যুদ্ধ এবং আজকাল – শুভশ্রী পাল

যুদ্ধ এবং আজকাল – শুভশ্রী পাল

শেয়ার করুন

যুদ্ধ হলে ঠিক কি হয় তা নিয়ে আমার ধারণা পরিস্কার নয়।
রাজনীতি এবং সমকালীন উচ্চমার্গীয় বিষয়েও ওয়াকিবহাল না হওয়ায় যুদ্ধের কারন টাও বেশ আবছা।
ছোটবেলায় আঁকার স্কুলে যেতাম তখন কারগিলের যুদ্ধ হচ্ছে। সবাই যুদ্ধের ছবি আঁকত তখন। জলপাই রঙ টা বানাতে পারতাম না তাই হলুদ পোষাকে স্যাপ গ্রীন দিয়ে আঁকা হত আমাদের সৈনিকের ছবি।
তখন যে কোন আঁকা প্রতিযোগিতায় ওই ছবিটাই এঁকে বহু প্রথম পুরস্কার নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি এসেছি।মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ক ব্যাপার বোঝার পরিণত মনস্ক তখনও হই নি তাই সে বিষয়েও আলোচনা করার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই।
পাড়ার খেলা শেষ হলে খুব উত্তেজিত হয়ে সবাই যুদ্ধ নিয়ে কথা বলতাম। সেই সময়ে বর্ডার সিনেমাটাও দেখা হয়ে গেছে তাই জানা ছিল যুদ্ধে কামান লাগে , বোম পড়ে আর এ কে 47 নামের একটা বন্দুক লাগে। যার থেকে গুলি বেরোনোর সময় ঢ্যা ঢ্যা ,  ঢ্যা ঢ্যা শব্দ হয় আর অনেক গুলি একসাথে বেরোয়। আর আকাশ দিয়ে যুদ্ধ বিমান যায় বোম ফেলতে ফেলতে সে সময়ে শুয়ে না পড়লে মৃত্যু অনিবার্য।
প্রত্যেক বিকেলে আকাশে এরোপ্লেন দেখলেই যে যেখানে থাকতাম হুমড়ি খেয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে কানে হাত চাপা দিতাম। আর প্রতিবারই ভাবতাম ভগবান বাঁচিয়ে দিল।
একটু বড় হয়ে এরিখ মারিয়া রোমার্কের  “অল কোয়াইট ইন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট” পড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা আর তারপরে বদলে যাওয়া মানুষের জীবনের ছবি দেখে ছোটবেলার এক্সাইটমেন্টের প্রতি একদলা অপরাধবোধ উগরে এসেছিল।
আজ আরো অনেক টা পথ পেরিয়ে এসে বুঝি আমরা সবাই যুদ্ধক্ষেত্রেই বাস করি। জীবনযুদ্ধ শব্দ টা শুনতে নাটকীয় হলেও তীব্রতা কিছু কম নয়।
এখানে বোম পড়ে না হয়ত আর তাই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া শরীরের মেলা বসে না।কিন্তু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মনের মৃতদেহ, সম্পর্কের লাশ।
সম্পত্তির জন্য জন্মদাতা বাবা মায়ের উপর অত্যাচার অথবা পণের দাবীতে বৌ কে পুড়িয়ে মারা যুদ্ধের ভয়াবহতার মতই। এই যুদ্ধে রাষ্ট্রের বদলে আছে উচ্চকাঙখা , লোভ, প্রতিহিংসা আর নীচু হয়ে আসা মন।
আর সেই আহত বা মৃত সৈন্যদের জায়গা নিয়েছে আমার আপনার মত ছা পোষা মানুষজন।
একবার ভেবে দেখেছেন কি এই সব যুদ্ধক্ষেত্রের কথা?
মৃত রোগীকে আই সি ইউ তে রেখে তার বাড়ির লোকের থেকে টাকা আদায়ের সময় কি ডাক্তার বাবু দেখতে পান রোগীর সংসারের ধ্বংসাবশেষ? দীর্ঘদিনের প্রেমিকা কে বিয়ে করার সময় না না অজুহাতে পণ নেওয়ার সময় প্রেমিক কি দেখতে পায় তার প্রেমিকার ছিন্নভিন্ন মন?
সরকারী মাস মাইনের পরেও আরো খানিক বিলাসিতার জন্য ঘুষ নেবার সময় কর্মচারীরা দেখেন তাদের মৃত বিবেকের শব?
দেখুন একটু দেখতে শিখুন তাহলে বুঝবেন আপনি কুরুক্ষেত্রের মাটিতেই দাঁড়িয়ে আছেন। তবে এই যুদ্ধক্ষেত্র আমাদেরই তৈরী আর আমরাই পারি এই যুদ্ধের যবনিকাপাত করতে। আসুন না সবাই মিলে একটু একটু করে চেষ্টা করি এইসব থামিয়ে আগামীর জন্য শান্তি রচনা করি।

শেয়ার করুন

ক্যাটেগরি বা ট্যাগে ক্লিক করে অন্যান্য লেখা পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরনো লেখা

ফলো করুন

Recent Posts

Recent Comments

আপনপাঠ গল্পসংখ্যা ২০২২