ফেরা – অবিন সেন

ফেরা – অবিন সেন

শেয়ার করুন

শীত ফুরিয়ে যেতে যেতে যখন বসন্তের দোরে পৌঁছে গিয়েছে তখন একদিন বৃষ্টি নামল তোড়ে। অনভ্যস্ত ছাতার নীচে কলকাতা কাক-ভেজা হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি ঝরিয়ে ঝরিয়ে এক টুকরো মেঘ ক্লান্ত হয়ে পড়লে আর এক টুকরো মেঘ ঝাঁপিয়ে আসছে আকাশ জুড়ে । বহুক্ষণ ধরে চলল এমনটাই। বৃষ্টির ছায়ায় ছায়ায় শীত যেন আরও একটু জাঁকিয়ে বসবার তোড়জোড় করছে, মনে হল অলকের। সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা ছিল। বেলা বাড়তে মেঘও বাড়ল আকাশ জুড়ে। তারপরে সন্ধ্যার পরে আকস্মিক বেজায় বৃষ্টি নামল। অলক সবে ধর্মতলা থেকে মিনিবাসে উঠেছে, হাওড়া যাবে। বাসের জানালা সিটে বসে অলক অনুভব করে বৃষ্টির রোঁয়া উড়ে উড়ে সমস্ত শহর ভরিয়ে দিচ্ছে কেমন এক আশ্চর্য মায়াময়তায় । আলোর কলকাতা বৃষ্টিতে কেমন মেদুর হয়ে আছে।

গতকাল রাত্রেই বাবা বলল

অলক কয়েকদিন তুই কলকাতার বাইরে বলে যা। গা ঢাকা দিয়ে থাক।

কেন বাবা?

তোদের ইউনিভার্সিটিতে যে ঝামেলাটা হল সেটা নিয়ে নাকি কয়েক জনের নামে এফ.আই. আর. হয়েছে। ভিতরের খবর তাতে তোর নামও নাকি আছে।

অলক অবাক হয়ে যায়। বলে

বাবা, আমি তো সেদিন ঝামেলার ধারের কাছেও ছিলাম না।

জানি মাই সান। কিন্তু এখন চারদিকের পরিস্থিতি অন্য রকম।

রেণুকা কিচেনে ছিল তাই বাপ-বেটার কথোপকথনের প্রথম দিকটা শুনতে পায়নি। শুধু ঝামেলা কথাটা সে শুনতে পেয়েছিল। বলল

কিসের ঝামেলা গো?

অমলবাবু সবটা ভেঙে বললেন না। সে অনেক ব্যাপার তোমাকে পরে বলব। অলক কয়েকদিন পুরুলিয়ায় ঘুরে আসবে বলছে।

হঠাৎ ? আর কে কে যাচ্ছে?

অমলবাবু ভেঙে কিছু বলতে চাইছেন না এখন। রেণুকা ভিতু মানুষ । অযথা ভয় পাবে। অমলবাবু ভেবে রেখেছেন অলককে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে তারপরে পরিচিত ব্যক্তিদের ধরে, ব্যক্তি গত প্রভাব খাটিয়ে সমস্যাটা মেটাবার চেষ্টা করবেন। কিন্তু ছেলের লাইফে একটা পুলিশের দাগ লেগে গেল এই ব্যাপারটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। ছেলের প্রতি তাঁর অগাধ অশা ভরসা। অলকও কখনো বাবা মা’র ভরসার জায়গাটাতে আঁচড় লাগতে দেয়নি। একটি নামী প্রতিষ্ঠানে অলক অর্থনীতি নিয়ে পড়ছে। অমলবাবুও একটি নামী কলেজে পড়ান। কিন্তু কলেজে কলেজে আজকাল ঝুট ঝামেলা বড্ড বেড়ে গেছে।

রেণুকার কথার উত্তরে তিনি বললেন

পুরুলিয়ায় আমার বন্ধু দেবেশ থাকে। অলক ওর ওখানেই কিছুদিন কাটিয়ে আসুক। দেবেশ ফোন করেছিল। ওখানে নাকি এখন দারুণ পলাশ ফুটে আছে চারদিকে।

