|

জীবনের কথা বলিতে ব্যাকুল (গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের আত্মজীবনী) – অনুবাদ: অরুন্ধতী ভট্টাচার্য ( পর্ব ১৩ )

শেয়ার করুন

পর্ব–তেরো

আপোলিনার ছিল আমাদের বাড়ির বহু পুরোনো এক দাস। ছোটোখাটো কিন্তু শক্তপোক্ত চেহারার মানুষ। আমি তাকে আমার একজন মামা বলেই জানতাম। একদিন সে বাড়ি থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। তারপর, বেশ কয়েক বছর পরে, আবার একদিন তেমনই অকারণেই সে ফিরে আসে। তখন তার পরনে শোকের কালো পোশাক আর মাথায় একটা বিরাট টুপি, সেটাও কালো। টুপিটা নামানো তার বিষণ্ণ দুটি চোখ পর্যন্ত। রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে সে বলল যে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে এসেছে। কিন্তু কেউ তার কথার মানে বুঝতে পারেনি যতক্ষণ পর্যন্ত না পরের দিন খবর এল আমার দাদু সান্তা মার্তায় মারা গেছেন। সেখানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল খুবই সংকটাপন্ন অবস্থায় এবং কাউকে কিছু না জানিয়ে। 

আমার মামাদের মধ্যে একজনই বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি কর্নেলের জ্যেষ্ঠ্য সন্তান রক্ষণশীলপন্থী হোসে মারিয়া বালদেব্লাঙ্কেস[১]। হাজার দিনের যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন সেনেটের সদস্য। ওই পদে থাকতেই উদারপন্থীদের আত্মসমর্পণের সময় তিনি নেরলান্দিয়ার কাছের একটি খামারে উপস্থিত ছিলেন এবং তখন তাঁর সম্মুখে দণ্ডায়মান ছিলেন পরাজিত পক্ষের অন্যতম প্রতিভূ স্বয়ং তাঁর বাবা।

আমি বিশ্বাস করি আমার স্বভাব ও ভাবনা-চিন্তার প্রকৃতি গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল পরিবারের সমস্ত মহিলা ও পরিচারিকাদের। তাঁরাই শৈশবে আমার দেখাশোনা করতেন। তাঁদের কাছে আমি প্রকৃত অর্থেই ঋণী। সেই নারীরা ছিলেন খুবই দৃঢ় প্রকৃতির, কিন্তু অন্তরে কোমলস্বভাবা। মর্ত্য পৃথিবীর যে এক স্বর্গীয় সহজাত ভাব আছে, তাই দিয়ে তাঁরা আমাকে বড়ো করে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একমাত্র লুসিয়া শিশুসুলভ দুষ্টুমি দিয়ে আমাকে একবার চমকে দিয়েছিল। আমাকে বাগানের এক কোনায় নিয়ে গিয়ে জামাটা কোমর অবধি তুলে দিয়ে আমায় দেখাল তার তাম্রবর্ণ গুচ্ছ যৌনকেশ। কিন্তু আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছিল পেটে। তার সারা পেট জুড়ে ছিল অসংখ্য ছোপ, যেন বেগুনি রঙের বালিয়ারি ও হলুদ সমুদ্রে আবৃত এক পৃথিবীর মানচিত্র। আর অন্যরা ছিলেন যেন পবিত্রতার প্রতিমূর্তি। তাঁরা আমার সামনেই জামাকাপড় পালটাতেন, আমাকে স্নান করানোর সময় নিজেরা স্নান করতেন, আমাকে পায়খানা করতে বসিয়ে নিজেরাও আমার সামনে পায়খানা করতে বসে যেতেন ও তাঁদের সমস্ত গোপনীয়তা, দুঃখ ও বিদ্বেষ উগরে দিতেন। ওঁরা ভাবতেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু তাঁরা যেটা জানতেন না সেটা হল আমি সব কিছু বুঝতাম আর তাই তো তাঁদের অসমাপ্ত গল্পগুলো সমাপ্ত করতাম আমি।

চোন ছিল পরিচারিকাদের দলের একজন। সে অনাথ। একেবারে বাচ্চা বয়সে বাররানকাস থেকে দাদু-দিদিমার সঙ্গে এসেছিল আমাদের বাড়িতে। বাস্তবিক রান্নাঘরেই তার বেড়ে ওঠা, কিন্তু পরিবারেরই একজন হয়ে গিয়েছিল। পরে, আমার প্রেমাসক্তা মায়ের সঙ্গে প্রদেশে তীর্থ করে আসার পর থেকে মায়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে উঠেছিল, তাই আমারও হয়ে গিয়েছিল মাসি। শেষ জীবনে শহরের দরিদ্রতম অঞ্চলে নিজের একটা ঘরে থাকত আর উপার্জনের জন্য সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় ভুট্টাগুঁড়োর আরেপা[২] বিক্রি করত। আসলে এরকমটাই চেয়েছিল সে। সেই দিনগুলোয় ভোরের নিস্তব্ধতার মধ্যে শোনা যেত তার ফেরি করার চেনা সুর: “চোনবুড়ির ঠাণ্ডা কেক…।”

আদিবাসীদের মতো সুন্দর ছিল তাঁর গায়ের রং। যদিও চেহারাটা চিরকালই হাড়-পাঁজরা সার আর রাস্তায় হাঁটত খালি পায়ে। মাথায় থাকত সাদা পাগড়ি ও গায়ে জড়ানো মাড় দেওয়া একটা চাদর। রাস্তার ঠিক মাঝখান দিয়ে খুব ধীরে ধীরে হাঁটত আর তাঁকে ঘিরে একদল শান্ত পোষা কুকুর চলত সঙ্গে সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত সে শহরের উপকথার চরিত্রে পরিণত হয়। কার্নিভালের সময় একবার একজন চোন সেজেছিল, গায়ে সেই চাদর, গলায় একই রকম ফেরি করার ডাক, কিন্তু তার মতো একদল কুকুরকে সে পোষ মানাতে পারেনি। তার সেই ‘ঠাণ্ডা কেক’ বলে ফেরি করার সুর এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে একজন অ্যাকর্ডিয়ান বাদক তাই নিয়ে গান বেঁধেছিলেন। একদিন সকালে দুটো বুনো কুকুর তার পোষা কুকুরদের আক্রমণ করে। কুকুরগুলো এমন তেড়ে মারামারি করতে শুরু করে যে সে মাটিতে পড়ে যায় ও তার শিরদাঁড়া ভেঙে যায়। আমার দাদু তার চিকিৎসার সব রকম বন্দোবস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি। 

সেই সময়ের আরেকটি উজ্জ্বল স্মৃতি হল মাতিলদে আর্মেন্তার সন্তান প্রসব। মাতিলদে যখন আমাদের বাড়িতে ধোপার কাজ করত তখন আমার বছর ছয়েক বয়স। একদিন ভুল করে তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম। ঢুকে দেখি একটা ক্যাম্বিস কাপড়ের বিছানায় সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে দু’পা ফাঁক করে শুয়ে আছে আর প্রবল যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। একদল অশিক্ষিত বিশৃঙ্খল দাই তার সন্তান প্রসবে সাহায্য করছে ও তাকে ঘিরে প্রচণ্ড চেঁচামেচি করছে। একজন ভেজা তোয়ালে দিয়ে তার মুখের ঘাম মুছিয়ে দিচ্ছে তো অন্যরা হাত-পা ধরে রেখে পেটের উপর চাপ দিচ্ছে যাতে তাড়াতাড়ি বাচ্চা বেরিয়ে আসে। এই হট্টগোলের মাঝে সান্তোস বিয়েরো নির্বিকারভাবে চোখ বন্ধ করে সমুদ্র শান্ত করার প্রার্থনা বলে যাচ্ছে বিড়বিড় করে আর গর্ভবতী মাতিলদের দুটো থাইয়ের মাঝখানে যেন কিছু খুঁড়ে চলেছে। রান্নাঘর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ফুটন্ত গরম জল আর তার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সেই ঘরের গরম তখন দুর্বিষহ। ভয় ও কৌতূহলের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি ঘরের এক কোনায়। তারপর দাই গোড়ালি ধরে একটা জ্যান্ত কিছু বের করে আনল, অনেকটা পেটের ভেতরে থাকা বাছুরের মতো আর তার নাভি থেকে ঝুলে রয়েছে একটা লম্বা রক্তাক্ত নাড়িভুঁড়ি। ঠিক তখন ওদের মধ্যে একজন আমাকে দেখে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে টেনে ঘর থেকে বাইরে বের করে নিয়ে গিয়ে আমাকে বলল—‘একটা বিরাট পাপ করেছ তুমি’। তারপর আমার দিকে একটা আঙুল তুলে নির্দেশ দিল, ‘যা দেখেছ তা আর কক্ষনো মনেও আনবে না।’ 

তবে যে মেয়েটি সত্যি সত্যি আমার সারল্য হরণ করেছিল সে কিন্তু তা বুঝে করেনি। এমনকি সে জানতও না যে ঠিক কী করেছিল সে। তার নাম ছিল ত্রিনিদাদ, আমাদের বাড়ির কোনো এক পরিচারিকার মেয়ে। এক বসন্তে সে সদ্য অঙ্কুরিত হতে শুরু করল। তখন তার বয়স হবে বড়ো জোর তেরো। কিন্তু তখনও ন’বছর বয়সের জামা পরত। সেগুলো গায়ে এত আঁটোসাটো হয়ে বসত যে খালি গায়ে থাকার চেয়েও তাকে বেশি উলঙ্গ মনে হত। এক দিন রাতে উঠোনে আমরা শুধু দুজন বসে আছি। হঠাৎ পাশের বাড়িতে ব্যান্ডের গান বেজে উঠল। ত্রিনিদাদ আমাকে বলল নাচতে আর নাচতে নাচতে আমাকে এত জোরে চেপে ধরল যে আমার যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি জানি না তার মধ্যে কী ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে যায় আকস্মিক উত্তেজনায় এবং আমি জানি সেই অন্ধকারের মধ্যেও তাকে চিনে নিতে পারব—তার ত্বকের প্রতিটি ইঞ্চির স্পর্শ ও দেহের পশুসুলভ গন্ধ দিয়ে। সেদিন মুহূর্তের মধ্যে প্রকৃতির ডাকে যেভাবে আমার শরীর জেগে উঠেছিল তা জীবনে আর কখনও হয়নি। অপরিসীম আনন্দের চূড়ায় উঠে আমি যেন মরেই যাচ্ছিলাম। সেদিন থেকে আমি অস্পষ্টভাবে বুঝতে পারছিলাম যে গভীর একটা রহস্য আছে যা আমার অজানা। আবার এটাও বারবার মনে হত আমি বোধহয় সেটা জানি। তবে বলাই বাহুল্য, আমার পরিবারের নারীরা সব সময়েই আমাকে বিশুদ্ধতার নীরস পথে চালনা করার চেষ্টা করেছেন। 

সারল্যকে হারিয়ে আমি শিখেছিলাম শিশু যিশুখ্রিস্ট বড়োদিনে আমাদের জন্য খেলনা রেখে যায় না। তবে সে-কথা আমি কাউকে বলিনি। কিন্তু আমার দশ বছর বয়সে বাবা সেই কথা এমনভাবে বললেন যেন বড়োদের কত গোপন কথা আমায় বলে দিচ্ছেন। তিনি অবশ্য আন্দাজ করেছিলেন যে আমি সবই জানি। তারপর বড়োদিনের আগের দিন আমায় সঙ্গে নিয়ে দোকানে গেলেন ভাইবোনেদের জন্য খেলনা কিনতে। জন্মরহস্য নিয়েও আমার সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছিল, এমনকি মাতিলদে আর্মেন্তার সন্তান প্রসব দেখার আগেই। আমার প্রচণ্ড হাসি পেত যখন কেউ বলত যে একটা বক প্যারিস থেকে বাচ্চা এনে দেয়। কিন্তু একটা কথা আমার স্বীকার করা উচিত যে তখন বা এখন কোনো সময়েই আমি যৌনতার সঙ্গে সন্তান প্রসবকে মেলাতে পারি না। সে যাই হোক, আমার ধারণা মেয়েদের সঙ্গে যে সহজেই এক ধরনের গোপন ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক আমার গড়ে ওঠে তার মূল নিহিত আছে শৈশবে পরিচারিকাদের সঙ্গে সেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে। এমনকি সেই কারণেই সারা জীবন ধরে আমি পুরুষদের থেকে নারীদের সঙ্গে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ও নিরাপদ বোধ করেছি। এবং সেখান থেকেই সম্ভবত আমার এই বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যে মেয়েরাই এই বিশ্বের ধাত্রী আর আমরা পুরুষরা তাদের তৈরি সেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করি আমাদের ঐতিহাসিক নিষ্ঠুরতা দিয়ে।

সারা এমিলিয়া মার্কেস নিজের অজান্তেই আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল। খুব ছোটো বয়স থেকে অসংখ্য পাণিপ্রার্থী ছিল তার। কিন্তু তাদের দিকে সে ফিরেও তাকাত না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রথম যাঁর দিকে সে তাকাল তাঁকেই তার মনে হল সেরা এবং সেই পুরুষটিকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিল। যাঁকে সে পছন্দ করেছিল তাঁর সঙ্গে আমার বাবার কিছু মিল ছিল। কেন-না সেই ছেলেটিও বহিরাগত এবং কেউ জানত না তিনি কোথা থেকে বা কেমন করে এখানে এসেছেন। তিনি ভালো পরিবারের ছেলে হলেও আর্থিক দিক থেকে দরিদ্র ছিলেন। তাঁর নাম হোসে দেল কার্মেন উরিবে বেরহেল। তবে মাঝে মাঝে নাম সই করার সময় শুধু লিখতেন হো দেল কা। বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর তাঁর লেখা বক্তৃতা ও প্রেমের কবিতা থেকে জানা গেল তিনি আসলে কে এবং কোথা থেকে এসেছেন। তিনি পয়সার বিনিময়ে সরকারি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য ভাষণ লিখে দিতেন। তাছাড়াও নিজে একটি সাংস্কৃতিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। সেখানে ছাপা হত তাঁর লেখা প্রেমের কবিতা। অবশ্য সে পত্রিকা যে কখন প্রকাশ হবে তা একমাত্র ঈশ্বরই জানতেন। তিনিই ছিলেন আমার জীবনে দেখা প্রথম লেখক। তাই যেদিন থেকে তিনি বাড়িতে আসতে শুরু করেন তাঁর প্রতি আমি বিশেষ আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নকল করার চেষ্টায় মেতে উঠলাম এবং যতক্ষণ না তিয়া মামা তাঁর মতো করে আমার চুল আঁচড়ে দিলেন ততক্ষণ আমার তৃপ্তি হয়নি।  

পরিবারের মধ্যে আমিই প্রথম তাদের গোপন প্রেমের কথা জানতে পারি। একদিন সন্ধেবেলা যখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছি তিনি সেখানে এলেন। আমাকে আলাদা করে ডাকলেন। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল যে তিনি বেশ চাপা উত্তেজনার মধ্যে রয়েছেন। আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে সারা এমিলিয়াকে দিতে বললেন। আমি জানতাম যে সারা বাড়ির দরজায় বসে আছে এক বান্ধবীর জন্য। আমি রাস্তা পার হয়ে উলটোদিকের বাদাম গাছের আড়াল থেকে এমন নিখুঁত লক্ষ্যে চিঠিটা ছুঁড়লাম যে সেটা সোজা গিয়ে পড়ল তার কোলে। সে ভয় পেয়ে হাত দুটো উপরে তুলল, কিন্তু খামের উপরের হাতের লেখাটা চিনতে পেরেই চিৎকারটা তার গলাতে আটকে রইল। সেই মুহূর্ত থেকে সারা এমিলিয়া ও হো দেল কা আমার বন্ধু হয়ে গেল। 

টীকা

১। হোসে মারিয়া বালদেব্লাঙ্কেস: গার্সিয়া মার্কেসের দাদু কর্নেলের বিবাহবহির্ভূত সন্তান। তিনি কর্নেলের সমস্ত সন্তানদের মধ্যে বড়ো।

২। আরেপা: ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার। লাতিন আমেরিকার উত্তরাঞ্চলে প্রাক-কলম্বাস যুগ থেকে এই খাবারের প্রচলন। কলোম্বিয়া ও ভেনেসুয়েলায় এটি খুবই জনপ্রিয়। 

শেয়ার করুন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *