প্রিয়া সামন্ত-র পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

প্রেম ভেঙে গেলে মানুষ কী করে?
গান শোনে, বাজার যায়?
হুটহাট বেরিয়ে যায় ঠিকঠিকেনি সন্ধেবেলা?
হেঁটে যায় অগস্ত্যের পথে
ফেরে না আর নদীপাড় ঘেঁষা ইটভাটার চুল্লি থেকে!

মানুষ তবুও দেখি উৎসবে যায়
ফিঙের উৎসাহের মতো বালিকার ইচ্ছের পাশে
বসে থাকি অবিচল, তীর্থের স্থবির কাক
ভাঙা ভাঙা শব্দবন্ধ, অশ্রুত গোটাতিনেক বাক্য
ওঠে আর ঝরে যায়
হিরের কুচির মতো জল, বিন্দু বিন্দু জল
ঝরে আর মিহিন বালির মতো বাতাস ঝরে যায়

শহর পোড়ে, আগুন ছড়ায় বন্দরে বন্দরে
কৃষকের মুঠো করা হাত উঠে যায় আকাশের দিকে
ক্রুশকাঠের পায়ের কাছে উচ্চারিত ‘রক্ষমাং কুরু’
শীতের কুয়াশা ভেঙে শুভ্র শ্বেত বৃষ্টি এনে দেয়।

প্রেম ভেঙে গেলে মানুষ কী করে?
গান শোনে। বাজার যায়।
আরেকটা প্রেম না আসা অবধি বসে বসে শুধু
সময় পোড়ায়।


তোমাদের দেখব বলে
আমি চোখের চারপাশে ব্লেড সাজিয়ে রাখি।
পিঁপড়ের সারির পিছু পিছু আসে অলীক বিড়াল।
তার খেলার সাথী কেউ নেই বলে
দুধের বাটি উলটে নিয়ে খেলে
গড়ালেই মাখামাখি, মাফিয়া রোদের তবে ছুটি।

মা গো, বেলা যে পড়ে এল
ফটিকের বাঁও কি মিলল সবে, মা?
গরম ডালের বাটি, হাত ডুবিয়ে বসে আছে ভাই
মা গো, রান্নাশাল থেকে এসো।
ওকে কিছু খেতে দেবে না?

তোমাদের একসঙ্গে দেখব বলে
চোখের চারপাশে এখন ব্লেড সাজিয়ে রাখি।
জানো, মা, মানুষ ছাড়া আর কোনো জীব
অন্যের খিদে নিয়ে জুয়ো খেলে না।


স্নেহ অতি বিষম বস্তু

মধ্যবিত্ত সংসারে
তেলের হিসেবি খরচের মতো
অতি সাবধানে সরে আসি
তোমার প্রসঙ্গ থেকে। দূরে
যেখানে কোনো পাঁকজল নেই
ঘূর্ণির বেপরোয়া গতি অপচয়ে স্থির
তবু ঘিরে থাকে অনুক্ষণ, যেন পুরনো ঘিয়ের বয়াম।
তোলা থাকে অনাগত অতিথি উদ্দেশ্যে
স্থির অপেক্ষায়।

তোমার ধারণা আজ ‘স্নেহজ’ শব্দের মতো বিমূর্ত।


প্রলুব্ধ কাকের মতো দিন যায় ভাতের আশায়।
সামান্য সুপুরির খোল
নৌকা হয়ে ভেসে যায় ছেলেবেলা জুড়ে।
বটের পাতার ফাঁকে দুপুর পোয়াতি হয়
ঠায় আমি বসে থাকি
ডাকপুতুলের খেলা, ঘর টানা বউ বসার ঘরে।

পাঁজরের হাড় থেকে আঁজলা করে
শব্দ হাতে তুলি
বিনিময়ে থই নেই। পাই পয়সা দুবেলা ভাতের সন্ধান।
ডুবন্ত কিনার থেকে ছোঁ মেরে তুলে নেয় না
বন্ধু করতল! ভাবি আর সময় গড়ায়
আমার নামের হবিষ্যি রাঁধা হলে
দু পলা ঘি থাকবে তাতে!


কুয়োতলা থেকে উঠে এল যেন
চোখ থেকে সরে যাওয়া আলো সরিয়ে
চলে গেল বাঁশবনের পথে
পিছন ফিরে চাইলে তখন চোখ নামাতে হয়!

ঝাঁপি থেকে আলো ধান পড়তে পড়তে জোনাকি
আর ফেলে যাওয়া পায়ের আলতা ধোয়া ছাপে
আমারই চেনা সব মৃত প্রেমিকদের শব

দু চারটে শব্দ ছুঁড়ে দিই মন্ত্রণাচ্যুত
হা হা অট্টহাসির মাঝে
উঠোন থেকে ঘরে উঠে আসে
কোজাগরী জোৎস্নার কঙ্কাল।

চৈতন্যের ওপারে শুনি শেয়াল ডেকে ওঠে।

শেয়ার করুন

Similar Posts

  • মহুয়া সেনগুপ্তর দশটি কবিতা

    ১শত জলকণায় নামগান বাজে।জন্ম-জন্মান্তর ঘুরে ঘুরে আসেসীমান্ত লঙ্ঘিত পায়ে। অতি দূরদেশে তাঁর পথিকসাজ,মালিনীর দীন কণ্ঠহার বুকে জাগে—লতা থেকে চ্যুত অশ্রুফুল,মেঘ থেকে চূর্ণ জলধারা। দুলে ওঠে অনন্ত পথ, ছুটন্ত অশ্বখুরধার, তোমার জন্যসখা, একটি তণ্ডুল আছেক্ষুধিতের শাকান্নে ধরা। ২একটি আলোকিত নদীর পাশে শুয়ে আছি, একবস্ত্রে।আমার প্রকৃতিজন্ম মাদুর করেবিছিয়ে দিয়েছি ধুলোয়। আকাশপথে সুরের পালকি বেয়েউৎসব ঘন হয়ে ওঠে।বুকের…

  • মঙ্গল হাজরার পাঁচটি কবিতা

    মৃত জ্যোৎস্নায় ১। ঘুমের ভিতরে কোনো এক যুগের ঘোড়া-হরিণের ঘাস ভরে ওঠে কোনো এক ঘুমের ভিতরে; জ্বলন্ত আগুনে  আমরা হাঁটতে এসেছি আঁকতে শিখেছি নক্ষত্রের ঘর; যেখানে বাঘ আর বুনো মহিষের পরিভাষা আলাদা হয় তবুও ঘুম ভেঙে গেলে—উঠে দেখি,  মৃত নক্ষত্রের মাটিতে আমাদের বিছানা ভরে গেছে। ২। শব্দ শব্দের পাশে বসে রৌদ্র পোহায় অক্ষরে লেগে থাকে…

  • জিয়া হকের পাঁচটি কবিতা

    ক. বোধগম্য নও, তবু হেসে ওঠা ধর্ম আমারমেরুদাঁড়া ভেঙে যায় রোজ রাত্রিবেলামানুষের ভাষা যেন বুঝতে পারি নাকাউকে পাই না বলে ঈশ্বরাদি ডাকিঈশ্বরকে ডাকি বলে কাউকে পাই নাক্ষমাশীল তিনি—এমনই শুনেছিমায়েদের চেয়ে মাতৃময়মাতৃময়ী না লিখে তাকে আমি পুরুষে রাখলাম‘করুণা করুণা’ বলে ডাকি সেই উঁচু নীরবতাআমার কথারা ঘোরে মনের জঙ্গলে আমারপশুমাংস চাই না আর চাই একটা গাভীর শাবকবিশ্বাস…

  • ও একান্ত, ও বসন্ত – শুভ চক্রবর্তী

    পুরোনো প্রেম, এর মানে কিছু হয়? হয় রে হয়, রক্তাক্তহয়, তারপর যদি মনে হয় তাতে আকাশ মেশাব তা-ওহয়, তবে আমার সম্বন্ধকে ওইরকম করে মিশিয়ে দিয়ে?তাতে আমার শেষ চিহ্ন রেখে দিয়ে যেতে পারবো গো! আমার তো আঁচল শতচ্ছিন্ন, ধরবে ওই আকাশ ভরাপ্রাণপ্রপাত, জন্মান্তর কি নিশ্চিতরূপে মৃত্যুর নিকটেআসে, নাকি আমারই অতিবাহিত সময়ের উলটোদিকতার প্রত্যয়, একাকীত্ব, মরুশব্দ বাহকের…

  • পার্থপ্রতিম মজুমদারের পাঁচটি কবিতা

    লাহিড়িপুর  উৎসর্গঃ ৺প্রশান্ত রায়চৌধুরী  কতখানি দূর? সে লাহিড়িপুর? আজও কি সেখানে ভয় এসে নামে? জোছনার আলো পড়ে নদীতীরে? লঞ্চ ছুটে যায় আঁধারকে চিরে? এইসব কথা আগে অন্তত কেউ একজন সঠিক জানত আজ সে-ও নেই পড়ে আছে হাওয়া ফুরিয়েছে আজ সব চাওয়া-পাওয়া তবু আজও আছে সে লাহিড়িপুর কত কাছাকাছি তবু কত দূর ! পরিপার্শ্ব যা তোমার…

  • ঘোলাটে মায়া – আকাশ সাহা

    ঘষা কাচে গুমোট অন্ধকারের মাঝে, মুখ রাখি পড়ন্ত বেলায় আমার নির্ভেজাল হৃদয়ের শার্সিতে কখনও বা হাত রাখি জানালার শিকলে , কখন আবার ঘোলাটে জীবনের প্রেমহীন অনুকম্পায় হেটে চলি একমুঠো ঝড়ের আশায় জানি আমি, জানালার ওপারে, ঘোলাটে ঘষা কাচের ওপ্রান্তে পৃথিবীর আর একটা রূপ ওপর হাতে আমার জন্য, সন্ত্রাস,হানাহানি,বিস্বাসঘাতকতা.অরাজনৈতিকতা প্রেমহীন মানবত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে. তার আলোকরাশিতে,…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *