জিয়া হকের পাঁচটি কবিতা

শেয়ার করুন

ক.

বোধগম্য নও, তবু হেসে ওঠা ধর্ম আমার
মেরুদাঁড়া ভেঙে যায় রোজ রাত্রিবেলা
মানুষের ভাষা যেন বুঝতে পারি না
কাউকে পাই না বলে ঈশ্বরাদি ডাকি
ঈশ্বরকে ডাকি বলে কাউকে পাই না
ক্ষমাশীল তিনি—এমনই শুনেছি
মায়েদের চেয়ে মাতৃময়
মাতৃময়ী না লিখে তাকে আমি পুরুষে রাখলাম
‘করুণা করুণা’ বলে ডাকি সেই উঁচু নীরবতা
আমার কথারা ঘোরে মনের জঙ্গলে আমার
পশুমাংস চাই না আর চাই একটা গাভীর শাবক
বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি, তৃতীয়বারও—বলেছি তো

খ.

আমাদের প্রায়ান্ধকার ঘর আলো করে দাও বান্ধবকল্যাণ; মতি অতিষ্ঠ
হয়েছে তাই ঘরে দেখি দোকানবাজার, রাজার করতালি, কীটের ধিক্কার,
ঘোড়াদের নতমুখে লাজ; আমাদের রাস্তায় কৌতুক ছড়িয়ে দাও ধুলো;
দাঁড়িয়েছিলে সামনে, দেখেছি বাবুসোনা কাঁচিছাটা চুল—মুখ ছিল মুখ্যভাবে
দূরে; এই লেখা খালে গতি পায়; অন্ধকার উঁকি দিয়ে অন্ধকারে দেখে—
লজ্জা পায় পরাজিত ঘোড়াটির মতো; চাকা যায়—কাউকে ডাকে না—এতই নিরীহ

গ.

ছন্দবদ্ধ বিপদ আসে ওই। গম্বুজের মাথা কাটা যায়। এবার ঘুমাও
নিবাসের তলা থেকে সরে যায় মাটি। শনাক্ত হয়েছে ছোটো খোকা। ঘুমাবে না?
গ্রন্থ পড়ে অনুন্নত পোকা। সদর্পে প্রেম আসে চুক্তিপত্র হাতে। জেগে আছো?
সংসারেই ফিরবে কিনা ভাবে সন্ন্যাসীরা। শূন্য হতে চায় সাংসারিক। উঠে বসো

ধান কুড়োতে যাবে, মহারাজা? মৃৎপাত্রে শাকান্ন কি খাবে? পাশ ফিরি

ঘ.

গত্যন্তর না দেখে পলাতক, পলাতক হয়েই চললাম। অন্ধকার
নুড়ি কুড়োতে কুড়োতে, ফেরার চিহ্ন ভেবে ফেলতে ফেলতে
চললাম। কোথাও ছাপ পড়ে যায়, কোথাও লুকোই মুদ্রণ।
ভুসুকু পাদের ওই টিলা—দেখা যেতে থাকে। বৈগাই নদীর ধারে
কন্নকি নাম্নী নারী সংস্থার পতাকা ওড়ায়। এত পথ এত দিকে
গেছে—কোন্ পথ ধরি? কোন্ পথে বেশি লোক আসে?
টক ফল ফলে আছে সকল রাস্তায়। পথিক শেয়াল। ধরিতে পারি না
কোনও সুর, গলায় ওঠে না প্লুত সুর। সঙ্গিনীর গন্ধ শুঁকে শুঁকে
পার হবে গলাজল এমন নির্যাস তারা মাখেনি যে। ঝোপঝাড়
স্বভাব দর্শক। এই দিকে নরখাদকেরা? ওই দিকে খাদকেরা
নর নামে স্থিত? পালিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট নয় এই মাঠ।
এই মাঠে উদাহরণ যত—সিদ্ধ নিপাতনে

ঙ.

মনস্তাপে চলি গেল পথ, মনস্তাপে। বাহিরে যে অন্দরের ঘর—
ঘরে ঘরে অমঙ্গলপদ, পদান্তরে বাক্যে ফর্মালিন,
ভোগ করে আয়ুর জঞ্জাল। আচার্য! শস্যখেত—বিপুলা রসুই
পতঙ্গের ভাগ্য ভাসমান, পলাতকে দাও এক কবিরাজি ক্ষমা,
ক্ষমার ফলন কম, বিরুৎজাতীয়; আশুত বৃক্ষের কাছে ভিক্ষা চায়
লতা। এ পাতায় জমা ছিল পিরিতি আশ্বিন, এ পত্রে ছাপা
হল রক্তজবা, ঠাঁই—মনস্তাপে গামছা ডোরাকাটা, রাগ হলে রক্ত
উঠে যায়, উঠতে উঠতে উঠতে উঠতে যেখানে বিমান,
রক্তে মেঘে ধাক্কা লেগে কী পড়বে, বলো
কী পড়ে এমতাবস্থায়

শেয়ার করুন

Similar Posts

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *