নির্বাস – একটি সংকট অথবা দারুণ দোটানার গল্প – দেবাঞ্জলি ভট্টাচার্য

শেয়ার করুন

“গদির লড়াই চলুক যেখানে চলে/ হৃদয়ে লড়াই স্বাধীনতা স্বাধীনতা”— স্বাধীনতা এমন এক স্পর্শাতীত অনুভূতি যার জন্য সম্ভব করা যায় অনেক অসম্ভবকে। কিন্তু, স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে অনেক ত্যাগের ইতিহাস, যন্ত্রণার ইতিবৃত্ত। বাংলায় স্বাধীনতা-উত্তর কালে দেশভাগের স্মৃতি নিয়ে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে, যা দেশ-কালের বেড়াজাল অতিক্রম করে মানুষের অসহায়তাকে ফুটিয়ে তুলেছে। এ যাবৎ দেশভাগ সংক্রান্ত যে সমস্ত সাহিত্য বাংলায় লেখা হয়েছে, সেই ধারায় এক ভিন্নমুখী সংযোজন অমিয়ভূষণ মজুমদারের ‘নির্বাস’। এই উপন্যাসের প্রতি ছত্রে স্পষ্ট হয়ে রয়েছে স্বাধীনতাকামী মানুষের ছটফটানি, ছিন্নমূল উদ্বাস্তু মানুষজনের দৈনন্দিন গ্লানির ছবি।

নির্দিষ্ট একটি সময় এবং অবস্থার কথা বলেছেন অমিয়ভূষণ। অথচ গোটা উপন্যাসে একবারও সরাসরি তার উল্লেখ নেই। এমন উপন্যাস আগে পড়িনি যার মুখবন্ধে স্পষ্ট অস্বীকার করা হচ্ছে সেই অমোঘ সত্যকে, যা দিয়ে তৈরি হয়েছে উপন্যাসের কাঠামোটি। যে উপন্যাসের প্রতিটা শিরায় প্রবাহিত হয়েছে রাজনীতির রক্ত, সেই উপন্যাসের শুরুতে রয়েছে এমন উচ্চারণ—“এটা রাজনীতির উপন্যাস নয়।” বিমলা একবার বলেছেন, “রসিকতায় পাশ কাটিয়ে ভুবনবাবু!” আমার বলতে ইচ্ছে হয়, গল্প বলায় পাশ কাটিয়ে অমিয়ভূষণ বাবু। ঠিক যা বলতে চেয়েছেন তিনি, তাকেই অনুচ্চারিত রেখে অন্য কথার জাল বুনে বুনে স্পষ্ট করেছেন তাঁর অবস্থান, একান্ত রাজনৈতিক অভিব্যক্তি।

শুরু থেকে শেষ অবধি একাধিক ঘটনাক্রমের আবহে, উপন্যাসটিকে নানান সময়ে নানান দিক থেকে অনুমান করা যায় বলে মনে হয়। কখনও একে মনে হয়েছে আদ্যোপান্ত সম্পর্কের টানাপোড়েনের দলিল, আবার কখনো একটা ঘটনাবহুল সময়ের ইতিবৃত্ত। কিন্তু, সময় যত এগিয়েছে, উপন্যাসের চেহারা যত সাবলীল হয়েছে, তত দ্রুত ভেঙে গিয়েছে পরিচিত আদল। প্রাথমিকভাবে পাঠকের মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে এই উপন্যাস পড়ায় তাঁরই কোনো খামতি থেকে যাচ্ছে। কিন্তু, নিবিড় পাঠে দ্বন্দ্বের নিরসন হতে বাধ্য। কথাশিল্পের চেনা ছকটি এই উপন্যাসে ওলটপালট করে দিয়েছেন লেখক। উপন্যাসটি সম্পূর্ণ পড়লে যে চেহারাটি দাঁড়ায় তা স্পষ্ট করে দেয় যে বাংলা সাহিত্যের ধারায় এমন আঙ্গিক-ভাবনা অভিনব এবং চ্যালেঞ্জিং তো বটেই।

উপন্যাসের মধ্যে রাস্তার প্রসঙ্গ তাৎপর্যপূর্ণ। বলা বাহুল্য, এই উপন্যাস পড়াটাও একটা মনোরম যাত্রার সামিল। সেই পথ পেরোতে গিয়েই নির্বাস সম্পর্কে একটা মোহ জাতীয় কিছু জন্মেছে। জন্মেছে এই কারণে, এখানে উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই, আর নেই বলেই আরো বেশি ক’রে জানতে ইচ্ছে করে। এই উপন্যাসের প্রতিটা চরিত্রকে রাজনৈতিক বলে মনে হয়। শুধু চরিত্র কেন, প্রতিটা ঘটনার মধ্যেই সূক্ষ্মভাবে রয়েছে রাজনীতির অনুপ্রবেশ।

ধরা যাক মরণচাঁদের কথা! একজন সাধারণ জেলে কীভাবে যেন হয়ে উঠছে একদল বাস্তুহারা মানুষের নেতা। একদল মানুষ যাঁদের দেশ নেই, ঘর নেই, শুধু কাটিয়ে দেওয়ার মতো একটা জীবন আছে মাত্র তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরেকজন উদ্বাস্তু মানুষ! সোবাসের অপেক্ষা না করে হিরণের মৃতদেহের ওপর দিয়েই যখন গোটা দলকে নিয়ে সে বেরিয়ে পড়েছে অন্যত্র, তখন তার চোখ জলে ঝাপসা হয়েছে, তবুও সে তার সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি! দারুণ অসহায়তার মধ্যেও নিজের অবস্থানে স্থিত থেকেছে। একজন দাদার, একজন ক্ষুদ্রস্বার্থ-সম্বল মানুষের গণ্ডি পেরিয়ে মরণচাঁদ প্রমাণ করেছে, বেঁচে থাকার জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয়ের বড়ো দরকার। জীবনের এই রাজনীতিতে সে-ও অংশগ্রহণ করেছে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। কারণ সেই মুহূর্তে ওটিই তার বেঁচে থাকার একমাত্র বিকল্প রাস্তা।

সৌম্য বা মালতী যেখানে সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত, সেখানে আরও বেশি করে বলতে ইচ্ছা হয় ভুবনবাবুর কথা। ভুবনবাবু সেই মানুষজনের প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন গোটা উপন্যাস জুড়ে, যাঁদের ছাপোষা বলে দূরে সরিয়ে রাখা হয় সবসময়। অথচ, মধ্যবিত্ততা বাদ দিলে এই মানুষদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেই উত্তর পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। একজায়গায় বিমলা রাজনীতির প্রসঙ্গে আসায় ভুবনবাবু সরাসরি তাঁকে বলছেন, “মালতীর খোলামেলা কথা আমাদের মুখও আলগা করে দিয়েছে দেখছি। ভাগ্যে কেউ শুনছে না।” এই ‘আমাদের’ শব্দটা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। নিজের অবচেতনে চলতে থাকা ধারণার ইঙ্গিত অন্যের মুখে স্পষ্ট শুনলে তবেই তো এমন উচ্চারণ করেন মানুষ! আর গোটা বাক্যে সচেতনতার যে ছদ্ম-আবরণ দেখি তা যে নিতান্তই মধ্যবিত্ত খোলস, তা ভুবনবাবুকে আরও নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করলেই স্পষ্ট হবে।

বিতর্কিত অনেক কিছু বলার আছে বলেই এবং সমসময়ে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে জেনেই কি ভুবনবাবু বিমলাকে এমন কথা বলেননি? তিনি যে দেশ-কাল-রাজনীতি-অর্থনীতি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তা তো তখনই বোঝা যায়, যখন তিনি বিমলাকে ফড়ে, আড়তদার এবং শহরের সঙ্গে হাটে জিনিসের দামের ফারাক সম্বন্ধে সুনিপুণ বর্ণনা দেন। যার বলার ছিল অনেক, সে সবচেয়ে কম বলেছে। এই মিতবাক মানুষটিকে কি পাঠকের রাজনৈতিক বলে মনে হওয়া উচিৎ নয়, সঙ্গে প্রচণ্ড উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও? আমার ধারণা, বিমলা চরিত্রটিকে সার্বিক ভাবে পরিপূর্ণ করবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা রাখে এই চরিত্রটি।

সোদামুনি, মরণচাঁদের মাসি, লতা, মোহিত, সুরথ, বেঞ্জামিন এঁদের ভূমিকা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। এঁরা হলেন উপহারের ওপরের রঙিন মোড়কের মতো। রঙিন মোড়ক ছাড়া যেমন একটি উপহার অসম্পূর্ণ ঠিক তেমনই এই উপন্যাসের কাঠামোটিকে ঋজু করে ধরে রাখতে এই চরিত্রগুলির নির্মাণ। যে রাজনৈতিক সংকট বা জৈবিক চাহিদা এই উপন্যাসের ভিত মজবুত করেছে, তা এই চরিত্রগুলিকে ছাড়া সম্ভব হত না। না-হলে কে এক রাজরোগী মোহিত, যে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সেই শহরেই থাকতে চায়, যেখানে থাকলে তার আখেরে কোনো লাভ নেই, তাকে অমিয়ভূষণ কেনই বা ঠাঁই দিতে যাবেন তাঁর উপন্যাসে! কেন সোদামুনি এতবার আসে বিমলার কাছে! শুধুই দেখা করতে? তার এত ঘন ঘন আগমন কি তার দ্বিধা, হতাশা, গ্লানির প্রকাশ নয়! উদ্বাস্তু শিবিরের অন্তর্বর্তী রাজনীতি সুরথ ছাড়া আর কাকে দিয়ে দেখাতেন ঔপন্যাসিক? স্বয়ং মরণচাঁদের মাসিই কি উদ্বাস্তুদের জীবন, জীবিকার বিস্তারিত বিবরণের প্রতিভূ নন?

যে দুটি চরিত্রকে তুলনামূলকভাবে সমমর্যাদার বলে মনে হয়, তাঁদের নিয়ে একসাথে আলোচনা করে দেখি, সুবিচার করা যায় নাকি! ক্ষমতা, প্রাতিষ্ঠানিকতার দর্প, এসবেরও তো একটা রাজনৈতিক চেহারা থাকে! তেমনই কিছু প্রেক্ষিত থেকে ফাদার ফিলিপট ও অজয় এই দুটি চরিত্রের মূল্যায়ন করতে চাইছি। একজন চার্চের ফাদার, অন্যজন উদ্বাস্তু শিবিরের কর্তা। ধর্ম ও রাজনীতির পরাকাষ্ঠা হয়ে এসেছে দুজনেই। প্রয়োজন মতো মানুষের মুখের কথা, সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছেন তাঁরা। আমার তো মনে হয়, বিমলা যে রাজনীতির সুতো ধরে টানার কথা বলেছে সেই সুতো থাকে যাঁদের হাতে অজয় আর ফাদার ফিলিপট তাঁদেরই প্রতিনিধি। খুব সন্তর্পণে অমিয়ভূষণ সেই কথা, সেই প্রসঙ্গগুলোই আনেননি এই উপন্যাসে, যা এসে গেলে উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারত নির্বাসের আসল রূপ। অথচ, এই প্রতিটা চরিত্র আর ঘটনাক্রমের মধ্যে দিয়েই অল্প অল্প করে এগিয়েছেন নিজের বক্তব্যের দিকে।

খেয়াল করতে বলব, আমি কিন্তু, প্রাথমিকভাবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করব এমনটা কোথাও বলিনি। বলতে চেয়েছিলাম একটা সংকট অথবা দোটানার গল্প। কিন্তু, আমার মনে হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে যেতে গেলে রাজনীতির জলে পা ডোবানো অপরিহার্য।

অবাক হওয়াই স্বাভাবিক, এত কথার মধ্যে একবারের জন্যও সরাসরি বিমলার প্রসঙ্গ টানিনি। টানিনি, কারণ, বিমলা এককভাবে একটি আলোচ্য বিষয় আমার মতে। বিমলাই এই উপন্যাসের ভরকেন্দ্র। তার যাতায়াত থেকে শুরু করে স্বগতোক্তি, সিদ্ধান্ত থেকে মতামত সবটাই অমিয়ভূষণের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক অভিব্যক্তি। রেঙ্গুন থেকে বজ্রযোগিনী, হলুদমোহন ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পের উলটোদিকের রাস্তায় ভুবনবাবুর সাথে এক বাড়িতে তার থাকা, চা বাগানে নিজের একক যাপন, আবার ফিরে আসা, আবার দূরে যাওয়া, যে ক্রমেই এগুলোকে সাজানো যাক না কেন, ধ্রুবক হয়ে থাকছে একমাত্র এই কথাটাই যে, ছিন্নমূল মানুষের যাওয়ার জায়গা যতই থাক, নিজের বলে সেভাবে থাকে না কিছুই! ভিটেহারা হওয়ার সবচেয়ে বড়ো যন্ত্রণা বোধহয় এটাই যে, সারাজীবন মানুষকে দ্বিধা বয়ে বেড়াতে হয়। এটা না ওটা? এদেশ না ওদেশ? এমন অনেক প্রশ্নের ভিড়ে হারিয়ে যায় তাঁদের ‘স্ব’।

নিজের বলতে যাঁদের পড়ে থাকে শুধু দ্বিধা আর গ্লানির ইতিহাস, তাঁদের চেয়ে বড় সংকটে আর কেই বা থাকে! এ তো শুধু বিমলার গল্প নয়! যেখানে যে ঘরছাড়া, এ তো তারই গল্প, তারই সংকটের বিবরণ! তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার পরিণাম, উদ্বাস্তু সমস্যার দীর্ঘায়িত ছবি, এসব একটানা দেখানো বোধহয় অমিয়ভূষণের লক্ষ্য ছিল না। ধারাবাহিক জীবনের ছন্দে টান পড়লে যেভাবে মানুষের চিন্তা পদ্ধতিতে বাধা পড়ে, এক কথা ভাবতে ভাবতে অন্য কথায় গিয়ে পড়ে সে, ঠিক সেভাবেই বোধহয় তিনি দেখতে ও দেখাতে চেয়েছিলেন বিষয়টাকে। বাস্তুহারা মানুষকে যেভাবে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে এখান থেকে ওখান, এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়, সেভাবেই এই উপন্যাসে এসেছে একাধিক খণ্ডদৃশ্য। যেহেতু বিমলাকেই এই উপন্যাসের ভরকেন্দ্র বলে আমরা মনে করছি, তাই তার জীবনের নানান সময়, নানান ঘটনাই বারবার ফিরে ফিরে এসেছে। আর যতবার দৃশ্যান্তর হয়েছে ততবারই কি এই প্রশ্নটাই বেজে ওঠেনি, “এর শেষ কোথায়?”

বিমলার থামতে না পারা, সবসময় একটা দোটানার মধ্যে থাকা, অবচেতনে বারবার নিজের অস্তিত্ব সংকটের শিহরণ অনুভব করা—দেখানোই অমিয়ভূষণের উপজীব্য ছিল, এমনটা বললে কি অত্যুক্তি হবে? ভৈরবের ঘটনার স্মৃতি তাকে যতটা তাড়িয়ে বেরিয়েছে, ততটাই অসহায় তো করে তুলেছে ক্যাম্পের জীবনের স্মৃতি! ভুবনবাবুর সাথে সংসার না করতে চাওয়া, আর সোদামুনিদের বিপন্নতার ভাগীদার না হতে পারার আপশোশ কি তাকে আলাদা রকমের যন্ত্রণা দিয়েছে? আমার তা মনে হয় না! আসলে,এই সবটাই একটিমাত্র ঘটনার অভিঘাতে হয়ে চলা প্রতিঘটনা। আমার ধারণা এই যে প্রতিঘটনাগুলি, এগুলিকে দিয়েই অমিয়ভূষণ ধরতে চেয়েছিলেন মূল ঘটনার আদলটিকে। বিমলা তাই বাংলাদেশের নন, সম্ভবত উদ্বাস্তু সমস্যারই প্রতীকস্বরূপা।

গোটা উপন্যাসটি জুড়ে যে সংকটের ছবি দেখি, আমার কাছে তা রাজনৈতিকই। যে রাজনীতি বাস্তুহারাকে বাস্তু ফিরিয়ে দিতে পারে না; কিন্তু দ্বিধা, গ্লানি, ক্লান্তি আর পালিয়ে বেড়ানোর ইতিহাস এনে দিতে পারে। উপন্যাসটির শুরুতেও আমরা কোনো কারণ ছাড়াই বিমলাকে ক্যাম্পের কাছে যেতে দেখি, আবার শেষের দিকেও দেখি অভিমন্যুর হাত ধরে বাসে উঠে, কিছুদুর গিয়ে নেমে আসতে। গোটা উপন্যাসটি পড়ার পরে বুঝি, কোনোটাই অকারণ নয়। দারুণ কোনো দোটানার মধ্যে থাকলে কারণ আর অকারণের মধ্যের যুক্তিগুলো ঝাপসা হয়ে ওঠে, ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে আসে স্থির বিশ্বাসের জায়গা। ‘টু বি অর নট টু বি’র সেই অমোঘ দোটানারই ছায়া ঘিরে রয়েছে নির্বাসকে।

আসলে ভিন্নতর দ্যোতনায় ‘নির্বাস’ একটি সংকটের কথা বলে যা রাজনীতির শরীরে নির্মিত একটি বিশেষ সময়ের দলিল। অথবা বলা যায়, ‘নির্বাস’ আসলে দোটানার গল্প, যা মানুষের অস্তিত্বের ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু অমিয়ভূষণ যে একজন দারুণ কথাশিল্পী এবং ‘জীবনের আর্টিস্ট’ও বটে তা নিয়ে সন্দেহের আর কোনো অবকাশ থাকে না বোধহয়। অমিয়ভূষণ এমন এক কথাশিল্পের রূপকার যে কথাশিল্প মানুষের টুকরো টুকরো অব্যক্ত যন্ত্রণাকে ভাষার আদলে একটা চেহারা দেন। সেই চেহারায় সমকাল, মানুষের ছাপোষা জীবন তার সমস্ত আবেদন নিয়ে ধরা দেয়। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন ওঠে, অমিয়ভূষণ বা ‘নির্বাস’ যে পাঠ-প্রাধান্য বা আলোচনার যোগ্য ছিল— তা কি বাস্তবায়িত হয়েছে? হয়নি বোধহয়! কেন হয়নি— সে জবাব লুকিয়ে আছে নির্বাসের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের মধ্যেই!

শেয়ার করুন

Similar Posts

One Comment

  1. আমার নাম কুনাল মহন্ত। আমি অসম বঙাইগাঁও-এ থাকি,
    আমার কলেজের Assignment Project করতে দেবাঞ্জলি ভট্টাচার্যের থেকে অনেক সাহায্য পেলাম।
    আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *