কার্ল মার্কস ও বিশ্ব-সাহিত্যের অতিমানবেরা – শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব ৪ ) –

কার্ল মার্কস ও বিশ্ব-সাহিত্যের অতিমানবেরা – শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব ৪ ) –

শেয়ার করুন

কার্ল মার্কস ও বিশ্ব-সাহিত্যের অতিমানবেরা (কিছু মনন সমলয়ন কথা)

প্রথম অধ্যায়: কার্ল মার্কস ও বালজাক

দস্তইয়েভ্‌স্কি ও বালজাকের নেপোলিয়ন – প্রসঙ্গ ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’

বিশ্ব-সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ফিয়োদর মিখাইলোভিচ দস্তইয়েভ্‌স্কির ‘Crime and Punishment’-র রাসকোলনিকভ এবং অনরে দি বালজাকের ‘Le Père Goriot’-র রাস্তিনিয়াক, দুটি চরিত্রই তাদের দেশকালীন সামাজিক পরিস্থিতির শিকার, দুজনেই নিজস্ব নৈতিক ঘরানায় বিযুক্ত(alienated)। বিযুক্তির জায়গাটিতে খানিক মিল থাকলেও তাদের সিদ্ধান্ত এবং সেই সংক্রান্ত মনস্তাত্ত্বিক গতিবিধির মধ্যে ফারাক বিস্তর। মার্কসবাদী দার্শনিক György Lukács-র মতে,

“Raskolnikov is the Rastignac of the second half of the nineteenth century. Dostoevsky admired Balzac, had translated Eugenie Grandet, and surely quite consciously resumed the theme of his predecessor. The very nature of this connection shows his originality: his poetic grasp of the change of the times, of men, of their psychology and worldview.”(1)

György Lukács

দস্তইয়েভ্‌স্কি যখন আবির্ভূত হয়েছিলেন, তখন বীরত্বের কাহিনীতে সাজানো সময় আরও অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের বুর্জোয়া সমাজ নিজেকে বেশ খানিকটা সুসংহত করে ফেলেছে। নেপোলিয়নীয় স্বপ্নের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ভিতরের এবং বাইরের বাধাগুলি তখন বালজাকের সময়ের থেকে আলাদা এবং আরও দৃঢ়। দস্তইয়েভ্‌স্কির রাশিয়ায় সবেমাত্র এক ধরনের সামাজিক রূপান্তরের(social transformation) সূচনা হয়েছে। এই কারণেই তখনকার রুশ যুবকদের মধ্যের নেপোলিয়নীয় স্বপ্নগুলি তাদের পশ্চিম ইউরোপীয় সমসাময়িকদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি হিংসাত্মক, আরও আবেগপ্রবণ ছিল। এই যুবকদের মনের গভীরতম অঞ্চলের স্ববিরোধী, গভীর এবং সূক্ষ্মতম অনুভূতিগুলির শৈল্পিক নির্মাণ হল রাসকোলনিকভ। ‘Crime and Punishment’-র উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হল সেই কথোপকথনটি যেখানে পরফিরি পেত্রোভিচকে রাসকোলনিকভ তার নিজেরই লেখা অপরাধ সংঘটনের সময়কালীন অপরাধীর মানসিক অবস্থা বিষয়ক প্রবন্ধটির সম্পর্কে নিজের মৌলিক ভাবনার কথা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে। ব্যাখ্যাকালীন একটি মুহূর্তে রাসকোলনিকভ বলে,

“সুপ্রাচীন কাল থেকে শুরু করে অন্তত লাইকারগাস, সোলন, মোহম্মদ, নেপোলিয়ন প্রমুখের মতো মানবজাতির যারা কারিগর, স্বীকৃত আইন প্রণেতা তাঁরা সকলেই ছিলেন এক একটি দুর্বৃত্ত, নিদেনপক্ষে এই একটি কারণে তো বটেই যে নতুন আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে তাঁরা লঙ্ঘন করেছেন পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত প্রাচীন আইন, যা এর আগে পর্যন্ত সমাজে পবিত্র বলে গণ্য হতো। তাছাড়া রক্তপাতে যদি কার্যসিদ্ধি সম্ভব হত তাতেও অবশ্য তাঁরা পিছপা হতেন না…এটাও রীতিমতো উল্লেখযোগ্য যে এই মানবহিতৈষী এবং মানবজাতির এই কারিগরদের অধিকাংশই ছিলেন বিশেষভাবে ভয়ংকর প্রকৃতির, রক্তপিপাসু।“ (2)

রাসকোলনিকভ

নেপোলিয়ন সম্পর্কে রাসকোলনিকভের যুক্তি অকাট্য যখন সে বলছে, স্বীকৃত আইন প্রণেতা হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে তিনি পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত প্রাচীন আইন লঙ্ঘন করেছেন। দেখার মত বিষয়টি হল, ১৮৬৬ সালে ‘Crime and Punishment’ প্রকাশিত হওয়ার বছর পনেরো আগে ১৮৫১ সালের ২ ডিসেম্বর লুই বোনাপার্টের(নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ভ্রাতুষ্পুত্র) ক্যু-দেতার(coup d’état) পর স্বীকৃত আইন প্রণেতার নতুন আইন প্রণয়ন এবং পুরুষানুক্রমে প্রাপ্ত প্রাচীন আইন লঙ্ঘনের ইতিহাস কার্ল মার্কস নতুন করে লিখছেন। সেই গুরুত্বপূর্ণ বইটির নাম ‘The Eighteenth Brumaire of Louis Bonaparte’। তার প্রথম অনুচ্ছেদেই মার্কসের সেই বিখ্যাত কথা,

“Hegel remarks somewhere that all facts and personages of great importance in world history occur, as it were, twice. He forgot to add: the first time as a great tragedy, the second as a miserable farce. Caussidiere for Danton, Louis Blanc for Robespierre, the Montagne of 1848–1851 for the Montagne of 1793–1795, and the London constable [Louis Bonaparte] with the first dozen indebted lieutenants that came along for the little corporal [Napoleon] with his band of marshals! The eighteenth Brumaire of the idiot for the eighteenth Brumaire of the genius!” (3)

কার্ল মার্কস

উল্লেখযোগ্য কথাটি হল, এই বইটি লেখারও ১৫ বছর আগে মার্কস ‘Scorpion and Felix’ নামে যে একটি মাত্র রম্য-উপন্যাস লিখেছিলেন সেখানে ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’-র এই উক্তির উৎস খুঁজে পাওয়া যায়। মার্কসের অন্যতম বিশিষ্ট জীবনীকার Francis Wheen-র মতে তিনিই প্রথম এই অনুষঙ্গের ব্যাপারটি আবিষ্কার করেন। ‘Scorpion and Felix’-এ মার্কস লিখেছিলেন,

“Every giant … presupposes a dwarf, every genius a hidebound philistine, and every storm at sea – mud, and as soon as the first disappear, the latter begin, sit down at the table, sprawling out their long legs arrogantly. The first are too great for this world, and so they are thrown out. But the latter strike root in it and remain, as one may see from the facts, for champagne leaves a lingering repulsive aftertaste, Caesar the hero leaves behind him the play-acting Octavianus, Emperor Napoleon the bourgeois king Louis Philippe …” (4)

কার্ল মার্কস

অনুষঙ্গের কথাই যখন উঠল মার্কসীয় সমাজতত্ত্ব এবং বালজাকীয় সাহিত্যের যোগাযোগ প্রসঙ্গে ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’ এবং বালজাকের উপন্যাসিকা ‘Colonel Chabert’-র কথা তো বলতেই হয়। ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’ অপেক্ষাকৃত কম পঠিত হলেও এটি মার্কসের লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। অতীতের জীবন্ত দলিল হিসেবে এই বইটিতে মার্কসের বর্ণনায় ঘটনার পরম্পরা, তাদের অন্তর্বর্তী দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ছবির মতো স্পষ্ট হয়ে উঠে আসে। ক্ষুরধার বিশ্লেষণে একের পর এক খুলতে থাকে ইতিহাসের জটিল গ্রন্থিপঞ্জি। মাত্র সতেরো বছর বয়সে মার্কসবাদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হওয়ার সুবাদে ফরাসি নৃতত্ত্ববিদ লেভি স্ট্রস(Lévi-Strauss) ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’-র কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

“a whole world was revealed to me. Since which time, my passionate interest has never lapsed; and I rarely concentrate on unravelling a problem of sociology or ethnology without having, beforehand, braced my thought by reading some pages of the 18th Brumaire of Louis Bonaparte or of the Critique of Political Economy.” মার্কস আমাদের শিখিয়েছেন, “to build a model, to study its properties and the different ways in which it reacts in the laboratory, in order to apply these observations to the interpretation of empirical data which may be far removed from what one had foreseen.” ( 5)

লেভি স্ট্রস

১৮৪৩ সালের ১৯শে জুন। ক্রোয়েটসনাখ্ শহরে সকাল দশটায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন ২৫ বছর বয়সের কার্ল মার্কস এবং তাঁর থেকে বছর চারেক বড় ফ্রাউলিন জোহানা বার্থা জুলিয়া জেনি ভন ভেস্টফালেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য সুখী হওয়ার অবকাশ মার্কসের মত মানুষের জীবনে থাকে না। ১৮৪৩ সালের অক্টোবর মাসে শাসকের চাপে কোলোন শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়ে তিনি যে শহরটাকে বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছিলেন সেটা হল প্যারিস। এই সিদ্ধান্তের পিছনের কারণ একটি নয়, একাধিক। তবে প্রধান কারনটিকে আলাদা করে চিনে নেওয়া যায় বালজাকের কথা থেকে, যিনি বলেছিলেন, “প্যারিস মানে অবিশ্বাস্য, অলৌকিক এক ব্যাপার; আন্দোলন, যন্ত্র এবং ধারণার বিস্ময়কর সমাবেশ, সহস্র রম্যকাহিনীর নগরী; প্যারিস হচ্ছে পৃথিবীর চিন্তার চলমান প্রক্রিয়ার আধার।“(6)
মাসখানেক আগেই আর্নল্ড রুগেকে মার্কস চিঠিতে লিখেছিলেন,

“অতএব এবার প্যারিস। দর্শনের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস এবং নতুন পৃথিবীর নতুন রাজধানী প্যারিস।…পত্রিকা বের হোক বা না হোক এ মাসের শেষেই আমি প্যারিসে চলে আসছি। জার্মানিতে আমি মুক্তভাবে কোন কাজ করার উপায় দেখছি না। এখানে সবাইকে ভূমিদাস বানিয়ে রাখা হচ্ছে।“(7)

মার্কসের চোখে ‘দর্শনের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এবং নতুন পৃথিবীর নতুন রাজধানী’ যে প্যারিস বালজাকের চোখে তাই তো ছিল ‘পৃথিবীর চিন্তার চলমান প্রক্রিয়ার আধার’। মার্কস মনে করতেন, বালজাক তার সময়ের একজন ইতিহাসবিদ তো ছিলেনই সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন এমন সব চরিত্রের স্রষ্টা, তাঁর রচনাকালে যারা ছিল ভবিষ্যতের গর্ভে। ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’-এ মার্কস ও বালজাকের মধ্যে মনন বিনিময়ের সূত্রপাত ঘটে মতাদর্শের ক্ষমতা উপলব্ধির এক অসামান্য চিত্রকল্পের মধ্যে দিয়ে। বালজাকের কথায়, “The social and judicial world weighed on his breast like a nightmare.” (8)। অতীতের সূত্র ধরে ভবিষ্যতের প্রতিবন্ধকতার কথা বলতে গিয়ে মার্কস ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’-এ বলছেন,

“Men make their own history, but they do not make it just as they please; they do not make it under circumstances chosen by them- selves, but under circumstances directly encountered, given and transmitted from the past. The tradition of all the dead generations weighs like a nightmare on the brain of the living.” (9)

একটি দুঃস্বপ্নের(immaterial ) ভার(material) কী হতে পারে, এবং কেনই বা বালজাক এবং মার্কস একমত হলেন যে এই ধরনের উল্লেখ ইতিহাসের সঙ্গে মানবতার সম্পর্ক প্রকাশ করার ক্ষেত্রে একটি যুক্তিযুক্ত উপায় হতে পারে। বালজাকের কাছে দুঃস্বপ্নটি হল পরিচয়ের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি।
বালজাকের উপন্যাসিকায় Colonel Chabert হলেন একজন নেপোলিয়ন-অফিসার যিনি ১৮০৭ সালে আইলাউয়ের যুদ্ধে(battle of Eylau) গুরুতরভাবে আহত হন এবং তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ছ মাস স্মৃতিভ্রষ্টতার পর অবশেষে স্মৃতি ফিরে পান। কিন্তু যখন তিনি নিজের নাম এবং অবস্থান পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন তখন তাকে একজন পাগল হিসেবে বন্দী করা হয়। ঠিক সেই সময় Chabert যখন আইনজীবীর কাছে আত্মপরিচয়ে ফেরার আগে দরকারি সমস্ত কৌশল শিখে নিচ্ছেন, সামাজিক এবং বিচার-ব্যবস্থার দুনিয়ার ওজন তার বুকের ওপর যেন এক দুঃস্বপ্নের মতো চেপে বসছে। আঠারোই ব্রুমেয়ার’-এ ‘Colonel Chabert’-র এই চিত্র আংশিকভাবে ব্যবহার করা হয়। দুটি রচনাতেই ইতিহাসের একটি একক অনুভূতিকে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে অথচ রচনাশৈলী ও বক্তব্য তুলে ধরার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে থেকে। Sandy Petrey তাঁর ‘The Reality of Representation: Between Marx and Balzac’ প্রবন্ধে বলছেন,

“বালজাক এবং মার্কসকে একসঙ্গে পড়লে এটা স্পষ্ট হয় যে ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’-র সমস্যা হল, একটি শ্রেণি কীভাবে রাজনৈতিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করে তা নয় বরং এটি কী প্রকাশ করে। একটি নির্দিষ্ট বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, একটি শ্রেণি ডক্টর জনসনের পাথরের মতো একই ধরণের অস্পষ্ট সত্তা। কিন্তু The Eighteenth Brumaire-এ, বুর্জোয়া এবং প্রলেতারিয়েতের শ্রেণিটি অনেকটাই Colonel Chabert-র জীবন্ত দেহের মতো, সন্দেহাতীতভাবে বাস্তব (ড. জনসনের পা এর মধ্য দিয়ে গলবে না) আবার ঠিক যেমনটি তার বাস্তবতাকে প্রকাশিত হওয়া থেকে প্রশ্নাতীতভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে।“

Sandy Petrey

কখন এবং কীভাবে মৃত প্রজন্ম জীবিত হয় তা উল্লেখ করে মার্কস বালজাকের বিষয়-ভারী দুঃস্বপ্নের ব্যবহারকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন,

“The tradition of all the dead generations weighs like a nightmare on the brain of the living. And just when they seem engaged in revolutionizing themselves and things, in creating something that has never yet existed, precisely in such periods of revolutionary crisis they anxiously conjure up the spirits of the past to their service and borrow from them names, battle cries and costumes in order to present the new scene of world history in this time- honoured disguise and this borrowed language.”(10)

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো যেমন বুর্জোয়া বিপ্লবের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটো দিককেই তুলে ধরে, ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’ও একই গভীরতায় বুর্জোয়া কাল্পনিকতার দ্বান্দ্বিক মূল্যায়ন। মার্কসের ‘দ্বিতীয় সাম্রাজ্য’-র বর্ণনার সামগ্রিক যুক্তি হল যে, প্রতিনিধিত্বকে অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত কারণ সেটিকে, সমগ্র বিশ্বের চেহারা কী হবে, তার থেকে আলাদা করা যায় না। ভবিষ্যতের কবিতা এবং অতীতের নাটকীয় ব্যক্তিত্ব বর্তমানের কাছে যেমন একদিকে ভ্রান্ত আবার ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণও। কল্পকাহিনী এমন কোন ব্যাপার নয় যা মার্কসবাদকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে বরং তাকে অন্তর্ভুক্ত করাটাই সমীচীন। এক ধরনের কল্পকাহিনীর মতোই মতাদর্শের মধ্যেও একই দ্বৈততা কাজ করে। মতাদর্শের মধ্যে বিভ্রান্তিকর ব্যাপারটি কি শুধু তাই দেখানো নয়, মতাদর্শের কার্যকারিতাকে প্রশংসার চোখে দেখাও ছিল মার্কসের কাজ। ‘Colonel Chabert’ থেকে পাওয়া এই শিক্ষাটি ‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’-এ দুর্দান্তভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। সেই “all the professed historians, economists and statisticians of the period together”, এঙ্গেলস যাঁদেরকে বালজাকের অসম্পূর্ণ প্রতিনিধি বলে মনে করতেন, সেই সকল মানুষদের তাত্ত্বিক জ্ঞান তাঁকে এবং মার্কসকে সমাজের বস্তুগত ভিত্তি সম্পর্কে যা জানা দরকার তা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্টই ছিল। কিন্তু বালজাক শিখিয়েছিলেন যে কেবলমাত্র বস্তুগত ভিত্তিটি জানলেই কাজ সম্পূর্ণ হয় না।
মার্কসবাদী বিশ্লেষণ এবং ‘La Comédie Humaine’ সাহিত্যের সমাজবিজ্ঞানে একটি বিশেষ অর্থ স্থাপন করে, এমন একটি অর্থ যেখানে সামাজিক বা সাহিত্যিক বাস্তবতাকে একে অন্যের থেকে কোনও ভাবেই আলাদা করে বোঝা যায় না কারণ উঠে আসা প্রতিটি শর্তই পারস্পরিক এই নির্ভরতাকেই প্রকাশ করে। এই অর্থে বালজাকীয় কল্পকাহিনীতে সমাজ এবং মার্কসবাদী সমাজে কল্পকাহিনী একইসঙ্গে কল্পনা এবং বাস্তবতার মনোরম এক দ্বান্দ্বিক সহাবস্থান।

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.marxists.org/archive/lukacs/works/1949/dostoyevsky.htm
  2. অপরাধ ও শাস্তি, ফিওদর দস্তয়েভস্কি, রুশ থেকে অনুবাদ অরুণ সোম, সাহিত্য অকাদেমি, ২০১৩, পৃষ্ঠা -২৮৯
  3. Karl Marx and Frederick, Selected Works, Progress Publishers, Moscow, 1977, Page- 398
  4. KARL MARX, Francis Wheen, Harper Collins, Page-17
  5. Language and Silence, George Steiner, Yale University Press paperback edition, London 1998, Page- 245
  6. Honore de Balzac (1972), The History of the Thirteen, Ferragus, Harmondsworth, London, Penguin.
  7. https://www.marxists.org/archive/marx/works/1843/letters/43_09.htm
    “so – to Paris, to the old university of philosophy – absit omen! [May it not be an ill omen] – and the new capital of the new world! What is necessary comes to pass. I have no doubt, therefore, that it will be possible to overcome all obstacles, the gravity of which I do not fail to recognise.
    But whether the enterprise comes into being or not, in any case I shall be in Paris by the end of this month, since the atmosphere here makes one a serf, and in Germany I see no scope at all for free activity”
  8. Honore de Balzac, Le Colonel Chabert, vol. 3 of La Comidie humaine (Paris, 1976), Page 343
  9. Karl Marx, The Eighteenth Brumaire of Louis Bonaparte, (New York, 1963), Page 15
  10. ibid, Page-15
শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২