বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কালজয়ী কিছু গণসঙ্গীত – প্রবীর মিত্র

শেয়ার করুন

সে ছিল এক বড়ো অশান্ত সময়। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ‘আওয়ামী লিগ’ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানের সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে গড়িমসি করতে থাকে কারণ পশ্চিম পাকিস্তান চেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানকে নিজের হাতের পুতুল করে রাখতে। এই ভাবেই আস্তে আস্তে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে বিভিন্ন জায়গায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল শুরু করে আমজনতা আর এইদিনই পল্টন ময়দানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন শেখ মুজিবর রহমন।  স্বাধীনতাকে পাখির চোখ করে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার তৎকালীন রমনা রেসকোর্স ময়দানে বহু নিপীড়িত মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর একটি কালজয়ী ভাষণ বাংলাদেশের হতাশাগ্রস্ত নিপীড়িত জনগণের কাছে একটা শক্তি ও প্রেরনা যোগায়।  সেই আগুনঝরানো উদ্দীপনা জাগানো ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ভাষণ ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ‘ইউনেস্কো’ অন্যতম ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই ভাষণের একটি বিশেষত্ব ছিল যে এটি একটি সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিত বক্তৃতা। কোনোরকম কাগজ বা নোট ছাড়াই তাঁর মুখনিঃসৃত এই ভাষণ প্রকাশ পেয়েছিল একেবারে তাঁর হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে।  ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ মানুষের মতো অধিকার নিয়ে বাঁচতে চায়’,  ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’, ‘সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’, ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরও রক্ত দিব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বই ইনশাআল্লাহ্‌। আমাদের এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা, জয় বাংলা’।গেরিলা যুদ্ধের রণকৌশল ছিল এই ভাষণে।  আর সত্যিই এই ভাষণের পর বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরই পরিণত হয়েছিল এক একটি দুর্গে। প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠেছিল এক একটি যোদ্ধা।   এরপর ২৫শে মার্চ পাক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে একটি অভিযান চালায় এবং গভীর রাতে আন্দোলনের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে।  গ্রেফতার হওয়ার আগে অর্থাৎ ২৬ মার্চের ভোরে মুজিবর ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) একটি ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।  ২৭শে মার্চ চট্টগ্রামের একটি বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাকে মান্যতা দেন।  ততদিনে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বাত্মক হিংসা, গণহত্যা, মা বোনদের উপর অকথ্য অত্যাচার, ধর্ষণ। আওয়ামী লিগের অন্যতম প্রধান নেতা গ্রেফতারি এড়াতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। গোপনে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের পরিকল্পনা করতে থাকেন।  ৩০ মার্চ তিনি ফরিদপুর-কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকেন এবং ভারত সরকারের সঙ্গে এই নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেন।তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস পেয়ে তাজুদ্দিন কুষ্টিয়া সীমান্তে এক অধিবেশন ডাকেন।  ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লিগের নেতারা সেখানে হাজির হন। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী সার্বভৌম অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়। তাজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানো হয়। এরপর ১৭ ই এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বৈদ্যনাথতলার এক আমবাগানে মন্ত্রিপরিষদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ হয় মুজিবনগর। পরবর্তীকালে এই মন্ত্রীপরিষদই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়ের কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। তারপর দীর্ঘ গণআন্দোলনের মাধ্যমে বহু রক্ত, জীবনের খেসারত দিয়ে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত স্বাধীন বিজয়ী বাংলাদেশের পথ চলা শুরুর দিনটি হল আজ থেকে ৫০ বছর আগের ঠিক  এই দিনটিতেই  অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১।  আজকের দিনটি তাই ‘বাংলাদেশের বিজয় দিবস’ হিসাবে সার্থক। সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিসেনানীদের পাশে সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ভারত।  বাংলাদেশের পতাকাহাতে রেসকোর্স ময়দানে শতসহস্র মানুষের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জয় ভারত’, ‘জয় ইন্দিরা’ ইত্যাদি শ্লোগানে আকাশ ভরিয়ে তোলা, ভারতীয় সাংবাদিকদের আলিঙ্গন, অস্ত্রত্যাগ করা পাক সেনাদের কড়া পাহারায় ব্যারাকে ফেরা যদি ও পারের স্মরণীয় দৃশ্য হয় তাহলে এপারেও আমজনতার আবেগ কিছু কম ছিল না।  আবেগে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন দুপারের লেখক-কবি-শিল্পী-চিত্রশিল্পী থেকে জনতা।  পরের দিন অর্থাৎ ১৭ই ডিসেম্বর তারিখ ছিল অমাবস্যা, তাই সেদিন সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে অকাল দীপাবলির উৎসবের সাক্ষী ছিল কলকাতাবাসী। এই সমস্ত ঘটনা দীর্ঘকাল আলোড়িত করেছে দুই বাংলার শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতকে।  কবিতা গান নাটক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের সংগ্রামী ও আবেগবহুল ঘটনা।  ঘটনাচক্রে এইবছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমনের শততম জন্মবার্ষিকীর আলোতে একই সঙ্গে উদ্ভাসিত বাংলাদেশ, এ যেন এক অদ্ভুত সমাপতন।

সেই আগুন ঝরানো, উদ্দীপনা জাগানো, ইতিহাসপ্রসিদ্ধ ভাষণ

সেই সময় বেশিরভাগ কবিতা, নাটক, গান, সাহিত্য, চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হত মুক্তিযুদ্ধের থিম।  শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মনে ‘বাংলাদেশের’-এর স্বাধীনতা বেশ প্রভাব ফেলেছিল। বেশ কিছু গানের মধ্য দিয়ে তিনি শ্রদ্ধার সাথে বরণ করেছিলেন এই স্বাধীনতাকে।  ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি উৎসর্গ করে তিনি রেকর্ড করেছিলেন সেই বিখ্যাত গান, ‘মা গো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে।’ গানের কথা লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং সুর দিয়েছিলেন হেমন্তবাবু নিজেই। গানটি তিনি ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময় দেশের সেনাবাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আকাশবাণীতে গেয়েছিলেন পরে সেটা উনি ১৯৭১ সালে রেকর্ড আকারে প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের গানটি অনুপ্রাণিত করেছিল। এই রেকর্ডের অপরপিঠে তিনি গাইলেন ‘এ দেশের মাটির পরে অনেকদিনের অনেক জাতির লোভ আছে।’  এইপ্রসঙ্গে আরও একটি গানের কথা মনে পড়ছে, লিখেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবাদী কবি আবিদুর রহমান যিনি একজন মুক্তিসেনানীও ছিলেন। হেমন্তবাবু তাতে সুর বসিয়ে গাইলেন, ‘বাংলার দুর্জয় জনতা, মুজিবের মন্ত্রের দীক্ষায়, ঝঞ্ঝার বেগে আজ ছুটছে’।  আরও একটি হৃদয়মর্মী গান ছিল, ‘হরিণের মতো তাঁর সুমধুর চোখ দুটি মেলে’। হেমন্তবাবুর গাওয়া এই গানের কথা ও সুর দিয়েছিলেন দিলীপ সরকার।  সেইসময় বাংলার মা বোনেদের অনেক অত্যাচার, লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছিল পাক সেনাদের হাতে। এই গানের কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির কথা, সেই অন্ধকার দিকগুলির কথা, এই স্বাধীনতা কতনা রক্তপাত, কত শত মানুষের মান-ইজ্জত বিনিময়ে লাভ করা।