রেণুকা যেন কিছু একটা আঁচ করছিল। বুঝতে পারছিল অমলবাবু ভেঙে কিছু বলছেন না। অলকও চুপ করে আছে। মুখে বলল

তোমাদের ব্যাপার স্যাপার কিছু বুঝি না বাপু।

 

পরদিন সারা দিনটা সে গড়িয়ায় কাকার বাড়িতে কাটিয়েছে। ফোন বন্ধ করে রেখেছে। পলাতক আসামীর মতো নিজেকে গোপন করে রেখেছে সারা পৃথিবীর কাছ থেকে। সন্ধ্যায় অন্ধকারে বাড়ি ফিরেই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সে। তখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি। বাসে ওঠার পরে বৃষ্টি শুরু হল। প্রথমে সে ওলা বা উবের ডেকে নেবে ভেবেছিল, তার পরে সামনে একটা ফাঁকা বাস দেখে সে বাসে উঠে ওড়ে। হাওড়া স্টেশনে পৌছাতে আর কতক্ষণ। তার পরে তাকে অনেকক্ষন অপেক্ষা করতে হবে। সেই রাত এগারোটার পরে ট্রেন। অবশ্য স্টেশনে অপেক্ষা করতে তার খারাপ লাগে না। চারদিকে ব্যস্ততা হুড়ো-হুরি। প্রতি মুহূর্তে আগের চিত্রটা মুছে দিয়ে নতুন চিত্র লগ্ন হয়ে যাচ্ছে ক্ষণিকের জন্যে। অবাক হয়ে এই সব দেখতে ভালো লাগে অলকের।

উনিশ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকটা কম ব্যস্ত ছিল এতক্ষণ। ট্রেনটা ঢুকতেই হুটোপুটি লেগে গেল। অলক অপেক্ষা করল। ঠেলাঠেলি করে জেনারেল কামরার লোকজন উঠে পড়লে অলক ধীরে সুস্থে তার কামরাটি খুঁজে উঠল। সপ্তাহের মাঝা মাঝি বলে এক দিন আগে টিকিট কাটাতেও স্লিপার কামরায় রিজার্ভেশন পাওয়া গেল। লোয়ার বার্থই পাওয়া গেছে। অবশ্য মিডল বার্থের প্যাসেঞ্জার শুয়ে পড়লে আর মজাটা পাওয়া যায় না। অলক দেখল সিটে আগে ভাগেই দুই জন বসে আছে। এক গ্রাম্য টাইপের বয়স্ক লোক, সঙ্গে এক তরুণী। তরুণীর মুখ জানালার দিকে ফেরানো বলে মুখটি ভালো করে দেখতে পেল না অলক। এলো খোঁপা ঘাড়ের কাছে ভেঙে আছে, সে দিকে তরুণীর কোনও খেয়াল নেই যেন।

উল্টোদিকের সিটে এক মাঝ বয়সী ভদ্রলোক সপরিবারে।

বাইরে তখনো বৃষ্টি টিপ টিপ করে ঝরে চলেছে। সেই সঙ্গে মৃদু-মন্দ হাওয়া। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে যেতে হাওয়াটা যেন আরও ভালো বুঝতে পারে অলক। বেশ ঠাণ্ডা লাগছিল। তরুণী তখনো এক ভাবে জানালার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। কি দেখছিল কে জানে। অন্য সব জানালাগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খোলা জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া আসছিল। অলকের খুব বিরক্ত লাগছিল। তার খুব ঠাণ্ডা লাগার ধাত। একটু ঠাণ্ডাতেই গাল গলা ফুলে কাহিল হয়ে যায় শরীর। সে একবার পাশের ভদ্রলোককে জানালাটা বন্ধ করে দিতে বলল। ভদ্রলোক ইতস্তত করে মৃদু গলায় মেয়েকে কিছু বললেন। তরুণীর কোনও ভাবান্তর লক্ষ করা গেল না।

অন্য যাত্রীরা একে শুয়ে পড়ছে। অলকও শুয়ে পড়বে ভাবল। সে বাথরুম থেকে ঘুরে এসে লক্ষ করল পাশের ভদ্রলোক কিছু বলার জন্য যেন ইতস্তত করছে। কিন্তু বলতে সঙ্কোচ বোধ করছে।

অলক বলল

কিছু বলবেন?

কইছিলুম কি আপনি কুথায় নামবেন বটে ?

ভদ্রলোকের কথায় পুরুলিয়ার টান।

বলরামপুর। আপনি?

ভদ্রলোকের মুখ মালিন্যহীন এর হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে যায় যেন।

আম্মো। মোদের উখানেই ঘর। যদি কিছু মনে না কয়েন, একটা কথা কই।

বলুন না, এত কিন্তু কিন্তু করছেন কেন?

ভদ্রলোকের কথায় এক অনাবিল সারল্য অলকের ভালো লাগছিল।

তবু ভদ্রলোক ইতস্তত করছিলেন। তার পরে যেন জোর করে সঙ্কোচ কাটিয়ে বলেন

এই নীচ-পানের সিটটা যদি আমার বিটিকে ছেড়ে দ্যান…আমার বিটির খুব অসুখ, মাথাডার ঠিক ঠিকানা নাই। বিটি আমার শুয়ে থাকবে মুই তার পায়ের পানে বসে থাকব বটে। আপনি যদি অনুমতি দ্যান স্যার!

কথা বলতে বলতে ভদ্রলোকের গলা ম্লান হয়ে আসে। তাঁর কথা যেন অনুনয়ের মতো শোনায়।

অলকের যেন এবার খুব সঙ্কোচ বোধ হয়। বুঝতে পারে মানুষটা খুব সরল। সে আড় চোখে তরুণীর দিকে একবার তাকায়। তরুণী সেই এক ভাবে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। তার যান আর কোনও দিকে হুঁশ নেই খেয়াল নেই। সে যেন বাকি পৃথিবীর কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছে।

অলক বলে

এই সামান্য ব্যাপারে আপনি এভাবে বলছেন কেন কাকাবাবু! আমার উপরের বার্থে শুতে কোনও অসুবিধা হবে না।

ভদ্রলোক যেন কৃতজ্ঞতায় গদ গদ হয়ে গেলেন। কি বলবেন ভেবে পেলেন না। শুধু গদ গদ মুখে একবার অলকের হাতটা ছুঁয়ে দিলেন।

অলকের এবার শুয়ে পড়বার কথা ছিল কিন্তু তরুণীর বিষয়ে জানার খুব আগ্রহ হচ্ছিল তার। দু দণ্ড বসে থেকে বলল

কলকাতায় কোয়ায় এসেছিলেন?

বিটিকে ডাক্তার দেখাতে, পিজি হাসপাতালে।

দেখানো হয়েছে?

কুথায় আর হল! মোদের তো চেনা জানা নাই। খুঁজতে খুঁজতে অনেক বেলা বয়ে গেল। আজ হলনি। অন্য দিন আসতে হবে বটে।

তিনি বিষন্ন ভাবে মাথা নাড়লেন।

অলকের জানতে ইচ্ছা করছিল কি অসুখ মেয়েটির! কিন্তু ভদ্রলোক যখন ভেঙে বললেন না তখন যেচে জানতে চাওয়াটা অভদ্রতা হবে ভাবল সে।

সে উপরে উঠে শুয়ে পড়ে।

 

কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সে খোয়াল ছিল না তার। ভদ্রলোকের ডাকে ঘুম ভাঙল তার।

পরের স্টিশন বলরামপুর, উঠে পড়েন বাবা।

অলক ঘুম চোখে দেখে কামরায় আলো ভরে গিয়েছে। এক অমলিন সকাল তাকে অভ্যর্থনা জানায়। সে নীচে নেমে পড়ে। নীচে নেমে সে তরুণীকে দেখতে পায় । কি মালিন্যহীন সে মুখ। সে তখন বাইরে তাকিয়ে ছিল না। সে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল। কি এক শূন্য সে তাকানো। সে তাকানোয় কোনও প্রাণ ছিল না। অলক এক মুহূর্ত সেই প্রস্তর মূর্তির দিকে তাকিয়ে থাকে। বাথরুমে ফ্রেশ হয়ে ফিরতে না ফিরতেই ডেসটিনেশন এসে যায়।

 

খুব কম যাত্রী নামল স্টেশনে। চারপাশটা তাকিয়ে অলকের দু চোখ জুড়িয়ে গেল। দূরের দিকটা শান্ত লাল পলাশে ছেয়ে আছে। সেই লালের আভা যেন গিয়ে পড়েছিল আকাশের গায়ে।

ভদ্রলোকের ডাকে তার হুঁশ ফেরে।

আপনি কোন দিকে যাবেন বটে?

অলক তার ঠিকানাটা বলে জানতে চায়

আপনি?

এই ঠায়। বাজারটা পার হলেই। আমার একটা ছোট মুদি দোকান আছে। যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা কই?

আপনি এত সঙ্কোচ করেন কেন কাকাবাবু ! আর মানায় আপনি বলবেন না।

ভদ্রলোক তবু সঙ্কোচের সঙ্গে বলেন

চল না বাবা আমার দোকানে বসে একটু চা খেয়ে ফেরেস হয়ে যাবে বটে।

ভদ্রলোক এমন ভাবে অনুরোধ করেন, তার কথাটা ফেরাতে পারে না অলক।

তারা স্টেশন থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করেন।

ভদ্রলোকের নাম মাধব সিংহ । লেখা পড়া জানেন সামান্য। স্কুল ফাইনাল পাশ করেছিলেন। মুদির দোকান থেকে আয় খারাপ হয় না। অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল। কর্তা-গিন্নি দু জন মিলে দোকান সামলান। দোকানের পিছনেই তাদের একতলা পাকা বাড়ি, উঠোন। মোটকথা অনেকটা জায়গা আছে ভিটের চারপাশে। এক মেয়ে মাধবী আর এক ছেলে মধুকর। মেয়ে বড়, কলেজে পড়ত। ছেলেটি স্কুলে পড়ে, সামনের বার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।

কথায় কথায় মাধববাবু অলকের পরিচয় ভালো করে জেনে নিলেন। অলক শুধু তার গা-ঢাকা দেবার বিষয়টা এড়িয়ে গেল।

সে লক্ষ করল মাধবী একটা কথাও বলেনি। মাধবীর কি অসুখ সে বুঝতে পারছে না। মাথার কি কোনও গণ্ডগোল! মাধববাবুও তা ভেঙে বলেননি।

 

 

 

 

দেবেশ কাকার বাড়িতে সমবয়সী কেউ নেই বলে অলকের যেন দারুণ বোরিং লাগছিল। দেবেশ কাকার এক ছেলে। ব্যাঙ্গালোরে পড়ছে। সুতরাং তাকে একা একাই ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।

ঘুরেতে ঘুরেতে আর একদিন সে মাধব বাবুর দোকানে যায়। দেবেশকাকুর বাড়ি থেকে মাধব বাবুর দোকান খুব দূরে নয়। মাধববাবুর সঙ্গে বসে এটা সেটা বক বক করে। অলকের একা একা ঘোরার সমস্যার একটা সুরাহা হয়। মধুকরকে সে তার সঙ্গে জুটিয়ে নেয় ঘুরে বেড়াবার জন্যে।

মধুকরের কাছ থেকেই তার দিদির ট্রাজেডিটা জানতে পারে অলক।

গেলবার হোলির দিন বিকেলে কারা যেন তুলে নিয়ে গিয়েছিল মাধবীকে। শেষ বিকেলে হয়ত বা সন্ধ্যার মুখে সে ফিরছিল তার এক বান্ধবীর বাড়ি থেকে। তার সাইকেলটা পড়েছিল স্টেশন রোডের ধারে। তাকে পাওয়া গেল না সেইদিন। অনেক খোঁজা খুঁজি হল। পুলিশে কমপ্লেন লেখানো হল। কিছু ফল হল না। পরদিন ভোরে যেখানে তার সাইকেলটা পাওয়া গিয়েছিল সেখানে মৃতপ্রায় শরীরটা পড়ে থাকতে দ্যাখে পথচারীরা। তার শরীরটা যেন ছিঁড়ে খুঁড়ে খেয়েছে পশুরা।

বলতে বলতে মধুকর কেঁদে ফেলেছিল।

প্রায় দু মাস সে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তার শরীর তো সারল। বাইরেই ক্ষতগুলো শুকিয়ে গেল। কিন্তু তার মনের উপর যে বিশাল ক্ষত হয়েছিল সেটি আর শুকায় না। সে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। হাসা কাঁদা রাগ অভিমান সব সে বন্ধ করে দেয়। পৃথিবীর সমস্ত রং রূপ থেকে সে নিজেকে সরিয়ে নেয়। ডাক্তাররা বলে তার নার্ভ ব্রেক-ডাউন হয়ে গিয়েছে।

তারা বাঘমুন্ডি বেড়াতে গিয়েছিল। ফেরার পথে বাসে বসে তাদের কথা হচ্ছিল। কথা শেষ করে মধুকর মেদুর হয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের জল গোপন করছিল বোধহয়। অলকও নিঝুম হয়ে যায়। কি বলবে সে ভেবে উঠতে পারে না। অনেকক্ষণ পরে বলে

তোমরা কোথায় ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলে?

পুরুলিয়া, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ। কলকাতায় তো দেখানো হল না সেদিন। আর এক দিন যেতে হবে বটে।

আমার এক বন্ধু পিজিতে ডাক্তারি পড়ছে। আমি সব ব্যবস্থা করছি। আমিও যাব তোমাদের সঙ্গে।

মধুকর অলকের কলেজের ঝামেলার ব্যাপারটা জানত। সে বলল

দাদা, তোমার ঝামেলাটা তো এখনো মেটেনি।

দূর দূর ও কিছু না। বাবা শুধু ভয় করে।

 

দু তিন দিনের মধ্যেই অলক পিজিতে স্পেশালিষ্ট ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা পাকা করে ফ্যালে। এই তিন চার দিন তারা যখনই বেড়াতে বের হয়েছে তখনই মাধবীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। সে যেতে চাইত না। কিন্তু অলক নাছোড়। মাধবী শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকত আর অলক তার সামনে বসে বসে বক বক করে গিয়েছে। সব কথা কি মাধবী শুনেছে? অলক জানে না। কিন্তু অলকের কোনও ক্লান্তি নেই। অলক এমনই। সে কোনও কিছুতেই সহজে হাল ছেড়ে দেয় না। অলক বসে বসে গল্প বলে আর এক নীরব শ্রোতা সেই গল্প শোনে। শোনে কি ? অলক নিশ্চিত মাধবী তার কথা শোনে।

অলক অনেক অনুনয় বিনয় করে তার বাবাকে রাজি কারায় । অমলবাবু মনে মনে ভয় পায়। অলকের কলেজের ঝামেলাটা এখনো মেটেনি। পুলিশ যদি অ্যারেস্ট করে। তবে তো ছেলের কেরিয়ার একেবারে শেষ হয়ে যাবে।

কলকাতায় এসে সবাই অলকদের বাড়িতেই উঠেছিল। অলক, অমলবাবু, রেণুকা সকলেই যেন মাধবী নামক একটি ফুলের জন্যে খুব মায়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞ ডাক্তার বলেন ‘শুধু ওষুধ নয়, আপনাদের ভালোবাসাই ওকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে’।

অলকের মাঝে মাঝে মনে হয় মাধবী যেন তার দিকেই তাকিয়ে থাকে। এ কি অলকের ভ্রম? এই পৃথিবীর প্রতি যে বোধ মরে গিয়েছিল মাধবীর তা কি এই মানুষগুলিকে দেখে ফিরে আসছে! অলক বুঝতে পারে না।

মাধবীদের ট্রেনে তুলে দিয়ে অলক দাঁড়িয়ে ছিল প্ল্যাটফর্মে। ট্রেন ছেড়ে দিল। মাধবী অলকের দিকে তাকিয়ে ছিল।

অলক স্পষ্ট দেখতে পায়, মাধবী জানালা দিয়ে একটা হাত বাইরে বার করল। তারপরে হাতটা যেন একবার নাড়ল।

 

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

One Comment

  1. অসাধারণ প্লট। খুব সুন্দর লেখা।টান টান উত্তেজনা। মন ছুঁয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২