ড্রোন – অরিজিৎ সেন
আব্রাহাম জিজ্ঞেস করলেন,
“প্রভু ঐ শহরে যদি পঞ্চাশ জনও নিরাপরাধ মানুষ থেকে থাকেন তাও কি আপনি পুরো শহরটাকে ধ্বংস করে ফেলবেন?”
প্রভু বললেন, “পঞ্চাশজন নিরাপরাধ মানুষ থাকলে আমি সবাইকে ছেড়ে দেব।“
খানিকপরে আব্রাহাম বললেন,
“অপরাধ নেবেন না যদি পঁয়তাল্লিশ থাকেন?”
“তাহলেও শহর বেঁচে যাবে।“ প্রভু উত্তর দিলেন।
“চল্লিশ”
“তাহলেও কিছু করব না।’
“তিরিশ?….কুড়ি….দশ।”
স্মিতহেসে প্রভু বললেন, “দশজন ভালোমানুষও যদি থাকে তবে শহর টিকে যাবে।”
ফাদার ড্যানিয়েল থামলেন। মঞ্চের উপর সাদা পোষাকে তাঁকে দেবদূতের মতন লাগছিল। মনে হচ্ছিল এত লোকের….রবিবারের এই গীর্জার উপর উপচে পড়া ভিড়েও তাঁর চোখ আমাকে আর আমার পাঁচবছরের মেয়েকে খুঁজে পেয়েছে।
গীর্জায় আমাদের প্রথম দিন।
ফাদার ড্যানিয়েলের চোখের দ্যুতি হঠাৎ নিবে এল, বিষাদমাখা গলায় বললেন,
“দশজন তেমন লোকও ছিল না….সোডোম শহর ধ্বংস হয়ে গেল।“
সেদিন বিকেলে টিভি চালিয়েছি। এখবর-ওখবর – এচ্যানেল-ওচ্যানেল কোথাও থিতু হতে পারছি না। একটা চ্যানেলে হঠাৎ চোখ আটকালো। রকেট না মিসাইল আকাশ থেকে আছড়ে পড়েছে একটা গ্রামের উপর। উদ্দেশ্য কারা ছিল জানি না। তবে টিভিতে দেখাচ্ছে অনেকগুলো বাচ্চার মৃতদেহ আর হাসপাতালে পাশাপাশি বেডে কাতড়ানো অনেকগুলো বাচ্চার অর্ধমৃত অবয়ব। ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে নীচে….’ড্রোন অ্যাটাক কিলস মেনি….’
পাশের সোফা থেকে মেয়ের গলা পেলাম
“ফাইভ-সিক্স-সেভেন….” মুহূর্তে ভয়ংকর সত্যের ঝিলিক খেলল মনের মধ্যে….মেয়ে গুনছে….গুনছে সংখ্যাটা দশ ছোঁয় কিনা….সকালে শোনা বাইবেলে একটা শহরের সর্বোচ্চ নিরাপরাধের সংখ্যা….
….চ্যানেল ঘুরিয়ে দিলাম আবার। নিজেকে নগ্ন আর অসহায় লাগছিল। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল,
“বড্ড বেশী মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে।”