১৯৭১-এ ঢাকা বেতারকে কব্জা করে ‘রেডিও পাকিস্তান’ অনবরত মুক্তিযোদ্ধাদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করত নানারকম বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচার করে। ঠিক সেই সময় সেই অসত্য প্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণিত করত ‘আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র’। সেই সময় কবি শঙ্খ ঘোষ আকাশবাণীর আমন্ত্রণে পড়েছিলেন একটি কথিকা, “সামরিক অত্যাচার প্রথমেই ছুটে যাচ্ছে যেকোন বুদ্ধিজীবীর দিকে, খুব জানতে ইচ্ছে করে বাংলাদেশের কবিরা এখন কে কোথায় আছেন? তাঁরা কি সময় মতো পশ্চাৎপটে সরে এসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন করছেন কোনও? গ্রাম গ্রামান্তরকে উদ্বোধিত করার জন্য লিখছেন নতুন কোন কবিতা?”

‘শোন একটি মুজবরের থেকে’ গানটির রেকর্ড

১৯৭১ এর ২৫শে মে বালিগঞ্জে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রকে পাশে নিয়ে চালু হয় ‘অস্থায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’।  দুই কেন্দ্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে লাগল।  যেমন করে হোক মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে হবেই। “জয় বাংলা-বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে” গানটি উক্ত বেতারকেন্দ্রের সূচনা সঙ্গীত হিসাবে রোজ সকালে নিয়মকরে বাজানো হত, পাশাপাশি সেইসব ভয়াবহ দিনগুলোয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণে সাহস যোগাতে রক্ত টগবগিয়ে ওঠা সংবাদ, গান, কবিতা, ভাষণ প্রচার করা হত।  সেই সময় থেকে আকাশবাণী কলকাতার পাঁচ মিনিটের সময়সীমার একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সংবাদ পরিক্রমা’।  প্রধানত প্রণবেশ সেন-এর লেখা ও দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠের উদাত্ত পাঠে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে জীবন্ত ছবি করে তুলত সেই অনুষ্ঠান।  তার সাথে তাল মিলিয়ে চলত আর একটি অনুষ্ঠান ‘সংবাদ বিচিত্রা’।  এই অনুষ্ঠানের প্রধান কারিগর ছিলেন উপেন তরফদার।  বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনাবহুল জায়গা থেকে সরাসরি প্রতিবেদন তুলে সম্প্রচারিত হত বেতারে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একেবারে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরাসরি খবর তুলে আনতেন এই অনুষ্ঠানের প্রতিবেদকরা।  প্রণবেশ সেন, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, পঙ্কজ সাহা, উপেন তরফদারদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ ছিল বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের, তাঁরা নিজেরাও বহুবার গেছেন প্রতিবেদনের তাগিদে। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ সরকার এঁদের বিশেষ সন্মানে সন্মানিত করেছিলেন। শুধু সংবাদ প্রচারই নয়, আকাশবাণীর মাধ্যমে শ্রোতাদের কানে পৌঁছে যেত গান, কবিতা ও সাঙ্কেতিক ভাষায় কৌতুকীর মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সব খবর।  আর এই রকমই একটি অনুষ্ঠানে প্রচারিত একটি গান

শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের
ধ্বনি প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রনি
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

যা সাড়া ফেলে দিয়েছিল কারণ এই গানের ফাঁকে ফাঁকে শোনা যাচ্ছিল বঙ্গবন্ধুরসেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণ।  গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় গানটি নিজের সুরে গেয়েছিলেন অংশুমান রায়।  কিছুদিন পরে এই গানটি অংশুমানবাবু হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানি থেকে রেকর্ড করার ডাক পান।  বলাই বাহুল্য ৪৫আরপিএমের রেকর্ডটির এই গান দুই বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত করে দিয়েছিল এবং আজও সমান জনপ্রিয়। রেকর্ডের অপরপিঠে গানটির একটি ইংরেজি ভার্সনও ছিল, ‘A Million Mujiburs Singing’ এবং সেটারও অনুবাদক ছিলেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও অংশুমান রায়ের সাথে এই গানের সহশিল্পী ছিলেন করবী নাথ।  রেকর্ডে এইগানের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন দিনেন্দ্রচৌধুরী যিনি তৎকালীন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসঙ্গীতের অধ্যাপক এবং সেইসময়ের একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিক্ষক।

বাঁদিক থেকে: অংশুমান রায়, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, অমিতাভ নাহা, দিনেন্দ্র চৌধুরী।

একদা উত্তর কলকাতা নিবাসী আয়কর বিভাগের একজন সাধারণ চাকুরিজীবী গোবিন্দ হালদার (১৯৩০-২০১৫) আজ বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিস্মৃত। অথচ আজও বাংলাদেশে উনি একজন সুপারহিরোর মতো সন্মান পান। ওনার লেখা গান আজও বাংলাদেশে কোথাও না কোথাও প্রতিদিন বাজানো হয় তার কারণ তাঁর লেখনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেছিল।  সেইসময়ে তাঁর লেখা বিখ্যাত দুটি গান, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না…’  এবং ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি’ যা ২০০৬ সালে বিবিসি শ্রোতাদের চাহিদার বিচারে ২০টি শ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় পঞ্চম ও সপ্তম স্থান অধিকার করে।  তালিকার প্রথম স্থানে ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করার কিছু পরেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় একযোগে বাজতে থাকে রবি ঠাকুরের গান ও গোবিন্দ হালদারের এই গানদুটি।  পাশাপাশি তখন কলকাতায় বেতারকেন্দ্রে ও বিভিন্ন জায়গায় লাউডস্পিকারেও বেজেছিল রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং গোবিন্দ হালদারের গান ও সলিল চৌধুরীর কালজয়ী গান, ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা’, ‘ধন্য আমি জন্মেছি মা তোমার ধূলিতে’, ‘মানবোনা এব ন্ধনে’ , ‘ও আলোর পথযাত্রী–আহ্বান শোন আহ্বান’। গানগুলি সলিল চৌধুরী অনেক আগে রেকর্ড করলেও সেই দিন এই গানগুলি একটা বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল। এছাড়াও বেজেছিল অংশুমান রায়ের সেই বিখ্যাত গান ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’। আরও একটি গানের কথাও মনে পড়ছে, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না, আমি গাইব বিজয়েরই গান’, গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন ও গানের কথা লিখেছিলেন নজরুল ইসলাম বাবু। সেদিকার নবীন ও আজকের প্রবীণতম ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই সেদিনের স্মৃতি ভোলেননি আজও। গোবিন্দবাবুর লেখা অন্যান্য গানগুলির মধ্যে, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘চলো বীর সৈনিক এগিয়ে চলো’, ‘হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার পাক সেনানী’ ইত্যাদি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।  কবিতা-সাহিত্য অন্তপ্রাণ প্রচারবিমুখ এই ব্যক্তি তাঁর জীবদ্দশায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান লিখেছিলেন যেগুলি দেশপ্রেম ছাড়াও রাগাশ্রয়ী, পল্লী, বাউল, কীর্তন, শ্যামাসংগীত নির্ভর। তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল তাঁর।  বাংলাদেশ সরকার এই কিংবদন্তী গীতিকারকে ২০১২ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সন্মাননা’ প্রদান করেন ও শেষ জীবনে খুব অর্থনৈতিক সঙ্কটে থাকার কারণে পড়েছিলেন কঠিন অসুখে।  বাংলাদেশের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ তৎপরতায় বাংলাদেশ সরকার তাঁর যাবতীয় চিকিৎসার খরচ বহন করলেও ১৭ই জানুয়ারী ২০১৫ তারিখে তিনি উত্তর কলকাতার মানিকতলায় একটি হাসপাতালে মারা যান আর বলা বাহুল্য সেদিন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের এক প্রকৃত বন্ধুকে হারানোর জাতীয় শোক দিবস পালন করেছিল ।        

গোবিন্দ হালদার

     এই লেখা চলাকালীন এক বন্ধুর পরামর্শে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত এবং বিশ্বজিৎ প্রযোজিত ও অভিনীত ‘দুর্বার-গতিপদ্মা’ (১৯৭১)  তথ্যচিত্র দেখার সুযোগ হল। এক নির্মম, পাশবিক যুদ্ধের সমকালীন পরিবেশের খণ্ডচিত্র এই তথ্যচিত্রে ঋত্বিক ঘটক তুলে ধরেছেন। এই তথ্যচিত্রে কলকাতার পাশাপাশি বোম্বাইয়ের বহুচলচ্চিত্র অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পীকে দেখা গেছে। রাজেশ খান্না, শচীন দেববর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সলিল চৌধুরী, অভিনেতা দিলীপকুমার প্রমুখদের গাওয়া গান ও সংক্ষিপ্ত ভাষণ এই তথ্যচিত্রের বিশেষ আকর্ষণ। নার্গিস দত্ত ও প্রযোজক বিশ্বজিৎ স্বয়ং অভিনয়ও করেছিলেন। শচীন দেববর্মনের কণ্ঠে ‘আমি টাগডুম টাগডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’, মান্নাদে’র কণ্ঠে ‘শুনো শুনো ভাইসব হিন্দু-মুসলমান’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘অবাকপৃথিবী’ ইত্যাদি গানগুলির লাইভ রেকর্ডিং এই তথ্যচিত্রের সম্পদ। এছাড়াও এই তথ্যচিত্রের জন্য নেপথ্যে হেমন্তবাবু গেয়েছিলেন ‘আমার সোনারবাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, যা আমাদের কাছে এক পরমপ্রাপ্তি। বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষের শিল্পীরা কীভাবে অর্থসংগ্রহ করে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলেন তার ফুটেজও পাওয়া যায় এই তথ্যচিত্রে।

সলিল চৌধুরির রেকর্ডের কভার
সলিল চৌধুরির রেকর্ডের ইনলে

সলিল চৌধুরীর কথায় ও কানু ঘোষের সুরে মান্না দে রেকর্ড করেন দুটি গান। একটি হল ‘সাড়ে সাতকোটি বাঙালির হে বিধাতা তোমায় নমস্কার’ ও ‘ও ভাই ভাইরে চল ঘরে ফিরে যাই’। আরো দুটি গান তৈরি হয়েছিল সেই সময়,গান দুটি হল ‘এই দেশ এই দেশ আমার এই দেশ’ আর ‘ফিরে আয় ফিরে আয়’, মান্না দে এবং সবিতা চৌধুরীর দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া। এই দুটি গান আকাশবাণী থেকে রম্যগীতি হিসেবে প্রচারিত হয় এবং পরে এগুলি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি ছায়াছবি ‘রক্তাক্তবাংলা’(১৯৭২)-তে ব্যবহৃত হয়।  সেই সময় বাংলাদেশকে অর্থ সাহায্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বহু সঙ্গীতশিল্পী ভারতের বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠান করতেন। ভারতের পশ্চিমাংশের বহু প্রদেশে বহু অনুষ্ঠানে একটি হিন্দিগান ‘জানেওয়ালে সিপাহী সে পুঁছো’ মান্না দে খুব গাইতেন। সলিল চৌধুরীর সুরে এই গানটি শিল্পী ‘উসনে কাঁহাথা’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে গেয়েছিলেন ১৯৬১ সালে। সমকালীন সময়ে ভারত-চিন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে এই গান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ছিল, পরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জনপ্রিয় হয়। কলকাতার শহীদ মিনারের পাদদেশে একটি মুক্তিযুদ্ধের জনসভায় সলিল চৌধুরীর সুরে দেবব্রত বিশ্বাস গাইলেন, ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা আমার প্রতিরোধের আগুন’, গানের প্রত্যেকটি লাইন ছিল প্রাণবন্ত ও মরণকে জয় করার মন্ত্র।  এছাড়াও আরও কয়েকটি গানের একটি সংকলন রেকর্ড আকারে প্রকাশ পায় যেমন মুস্তাফিজুর রহমানের কথায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘ভেবোনা গো মা তোমার ছেলেরা হারিয়ে গিয়েছে পথে’, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় শ্যামল মিত্র ও আরতি মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘তোমাদের উড়িয়ে দিলাম’, আবিদুর রহমানের কথায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘ওরা দুটি পাখির মতো’, আব্দুল গফফর চৌধুরীর কথায় নির্মলেন্দু চৌধুরী ও বনশ্রী সেনগুপ্তর গাওয়া ‘শহীদ মিনার ভেঙেছ তোমরা’, মহম্মদ মোসাদ আলির কথায় সমবেত কণ্ঠে ‘বলো বাঙালির জয়’, গৌরীপ্রসন্ন’র কথায় হেমন্ত-কণ্ঠে ‘এদেশের মাটির ‘পরে’, নির্মলেন্দু চৌধুরী ও বনশ্রী সেনগুপ্তর গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু ডাকে রে’ এবংশ্যামল মিত্রর গাওয়া ‘আমরা সবাই বাঙালি’। গানগুলির সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের সঙ্গীত বিভাগের প্রধান তথা বিখ্যাত সুরকার সমর দাস। প্রতিটি গানই ছিল এককথায় অনবদ্য।

অন্যদিকে পণ্ডিত রবিশঙ্করও চুপ করে বসেছিলেন না। ১৯৭১-এর ১লা আগস্ট বিটলগ্রুপের গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন, তবলাবাদক আল্লারাখা ও পণ্ডিত আলি আকবরকে নিয়ে সুদূর নিউইয়র্কের ম্যসিডন স্কোয়ার গার্ডেন-এ আয়োজন করলেন ‘The Concert for Bangladesh’ নামে একটি চ্যারিটি শো-এর। বাংলাদেশের কঠিনসময়ের কথা চিন্তা করে এনাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন বিটলস-এর ড্রামার রিঙ্গো স্টার। এছাড়াও বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, জোয়ান বায়েজ, বিলি প্রিস্টন, লিওন রাসেল ইত্যাদি দুনিয়ার তাবড় তাবড় সব রকস্টাররা। কনসার্টের প্রথম ভাগে পণ্ডিত রবিশঙ্কর সেতারে বাজিয়েছিলেন একটি চিরাচরিত বাংলা ধুন এবং তাঁর সাথে যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন তবলায় পণ্ডিত আল্লারাখা ও পণ্ডিত আলি আকবর খান।  এরপর জর্জ হ্যারিসন নিজের লেখা একটি গান গেয়েছিলেন, “Although I couldn’t feel the pain, I knew I had to try, Now I’m asking all of you to help us save some lives, Bangladesh, Bangladesh, Where so many people are dying fast, and it sure looks like a mess, I have never seen such distress”, সঙ্গে গলা মিলিয়ে সঙ্গত করেছিলেন জোয়ান বায়েজ, বব ডিলান গিটার বাজিয়ে গাইলেন তাঁর সেই বিখ্যাত গান, “How many roads must a man walk down Before you call him a man?… the answer is my friend blowing in the wind”, “It Takes a Lot to Laugh, It Takes a Train to Cry,” “Love Minus Zero/No Limit,” “Just Like a Woman” and “Mr. Tambourine Man”। সেদিন প্রায় চল্লিশ হাজার দর্শক প্রত্যক্ষ করেছিল হ্যারিসন ও ডিলানের এক ঐতিহাসিক যুগলবন্দী।  এই কনসার্টটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এর থেকে প্রাপ্ত প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্গতপীড়িত মানুষদের জন্য দান করা হয়েছিল।   

কনসার্ট ফর বাংলাদেশ -এ জর্জ হ্যারিসন ও বব ডিলান

   

অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে দীর্ঘ ন’মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১-এর আজকের দিনে (১৬ই ডিসেম্বর) ১৯৭১- এর ১৬ই ডিসেম্বরে বিকেলে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে  বাংলাদেশ পেল তার আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের স্বাধীনতা এবং সেদিন বিজয় দিবসের রাতে প্রণবেশ সেনের লেখনীতে ‘সংবাদ পরিক্রমা’ অনুষ্ঠানে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় উদাত্ত কণ্ঠে পাঠ করেছিলেন, “আমি স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের সংগ্রামী, আমার সাথে তাই বিরোধ নেই পশ্চিম পাকিস্তানের কত কোটি মানুষের যারা আমারই মতো স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতার – গণতন্ত্রের”।

পুনশ্চঃ-  শেষ করার আগে একটু আলোকপাত করতে ইচ্ছে করছে ১৯৭১-এ কলকাতার ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের খবর। রঙ্গনা থিয়েটার নান্দীকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় করেছিল ‘তিন পয়সার পালা’ নাটকটি, মিনার্ভা থিয়েটারে পি.এল.টি.-এর উৎপল দত্ত করছিলেন ‘অঙ্গার’ নাটকটি,  রঙমহলে অভিনীত হচ্ছিল মনোজ মিত্রের নাটক ‘বাবা বদল’, বিশ্বরুপা থিয়েটার-এ নিয়মিত অভিনীত হচ্ছিল বিমল মিত্রের লেখা নাটক ‘বেগম মেরী বিশ্বাস’। অন্যদিকে বিভিন্ন সিনেমাহলে রমরমিয়ে চলছিল দেবানন্দের ‘জনি মেরা নাম’, রাজেশ খান্না-আশা পারেখ জুটির ‘আন মিলো সাজনা’, ‘কটি পতঙ্গ’, সঞ্জীবকুমারের ‘খিলোনা’, গুলজার পরিচালিত ছবি “মেরে আপনে” যেটি উনি তপন সিনহা পরিচালিত “আপনজন” বাংলা ছবির হিন্দী রিমেক করেছিলেন, বিশ্বজিত-তনুজা অভিনীত ‘চৈতালী’, উত্তমকুমার অভিনীত ‘জয়জয়ন্তী’, ‘এখানে পিঞ্জর’, ‘নবরাগ’ ইত্যাদি হিন্দি ও  বাংলা ছবি।  মৃণাল সেন নবাগত রঞ্জিত মল্লিককে প্রথম সবার সামনে এনে হাজির করলেন ‘ইন্টারভিউ’ সিনেমার মাধ্যমে, সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় রিলিজ হল সাহিত্যিক শঙ্করের কাহিনি অবলম্বনে “সীমাবদ্ধ” এবং তথ্যচিত্র “সিকিম”। অন্যদিকে তপন সিনহার পরিচালনায় রিলিজ হল রমাপদ চৌধুরীর কাহিনি অবলম্বনে ছবি “এখনই”।  অন্যদিকে অজিত ওয়াদেকরের নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেটদল ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেছে টেস্ট খেলতে ও কলকাতায় ফার্স্ট ডিভিশন হকি লিগে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে মোহনবাগান।  এইসব কিছুর মধ্যেই ঠিক পাশের দেশেই ঘটে চলছে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ইতিহাসে জায়গা করে নিচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যা আজকের দিনে ৫০ বছর পূর্ণ হল।  জয় বাংলা।       

        

একটি বিরল ফ্রেমে শ্যামল মিত্র, সত্যজিৎ রায় এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান

ঋণস্বীকার:  দেশ পত্রিকা, আনন্দবাজার আর্কাইভ, জাগ্রত বিবেক বাংলাদেশ ৫০ বিশেষ সংখ্যা, সৃষ্টির একুশ শতক বিশেষ মুক্তিযুদ্ধ ৫০ সংখ্যা, Rolling Stone Rock Journal Magazine, প্রহর ওয়েব ডেস্ক, বি বি সি নিউজ বাংলা পোর্টাল। 

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *