লাল পিঁপড়া – মাহফুজ রিপন

শেয়ার করুন

ছেলেটাকে নিয়ে সুলতানের খুব গর্ব। তাঁর সন্তান রাকিব আমদহ গ্রামে প্রথম এস এস সি পাশ করেছে। সুলতান খুশিতে বাপের কবরের কাছে গিয়ে মোনাজাত ধরে। সে স্বপ্ন দেখে তার সন্তান একদিন অনেক বড় হবে। আমদহ গ্রামে উন্নয়নের জোয়ার লেগেছে। গ্রামে বিদ্যুৎ চলে এসেছে। কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে। শহর থেকে বাস আসে নিয়মিত। বাসের হর্ণ বাজলে কাঁচা ঘর থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে আসে গ্রামের এক দল কিশোর। ভ্যান স্টান্ডে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় ভ্যান চালকদের। রাকিব এস এস সি পাশ করেছে তাই গঞ্জের আমিত্তি, দানাদার, বাতাসা এবং রসগোল্লায় ভরে গেছে সুলতান মোল্লার ঘর। মোল্যা বাড়িতে যেন উৎসব লেগে গেছে। দূর দূরান্ত থেকে রাকিব কে দেখতে মানুষ আসছে। সুলতান কলারপাতায় মিষ্টি মুড়িয়ে পাড়ার প্রতিটি ঘরে বিতরণ করে। রাকিব বাবাকে মিষ্টি বিতরণে সহযোগিতা করে। সে গ্রামের মুরব্বিদের কদমবুচি করে দোয়া নেয়। সরদার বাড়ি বিতরণ করে দুই বাপ-বেটা এখন খন্দকার বাড়ি যাবে । সুলতানের মাথায় মিষ্টির ধামা আর বাবার পেছনে রাকিব সালামির টাকা গুনে পকেটে রাখে। বাপবেটা উত্তেজনায় দিক ভোলার অবস্থা। নতুন পিচ ঢালা রাস্তায় দাঁড়াতেই খুব জোরে বাসের হর্ন বেজে উঠল। বিকট শব্দে বাসটি তাদের উড়িয়ে নিয়ে গেল রাস্তার পাশের শাল গাছের উপর। বাসের আঘাতে শাল গাছটির শেকড় বেরিয়ে আসলো মাটির উপরে। দুটি নিথর দেহ পড়ে রইল রাস্তার উপর। চারপাশে ছড়িয়ে পড়া মিষ্টিগুলোতে লাল পিঁপড়া ধরেছে। লাইন ধরে তারা রাকিবের পাশের মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছে নিজ গৃহে। মাটিতে রক্তের দাগ। পুরো গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে গেল রাস্তায়। এরপর সাত বছর কেটে গেল। ঊনিশ সালে আমদহ গ্রামে আবার একজন নতুন ছাত্র এস এস সি পাশ করলো। ছেলেটার আদলটা অনেকটাই রাকিবের মতো।

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *