত বেরিয়ে আসে
ইদন জানে কোথায় কাটতে হবে
এখানে চর্বি, ওখানে চর্বি, সাদা ঘিয়ে রং। খাবলা খাবলা করে সেসব কেটে বার করে ইদন।
রামদাস খুশি
চর্বি বার করে এনে ফেলে দিয়ে চামড়া জুড়ে সেলাই করে দেয় ইদন
হালকা হয়ে যাচ্ছে পুষ্প। কাল থেকে আবার সে লতিকা হবে।
আজ খালি পেট আর বুকের চারদিকে কাজ করল ইদন, ঊরু আর পিঠে পরে করবে…
চার.
আজ মঙ্গলবার। কাল সারারাত বাইরে কাঁঠাল গাছের নীচে বসে কাটিয়েছে ইদন। পুষ্পের সঙ্গে। পুষ্প ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে ফেলে উঠে আসতে চাইছিল। পারেনি। এখন বেলা দশটা হবে। দেরি হয়ে গেল। ইদন পুষ্পকে জাগাবে এখন, বউ বউ বলে ধাক্কা দেয়। হাত ধরে, ঠান্ডা। এই শীতলতা ইদন চেনে। চিৎকার করে ওঠে ইদন, কাঁঠাল গাছ কেঁপে ওঠে… শীতলপাটির ওইদিকে রামদাস।
পাঁচ.
রামদাস। ঠান্ডা। সর্বদা সে ঠান্ডাই থাকে। কিছুটা রক্ত আর অনেকটা চর্বি সারা গায়ে মেখে সে শীতলপাটির ওদিকে শুয়ে আছে। ঘুমোচ্ছে? রামদাস ইস্পাতের তৈরি। চাকু। সে যে কথা বলতে জানে সে কেবল ইদন জানত। এখন সে চাকু পড়ে আছে নিতান্ত রামপুরিয়া চাকু হয়ে…
কেবল পুষ্পর শ্বাস থেমে গেল