সীতা হেমব্রমের পাঁচটি কবিতা
আখা জ্বলছে, কয়লার বিরাম নেই
লেখা আসার আগে, সন্তানজন্ম ফিরে আসে। স্বপ্ন তখন স্বরবর্ণে আসত, ফিরে যেত ভ্রূণ বিষাক্ত
করে। মনে হত, মরা বাচ্চা বিয়োব আমি; নীল হয়ে যাওয়া, রক্তনাড়ী জড়ানো গলায় সে মাকে
না বলেই হয়ত ফিরে যাবে সম্পূর্ণ জীর্ণ । দলা পাকানো জরায়ু তছনছ করে গোটা বাড়িটাই ভেঙে পড়ল, সলতে পাকানো
এক ফোঁটা জলও নিল না সে ।
ভয়ের খোপ-কাটা কিত্ কিত্ থেকে রোজ ভ্রূণজন্ম খাক্ হয়। রুলটানা রজস্বলা মেয়ের
কখন মার্বেল গড়ানে চৌকাঠে ঠেকে যায় মাসিক শাবক। তাকে মেরে ফের
তোমার ঘর করি
এখন বন্দি উনুনের তলায় সেসব
ক্যালেণ্ডার কানা ছাই
যখন পিল খেতে ভুলে গেলেন মা, আর ঠিক এক হপ্তা পর
ভোরের কলঘর প্রথম পায়ের আওয়াজ পেল,
বালতি আর লাল রঙের মগ একদৃষ্টে তোমার জানু দেখে ফেলল
দেয়ালে আঁক কেটে যে বউটা সোমবার লিখেছিল একা
আমি তার বাঁজা কাঁকালের প্রথম “না”
চুনি কোটাল সরণী
রোহিণী পরবের গায়ে কাজরি মাছ আর উমনো ঝুমনো হরিয়াল
দহের নৈঋতে সন্ধেতারা ওঠে
আষাঢ় মাসের ফাঁস লেগে রুক্ষ বালিদানার ছুঁচ
গজিয়ে ওঠে ভাতারখাকি শরীরে, ঠিক কনুই থেকে এক হাত ওপরে
বেড়া বিনুনি যেখানে এসে থামে । বাজু তোলা ইঁট পাঁজায়
কাজে দম নেই, শরম লাগে কেউ দেখবে। কোলকুঁজো হয়ে আড়াল করছি
শিকড়-বাকড়
চুনি কোটাল সরণী থেকে সাইকেলের চাকায় বর্ষা আছড়াল
রোঁয়া উঠছে ক্ষতস্থানে, বাজুর নীচে মাছরাঙা রোম
মাসকাবারে জলঝাঁঝি উসখুস করছে বারদুয়ারে
গাজনের খড় ঢেঁকি সব আমার ছোঁওয়া নিষেধ
আমি কেমন একা একদিন
চুনিদিদির মতো ঐ কিলবিলে গাঢ় রক্ত
মলমের মতো লাগিয়ে এক পাশ ফিরে নিঃসাড় হয়ে যাব
যাতে পরদিন
হরফের মতো সোমত্ত রোমের ডগা ধুকপুক করতে করতে মরে যায়
চৌষট্টি
খুসকাভাতের থালায় জল এঁটো হয়ে আছে পাপের
বখড়ায়
দুপুরের ঘাস ফড়িং এক ঘুমকুয়ো থেকে দলে দলে
পঙ্গপালের মতো
ঢিপি বাঁধানো শরীফ দু একটি তেমন পরিবারে হিন্দু
তুলসীর থানে
অন্ধকারে চৌষট্টিকলায় জঙ্গলের পাখিদের ডানা
ঘেমে ওঠে , রূপশালি ধানের আঠা জড়িমায়
আমিও কেমন অনটন নির্দেশিকা পাঠ করি
নিয়মিত নামতা সমেত
নীল অপরাজিতার যোনি হয়, পুবের নিকানো দেহ
তালের চিটেয় সর জমা করতে থাকে অবিরাম
কেয়াখয়ের পানের বাটার মতো ভারী
আর অভুক্ত
বাকরখানি
মনসাপালার শেষ রবিবার ওলাবিবি তলায় মোমবাতির আলো
আর ফেনি বাতাসায় পিঁপড়ের কামড়ে দগ্ধ হচ্ছে নাবাল
শরীর, জলঙ্গীর ভেজা পাটের ধারে এসে কতবার নদীতে মুখ দেখেছি
ফুলকুমারীর মেয়ে আমি
বাবুদের উঠোন ঝেঁটিয়ে ফেলা শর্করা, লাড্ আর চালগুঁড়াের পাশে
মুতে দিচ্ছে আহ্লাদী কুকুর
লগ্নভ্রষ্টা চরকায় তখন ভোরের মসজিদের পাশে বাকরখানি
রুটির মতো চাঁদ আমার আর ওনার মাঝখানে একটা খাঁটি
শাপলাফুলের বিল, বৃষ্টিতে ঝুপসি হয়ে ভিজছে, যেন
পা মুছে উনি কুলকুচি করে ফেলে দিলেন
এ অব্দি পাঠানো শব্দ আর চিঠি
হেফাজতহীন তাওয়ায় ঝামা হয়ে গেল ফোস্কা লাগা বাকরখানি
আমিষ পরব
আমাকে ডিঙিয়ে শাঁকচুন্নি মা রোজ উঠে যায় অন্য বালিশে
ঘুমন্ত মরদের ডাকে কাফনের লাল পুঁজে ডাগর বাথান
মটকা মেরে এভাবে না পাওয়া গিলতে শেখা, মায়ের গতর ছেঁড়া
অবেলার পঞ্চমুখী জবা কেবল আমার কনুই থেকে গায়ের চামড়া
খুলে নেয়
আলনার হুকে টাঙানো ইজের শেমিজ রোদে দিয়ে কেউ তোলেনি
স্বভাবের ফতোয়া ঢলে যায়, কয়েক মাস তারপর
বিছানা পৃথক হবে। মাঝের প্রহরে কেউ ঘুরে যাবে চৌকির পারে
চুড়িশব্দ দু’বছর
তারপর গোলাপকাঁটার হুল খেয়ে
আমিও শরীর থেকে বেরোতে শিখে যাব
শব্দ ও স্বর বিন্যাসের নতুন ভাষা শিখলাম আজ। এক অসাধারণ অনুভূতি।
অন্য স্বর। নিজস্ব স্বর। অনেক অনেক কাল পর।
দলিত জীবনে প্রাত্যহিকের সংগ্রাম। যন্ত্রণার স্বর, নারী হিসেবে, মানুষ হিসেবে। ধন্য এ কবি
আলাদা আওয়াজ, আলাদা কথা। মারাত্মক কবিতা। আপনপাঠ কে ধন্যবাদ।
এক কথায়, অন্যরকম,,,অনবদ্য ভাবে আটপৌরে কাপড়ে মাড় দিয়ে, পাটকরা বেনারসী
অনবদ্য
কবি কে কুর্নিশ। এই আওয়াজ টা চাই…
MANUSER JIBONER PROTI MUHURTER SONGRAM, DUKKHO, DURDOSA AR SOMAJER CHOKH RANGANIR GOLPO OSADHARON VABE BOLA HOYECHE…
Ei কবিতা অনবদ্য। Darun…
নিজ্স্ব স্বরে আঁকা মায়াচিত্র।
অপূর্ব!অপূর্ব!
একটু অন্যরকম স্বাদ পেলাম। ভালো লাগলো
একেবারেই ভিন্নতার স্বাদ।
ভালো লাগল বেশ