যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ – কলতান দাশগুপ্ত
আমাদের প্রজন্মের অনেকেই ছোটোবেলায় গরমের ছুটি বা পুজোর ছুটিতে টিভির পর্দায় গুপী গাইন বাঘা বাইন দেখেছি। যুদ্ধের ময়দানে আগুয়ান দুই বাহিনীর সেনাদের জন্য ভূতের রাজার বরে মিষ্টির হাঁড়ি নেমে এল আকাশ থেকে এবং…
যুদ্ধ থেমে গেল। পেটের খিদে মেটানোর লড়াইয়ের কাছে পৃথিবীর বাকি সব লড়াই তুচ্ছ, সত্যজিৎ রায় কত সহজে বুঝিয়েছিলেন।
খিদে কি খালি আমাদেরই পায়? আমরা মানে, এই ছুতোর, রাজমিস্ত্রী, পিয়ন, কেরানি, ডেলিভারি বয়, ডাক্তার, উকিল, এদেরই কেবল খিদে পায়? বড়োদের পায় না!! বড়ো বলতে, যাদের ব্যাঙ্কে অনেক টাকা? না না, যাদের অনেক টাকা কিন্তু ব্যাঙ্কের ধার শোধ করে না, তারা।
তারা অনেক বড়ো, তাই তাদের খিদেও বড়ো। তারা সব খায়। জল, জমি, জঙ্গল, আকাশ, টেলিযোগাযোগ, কয়লা, আরও যা কিছু সবাই মিলে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে খাওয়ার কথা ছিল, সব ওরা একাই খায়, খেতে চায়। খেতে না পেলেই যুদ্ধ বাধায়।
এই যে আমাজন জ্বলছে, কারণ ওদের খাবারের মেনুতে আমাজনের মাটির তলার খনিজ এসে গেছে। সেই আগেরবার, ইরাকে ভীষণ যুদ্ধ হল। বলা হল, পারমানবিক অস্ত্র উদ্ধার হবে। উল্টে আমেরিকার বড়ো বড়ো মানুষেরা ওখানকার সব তেলের খনির মালিক হয়ে গেলেন। মালিকদের কথা শুনেই, তাদের বাঁধা দর অনুযায়ী আপনাকে তেল কেনাবেচা করতে হবে, নাহলেই ফের যুদ্ধ।
২০১৭-১৮ সালে আমাদের দেশের মিলিটারি খাতে বাজেট ছিল ২১.৪৬ লক্ষ টাকা, মিড ডে মিলের বাজেট ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। কোন যুদ্ধটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কি?
আমাদের ছোটোবেলাতেই সত্যজিৎ শিখিয়েছিলেন, “তোরা যুদ্ধ করে করবি কি তা বল!!!” আমরা এখনও এই কথার উত্তর পাইনি। কিন্তু খুঁজে চলেছি অবিরাম।
খিদের জন্য যুদ্ধ নাকি যুদ্ধের জন্য খিদে– কি চলছে এখন দুনিয়ায়? তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, আমরা কি চালাতে চাইছি? ব্যবসা করার জন্য, সব কিছু গিলে খাওয়ার জন্য যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে এখন…
[ ছবি : সত্যজিৎ রায় ]
এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্যময় প্রশ্ন। সত্যিই শুধু যে পেটের জন্য যুদ্ধ করে সবাই তা নয়। অনেক দেশের কাছে যুদ্ধটা শখ, বানিজ্য। তাই যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার এ অমোঘ আহ্বান তাই ফেরানোর নয়